কানাডায় অভিবাসন কেন গুরুত্বপূর্ণ

অভিবাসন ছিলো কানাডাকে বর্তমান পর্যায়ে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশ: কানাডা এখন এমন একটি দেশ যেটা তার বহুসংস্কৃতিবাদের জন্য গর্ব করে, সারা বিশ্ব থেকে মানুষকে এদেশে স্বাগত জানানোর এবং সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে থাকা লোকেদের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে এদেশের সুনাম রয়েছে বিশ্বজুড়ে। অভিবাসীদের ঢেউ এবং তাদের সন্তান-সন্তুতিরা কানাডার সাফল্যের ক্ষেত্রে তাদের মেধা ও কঠোর শ্রম দিয়ে অবদান রেখেছে। বিদেশি নাগরিদেরকে তাদের বর্ণ, জাতীয়তা, জাতিগোষ্ঠীগত পরিচয়, ধর্ম বা লিঙ্গের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয় না এমন একটি বৈষম্যহীন নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত অভিবাসন কর্মসূচি এবং  অভিবাসন সম্পর্কিত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কানাডা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয়। অভিবাসন হলো কানাডার নির্ধারিত চারিত্র্য: বর্তমানে কানাডার প্রতি পাঁচজনে একজন অভিবাসী (অর্থ হলো কানাডার বাইরে জন্ম গ্রহণকারী লোকজন)।

(১) ১৯৯০-এর দশক থেকে এ পর্যন্ত ৬০ লাখের বেশি নতুন অভিবাসী কানাডায় এসেছে।

(২) কানাডার অর্থনীতি ও সমাজে অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং এর একটি তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক ফলাফল রয়েছে। অর্থনৈতিক কারণে অভিবাসন, পারিবারিক পুনরেকত্রীকরণ বা উদ্বাস্তু ও নাজুক অবস্থানে থাকা লোকেদের সুরক্ষায় অভিবাসনই কানাডার সাফল্যের মূলস্তম্ভ। অভিবাসীরা কানাডার শ্রমবাজার ও অর্থনীতিতে অবদান রাখে। অভিবাসন ও উদ্বাস্তু সুরক্ষা আইনে (আইআরপিএ) যেমনটা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে এর লক্ষ্য হলো “একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ অর্থনীতি বিকাশে সহায়তা দেওয়া যাতে কানাডার সকল অঞ্চল সমভাবে অভিবাসনের সুবিধা লাভ করতে পারে।” কানাডা অভিবাসী গ্রহণের একটি বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এবং সেইসব নবাগতদের বাছাই করে নেয় যারা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণে  সর্বোত্তম অবদান রাখতে পারবে। জনসংখ্যায় বয়স্ক ব্যক্তিদের চাপ এবং জন্মহার কম হওয়ায় কানাডার জনসংখ্যা ও অর্থনীতির অব্যাহত বিকাশে অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বলাবাহুল্য, নবাগত অভিবাসীরা গড় হিসাবে কানাডায় জন্মানো জনগোষ্ঠীর চেয়ে বয়সে তরুণ হওয়ায় অভিবাসন এদেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর কারণে সৃষ্ট কিছু চ্যালেঞ্জের সমাধানেও সহায়ক।  সেইসঙ্গে কানাডায় অভিবাসন হলো দেশটির শ্রমশক্তির কর্মী ও অবসর গ্রহণকারীর ক্রমাবনতিশীল অনুপাত কমিয়ে আনতেও সহায়তা করতে পারে। ২০১২ সালে যেখানে কর্মী ও অবসরগ্রহণকারীর অনুপাত ছিলো

কানাডার অর্থনীতি ও সমাজে অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ছবি : ক্রিস রুসাকিস ও কেভিন বার্নস। কার্লটন ইউনিভার্সিটি

(৩) ২:১ ; এখনকার পূর্বাভাস অনুযায়ী সেই অনুপাত ২০৩৬ সালে দাঁড়াতে পারে ২:১-এ। যদিও অনেক চাকরি কানাডীয়দের দিয়ে পূরণ করা সম্ভব তারপরও শুন্যতা থেকে যায়। অভিবাসন শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী সরবরাহ করতে সহায়ক যার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, দক্ষতানির্ভর ব্যবসায়, পরিবহন ও সরঞ্জাম খাতে যে ঘাটতি রয়েছে তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। অভিবাসন অনেক সময় বিশেষ আঞ্চলিক শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণেও সহায়তা করে, বিশেষ করে প্রাদেশিক মনোনয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে। অভিবাসীরা যখন কানাডায় আসে তখন তারা ট্যাক্স দেয় এবং আবাসন, পরিবহন ও ভোগ্যপণ্য খাতে অর্থ ব্যয় করে। উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ে এবং পুরো অর্থনীতিতে এর প্রভাব ছড়িয়ে যায়।

বহুলাংশে অভিবাসনের কারণে শ্রমশক্তির আকার বেড়ে যাওয়ায় কানাডার অর্থনীতি লাভবান হয়েছে। গত দুই দশক ধরে মাথাপিছু প্রকৃত মোট অভ্যন্তরীণ উদপাদন (জিডিপি), উৎপাদনশীলতা এবং শ্রমশক্তি সবগুলোই বছরে প্রায় ১.২৫% হারে বেড়েছে।

৪. ২০১৭ সালে বেশিরভাগ আবেদনকারীর শীর্ষ পাঁচটি পেশা ছিলো তথ্য প্রযুক্তির অ্যানালিস্ট ও কনসালট্যান্ট; সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কমপিউটার প্রোগ্রামার ও ইন্টারঅ্যাকটিভ মিডিয়া ডেভেলপার; ফাইনান্সিয়াল অডিটর ও অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টস। কানাডায় উদ্বাস্তুসহ সব ধরণের অভিবাসীরই অনেকগুলো অর্থনৈতিক সূচকে ইতিবাচক সুফল পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ২০১৭ সালে ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী অভিবাসীদের যারা ১০ বছর আগে এদেশে এসেছে, শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের প্রায় সমান (৮৬% : ৮৮.৪%)।

৫. কানাডায় অবস্থানের সময়ের সঙ্গে সব অভিবাসীরই অর্থনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এখানে আসার ১২ বছরের মধ্যে তাদের গড় আয় কানাডীয় গড়ের সমপর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।

কানাডা এক্সপিরিয়েন্স ক্লাস এবং প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রামের বেশিরভাগ আবেদনকারী এখানে আসার প্রথম বছরেই কানাডীয় গড় আয় ছুঁয়ে ফেলেন। মোট কথা কানাডার চলমান ও ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির জন্য অভিবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৮ সালে অভিবাসনের ওপর পার্লামেন্টে পেশকৃত রিপোর্ট।