জীবনের বহু রং

সাইদুল হোসেন

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

(এগারো)

দু’জন সুফী মুসলিমের কথা

অসংখ্য বিখ্যাত সুফী মুসলিমদের মাঝে দু’জন বিখ্যাত সুফী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা শুনুন। [সুফীদের নিয়ে লেখা ছোটবড় বেশ কয়েকটি বই আছে আমার হাতে। সেগুলোরই দু’টি বই থেকে নীচের বিবরণগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরছি।]

প্রথমজন

সুফী রাবি’আ বসরী (মৃত্যু ৮০১ খৃষ্টাব্দ)

সর্বপ্রথম নারী সুফী রাবি’আ বসরী। পূর্ণ নাম রাবি’আ আদাবিইয়্যা। ইরাকের বসরা নগরের অধিবাসী ছিলেন। মৃত্যু ৮০১ খৃষ্টাব্দে। অতি উঁচু দরজার সুফী ছিলেন। বসরা নগরীতে বাস করতেন তাই জনসাধারণ তাঁকে রাবি’আ বসরী বলেই চিনতো, পরিচয় দিতো। জগৎবিখ্যাত সুফী এই রাবি’আ বসরী। উপদেশের জন্য, হিদায়াতের জন্য অগণিত লোক তাঁর ঘরে দৈনিক হাজিরা দিতো।

জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি বিশ্বাস করতেন,সঙ্গীত, কবিতা এবং নাচ-সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌঁছানোর একেকটি পন্থা। তাঁর এই বিশ্বাসের পথ ধরেই কালক্রমে সুফি নৃত্য অনুশীলন থেকে অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। ছবি : রোয়ার মিডিয়া

কথিত আছে যে তিনি বাল্যকালে বসরার কোন এক ধনী ব্যক্তির বাড়িতে slave girl (ক্রীতদাসী) হিসাবে কাজ করতেন কিন্তু আল্লাহর প্রতি, আল্লাহর ইবাদতের প্রতি তিনি এতোই নিবিষ্ট ছিলেন যে সেটা লক্ষ্য করে তাঁর মালিক তাঁকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে দেন। এখন শুনুন তাঁর সম্পর্কে দু’টি অতি প্রচলিত লোককাহিনী (Legend):

(এক)

রাবি’আ বসরী একদিন রাস্তায় বের হলেন, তাঁর একহাতে একটা জ্বলন্ত আগুনের মশাল এবং অন্যহাতে বালতি ভর্তি পানি। সেটা দেখে লোকেরা জানতে চাইলো : এসবের কারণ কি?

জবাবে তিনি তাদের জানালেন যে মশালের আগুন দিয়ে আমি জান্নাত জ্বালিয়ে দেবো, আর বালতির পানি দিয়ে জাহান্নামের আগুন নিভিয়ে দেবো যাতে মানুষ ঐগুলোর আশায় বা ভয়ে নয়, বরং আল্লাহকে ভালোবেসে তাঁর ইবাদত করে।

(দুই)

তাঁর একটি প্রার্থনা।

“হে আল্লাহ! আমি যদি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে তোমার ইবাদত করি তাহলে তুমি আমাকে সেই জাহান্নামে ঢুকিয়ে পোড়াও।”

“আর যদি আমি জান্নাতের সুখ আরামের লোভে তোমার ইবাদত করি, তাহলে তোমার জান্নাতের দরজাটা আমার জন্য বন্ধ করে দাও।”

“কিন্তু তুমি যদি মনে কর যে শুধুমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্যই আমি তোমার ইবাদত করছি তাহলে, হে প্রভু, তুমি আমাকে দর্শন দাও, আমি যেন তোমার মহিমাময় সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য লাভ করতে পারি।”

দ্বিতীয়জন

মানসুর হাল্লাজ (৮৫৮-৯২২ খৃষ্টাব্দ)

জগৎবিখ্যাত, সুপরিচিত নাম : সুফী মানসুর হাল্লাজ (পূর্ণ নাম হুসেইন ইবনে মানসুর আল হাল্লাজ।) তিনি একজন অতি উচুঁ দরজার সুফী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সুফী কবি, অতি দরদ দিয়ে আবেগপূর্ণ কবিতা লিখতেন তিনি।

ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বাসিন্দা ছিলেন। অতি বিখ্যাত সুফী শেইখ জুনায়েদ বাগদাদীর শিষ্য ছিলেন তিনি। কথিত আছে যে একদিন মানসুর হাল্লাজ তাঁর শেইখ জুনায়েদ বাগদাদীর বাড়িতে গিয়ে দরজায় খট্খটালেন (knock করলেন)। ভেতর থেকে শেইখ জানতে চাইলেন : “কে তুমি?”

মানসুর তাঁর পরিচয় না দিয়ে জবাব দিলেন, “আনা আল-হাক্” যার এক অর্থ : আমিই পরম সত্য (I am the Absolute Truth/True Reality), অন্য অর্থ : আমিই আল্লাহ!

কি, এত বড় শির্কি কথা? সে-ই আল্লাহ? কে সে?

জুনায়েদ বাগদাদী দরজা খুলে দেখলেন যে তাঁরই শিষ্য মানসুর হাল্লাজ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে শেইখ পুনরাবৃত্তি করলেন, “তুমিই বলেছো, আনা আল-হাক্?”

“জী, আনা আল-হাক্”, অতি স্পষ্ট জবাব।

ইবাদতের কোন সেই নেশার ঘোরে একথাটা তিনি বলেছিলেন তা কেউ জানে না। কিন্তু বলে তো ফেললেন ইসলামবিরোধী চরম শির্কি কথা। লোকেরা বুঝলো/জানলো যে মানসুর হাল্লাজ নিজেকে আল্লাহ বলে দাবী করছে।

তাঁর সেই অপরাধে বাগদাদের তৎকালীন প্রধান কাজী জুনায়েদ বাগদাদীর ফাৎওয়া এবং আদেশে তাঁকে হাত-পা কেটে, দেহ থেকে তাঁর মাথাটা কেটে ছিন্ন করে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো (২৬ মার্চ, ৯২২ খৃ) তৎকালীন শিয়া ও সুন্নী মুসলিম উভয় সমাজই এই দন্ডকে সমর্থন করেছিলেন কারণ তাঁর জনসমক্ষে উচ্চারিত “আনা আল-হাক্” কথাটা ইসলাম ধর্ম এবং মুসলিম সমাজের জন্য চরম বিশৃংখলা ও বিপদজনক ছিল। তাই তাঁর কণ্ঠ রুদ্ধ করাটা জরুরী হয়ে পড়েছিল।

কিন্তু এতসব সত্ত্বেও সুফী জগতের অতি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে মানসুর হাল্লাজের নাম অতি শ্রদ্ধার সংগে আজো উচ্চারিত হয়। তাঁর জীবন ছিল কর্মময়। তাঁর কবিতা আজো শ্রদ্ধাভরে পাঠ করেন সুফীগণ। “আনা আল-হাক্” এই একটি মাত্র বাক্য উচ্চারণ তাঁকে তাঁর মৃত্যুর ১১০০ বছর পরও অমর করে রেখেছে।

– ফেব্রুয়ারী ২৮, ২০২৪

(বারো)

বংশগত রোগের (genetic diseases-এর) অভিশাপ

অবিশ্বাস্য রকম খবর। শুনলাম আজ ওয়াইফের মুখে। এমনটাও ঘটে মানুষের জীবনে!

খবরগুলো হচ্ছে আমাদের অতি আপন একটি পরিবার সম্পর্কে। ওরা স্বামীস্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তান।

১)           স্বামী। ওরা ১১ ভাইবোন। সবাই উচ্চ শিক্ষিত। দেশেবিদেশে নানা কাজে প্রতিষ্ঠিত। ওদের মাঝে ৬ জন ইতিমধ্যে নানা বয়সে মারা গেছে। সবারই heart problem-এর কারণে মৃত্যু ঘটেছে। জীবিত ৫ জনের মাঝে ৩ জন হার্ট প্রোব্লে­মে ভুগছে। খবর : ঐ ১১ জনের মা-বাবা দু’জনই হার্ট প্রোব্লেমে ভুগে মারা গেছেন।

অবশিষ্ট ২ ভাইবোনের খবর এখনো হয়নি।

২)          স্ত্রী। ওরা ৩ বোন। সে একজন breast cancer patient. ওর বাকি দু’টি বোনও ব্রেস্ট ক্যানসারে খুব কষ্ট পাচ্ছে। খবর : ওদের মা ২০২৩ সনে ৮৬ বছর বয়সে ব্রেস্ট ক্যানসারে ভুগে মারা গেছেন।

-মার্চ ৩, ২০২৪

(তেরো)

কুকুরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ কিন্তু মদ খাওয়া হালাল করা হচ্ছে

(এক)

Korea’র লোকেরা (উত্তর এবং দক্ষিণ) শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কুকুরের মাংস খেয়ে অভ্যস্থ। এটা তাদের অতি প্রিয় খাদ্য।

কিন্তু হঠাৎ করে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আইন করে দেশে কুকুরের মাংস বিক্রি এবং খাওয়া নিষিদ্ধ বলে আইন জারী করেছেন। দেশবাসী এতে খুব অসন্তুষ্ট এবং ক্ষুব্ধ, বিশেষ করে কুকুর পালন করে জনগণের খাওয়ার জন্য উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা।

(দুই)

অন্যদিকে ইসলাম ধর্মে (আল্ল­াহর কুরআন ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সহীহ হাদীস অনুসারে) মদের ব্যবসা বা মদ খাওয়া সম্পূর্ণভাবে হারাম। সেটা জানা সত্ত্বেও ১০০% মুসলিম দেশ, সাউদি আরবে, যেখানে ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র ইবাদতের স্থান মক্কার কাবা (মুসলিমদের বাৎসরিক হাজ্জ এবং বছরব্যাপী উমরাহ অনুষ্ঠান পালনের জন্য) এবং মদীনা (মাসজিদ-এ নববীতে জিয়ারতের জন্য) অবস্থিত, তথাকথিত মুসলিম সরকার গত ফেব্রুয়ারী ২০২৪ থেকে দেশের রাজধানী রিয়াদ শহরের Diplomatic Zone-এ মদের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেদেশে কর্মরত non-Muslim foreign diplomat-দের সুবিধার জন্য। তবে সরকারের দেয়া লাইসেন্স থাকতে হবে মদ কেনার জন্য। ৭২ বছর পূর্বে  ১৯৫২ সনে মদের উপর আরোপিত সরকারী নিষেধ ক্রমে শিথিল (relax) করা হচ্ছে। সেদেশে ক্রমবর্ধমান Tourist industry’র দাবী মেটানোও একটা উদ্দেশ্য বটে। অবস্থাদৃষ্টে অনুমান করা যায় যে মদের সহজ লভ্যতার দিন সেদেশে আর বেশী দিন দূরে নয়।

-মার্চ ৬, ২০২৪

(চৌদ্দ)

ভাষা বিভ্রাট। হিন্দিমেঁ সমঝাও।

(হিন্দি ভাষাতে বোঝাও আমাকে)

কিছু কেনাকাটার উদ্দেশ্যে বাইরে যাবার ইচ্ছা নিয়ে স্ত্রীকেসহ একদিন বিকালে বাসা থেকে বের হয়ে এলিভেটরে চড়ে নীচে লবীতে নামলাম। দেখলাম এক বৃদ্ধ সেখানে একটা বেঞ্চে তার ওয়াকারে হাত রেখে বসে আছে, তার হাতে একটা চিঠি। আমার চোখে তার চোখ পড়তেই তার হাতের চিঠিটা দেখিয়ে ইশারা করলো। গেলাম তার কাছে। চিঠিটা আমার হাতে দিয়ে বললো, ”Read it.”

লোকটার চেহারা দেখে এবং চিঠিতে তার নামটা পড়ে বোঝলাম যে সে একজন ইন্ডিয়ান এবং আমাদের এই সিনিয়র্স বিল্ডিংয়েরই একজন রেসিডেন্ট। চিঠিটা পড়ার পর তাকে ইংরেজীতে বুঝিয়ে বললাম যে “এটা Canada government-এর Revenue Agency থেকে এসেছে। Tax credits হিসাবে ৬৫০ ডলার তোমার পাওনা হয়েছে ২০২২ সনে, চার ইনস্টলমেন্টে সেই ডলারগুলো তুমি পাবে। ফার্স্ট ইনস্টলমেন্টের ১৬২.৫০ ডলার তোমার ব্যাংক একাউন্টে জমা দেয়া হয়েছে। ইচ্ছা করলে ডলারগুলো তুমি আজই উঠিয়ে নিয়ে খরচ করতে পারো। বাকী ডলারগুলো পরের তিন ইনস্টলমেন্টে পাবে। OK?”

চিঠিখানা তার হাতে ফিরিয়ে দিলাম। লোকটি বললো, ”OK. Thanks.”

আমি তার দিক থেকে ঘুরে main entrance-এর দিকে পা বাড়ালাম। বাইরে যাবো। 

শুনলাম পেছন দিক থেকে ওর ডাক, “Come again.”

কি আর করি? গেলাম ওর কাছে। এবার বললো হিন্দিতে, “ফিন্ পড়হো। সমঝাও। হিন্দিমেঁ, আংরেজী নেহী।” (অর্থাৎ চিঠিটা তুমি আবার পড় এবং আমাকে বোঝাও। কিন্তু হিন্দি ভাষায়, ইংরেজীতে নয়।”)

বোঝলাম যে সে ইংরেজী জানে না, তাই আমার আগের ইংরেজীতে বোঝানোটা ওর বোধগম্য হয়নি।

আমি তখন আগের কথাগুলোই হিন্দিতে ওকে আবার বুঝিয়ে বললাম।

আমার বলা শেষ হলে ওর মুখে বড় একটা হাসি ফোটে উঠলো। বললো, “অব পুরী মতলব সমঝ্মে আয়া। রুপেয়া [অর্থাৎ ডলারগুলো] সরকার বাহাদুরনে হামকো দিয়া হ্যায় খর্চা কারনেকে লিয়ে, সরকারকো ওয়াপস দেনেকে লিয়ে নেহী। সহী সম্ঝা না ম্যায়নে?”

অর্থাৎ ডলারগুলো গভর্ণমেন্ট আমাকে দিয়েছে খরচ করার জন্য, ফেরত দেয়ার জন্য নয়। এবার আমি ঠিক বুঝেছি। তাই না?

হেসে বললাম, “হ্যাঁ, ঠিক বুঝেছো।”

বৃদ্ধ তখন বললো, “ধানিয়াবাদ”।

এই ঘটনাটাই প্রমাণ করে যে মনের ভাব প্রকাশে ভাষার কি অপরিসীম গুরুত্ব এবং language barrierটা মানুষকে কত দূরেই না সরিয়ে রাখে।

-মার্চ ৭, ২০২৪

(পনেরো)

বাংলাদেশের কোটিপতিরা

অংকশাস্ত্রের কথাবার্তা।

১০০ হাজারে ১ লাখ। ১০০ লাখে ১ কোটি অথবা ১ ক্রোড়। এই সংখ্যাগুলো একমাত্র ইন্ডিয়ান সাবকন্টিন্টের ইন্ডিয়া, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ এই তিন দেশেই পরিচিত এবং প্রচলিত। একই ভাবে লাখ টাকার মালিক লাখপতি এবং কোটি টাকার মালিক কোটিপতি অথবা ক্রোড়পতি কথাগুলোও শুধু এই তিনটি দেশেই পরিচিত।

বহির্বিশ্বে গণনার সংখ্যাটা হচ্ছে millionaire (মিলিয়নেয়ার) এবং billionaire (বিলিয়নেয়ার)- ১০০০ হাজারে এক মিলিয়ন এবং ১০০০ মিলিয়নে এক বিলিয়ন। মিলিয়ন ডলারের মালিকের পরিচয় তিনি একজন মিলিনেয়ার এবং বিলিয়ন ডলারের মালিকের পরিচয় তিনি একজন বিলিয়নেয়ার।

অপরদিকে “বহু” বুঝাতে multi (মাল্টি) কথাটা শুরুতে যোগ করে বহু মিলিয়নের মালিককে একজন multimillionaire এবং বহু বিলিয়নের মালিককে একজন multibillionaire বলেও পরিচয় দেয়া যায়, যথা Elon Musk (Tesla), Jeff Bejos (Amazon), Ernst Hall (LVMH), Bill Gates (Microsoft), Larry Page (Google), Mark Zuckerburg (Facebook), etc.

১৯৭১ সনে তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তানে (লোক সংখ্যা ৭ কোটি ৫০ লাখ) কোন কোটিপতির অস্তিত্ব ছিল না। তবে বাংগালীরা জানতো যে ৫ কোটি ৮০ লাখ লোকের দেশ পশ্চিম পাকিস্তানে ২২টি কোটিপতি পরিবার রয়েছে- আদমজী, ইস্পাহানী, দাউদ, ইত্যাদি।

এবার পট পরিবর্তন।

১৯৭১ সনে পাকিস্তান থেকে রক্তাক্ত সংগ্রামের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশরূপে বিশ্বের দরবারে আবির্ভূত হলো, সে আজ ৫৩ বছর আগের কথা। যুদ্ধবিধ্বস্ত চরম দরিদ্র বাংলাদেশ (যার বিদ্রূপাত্মক পরিচয় ছিল “তলাবিহীন ঝুড়ি”- a bottomless basket) বহু অসাধ্যসাধন করে আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। World economyতে বাংলাদেশের স্থান ২০২৩ সনে 25th largest by PPP (Purchasing Power Parity) and 33rd by Nominal Terms. ২০২৩ সনে বাংলাদেশের Per Capita Income ছিল ২,৫২৮ US dollars (যা ১৯৭১ সনে ছিল মাত্র ১২৮ US dollars) বাংলাদেশের বর্তমান লোক সংখ্যা আনুমানিক ১৭০ মিলিয়ন (১৭ কোটি)

তুলনামূলকভাবে পাকিস্তানের ২০২৩ মাথাপিছু আয় ছিল ১,৪৭৪ US dollars, এবং economy size 24th (PPP) and 46th by Nominal Terms. পাকিস্তানের বর্তমান (২০২৪) জন সংখ্যা ২৪ কোটি ৫২ লাখ।

এবার কোটিপতিদের খোঁজখবর নেয়া যাক।

১৯৭১-এর কোটিপতিবিহীন বাংলাদেশে ৫৩ বছর পর ২০২৩ সনের শেষে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮ জন। শুধুমাত্র ২০২৩ সনেই নূতন কোটিপতি হয়েছেন ৬,৯৬২ জন। বাংলাদেশ ব্যাংক এই তথ্য প্রকাশ করেছে। (সূত্র : Online বাংলা পত্রিকা দেশে বিদেশে, ১৫ই মার্চ, ২০২৪)

আমেরিকাতে একটা কথা প্রচলিত আছে যে যাঁরা ধনী ব্যক্তি তাঁরা Rich কিন্তু যদি অতি ধনী হন (যাঁরা শতশত বিলিয়ন ডলারের মালিক), তাঁরা হলেন Dirty Rich! Just a joke!

গরীব বাংলাদেশে যেখানে চরম দারিদ্র্য, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যহীনতা ও অনাহারে জর্জরিত কোটি কোটি লোকের বাস, যাদের কষ্ট ও অসহায়তা দেশের প্রতিটি শহরে-গ্রামে নিত্য চোখে পড়ে, সেইসব হতভাগা দেশবাসীর প্রতি আমার দেশের লক্ষাধিক (এবং দ্রুত বর্ধমান) কোটিপতিরা যদি একটু মানবিক দৃষ্টি নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়াতেন, তাহলে জনসাধারণ কতইনা উপকৃত হতে পারতো। ওদের মলিন মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারতো। আছে কি কোন উদার হৃদয় কোটিপতি আমার বাংলাদেশে?

-মার্চ ১৬, ২০২৪

(ষোলো)

একজন ফার্মাসিস্টের ভালোবাসা

ব্রাদার মুহাম্মাদ একজন বয়ষ্ক ব্যক্তি। ঈজিপশিয়ান। পেশাগতভাবে একজন qualified pharmacist. আমাদের বাসার রাস্তার ওপারের একটা ফার্মেসীর মালিক তিনি। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে ওখানেই যাই অষুধ আনতে। আমি বৃদ্ধ লোক, আমার স্ত্রীও তাই। তাই ঘনঘন নানা অসুখের অষুধ আনতে ওখানে বারবারই যেতে হয় আমাকে। সেই সূত্রেই পরিচয়। ফার্মেসীর কর্মীরা সবাই মহিলা- এরাব, ক্যানাডিয়ান, ফিলিপিনা। সবার ব্যবহারই উত্তম, প্রশংসনীয়।

ফার্মেসীতে গেলেই ব্রাদার মুহাম্মাদ হাসিমুখে আসসালামু ’আলাইকুম জানিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, (আরবী ভাষায়), কেইফ হা-ল? অর্থাৎ আপনি কেমন আছেন?

উত্তরে বলি, আলহামদুলিল্ল­া-হ! তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করেন, “আইয়্যা খিদমাহ?” অর্থাৎ What can I do for you?

সযত্নে আমাদের সব প্রেসক্রিপশন fill out করেন ব্রাদার মুহাম্মাদ অথবা তার অন্যান্য কর্মীরা।

একদিন গেলাম একটা প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে, চোখের অষুধ চাই। প্রেসক্রিপশনটার উপর চোখ বুলিয়ে তিনি বললেন, “ব্রাদার, এই অষুধটা OHIP cover করে না। এটা আপনাকে কিনতে হবে, মূল্য ৮৮ ডলার। অনেক খরচ। অষুধ উত্তম নিঃসন্দেহে।

“তবে আমার একটা suggestion আছে। Exactly এটার মত না হলেও similar অপর একটা eye drops আছে, OHIP-covered. সেটার জন্য আপনার খরচ হবে মাত্র ৪ ডলার। Very big saving.

“যদি রাজী থাকেন তাহলে আমি আপনার চোখের ডাক্তারের সংগে ফোনে যোগাযোগ করে কথা বলে দেখতে পারি তিনি তাঁর দেয়া এই অষুধটার বদলে অন্য অষুধটা  prescribe করতে রাজী আছেন কিনা।”

৮৪টা ডলার তো একটা বড় অংকের saving. চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি? রাজী হলাম।

তৎক্ষণাৎ ব্রাদার মুহাম্মাদ আমার চোখের ডাক্তারের সংগে ফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টা আলোচনা করলেন। ডাক্তার convinced হয়ে নূতন eye dropsটা prescribe করে দিলেন। আগেরটাও রইলো।

আমি তো মহাখুশী। ব্রাদার মুহাম্মাদকে ধন্যবাদ জানিয়ে দু’সপ্তাহ ব্যবহারের জন্য অষুধের bottleটা হাতে নিয়ে ঘরে ফিরে এলাম। ব্যবহার করলাম। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য যে এই eye dropsটা আমার চোখের problems and discomforts সম্পূর্ণ দূর করতে পারলো না, বেশী দামের অষুধটাই অবশেষে কিনতে হলো। ব্যবহার করলাম, ভালো হয়ে গেলাম।

কিন্তু তথাপি আমি ব্রাদার মুহাম্মাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এমন ভালোবাসা, এমন সহৃদয়, পরোপকারী ফার্মাসিস্ট, যে আমার আত্মীয় নয়, বন্ধু নয়, এমনকি একজন বাংলাদেশীও নয়, আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে কি? শোকরান, শোকরান ব্রাদার মুহাম্মাদ। আল্লাহ তোমার উপর রহমত করুন।

-মার্চ ১৭, ২০২৪

(সতেরো)

দীর্ঘজীবীদের দুঃখ-দুর্দশা

“আমাদের সন্তান দীর্ঘজীবী (দীর্ঘায়ু) হোক”- স্রষ্টার কাছে মা-বাবার এই প্রার্থনা সেই আদিকাল থেকেই মানবসমাজে বিদ্যমান রয়েছে। গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলে তাঁরা মাথায় হাত রেখে অথবা চিবুকটা ডান হাত দিয়ে ছুঁয়ে বলতেন, “তুমি দীর্ঘজীবী (দীর্ঘায়ু) হও”, অথবা বলতেন, “তুমি শতায়ু হও।” এটা ছিল তাঁদের আশীর্বাদ। একই আশীর্বাদ হিন্দি-উর্দু ভাষায় : “সও সা-ল জিয়ো” (শত বর্ষ বেঁচে থাকো তুমি।)

অতীতে যেমন বর্তমান যুগেও অগণিত নারীপুরুষ দীর্ঘজীবীর দেখা পাওয়া যায় দেশে-বিদেশে। ৮৫ থেকে ১০০ বছর আয়ু একটা অতি দীর্ঘ জীবন বটে, তবে এদের দেখা মিলে আজকাল অনায়াসেই। উন্নতমানের খাদ্য-বাসস্থান এবং স্বাস্থ্য-সেবা ক্রমে মানুষকে অধিকতর দীর্ঘায়ু করে তুলছে।

আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে একথাটা দৃঢ়ভাবেই বলতে পারি যে দীর্ঘজীবীদের জীবনটা নানা দুঃখ-দুর্দশা, কষ্ট ও অভিযোগে পূর্ণ। তারা সুখীজন নন, নানা কষ্টে দিন কাটান তারা। আমার বয়স এখন ৯১ বছর, আরো ৯টি বছর বেঁচে থাকলে একজন শতায়ু ব্যক্তি হবো। বিচিত্র কিছু নয় কারণ দাদা (বাবার বাবা) পূর্ণ ১০০টি বছর এ ধরার বুকে কাটিয়ে ১৯৬০ সনে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। দীর্ঘ জীবন কোন আশীর্বাদ নয়, উল্ল­সিত হওয়ার মত কোন বিষয় নয়। দীর্ঘজীবীদের দুঃখ-দুর্দশা ও অভিযোগের কাহিনী বহুমুখী-

১.           তারা প্রয়োজনীয় কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। তারা নানা ধরনের দৈহিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করেন। স্মৃতিশক্তি অথবা দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে কেউকেউ অসহনীয় যন্ত্রণায় ভুগেন।

২.          আর্থিক অভাবে কষ্ট পান যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ সঞ্চয় ব্যাংকে না থাকে।

৩.          বহু আপনজন ও বন্ধুদের মৃত্যু দেখে বা সংবাদ শুনে মানসিক বেদনায় ভুগেন, ব্যথাভরা স্মৃতির বোঝা টানতে হয়।

৪.অনেক ক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যু অথবা স্ত্রীর মৃত্যুর মত অসহনীয় ক্ষতির/বেদনার বোঝাও বহন করতে হয় দীর্ঘ দিন ধরে। দুঃখের স্মৃতি বড় জ্বালাময়।

৫.          অর্থের-সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও কখনো কখনো নিকটাত্মীয়দের ছল-চাতুরীর শিকার হয়ে বঞ্চিত/দুর্দশাগ্রস্ত জীবন কাটাতে হয়।

৬.          দৈহিক চলৎশক্তির অভাবে অহরহই নানা জরুরী প্রয়োজন মেটাতে পরনির্ভরশীল হতে হয়, নানা অবহেলা-অপমান সহ্য করতে হয়।

৭.          সন্তানেরা সহানুভূতিশীল না হলে তারা নিজেদের পরিবারের উপর একটা অবাঞ্ছনীয় বোঝা বলে গণ্য হন।

৮.          বৃদ্ধদের সংগে গল্প করার সময় বা উৎসাহ কারো নেই। তারা বন্ধুহীন, মনের কথা বলে হালকা হওয়ার মত সংগীর অভাবে শূন্যতায় ভুগেন, চুপচাপ নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে বাধ্য হন। নিজ ঘরেই নিতান্ত একাকী  হয়ে পড়েন। সময় একটা বোঝা, জীবন একটা অসহনীয় বোঝা হয়ে পড়ে।

৯.          অতীতে কৃত কোন অপরাধ থাকলে সেই বেদনাময় স্মৃতির কষ্টকর বেদনায় ভুগেন।

১০.        ঋণের বোঝা থাকলে জীবনটা আরো দুঃসহনীয় হয়ে উঠে।

১১.         অন্য একটা ভাবনাও বৃদ্ধদের কষ্ট দেয়। সেটা হলো, “এই অর্থহীন, গুরুত্বহীন, নিষ্ফল, বেদনাময় জীবন হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ/God/ভগবান আমাকে কেন আজো বাঁচিয়ে রেখেছেন? কার কি উপকার হচ্ছে এতে?”

-মার্চ ২০, ২০২৪

সাইদুল হোসেন। মিসিসাগা