কানাডায় মুসলিমদের অবস্থানের সাথে বর্হিবিশ্বের তুলনামূলক পর্যালোচনা
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : আমরা কি একে অপরের সাথে কথা বলছি? একটি নতুন পরিসংখ্যানে এই প্রশ্ন উঠে আসে। কানাডিয়ান মুসলিম এবং অন্যান্য নাগিরকদের একে অপরের সাথে আচরণ বা মনোভাব কেমন সে সম্পর্কিত পরিসংখ্যানটি যৌথভাবে পরিচালনা করে সিবিসি ও ইনভিরোনিকস রিসার্চ গ্রুপ। ইনভিরোনিকস রিসার্চ গ্রুপ জড়িপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চায়, “যেসব মুসলিম অভিবাসী কানাডায় আসে তারা কানাডিয়ান রীতিনীতি ও ভাবধারা আত্মস্থ করতে চায় নাকি বৃহত্তর সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। এ সম্পর্কে তাদের মতামত কি?”। অমুসলিম কানাডিয়ানদের মধ্যে ৫৭% জানিয়েছে, মুসলিমরা অন্যসবার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। কিন্তু এই উত্তরের সাথে একমত পোষণ করেছে মাত্র ২৩% মুসলিম কানডিয়ান।সবমিলিয়ে ৫৫% মনে করে মুসলিমরা মূলধারার সাথে মানিয়ে চলতে চায়।
এই সমীক্ষা কতটুকু সঠিক তা বলা মুসকিল। ইনভিরোনিকস ২০৪৫ জন সাধারণ জনগণ এবং ৫০০ জন মুসলমানের মধ্যে জড়িপটি পরিচালনা করে। জড়িপটি এতোটাই নিখুঁত ছিল যে তা যদি ছোট আকারেও করা হতো তাতে প্রায় একই ফল আসতো।
পাশাপাশি ২০০৫ সালে পরিচালিত পিউ গ্লোবাল এটিটিউডের জড়িপেও এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়। এই প্রখ্যাত অ্যামেরিকান রিসার্চ সেন্টারের জড়িপে দেখা যায়, এখানকার ৬০% মুসলিম কানাডার সাধারন জনগণের থেকে নিজেদেরকে আলাদা ভাবে। যদি দু’টি জড়িপ সঠিক হয়, তাহলে বলা যায়, দুই বছরে মনোভাবের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।
মুসলিমদের সম্পর্কে কানাডিয়ানদের অন্যান্য ভুল ধারণা বাদ দিলে কানাডিয়ান মুসলিমদের সম্পর্কে একটি ভিন্ন চিত্র প্রতিভাত হয়। পিউ রিসার্চ সেন্টারের জড়িপে দেখা যায়, ইউকে, জার্মানি, ফ্রান্স ও স্পেনের মুসলিমদের তুলনায় কানাডিয়ান মুসলিমরা অনেক বেশি সুখি এবং সংযত। দুর্ভাগ্যবশত মার্কিন মুসলিমদের সাথে তেমন একটা ভালভাবে তুলনামূলক বিচার করা হয়নি। ধর্মীয় বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রে খুবই বিতর্কিত বিষয় এবং যেকোন তুলনামূলক জড়িপ সম্ভবত কোন না কোনভাবে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা দ্বারা প্রভাবিত হবে।
কিন্তু কানাডার বাইরে দেখতে গেলে, বেশ কিছু ইস্যুতে কানাডিয়ান মুসলিমদের সাথে ইউরোপিয় মুসলমানদের স্পষ্টতই মিল নেই। যেমন, যেখানে তারা বাস করছে তা নিয়ে সন্তুষ্টি, অন্যান্য নাগরিকদের কাছ থেকে শত্রুতামূলক আচরণ প্রত্যক্ষ করা, মধ্যপন্থী ও মৌলবাদীদের মধ্যে লড়াই, এবং নারীদের ভূমিকা-এসব বিষয়ে কানাডিয়ান ও ইউরোপিয় মুসলমানদের মনোভাবে কিছু পার্থক্য রয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে তুলনা করার কাজটা অনেক ক্ষেত্রেই বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। উদারহনস্বরুপ, জানতে চাওয়া হয়, মুসলমানদের প্রতি কত সংখ্যক কানাডিয়ান শত্রুমনোভাবাপন্ন? এর উত্তরে ৭৫% কানাডিয়ান মুসলিম জানায়, এই সংখ্যা সামান্য অথবা খুবই অল্প। তবে ইউরোপিয়রা মুসলিমদের প্রতি কানাডিয়ানদের চেয়ে বেশি শত্রুমনোভাবাপন্ন।
মুসলিমদের প্রতি অন্যান্য নাগরিকেরা কতটা শত্রুমনোভাপন্ন?
মুসলিমদের সংখ্যা কানাডা বৃটেন জার্মানি ফ্রান্স স্পেন
সামান্য কিছু/খুব ৭৫ ৫২ ৪৩ ৬০ ৬৪
বেশিরভাগ/অনেক ১৭ ৪২ ৫১ ৩৯ ৩১
জীবনমান নিয়ে সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে দেখা যায় কানাডায় মুসলমানরা তাদের জীবন নিয়ে সাধারণ জনগণের চেয়ে বেশি সন্তুষ্ট।
সন্তুষ্টির হার
মুসলিমদের সংখ্যা কানাডা বৃটেন জার্মানি ফ্রান্স স্পেন
সন্তুষ্ট ৮১ ৫১ ৪৪ ৩৩ ৭৬
অসন্তুষ্ট ১৫ ৩৮ ৫২ ৬৭ ১৯
উদারপন্থী বনাম কট্টরপন্থী
বিশ্বব্যাপী সবাই ইসলামিক উগ্রবাদ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।এমনকি এই উদ্বেগ মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যেও রয়েছে। ( তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে চীন। পিউ রিসার্চ এর এক সমীক্ষায় দেখা যায় চীনের ৬০% মানুষেরই এ বিষয়ে সামান্য অথবা কোন উদ্বেগই নেই”।)
২০০৬ সালে পিউ বিশ্ব সমীক্ষা প্রতিবেদনেও দেখা যায়, বিশ্বজুড়েই মুসলমানদের মধ্যে পশ্চিমাবিশ্বের প্রতি তীক্ততা বাড়ছে, তাদের পিছিয়ে পড়ার জন্য তারা পশ্চিমাবিশ্বকে দায়ী করছে, এবং বিস্ময়কর হলো যারা এমনটা ভাবছে তাদের সংখ্যা বিশাল। ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিশর ও জর্ডানের বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করে না যে, একদল আরব যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ এর হামলা চালিয়েছে ।
এতে বলা হয়, মুসলিমদের অভিমত স্পষ্টত ব্যাপক নয় এবং বেশিরভাগই মধ্যপন্থী, বিশেষ করে কানাডায় বেশি দেখা যায়।
মধ্যপন্থী মুসলিম ও ইসলামিক উগ্রপন্থীদের মধ্যে এক ধরণের লড়াই চলছে বলে যারা মনে করে তাদের শতকরা হার :
মুসলিমদের সংখ্যা কানাডা বৃটেন জার্মানি ফ্রান্স স্পেন
হ্যা ৪০ ৫৮ ৪৯ ৫৬ ২১
না ৫০ ৩৫ ৪০ ৪৩ ৬৫
মধ্যপন্থী ও উগ্রপন্থীদের শতকরা হার
মুসলিমদের সংখ্যা কানাডা বৃটেন জার্মানি ফ্রান্স
মধ্যপন্থী ৮০ ৬৬ ৭৫ ৮৯
উগ্রপন্থী ১৪ ২৫ ১৪ ১০
ইসলামিক পরিচয় ও নারী
একটি বিষয়ে ইউরোপিয় মুসলিমদের সাথে কানাডিয়ান মুসলিমদের মিল রয়েছে; তাহলো ইসলামিক পরিচয় সম্পর্কে তাদের মনোভাব। প্রায় ৭০% কানাডিয়ান মুসলিম মনে করে তাদের কমিউনিটিতে নিজেদের মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেয়ার মনোভাব জোড়ালো হচ্ছে, ইউরোপের ক্ষেত্রেও একইকথা প্রযোজ্য।
একটু অস্বাভাবিক হলেও, কয়েকটি ইস্যুর মধ্যে এটিও একটি, যেখানে কানাডিয়ান মুসলিম এবং অন্যান্য সাধারণ নাগরিকের ধারণা প্রায় একই। মাত্র ৩৩% কানাডিয়ান মনে করে, এটা একটা ভাল দিক যেখানে ৮৫% মুসলমানের ধারণা তাদের ইসলামিক মূল্যবোধ ইতিবাচক এবং তারা কানাডার বহুমাত্রিক সংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারণ করে। কিন্তু সমাজে মুসলিম নারীদের ভূমিকা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এক্ষেত্রেও কানাডিয়ান মুসলিমদের সাথে দেশের বাইরের মুসলমানদের মনোভাবে তারতম্য রয়েছে।
ইনভিরোনিকস জড়িপ অনুসারে, কানাডার ৫৭% মুসলিম নারী মাথা ঢেকে রাখে না; ৩৮% হিজাব পড়ে এবং খুবই কম সংখ্যক নারী আপাদমস্তক সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে। এতে বলা হয়, স্কুলসহ জনসমোক্ষে হিজাব নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কানাডিয়ান মুসলিমরা তীব্র বিরোধী, তবে বিভিন্ন ইউরোপিয় দেশ এই পরিকল্পনা নিচ্ছে। সবমিলিয়ে ৮৫% কানাডিয়ান মুসলিম মনে করে হিজাব নিষিদ্ধ করা একটি বাজে ধারণা। কিন্তু একই সময়ে মুসলিম নারীদের নন-ট্রাডিশনাল ভূমিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মুসলিমদের চেয়ে কানাডিয়ান মুসলিমরা অনেক বেশি উদার।
অন্যান্য দেশের তুলনায় নিজ দেশে
নারীদের জীবন মান ভাল বা খারাপ
মুসলিমদের সংখ্যা কানাডা বৃটেন জার্মানি ফ্রান্স স্পেন
ভাল ৭০ ৫৮ ৫০ ৬২ ৪৬
খারাপ ৩ ১৩ ১৭ ১৬ ১৬
মুসলিমনারীদের আধুনিক ভূমিকা গ্রহণের বিষয়ে উদ্বেগ
মুসলিমদের সংখ্যা কানাডা বৃটেন জার্মানি ফ্রান্স স্পেন
খুব ২৬ ৪৪ ২০ ৪৬ ৩২
বেশি নয়/মোটেও না ৭২ ৫৪ ৭৪ ৫২ ৬৫
সৈজন্যে : সিবিসি নিউজ