জঙ্গী দমনে পুলিশের সতর্কতা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন
কানাডা পৃথিবীর অন্যতম শান্তির দেশগুলোর মধ্যে একটি দেশ। এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা এগিয়ে আছি বহুদূর। গ্লোবাল পিস ইন্ডেক্সের হিসাব মতে শান্তির দেশ হিসাবে বিশ্বে কানাডার অবস্থান অষ্টম স্থানে আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১০৩ তম স্থানে! ‘কি পাইনির দেশ’ আমেরিকার এই হাল দেখে আশ্চর্যই হতে হয়।
কিন্তু কানাডা শান্তিপূর্ণ দেশ হিসাবে বহুদূর এগিয়ে থাকলেও বাস্তবিক অর্থে তা কতটুকু নিরাপদ? এই প্রশ্ন আজ অনেকেরই। আর এ প্রশ্ন উঠছে বিশ্বে জঙ্গীবাদ প্রসারের কারণে যার ঢেউ এসে লেগেছে শান্তিপূর্ণ এই কানাডাতেও। জঙ্গীবাদ কি ও কেন এবং কারা এর পিছনে ইন্ধনদাতা বা কারা এর জন্মদাতা সে প্রশ্নের জবাব আজ কমবেশী সকলেই জানেন। কিন্তু আমাদের এই মূহুর্তের উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, কানাডার হোমগ্রোন সন্ত্রাসীদের নিয়ে। এদের অনেকেই পারি জমিয়েছেন আইএস এর ঘাটি ইরাক ও সিরিয়াতে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ মহিলাও রয়েছেন! আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো এই মহিলাদের কেউ কেউ তাদের শিশুদেরকেও নিয়ে যাচ্ছেন সঙ্গে করে! জঙ্গী কর্মকান্ডে যোগ দেয়ার জন্য মহিলাদের এই যাত্রা নতুন নয়। তবে যেটি লক্ষ্যনীয় তা হলো, সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেয়ার এই প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একদিকে যুবক আরেকদিকে এই যুবতীরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে মারা গেছেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে। কেউ কেউ আবার ফেরতও এসেছেন কানাডায়। এই ফেরত আসাদের নিয়ে এখন কানাডায় নতুন করে আশংকা দেখা দিয়েছে। কারণ এরা জঙ্গীবাদে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছেন। তাদের ফিরে আসার পিছনে কারণ যাই হোক, বাস্তবতা হলো এরা কানাডার বুকে জঙ্গী হামলা চালাতে পারেন প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের মত। ফলে তাদের আক্রমণে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা বেশী হতে পারে। কানাডার আইন-শৃংখলা বাহিনীও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অন্যদিকে যাদেরকে জঙ্গী সংগঠনে যোগ দিতে বাধা দেয়া হচ্ছে তাদেরকে নিয়েও দেখা দিয়েছে নতুন করে আশংকা। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা মনে করছেন হোমগ্রোন এই জঙ্গীরা ইরাক বা সিরিয়ায় যেতে না পেরে হয়তো স্বদেশের মাটিতেই জঙ্গী হামলা পরিচালনা করতে পারেন। এমন একটি ঘটনা কয়েকদিন ঘটেও গেছে কানাডায়। গত আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অ্যারোন ড্রাইভার নামের এক কানাডীয় যুবক পুলিশের গুলিতে নিহত হন। অন্টারিওতে জনাকীর্ণ কোন একটি এলাকায় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। তার আগে অ্যারোনকে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে বাধা দেন কানাডার পুলিশ। তিনি পুলিশের নজরদারীতে ছিলেন। তার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল তিনি কোন অস্ত্র বহন করতে পারবেন না, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না কোন সুপারভাইজারের উপস্থিতি ছাড়া। তার পাসপোর্টও সিজ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও তাকে জঙ্গীপনা থেকে দূরে রাখা যায়নি। তার আগে কুইবেক ও অটোয়াতে যে দুটি জঙ্গী হামলা পরিচালনা করা হয়েছিল তার খলনায়কদের একজনের পাসপোর্টও সিজ করা হয়েছিল এবং অন্যজন পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। কিন্তু তাদেরকেও জঙ্গী হামলা পরিচালনা করা থেকে বিরত রাখা যায়নি।
পুলিশের তদন্তের মুখে টিকতে না পেরে বর্তমান সময়ের এক আলোচিত যুবক তামিম চৌধুরী কানাডা ছেড়ে বাংলাদেশে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি স্থানীয় জঙ্গীদের নেতা বনে যান। তার আগে মধ্যপ্রাচ্যেও গিয়েছিলেন তিনি। ঢাকার গুলশানে অবস্থিত হলি আর্টিজানে হামলা পরিচালনাকরীদের মূল হোতাদের একজন ছিলেন তিনি। কদিন আগে তিনিও পুলিশের গুলিতে নিহত হন ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে।
কদিন আগে টরন্টোতে কাদির আব্দুল নামের এক বাঙ্গালী যুবককে আদালতে হাজির করা হয়েছিল জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার কারণে। তার দখলে ছিল একটি স্বংক্রিয় রাইফেল। সিরিয়ায় পারি জমাতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন তুরস্কে। সেখান থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হলে কানাডার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
আগষ্ট মাসে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার দায়ে অটোয়ার তিন যুবককে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। এই তিন যুবকের দুইজন যমজ ভাই। একজনের নাম এস্টোন লারমোন্ড এবং অন্যজন কার্লোস লারমোন্ড। তৃতীয় যুবকের নাম সোলাইমান মোহাম্মদ। এই তিন যুবক মিলে প্রথমে পরিকল্পনা করেছিলেন কানাডায় জঙ্গী হামলা চালাবেন। কিন্তু পরে তারা সিদ্ধান্ত পাল্টান এবং জঙ্গী সংগঠন আইএস এ যোগ দেয়ার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা নেন। ২০১৫ সালে আরসিএমপি তাদের গ্রেফতার করে।
অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি, শান্তির দেশেও অশান্তি সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেই সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আমাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করছে। সে কারণে এই হোমগ্রোন জঙ্গীদের ব্যাপারে পুলিশের সতর্কতা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি এবং সেই সাথে সাধারণ নগরিকদেরকেও চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশকে সন্দেহভাজন জঙ্গীদের সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬