কেলি পোচা’র বর্ণবাদী আচরণ

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে আবার্টায় এক কানাডিয় নারী বর্ণবাদের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছন। তিনি কয়েকজন ইমিগ্রেন্ট পুরুষের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং বারবার বলেছেন তারা যে নোংরা (মহিলার ভাষায়) দেশ থেকে এসেছেন সে দেশে যেন ফিরে যান। ঐ পুরুষদের প্রতি তিনি এফ-ওয়ার্ড ব্যবহার করা সহ তাদের উপর শারীরিক হামলা চালানোরও হুমকী প্রদান করেন। কয়েক সপ্তাহ আগে আলবার্টার লেথব্রিজ শহরে ডেনি’স রেস্তোরাঁয় এই ঘটনা ঘটে এবং এর ভিডিওচিত্র টুইটার, ফেসবুক ও ইউটিউবের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মহিলার নাম কেলি পোচা।

ঘটনার সূত্রপ্রাত নিছকই একটি সন্দেহ থেকে। ঐ মহিলা রেস্তোরাঁয় বসেছিলেন তার সঙ্গী সহ। কাছাকাছি আরেক টেবিলে বসে চারজন পুরুষ অপেক্ষা করছিলেন খাবারের জন্য। এই সময় তারা নিজেদের মধ্যে তাদের নিজ ভাষায় কথা বলছিলেন এবং হাসাহাসি করছিলেন। কিন্তু পাশের টেবিলে বসা সেই মহিলার মনে ধারণা জন্মে যে, তাকে নিয়েই ঐ পুরুষগুলো হাসাহাসি করছেন। এরপরই শুরু হয় ঐ মহিলার তীব্র বিষোদ্গার। অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি এবং চরম অপমানজনক কথাবার্তা বলতে থাকেন তিনি ঐ পুরুষদের উদ্দেশ্য করে। ঘটনাটি ভিডিও ক্যামেরায় রেকর্ড করেন আক্রমণের শিকার ঐ পুরুষদের একজন মনির ওমরজাই। তার জন্ম আফগানিস্তানে। তবে কিশোর বয়স থেকেই তিনি বসবাস করে আসছেন কানাডায়।
কেলি পোচা’র আচরণ এমনই আপত্তিকর ছিল যে ভিডিওতে তা দেখে স্থানীয় লেথব্রিজ ডসিটির মেয়র ক্রিস স্পিয়ারম্যান স্তম্ভি^ত হয়ে যান। অনলাইন পত্রিকা হাফিংটন পোস্ট কে তিনি বলেন, অমন একটি ঘটনা এখানে ঘটায় আমি লজ্জিত এবং বিব্রত। তিনি আরও বলেন যে, তার শহর একটি আধুনিক, প্রগতিশীল শহর যা তার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র নিয়ে গর্ব করে এবং এটি শরণার্থী ও ইমিগ্রেন্টদের জন্য উন্মুক্ত।
শুধু মেয়র নয়, ঐ মহিলার আচরণ দেখে স্তম্ভি^ত হয়ে যান তার চাকুরী দাতা প্রতিষ্ঠানের মালিকও। মালিক পরে ঐ মহিলাকে চাকরী থেকে বরখাস্ত করেন এবং বলেন, আমরা তার আচরণের জন্য গভীরভাবে দুঃখিত।
কেলি অবশ্য পরে ক্ষমা চেয়েছেন ঐ ঘটনার জন্য। তবে তিনি এও বলেন যে, সে দিনের কথা-কাটাকাটির পুরোটা মানুষ দেখতে পায়নি এবং তাকে হেয় করা হয়েছে।
আমরা জানি কানাডা একটি সেরা শিষ্টাচারের দেশ। সৌজন্যবোধ, ভদ্রতা, বিনয় অথবা শিষ্টাচার যাই বলা হোক না কেন এ বিষয়ে কানাডিয়ানদের জুড়ি মেলা ভার। এরকম একটি দেশে একজন মহিলা বিনা উস্কানীতে যে কান্ডটি ঘটিয়েছেন তা যে কোন বিচারেই অগ্রহণযোগ্য। ভুল বুঝেও কেউ এমন উন্মত্ত আচরণ করতে পারেন না।
কানাডায় একজন মহিলাকে উদ্দেশ্য করে জনসমক্ষে হাসি-তামাশা করার পরিনতি কি হতে পারে তা প্রতিটি ইমিগ্রেন্টেরই জানার কথা। সুতরাং ঐ রেস্টুরেন্টে বসে কয়েকজন পুরুষ এমন কাজ করবেন তা বিশ্বাযোগ্য হওয়ার কথা নয়। আজকাল চারিদিকেই ক্যামেরা আর ভয়েস রেকর্ডারের ছড়াছড়ি। কেলি পোচা’র সন্দেহ হয়ে থাকলে তিনি ভয়েস রেকর্ডারে তাদের কথাবার্তা রেকর্ড করতে পারতেন প্রমাণ হিসাবে। তিনি প্রয়োজনে পুলিশও ডাকতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি কেবল সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সরাসরি আক্রমণ শুরু করেন যা ছিল চূড়ান্ত মাত্রায় বর্ণবাদী আচরণ। আরো দুঃখজনক বিষয় হলো, রেস্টুন্টে কর্তৃপক্ষও ঐ মহিলার পক্ষ নেয় এবং ঐ চারজন পুরুষকে রেস্টুরেন্ট ত্যাগ করতে বলে।
জরিপ প্রতিষ্ঠান Ipsos-Reid এর তথ্য অনুযায়ী আমরা জানি প্রায় শতভাগ কানাডিয়ানের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে ইমিগ্রেন্টদের প্রতি। তার প্রতিফলন আমরা দেখতে পেয়েছি কেলি পোচা’র বর্ণবাদী আচরণের পর। স্থানীয় মেয়র সহ ঐ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন সেখানকার সর্বস্তরের মানুষ। আমরাও নিন্দা জানাই এই ধরণের বর্ণবাদী আচরণের। আমরা মনে করি কানাডায় বর্ণবাদের কোন জায়গা নেই।

জুন ৩, ২০১৮