সাম্প্রতিক সময়ে আসা অভিবাসী, দৃশ্যমান সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী কানাডীয়দের ক্ষেত্রে আয়ের ব্যবধান রয়েই গেছে
ডিসেম্বর ১, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডার চেহারা যখন অধিকতর বৈচিত্র্যে ভরপুর হয়ে উঠছে তখন দৃশ্যমান সংখ্যালঘু হিসাবে পরিচিত, নবাগত অভিবাসী এবং কানাডার অবশিষ্ট মানুষ অর্থাৎ আদিবাসীদের ক্ষেত্রে আয়ের বিশাল ব্যবধান রয়েই গেছে। ২০১৬ সালের আদমশুমারিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর টরন্টো স্টার।
দৃশ্যমান সংখ্যালঘুদের মোট আয় দৃশ্যমান নয় এমন সংখ্যালঘুদের চেয়ে ২৬ শতাংশ কম।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে আসা অভিবাসীরাÑ যাদের অনেকেই দৃশ্যমান সংখ্যালঘুÑ কঠিনতম অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কারণ তাদের মোট আয় কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের মোট আয়ের চেয়ে ৩৭ শতাংশ কম।
এর অর্থ হলো, কানাডায় জন্মানো কারো পকেটে যখন এক ডলার রয়েছে তখন সম্প্রতি আসা অভিবাসীর পকেটে রয়েছে মাত্র ৬৩ সেন্ট।
২০১৬ সালে টরন্টোর ৫১.৫ শতাংশ বাসিন্দাসহ ২২ শতাংশের বেশি কানাডীয় দৃশ্যমান সংখ্যালঘু বলে রিপোর্ট প্রকাশ পায়। এটি সারাদেশে ২০০৬ সালের চেয়ে ১৬.৩ শতাংশ বেশি।
ডেইলি স্টারে দেওয়া আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে টরন্টোতে ৫৫ শতাংশের বেশি দৃশ্যমান সংখ্যালঘু ৩০ হাজার ডলারের কম অর্থে জীবন যাপন করে। সেই তুলনায় শহরের অন্যান্য বাসিন্দাদের ৪০ শতাংশেরও কম ওই পরিমাণ অর্থে জীবনযাপন করেছে।
২০১৬ সালে টরন্টোতে দৃশ্যমান নয় এমন সংখ্যালঘুদের প্রায় ১৪ শতাংশের মোট আয় যেখানে এক লাখ ডলার বা তার বেশি, সেখানে দৃশ্যমান সংখ্যালঘুদের মধ্যে মাত্র চার শতাংশ মানুষ ওই পরিমাণ নগদ অর্থ আয়ের সুযোগ লাভ করে।
কানাডার বামপন্থী পলিসি অরটারনেটিভ সেন্টারের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ শেইলা বলেন, “সর্বশেষ আদমশুমারির উপাত্ত নিছক এই বাস্তবতাই নিশ্চিত করে দেয় যে, জাতিগত পরিচয়ের মানুষ, সম্প্রতি আসা অভিবাসী এবং আদিবাসী জনগণ অব্যাহতভাবে বৈষম্যের শিকার এবং আয়ের ক্ষেত্রে অসাম্য নেহায়েত জাদুকরীভাবে নিজেকে পাল্টে ফেলে না।”
তিনি বলেন, “এই শ্রেণীর জনসংখ্যা যখন বেড়ে চলেছে এবং অব্যাহতভাবে পেছনে পড়ে আছে তখন এটি প্রত্যেকের জন্যই একটি বড় বিষয়ে পরিণত হয়েছে।”
“আমরা জানি এধরণের অসাম্যের যে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ওপরই বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে তা-ই নয় বরং একটি সমাজ হিসাবে সার্বিকভাবে আমাদের সবার ওপরেই এর একটি নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।”
তিনি বলেন, সামাজিক সহায়তা, কর্মসংস্থান বীমা এবং পেনশনের মত আয়বর্ধনমূলক কর্মসূচি হলো এই সমস্যার সমাধান। তবে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ বাড়ানোসহ শ্রম আইনের সংস্কার এবং ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ থেকে আসা নাদিরা বেগম নিজ দেশে সমাজকর্ম বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন। তিনি কানাডায় এসে তিনটি পার্টটাইম চাকরি এবং পাশাপাশি অলাভজনক খাতে স্বেচ্ছাসেবী পদে অসংখ্য কাজ করেন। কিন্তু এখনও কোনও পূর্ণকালীন কাজ খুঁজে পাননি।
রিজেন্ট পার্কে বসবাসকারী তিন সন্তানের মা নাদিরা বলেন, “আমি আমার শিক্ষা অনুযায়ী একটি পূর্ণকালীন চাকরি খুঁজছি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে। আমার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান সবই আছে, কিন্তু তারা যদি আমাকে কাজই না দেয় তাহলে আমি সেসবের প্রমাণ দেবো কীভাবে? আমাদের কমিউনিটিতে এধরণের ঘটনা বহু রয়েছে।”
নাদিরার খন্ডকালীন চাকরিতেও প্রায়শ পূর্ণকালীন চাকরির মতই একইরকম কাজ করতে হয়, কিন্তু তার পরও তাকে স্বল্প মজুরি দেওয়া হয়। নাদিরা আরও জানান, তার অনেক বন্ধু যারা মুদিখানার দোকানে পূর্ণকালীন চাকরিতে কেরাণী হিসাবে কাজ করেন তাদেরকেও স্বল্প বেতন এবং কম সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “আমাদেরকে সমান বেতন দেওয়া হয় না। যদিও আমরা একই কাজ করি। আমরা কোনওরকম অভিযোগও করতে পারি না কারণ আমরা আমাদের চাকরি হারানোর ঝুঁকি নেয়ার মতো অবস্থানে নেই।”
ওয়ার্কার্স অ্যাকশন সেন্টারের ডিনা ল্যাড বলেন, ২০১৯ সালের মধ্যে অন্টারিওতে ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তা ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করা দৃশ্যমান সংখ্যালঘু, সম্প্রতি আসা অভিবাসী এবং আদিবাসী শ্রমিকদের জন্য বড় ধরণের সুফল বয়ে আনবে।
কিন্তু এই শ্রমিকদের জন্য প্রদেশের প্রস্তাবিত সুষ্ঠু কর্মস্থল, উন্নততর কর্মসংস্থান আইন প্রয়োজন যাতে নাদিরার মতো প্রায়শ অস্থায়ী, খন্ডকালীন এবং চুক্তিভিত্তিক পদে কাজ করতে বাধ্য হওয়া কর্মীদেরও পূর্ণকালীন ও স্থায়ী চাকরিতে নিয়োজিত কর্মীদের সমান মজুরি দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে।
অভিবাসন ও সেটেলমেন্ট বিষয়ে পাঠদানকারী রিয়ারসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাইয়ের সিমিয়াটিকি বলেন, আদমশুমারীর এসব তথ্য আমাদের জন্য জেগে ওঠার আহবান এবং এগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কেন আদমশুমারী গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “এগুলো উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান, এগুলো অসংখ্য কানাডীয়র বিরূপ জীবনযাত্রার পরিবেশকে তুলে ধরে, যারা এই তিন ধরণের জনসংখ্যার মধ্যে পড়েন। এটি হলো একটি সতর্কীকরণ ঘণ্টা এবং আমাদের তাতে সাড়া দিতে হবে।”