ইংরেজীতে প্রথম উপন্যাস লিখেই বাংলাদেশী তরুণ গালিব ইসলাম আলোচনার ঝড় তুলেছেন
প্রবাসী কন্ঠ প্রতিবেদন ॥ গালিব ইসলামের জন্ম বাংলাদেশে। ১৯৮১ সালে। এরপরে বাবার হাত ধরে পাড়ি জমান নাইজেরিয়াতে। বাবা সেখানে কাজ করতেন। পরে ’৮৮ সালে গালিবের পরিবার ইমিগ্র্যান্ট হয়ে কানাডায় আসেন। অনেক লেখকের মতো গালিবও শৈশবে স্বপ্ন দেখতেন লেখক হওয়ার। আর সেই অভিস্পায় গালিব টরন্টো ইউনির্ভাসিটিতে এম এ ভর্তি হন ‘ক্রিয়েটিভ রাইটিং’ বিভাগে ২০০৪ সালে। গালিব বলেন, আমি শুধু একজন লেখকই হতে চাইনি-আমি ভেতর থেকে একটি উপন্যাস লেখার তাগিদ অনুভব করছিলাম। এবং মার্গারেট এটউডকে ভাবতাম আমার ‘মেন্টর’ হিসেবে। গালিবের লেখা সেই উপন্যাসটির নাম-‘ফায়ার ইন দ্য আননেমবল কান্ট্রি’। এ উপন্যাস সম্পর্কে মার্গারেট এটউডের মন্তব্য, ‘ আমি পান্ডুলিপি দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। তার ভাবনায় মৌলিকতা আছে এবং সে যে একজন প্রতিভাবান লেখক, এই উপন্যাসে তার সুস্পষ্ট স্বাক্ষর রেখেছেন।
২০০৭ সালে গালিব যখন ছাত্র তখন সুপ্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা সংস্থা ডাবল ডে তার লেখার নমুনা দেখে তার সঙ্গে গ্রন্থ প্রকাশের ব্যাপারে চুক্তি করতে আগ্রহ দেখায়। পরবর্তীতে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই চুক্তিটা আর স্বাক্ষর হয়নি। গালিব বলেন, এজন্যে আমি খুব কষ্টের মধ্যে ছিলাম। পরে আমি আরেকটা উপন্যাস লিখে ফেলি। এটাই হচ্ছে গালিবের বহুল আলোচিত উপন্যাস-দ্য ফায়ার ইন দ্য আননেমেবল কান্ট্রি। এবারে অবশ্য প্রথমবারের মতো ভুল করিনি। উপন্যাসটা যেন সত্যি সত্যি ছাপা হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলাম। এই উপন্যাস লেখার সম্পর্কে বলতে গিয়ে গালিব বলেন, সে সময় আমি মধ্য টরন্টোর একটি এপার্টমেন্টে থাকতাম। বন্ধু বান্ধবসহ বলতে গেলে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে লেখার মধ্যেই ডুবে গিয়েছিলাম। ১ লক্ষ শব্দের সমাহারে আমি যখন আমার উপন্যাসটা প্রায় গুছিয়ে এনেছি সে সময়-২০১০সালের ১৫ জুন তারিখে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় একটা এসইউভি আমাকে সজোরে আঘাত করে। গাড়ির চালক সে সময় ছিল মাতাল। আমার জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। সঙ্গে সঙ্গে আমার বোনকে বলি, আমার লেখার ফাইলটা নিয়ে এসো জলদি। হাসপাতাল থেকেই লেখাটা শেষ করে ফেলি।
বইয়ের প্রকাশক ও সম্পাদক নিকল উইনস্টেনলে বলেন, গালিব এ বইটি লিখতে সময় নিয়েছে প্রায় দশ বছর। একশো বার বইটি সংশোধন করেছে। বইটির সুষ্ঠু সম্পাদনা ও প্রকাশ করা ছিল আমার কাছে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। বইটি এখন স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। আমার ধারণা, ডেভিড ফ্রস্টার ওয়ালেস ও রবাট বালানোর মতো গালিবের এ বইটিও পাঠকদের কাছে সমান আদৃত হবে। কারণ এই উপন্যাসের কাহিনী খুবই আধুনিক। পাঠকদের ভাবনার অনেক খোরাক জোগাবে।
গালিব বলেন, সাম্প্রতিক কালের জিও পলিটিক্স, বাস্তব সংস্কৃতি,সন্ত্রাসী সম্পর্কিত ভীতি,স্টেট সারভিলেন্স-এসবের সঙ্গে জড়িতরাই আমার উপন্যাসে চরিত্র হয়ে এসেছে। ঐতিয্যগত ভাবে সরকারের আমলা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-যেমন নাসা, সিআইএ-তারা এখন খুবই শক্তিশালী। লেখার সময় বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী আমার লেখায় উঠে এসেছে। তাতে পাঠকরা একটা তরতাজা অনুভূতি পাবেন। মনে হবে, আরে! এসব ঘটনাই তো এখন ঘটছে। গালিব বলেন, সেপ্টেম্বর এলিভেনের পরে পাশ্চাত্য একজন মুসলমানের বেড়ে ওঠাটার মানেই হচ্ছে একটা নজরদারী। এই নজরদারীর মানেই হচ্ছে একটা শঙ্কা-এটা কি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন হলো!?
জুলাই ২৭, ২০১৪