সমৃদ্ধি সত্ত্বেও অন্টারিওতে শিশুদের দারিদ্র্য ‘ক্রমবর্ধমান’
পাঁচ লাখ শিশু এখনও দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : সম্পদশালী একটি দেশের সমৃদ্ধ এক প্রদেশ অন্টারিও। তারপরও এখানকার প্রতিটি সমাজেই (community) শিশু দারিদ্র্য সামাজিক উদ্বেগের এক বড় কারণ। Canadian Centre for Policy Alternatives ২০১৯ সালে এ বিষয়ে এক বিস্তারিত গবেষণা রিপোর্ট তুলে ধরে। নিচে সেই রিপোর্টটি তুলে ধরা হলো।
২০১৯ সালে এই প্রদেশে জীবনযাপনের বাস্তবতা ছিলো এমন যে, প্রতি ছয়টি শিশুর মধ্যে একজন কখনই যথেষ্ট পরিমাণ খাবার পায়নি। ২০১৯ সালই হলো সর্বসাম্প্রতিক বছর যার তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শিশু দারিদ্র্যের হার ২০১৩ সালের ২৩.৪% থেকে কমে ২০১৯ সালে ১৭.৬% ভাগে দাঁড়িয়েছে। তারপরও ২০১৯ সালে পাঁচ লাখ শিশু দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করেছে।
কিছু পরিবারে একাধিক শিশু থাকার কারণে দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করা শিশুর সংখ্যার চেয়ে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা কম। অন্টারিওতে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা ২০১৩ সালে ছিল ৪০৯,৯০০ টি। ২০১৯ সালে সেটি কমে ৩২৩,৯৮০ টিতে দাঁড়িয়েছে (হ্রাসের পরিমাণ মোট পরিবারের মধ্যে ১৮.১%)। শুধু দম্পতি নিয়ে যেসব পরিবার সেগুলোর ক্ষেত্রে দারিদ্র্যের হার হ্রাসের হার (১১.৬% থেকে কমে হয়েছে ৭.৮%) শুধু বাবা অথবা শুধু মাকে নিয়ে যেসব পরিবার (lone-parent) সেগুলোর চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি (৩৭.৭% থেকে কমে হয়েছে ৩১.৬%)।
ভিত্তির পর্যায়ে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই একটি জিনিস অভিন্ন: সেটি হলো, তাদের যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ নেই। অন্টারিওতে দারিদ্র্য অবসানের যে কোনও উপায়ের মধ্যে প্রধান উপাদান হলো উচ্চতর আয়।
২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শিশু ও পারিবারিক দারিদ্র্যের হারের যে উন্নতি ঘটেছে সেটি ঘটেছে আয়ের দুটি উৎস থেকে: কর্মসংস্থানের কারণে পরিবারের উচ্চ আয় এবং পরিবারগুলোর জন্য দেয়া সরকারি অর্থের সরবরাহ (সহায়তা) বৃদ্ধি।
ওই ছয় বছরে অন্টারিওতে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী শ্রমিকদের বেকারত্বের হার কমেছে পূর্ণ দুই শতাংশ পয়েন্ট। এর সঙ্গে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারিতে অন্টারিওতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে যখন প্রদেশটি ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ১১.৬০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৪ ডলারে উন্নীত করে। এর ফলে সারা বছর পূর্ণকালীন চাকরিতে নিয়োজিতদের বেতনের পরিমাণ বছরে ৪,০০০ ডলারের বেশি বৃদ্ধি পায়।
আয় স্থানান্তরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে ২০১৬ সালে যখন কেন্দ্রীয় সরকার কানাডার শিশুদের জন্য সুবিধা (CCB) দিতে শুরু করে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সিসিবির মাধ্যমে দেয়া অর্থের পরিমাণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যা ছিলো বছরে ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ৬,৬৩৯ ডলার এবং অপেক্ষাকৃত বড় শিশুদের জন্য ৫,৬০২ ডলার।
কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের দেয়া সহায়তার অর্থ অন্টারিওর শিশু ও পারিবারিক দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরকারি সহায়তা না দেয়া হলে ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার হতো ৩৩.৮%। তাই সরকারি সহায়তা ধন্যবাদার্হ্য।
২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে অন্টারিওর শিশু দারিদ্র্যের হারের উন্নতি হলেও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে কিনা তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। শিশু দারিদ্র্য ও পারিবারিক দারিদ্র্যের যে সমস্যা তার সমাধানের জন্য সরকারগুলোর চলমান যেসব নীতিগত উদ্যোগ রয়েছে সেগুলোর পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে।
কোভিড-১৯ মহামারি শেষ হয়ে আসার মুহূর্তে এই নিবন্ধে ২০১৯ সালের আগের বছরগুলোর গতি ধরে রাখার জন্য ১৭দফা নীতিগত সুপারিশমালা পেশ করা হলো।
সুপারিশমালায় রয়েছে:
* কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে এর মাধ্যমে আয় বাড়ানোর কৌশল, ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো ও চাকরির মান উন্নয়ন, এবং কর্মস্থলে লৈঙ্গিক ও বর্ণসাম্য সমুন্নতকরণ;
* সামাজিক সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো;
* আরও বেশি সংখ্যক অ-বাণিজ্যিক আবাসন নির্মাণ এবং ভাড়ার ওপর কঠোরতর নিয়ন্ত্রণ;
* শিশু প্রযত্ন মানুষের আরও সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে নতুন চুক্তি সম্পাদন;
* পাবলিক স্কুলে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং মাধ্যমিক উত্তর পর্যায়ে অবৈতনিক শিক্ষা চালু করা; এবং
* কর ব্যবস্থাপনাকে আয় পুনর্বণ্টনের কাজে ব্যবহার করা।
সর্বোপরি এই রিপোর্টে সরকারগুলোর প্রতি দারিদ্র্য হ্রাসের বিষয়টিকে জরুরী অগ্রাধিকার হিসাবে বিবেচনা করার আহবান জানানো হয়।
কোভিড-১৯ এর আগে অন্টারিওর শিশু ও পারিবারিক দারিদ্র্য
কোভিড-১৯ এর কারণে ২০১৯ সালে অন্টারিওতে প্রথম লকডাউন ঘোষণার ২০ মাসেরও বেশি সময় পর আজ মনে হচ্ছে ঘটনাটি কত না দূরের! সেই সময় থেকে এই প্রদেশটি নাটকীয় সব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। এক লাখের বেশি অন্টারিওবাসী ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন। বেকারত্ব বেড়েছে, তারপর আবার কমেছে, তারপরও কিছু খাতে বেকারত্ব এখনও কোভিড-পূর্ব অবস্থায় ফেরেনি। লাখ লাখ অন্টারিওবাসীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। আর দেশের অর্থনীতি ও জনগণকে সহায়তার জন্য সরকারগুলো শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেছে।
তারপরও অন্টারিওজুড়েই শিশু ও পরিবারগুলো হিমশিম খাচ্ছে
কানাডায় যদি এমন একটি সড়কের নাম করতে হয় যেটি দেশের অনন্য সমৃদ্ধির প্রতীক হতে পারে তাহলে সেটি হলো টরন্টোর কেন্দ্রস্থলের কিং অ্যান্ড বে স্ট্রিট। এখানেই রয়েছে কানাডার বৃহত্তম ব্যাংক।
কানাডার ছয়টি বৃহৎ ব্যাংক ২০১৯ সালে টানা ১০ম বছরের মত রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা অর্জন করে। এ বছর তাদের নেট আয় হয় চার হাজার ৬৬০ কোটি ডলার। ছয়টি ব্যাংকের ছয়জন সিইওর আয়ের গড় করলে প্রত্যেকের আয় দাঁড়ায় এক কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি, যা দেশের সর্বোচ্চ বেতনভোগী সিইওদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির নিশ্চয়তা দেয়।
ভুল করবেন না: এদেশে অর্থ আছে, আর এই অর্থের সিংহভাগ আছে ঠিক এই টরন্টো শহরে। কিন্তু এখানকার প্রত্যেকটি মানুষ ওই অর্থের ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না।
টরন্টোর ব্যাংক ভবনগুলো দীর্ঘতর ছায়া ফেলে, রূপক অর্থে যেমন, তেমনই আক্ষরিক অর্থেও। বিকেলে যখন সূর্য পাটে বসে তখন ওই ভবনগুলির ছায়া সরাসরি এসে পড়ে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের নির্বাচনী এলাকা ‘টরন্টো সেন্টারে’।
টরন্টো সেন্টার এক নিবিড় নগর এলাকা যা মোটামুটিভাবে ডন নদী ও বে স্ট্রিটের মধ্যে বিস্তৃত। কানাডার অন্য যে কোনও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচনী এলাকার চেয়ে আয়তনে ক্ষুদ্র (ছয় বর্গ কিলোমিটার) এই টরন্টো সেন্টারে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাস। এটি টরন্টোর একটি দ্রুত বিকাশমান এবং বৈচিত্র্যময় অংশ। এখানে যে বাসিন্দারা থাকেন তারা গড় বয়সের দিক থেকে অন্য সব টরন্টোবাসীর চেয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং তাদের পরিবারগুলোও ছোট। টরন্টো সেন্টারের বাসিন্দাদের শ্রমবাজারে যোগ দেয়ার সুযোগ যেমন বেশি তেমনই তাদের চাকরি পাবার সম্ভাবনাও প্রদেশের শ্রমশক্তির শ্রমবাজারে অংশ নেয়া ও কর্মসংস্থানের গড় হারের চেয়ে বেশি।
তবুও, এখানকার বাসিন্দাদের গড় পারিবারিক আয় জাতীয় গড়ের চেয়ে নিচে, যদিও এখানকার সামর্থবান জনসংখ্যার ৭০% ভাগেরই কোনও না কোনও ধরণের মাধ্যমিক-উত্তর ডিপ্লোমা অথবা ডিগ্রি আছে, যেখানে টরন্টোর মোট জনসংখ্যার মধ্যে গড়ে ৫৫% জন এ ধরণের ডিপ্লোমা বা ডিগ্রিধারী। এখানে ৫০% ভাগ বাসিন্দা জাতিগত পরিচয়ধারী এবং ৪০% ভাগ অভিবাসী। মাত্র ২৯% পরিবার বাড়ির মালিক, এর সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা হলো টরন্টো নগরীতে বাড়ির মালিকানা রয়েছে গড়ে ৫৩% মানুষের এবং অন্টারিও প্রদেশে ৭০% মানুষের।
টরন্টো সেন্টারের আরও একটি আলাদা বিশেষত্ব আছে: সেটি হলো, বে স্ট্রিটের ঝলমলে টাওয়ারগুলোর মাত্র কয়েক পা দূরেই আছে অন্টারিওর সর্বোচ্চ শিশু দারিদ্র্যের হার।
অন্টারিওর সামর্থ আছে সেবা দেওয়ার
শিশু ও পারিবারিক দারিদ্র্যসহ অন্টারিওতে সার্বিকভাবে দারিদ্র্য পরিস্থিতির স্থায়িত্ব সম্পর্কে নিছক অনুভব নয় বরং অংশত বাস্তবেই এমন ধারণা রয়েছে যে, অন্টারিও ও এর বিভিন্ন স্তরের সরকারি কাঠামো এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু করার মত সমর্থবান নয়। এই ধারণা মোটেও সত্য নয়।
এই প্রদেশে যদি শিশু দারিদ্র্য
স্থায়ীভাবে থেকে যায় তাহলে সেটা এজন্যে নয় যে, এটা দূর করার মত সম্পদ আমাদের নেই, বরং এটা থেকে যাবে কারণ আমাদের সেটা দূর করার ইচ্ছাই নেই।
১৯৮৯ সালে কানাডার রাজনীতিকরা ২০০০ সালের মধ্যে শিশু দারিদ্র্য নির্মূলের অঙ্গীকার করেছিলেন। সেই সময়সীমা এসেছে এবং চলেও গেছে, আর সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কিছু অগ্রগতি সত্ত্বেও শিশু ও পারিবারিক দারিদ্র্য রয়েই গেছে।
কানাডীয় ও অন্টারিওবাসীর আরও বেশি কিছু করার আছে। এখন কাজটা শেষ করার সময় উপস্থিত। শিশু ও পারিবারিক দারিদ্র্য নির্মূলে আরও একবার প্রতিজ্ঞা করার এখনই সময়।
এই নিবন্ধে অন্টারিওতে শিশু দারিদ্র্যের বর্তমান অবস্থা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং এর মোকাবেলায় গ্রহণের জন্য কিছু নীতিগত ব্যবস্থাপত্র পেশ করেছে।
২০১৯ সালে অন্টারিওতে শিশু দারিদ্র্য
কীভাবে দারিদ্র্যের পরিমাপ করা যায়?
শিশু ও পারিবারিক দারিদ্র্যসহ সার্বিক দারিদ্র্য কীভাবে পরিমাপ করা যায় সে বিষয়ে পণ্ডিত ও নীতি নির্ধারকরা কয়েক শতাব্দী ধরে আলোচনা করেছেন।
দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার অর্থ নেহায়েত খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয়ের মত মৌলিক চাহিদা পূরণের চেয়েও বেশি কিছু।
ক্যারিনা মুড ও জান ও. জনসন ২০১৫ সালে লিখেছিলেন, “দরিদ্র হওয়ার অর্থ শুধু অন্যদের সঙ্গে সমাজে সমমর্যাদার ভিত্তিতে অংশ নিতে না পারা এবং সে কারণে দীর্ঘ মেয়াদে সমাজের নাগরিকদের হাতেই সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়া অথবা অর্থসম্পদ না থাকার কারণে সামাজিক ও নাগরিক জীবন থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেয়াই নয়।” সেজন্যে, কোন ব্যক্তি বা পরিবারের দারিদ্র্য রেখা নিরূপণের প্রচেষ্টায় ওই ব্যক্তি বা পরিবারের পক্ষে তাদের সামাজিক জীবনে সত্যিকার অর্থেই অংশ নিতে পারার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন সেটি অবশ্যই হিসাব করতে হবে।
এই সবগুলো এবং আরও অনেক প্রশ্ন, দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চষ্টা করছে এমন পরিবারগুলোর বাস্তব জীবনের উপাদান হিসাবে কাজ করে। তবে একটি মৌলিক বিষয় এই যে, দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে একটি বিষয় অভিন্ন: সেটি হলো, তাদের যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ নেই। অন্টারিওতে দারিদ্র্য দূর করার সব উপায়ের মধ্যে প্রধান উপায় হলো উচ্চ আয়।
অন্টারিওতে শিশু ও পারিবারিক দারিদ্র্যের সার্বিক হারের কতটা পরিবর্তন ঘটেছে?
অন্টারিওতে শিশু দারিদ্র্যের হারের প্রসঙ্গে সুসংবাদ এবং দুঃসংবাদ দুটোই আছে। সুখবর হলো, ২০১৯ সালের হিসাবে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী শিশুর সংখ্যা একবিংশ শতকে যে শীর্ষে পৌঁছেছিলো সেখান থেকে ছয় বছর ধরে কমে এসেছে। খারাপ খবর হলো, এখনও পাঁচ লাখ শিশু দরিদ্র।
২০১৩ সালে ৬ লাখ ৪৫,৭১০ জনের বেশি শিশু এমন পরিবারে বাস করতো যাদের আয় দারিদ্র্য রেখার নিচে।
শতকরা হিসাবে শিশু দারিদ্র্য ২০১৩ সালের ২৩.৪% থেকে ২০১৯ সালে ১৭.৬% এ নেমে এসেছে। এই পরিবর্তন ১৮ বছরের কম বয়সী প্রায় দেড় লাখ শিশুকে দারিদ্র্য রেখার ওপরে তুলে এনেছে।
এটা ঠিক যে, পরিবার দরিদ্র বলেই শিশুরা দরিদ্র। বিস্ময়ের কিছু নেই যে, শিশু আছে এমন পরিবারগুলোর দারিদ্র্যের হারও কমেছে।
দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা দরিদ্র শিশুদের চেয়ে কম। এর সহজ কারণ হলো, অনেক পরিবারেই একাধিক শিশু আছে। অন্টারিওতে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা ২০১৩ সালের ৪০৯,৯০০ থেকে (মোট পরিবারের ১৮.১%) কমে ২০১৯ সালে ৩২৩.৯০৮ টিতে (১৩.৮%) দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাসের হার শুধু বাবা অথবা শুধু মায়ের পরিবারের চেয়ে (৩৭.৭% থেকে ৩১.৬%) অনেক বেশি ছিলো কেবল দম্পতির পরিবারে (১১.৬% থেকে ৭.৮%)।
২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সব ধরণের পরিবারেরই দারিদ্র্য কমেছে। সেটা বাবা-মা উভয়ের কিংবা শুধু একজনের নিয়ন্ত্রিত পরিবার যাই হোক না কেন। অবশ্য এই পরিবর্তন সত্ত্বেও শুধু বাবা অথবা শুধু মায়ের নিয়ন্ত্রিত যেসব পরিবারে তিন বা ততোধিক শিশু আছে সেগুলোর দারিদ্র্যের হার ২০১৯ সালেও ৪০% এর ওপরেই থেকে যায়।
দারিদ্র্যের সমাধান
২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হারের উন্নতি হলেও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই: আয় বাড়ানোর প্রসঙ্গ এলে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো এখনও বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়। একটি বাঁধা হলো নিছক দারিদ্র্যের গভীরতা: সাধারণত স্বল্প-আয়ের পরিবারগুলোর অবস্থা এমন নয় যে, কয়েক ’শ ডলার দিয়েই তারা দারিদ্র্যের স্তর পেরিয়ে উঠতে পারবে। তাদের দরকার হাজার হাজার ডলার।
অন্টারিওর সব নগর ও শহরেই শিশু দারিদ্র্য আছে, কিন্তু আয় বাড়ানোর ব্যাপারে সব পরিবারই একই রকম বাঁধার মুখে পড়ে না। পরিবারে দারিদ্র্যের উপস্থিতি এবং এর গভীরতাকে প্রভাবিত করে বেশ কয়েকটি উপাদান, যার মধ্যে রয়েছে: পরিবারটি দম্পতির হাতে নাকি শুধু বাবা অথবা শুধু মায়ের হাতে পরিচালিত; একক অভিভাবকের পরিবারে নেতৃত্বদানকারীর লৈঙ্গিক পরিচয়; পরিবারটি জাতিগত নাকি আদিবাসী; পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা; শিশু প্রযত্নের প্রাপ্যতা; এবং আবাসন, খাদ্য, চিকিৎসা, লেখাপড়ার খরচ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয়ের পরিমাণ।
আর এটা মোটেও বিস্ময়ের কিছু নয় যে, জাতিগত পরিচয়ের শিশুরা শ্বেতাঙ্গ শিশুদের চেয়ে বেশি দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। ২০১৬ সালের শুমারি অনুযায়ী, অন্টারিওর জাতিগত পরিচয়ের শিশুদের ২৬% এমন পরিবারের সদস্য যার আয় দারিদ্র্যসীমার নিচে। সেই তুলনায় শ্বেতাঙ্গ শিশুরা এমন পরিবারের সদস্য ছিলো ১৪.৫%।
অন্টারিওতে দারিদ্র্য হ্রাসের যে কোনও পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নিচের সুপারিশগুলো হবে ঠিক লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ।
সুপারিশ #১: ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো এবং ছাত্র, কৃষি শ্রমিক ও অন্যান্যদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মজুরিসীমা বাতিল করা
কোভিড-১৯ মহামারিতে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আমাদের অর্থনীতি এবং সার্বিকভাবে পুরো সমাজের কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেয়ার জন্য স্বল্পমজুরির কত শ্রমিক প্রয়োজন। অন্টারিওর শ্রমিকদের জন্য ন্যায়বিচার (ঔঁংঃরপব ঋড়ৎ ডড়ৎশবৎং) ন্যূনতম মজুরি প্রতি ঘণ্টায় ২০ ডলার করার আহবান জানিয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ২০ ডলার মজুরি এবং বর্তমানে প্রচলিত ১৪.৩৫ ডলারের (পহেলা জানুয়ারি ২০২২ সালে হচ্ছে ১৫ ডলার) যে ব্যবধান তা হাজার হাজার মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনবে।
উপার্জনে সহায়তা
অন্টারিওর সামাজিক সহায়তার হার খুবই কম। ২০১৯ সালের হিসাবে এই প্রদেশের দুটি প্রধান সামাজিক সহায়তা কর্মসূচি ওডব্লিউ (OW) এবং ওডিএসপি (ODSP) সেইসব ব্যক্তি ও পরিবারকে এমন পরিমাণে আয় সহায়তা দিয়েছে যা ‘কর পরিশোধের পর স্বল্প-আয় পরিমাপের (‘The Low-income measure, after tax’) হারের চেয়েও অনেক কম।
যখন আয় কম এবং ভাড়া খুব বেশি, তখন কিছু তো দিতেই হবে। সামাজিক সুবিধা পান এমন পরিবারসহ দরিদ্র অনেক পরিবারের কাছে ওই কিছুর মানে হলো খাবার। ২০১৭-১৮ সালে অন্টারিওর প্রতি আটটি পরিবারের মধ্যে একটি ছিলো “খাদ্য নিরাপত্তহীন” যার মানে হলো, প্রায়ই তাদের খাবারের অভাবে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। তারা কখনও প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমাণে খাবার কেনে অথবা এমন খাবার কেনে যা যথেষ্ট পুষ্টিকর নয়। আর অনেক সময় তারা একবেলা খাবার খায় না কিংবা সারাদিন বা তারও বেশি সময় না খেয়ে কাটায়।
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা পরিবারগুলোর যে পরিসংখ্যান তা সার্বিকভাবে নিম্ন আয়ের পরিবারের সংখ্যার অনুরূপ: এক্ষেত্রে একক নারীর কর্তৃত্বাধীন পরিবারের সংখ্যা সর্বোচ্চ যাদের ৩৩% খাদ্য নিরাপত্তাহীন। একক পুরুষের কর্তৃত্বাধীন পরিবার সে তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে, কারণ, তাদের ২৫% খাদ্য নিরাপত্তাহীন। দম্পতির কর্তৃত্বাধীন এবং সন্তান আছে এমন ১২% পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীন। সন্তান নেই এমন দম্পতির কর্তৃত্বাধীন পরিবারগুলোর সাত শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীন। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে জাতিগত পরিচয়ের মানুষদের পরিবারগুলোতে বেশি। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সর্বোচ্চ হার কৃষ্ণাঙ্গ ও আদিবাসী পরিবারগুলোতে।
খাবার কিনতে টাকা লাগে, আর ভালো খাবারের জন্য লাগে আরো বেশি টাকা। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং দারিদ্র্যের কারণে সৃষ্ট সব রকম নিরাপত্তাহীনতার সমাধানের যে কোনও পরিকল্পনায় স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর আয় অবশ্যই বাড়াতে হবে।
সুপারিশ #২: ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য সামাজিক সহায়তার হারের নাটকীয় বৃদ্ধি
সামাজিক সহায়তা এমন হতে হবে যা জনগণকে সম্মানের সঙ্গে জীবন যাপনে সহায়ক হয় এবং তাদের কাজে লাগে, কিন্তু অন্টারিওতে তা হচ্ছে না। যারা OW এবং ODSP-র সহায়তা পান তারা এবং তাদের সন্তানরা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে।
সামাজিক সহায়তার হার অবিলম্বে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে ১৯৯৪ সালের পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে।
সুপারিশ #৩: সামাজিক সহায়তার আওতায় দেয়া অর্থের ক্ষেত্রে স্বল্প-আয় পরিমাপের (করের পর) সীমা পর্যন্ত অর্থ ফেরত নেয়ার সব ধরণের ব্যবস্থা (কর বা অন্য কোনওভাবে আদায় করা) বন্ধ করা।
নীতিমালা যদি জনগণকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা হয় তাহলে সেটা আরও দ্রুত করার একটি উপায় হলো দারিদ্র্য থেকে সত্যি সত্যি বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত তাদেরকে দেয়া অর্থের পুরোটাই তাদের রাখতে দেয়া।
সুপারিশ #৪: আরও বেশি অ-বাণিজ্যিক আবাসন তৈরি করা।
আবাসন বাজার যদি সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সর্বোত্তম সমাধান হতে পারে, ওই বাজারের বাইরে কিছু করা। বাসিন্দারা সত্যি সত্যি তাদের সাধ্যের মধ্যে বসবাস করতে পারে এমন আবাসন তৈরি না করার কোনও যুক্তি নেই।
শিশু প্রযত্ন
শিশু প্রযত্ন হলো একটি ক্ষেত্র যেখানে সরকারী নীতি পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার মানের ওপর বিপুল প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
কানাডার প্রদেশগুলোর মধ্যে অন্টারিওতে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুর মায়েদের শ্রম শক্তিতে যোগদানের হার তৃতীয় সর্বনিম্ন।
অন্টারিওতে বসবাসকারী কোনও দরিদ্র বাবা-মার পক্ষেই অনুমোদিত শিশু প্রযত্ন কেন্দ্রের পূর্ণ সময়ের সেবা গ্রহণের ফি পরিশোধ করা সম্ভব নয়। কানাডার সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভ-এর এক বার্ষিক সমীক্ষা অনুযায়ী, অন্টারিওর কিছু শহরে , যেমন উইন্ডসর ও ব্রামটনে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে ফি-র পরিমাণ কমেছে, কিন্তু অন্যগুলোতে অনেক বেড়েছে: ২০১৯ সালে টরন্টোতে কেবল হাঁটতে শিখেছে এমন শিশুদের জন্য ফি বেড়েছে ২৮%, যাতে গড়ে ফি-র পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাসে ১,৪৭৫ ডলার; কিচনার শহরে ২০১৯ সালে কেবল হাঁটতে শেখা শিশুর জন্য ফি বেড়েছে ১৮% যার পরিমাণ গড়ে ১,১৪৯ ডলার।
কুইবেকের মত শহরে অবশ্য কেবল হাঁটতে শেখা শিশুর জন্য ফি সামান্যই বেড়েছে, তবে সেটিও মাসে ১৭৯ ডলার। আর এটা সম্ভব হয়েছে সম্পূর্ণভাবে শিশু প্রযত্নে এই প্রদেশের সরকারি অর্থায়নের উদ্যাগের কারণে।
সুপারিশ #৫: সাধ্যের মধ্যে শিশু প্রযত্ন এখনই নিশ্চিত করা
২০২১ সালের কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট এবং কেন্দ্রীয় নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্টারিও সরকারকে এই প্রদেশের সব পরিবারের জন্য দৈনিক ১০ ডলারে শিশুর সেবা পাবার একটি চুক্তিতে অবশ্যই স্বাক্ষর করা এবং শিশু প্রযত্নের একটি নতুন সুযোগ ও শিশু প্রযত্নে পারিবারিক সহায়তা সৃষ্টির কাজ শুরু করা উচিৎ যা অন্টারিওর জন্য খুবই দরকারী। সাধ্যের মধ্যে শিশুর মানসম্মত সেবা পেলে বর্তমানে স্বল্প আয়ে জীবন নির্বাহ করছে এমন একক মা-সহ আরও বেশি সংখ্যক মায়েরা শ্রমশক্তিতে যোগ দেবে।
সুপারিশ #৬: শিশু ও টিনএজারদের শিক্ষা ও বিনোদন খাতের পুরো তহবিল যোগান
শিশুদের বেড়ে ওঠার ওপর দারিদ্র্যের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বাড়িয়ে বলার সুযোগ নেই। জীবনে সফল হবার জন্য শিশু ও টিনএজারদের সুযোগ থাকা দরকার। আর সেই সুযোগ যদি বাড়িতে না থাকে তাহলে অবশ্যই কোনও ধরণের সরকারি ব্যবস্থাপনার অধীনে তাদেরকে সেটা দিতে হবে।
সুপারিশ #৭: মাধ্যমিক-উত্তর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অবৈতনিক করণ।
শিক্ষার একটি নিজস্ব মূল্য আছে, কিন্তু এটি দারিদ্র্য থেকে মুক্তিরও এক শক্তিশালী হাতিয়ার। টকার অভাবে অথবা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ার ভয়ে কেউ তার নিজের এবং পরিবারের উত্তম জীবন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে বঞ্চিত হবে সেটা আমরা হতে দিতে পারি না।
আয়, সম্পদ ও অসাম্য
২০১৯ সালে অন্টারিওতে মাথাপিছু আয়Ñ যা সমৃদ্ধি পরিমাপের ভিত্তিÑ রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছে। কিন্তু শিশু দারিদ্র্য যদি কোনওভাবে থেকেই যায়, এবং তা আছেই, তাহলে এটা স্পষ্ট যে, এই প্রদেশে সমস্যাটা সার্বিকভাবে আয় বণ্টনের মধ্যে নিহিত, আয়ের স্বল্পতার মধ্যে নয়।
অর্থনৈতিক অসাম্য এবং আয়ের মাপকাঠিতে শীর্ষে অবস্থানরতদের সঙ্গে নিচে অবস্থানকারীদের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান ব্যবধান নিয়ে সাম্প্রতিক কয়েক দশক ধরে বহু লেখালেখি হয়েছে। উচ্চতর পর্যায়ের বৈষম্য আসলে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সমস্যা, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি এবং আন্তঃপ্রজন্মগত গতিশীলতা হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। উচ্চতর পর্যায়ের বৈষম্য অটুট দারিদ্র্যের সঙ্গেও সম্পর্কিত কারণ এটি কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই ফেলে রাখা হয়েছে।
২০১৮ সালে অন্টারিওতে শীর্ষ পর্যায়ের এক শতাংশ মানুষের আয় চার লাখ ২৬ হাজার ডলারে পৌঁছায়।
শীর্ষ ০.১ শতাংশ মানুষের গড় আয় ছিলো ১,৫৬০,২০০ ডলার। শীর্ষ ০.০১ শতাংশ মানুষের গড় আয় ছিলো ৫,৩২৭,১০০ ডলার।
ওই একই বছরে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানরত দুই সন্তানসহ একটি একক বাবা অথবা মায়ের পরিবারের গড় আয় ছিলো ২৬,১৭০.৬৪ ডলার।
বছরের পর বছর ধরে বিদ্যমান আয়-বৈষম্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদের ক্ষেত্রে আরও বৃহত্তর বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। আয় বণ্টনের সবচেয়ে শীর্ষে যাদের অবস্থান তারা সঞ্চয় করেছে এবং বিনিয়োগ করেছে; যারা সবচেয়ে নিচে তারা একেবারে মৌলিক প্রয়োজন পূরণের জন্য সঞ্চয় করতেও হিমশিম খেয়েছে।
পার্লামেন্টের বাজেট দফতর ২০২০ সালে জুনে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় হিসাব দিয়েছে যে, ২০১৯ সালের শেষে দেশের সবচেয়ে সম্পদশালী ১০% পরিবার ছিলো কানাডার মোট সম্পদের ৫৬.৭% ভাগেরই মালিক। এর বিপরীতে সম্পদের দিক থেকে একেবারে তলায় অবস্থানরত ৪০% পরিবার দেশের মোট সম্পদের মাত্র ১.১% ভাগ মালিক। এর চেয়েও নাটকীয় বাস্তবতা হলো, শীর্ষ ১০% পরিবারের মধ্যে সম্পদের বণ্টনে। শীর্ষে পর্যায়ের ১% কানাডীয় পরিবারের মালিকানায় রয়েছে দেশের মোট সম্পদের ২৫.৭% Ñ যা এক চতুর্থাংশেরও বেশি। এই পরিমাণ সম্পদ হলো দেশের ৮০% ভাগ গরীব মানুষ যে পরিমাণ সম্পদের মালিক তার প্রায় সমান। আর শীর্ষে অবস্থানরত ১% পরিবারের মধ্যে ০.০১% পরিবারের মালিকানায় রয়েছে ৫.৬% সম্পদ টাকার হিসাবে যার পরিমাণ মোটামুটিভাবে ৬৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
এদেশে প্রচুর টাকা আছে, এবং এই প্রদেশেও। অথচ অন্টারিওর পাঁচ লাখ শিশু ও তাদের পরিবার দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে।
এক্ষণই তৎপর হোন
শিশু দারিদ্র্যের হারের ক্ষেত্রে আগের ছয় বছর ধরে ক্রমশ উন্নতি হতে থাকলেও ২০১৯ সালে অন্টারিওতে পাঁচ লাখ শিশু দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছিলো। লাখো পরিবার দারিদ্র্য রেখার নিচের আয় দিয়ে বেঁচে থাকার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্পষ্টতই, এক্ষেত্রে করার মত কিছু কাজ আছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক উভয় সরকারই দারিদ্র্যের মোকাবেলা করছে হিমবাহের গতিতে।
কানাডার সরকার ২০১৮ সালে প্রথমবারে মত দারিদ্র্যহ্রাসের কৌশলপত্র প্রকাশ করে। ব্যাপকভিত্তিক এই কৌশলে দারিদ্র্যের এমবিএম (MBM) (মার্কেট বাস্কেট মেজার-এমবিএম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, এর ভিত্তি হলো জীবনযাত্রার একটি ভদ্রসম্মত মৌলিক মানের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও নির্দিষ্ট পণ্য বা পরিষেবার দামের ওপর। এতে খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, যাতায়াত ও অন্যান্য ব্যয় অন্তর্ভুক্ত)। এর লক্ষ্য ছিলো শুধু শিশু দারিদ্র্য নয়, বরং সব কানাডীয়র দারিদ্র্যের হার ২০১৫ সালের পর্যায় থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ২০% এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% হ্রাস করা।
২০২১ সালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা যায়, প্রথম লক্ষ্যমাত্রা এরই মধ্যে অর্জিত হয়েছে ২০১৭ সালে। অবশ্য দ্বিতীয় লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপে যেন অনেকটাই অভাব আছে। এ বছর যে শিশুর জন্ম হচ্ছে ২০৩০ সালে তার বয়স হবে নয় বছর। আর কেন্দ্রীয় সরকারে লক্ষ্য অর্জন হলেও দেশজুড়ে সাড়ে চার লাখ শিশুসহ জনসংখ্যার ৬% তখনও দারিদ্র্যের মধ্যেই থেকে যাবে। ওই শিশুটি হয়তো ২০৩৮ সালেও দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করতে থাকবে।
অন্টারিওর সরকার তার তৃতীয় দারিদ্র্য হ্রাস কৌশল প্রকাশ করে ২০২০ সালে। অনেক দিক থেকেই সর্বশেষ কৌশলপত্রটি আগেরগুলোর অনুরূপ হলেও, এতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনও আছে।
কিছু ক্ষেত্র (যেমন শিশু দারিদ্র্য) আগের চেয়ে অনেক কম মনোযোগ পেয়েছে। আর মানুষকে সামাজিক সহায়তা কর্মসুচি থেকে সরিয়ে সবেতন কর্মসংস্থানের দিকে নিয়ে আসার বিষয়টি এখন প্রধান লক্ষ্য হিসাবে নেওয়া হয়েছে। দুঃখজনক যে, প্রাদেশিক কৌশলপত্র বাস্তবায়নেও কেন্দ্রীয় কৌশলপত্রের মতই গুরুত্বারোপের অভাব দেখা যায়।
সুপারিশ #৮: গতি বাড়ান।
প্রাপ্তবয়স্করা যখন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তখন শিশুরা দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে উঠছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বা তারও পরে শিশু দারিদ্র্য অর্ধেক কমিয়ে আনার লক্ষ্য কোনওভাবেই যথেষ্ট নয়। অন্টারিওর শিশুদের জন্য দরকার আরও কম সময়ের সীমারেখা এবং জোরদার কর্মতৎপরতা।
অন্টারিওর মত একটি সমৃদ্ধ প্রদেশে শিশু ও পারিবারিক দারিদ্র্যের বিস্তার একইসঙ্গে বিব্রতকর এবং হতবুদ্ধিকরও। এমন নয় যে আমরা হ্রাস করার উপাদানগুলো জানি না: আমাদেরকে অবশ্যই চৌকস কর্মসংস্থান কৌশলের মাধ্যমে বাবা-মায়েদের জন্য চমৎকার চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে, কর্মসংস্থানের মান বাড়াতে হবে, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে এবং সাধ্যের মধ্যে শিশু প্রযত্নের ব্যবস্থা রাখতে হবে; আয় বাড়ানোর জন্য সরকারি সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হবে; আর বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে পরিবারগুলো তাদের আয়ের বড় অংশ অন্য কাজে ব্যয় করতে পারে। এই সমস্ত কিছু করার উপায় হলো অবিশ্বাস্য সম্পদশালী এই প্রদেশের সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করা এবং একইসঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য হ্রাস করা।
বিপুল প্রাচুর্য্যরে মধ্যে দারিদ্র্যের উপস্থিতি কাম্য নয়।