হৃদরোগ এশীয়দের আগেভাগে এবং কঠিনভাবে আক্রমণ করে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : দক্ষিণ এশীয় জাতিগোষ্ঠীর লোকেদের মধ্যে হৃদরোগ সংক্রমণের সময়সীমা এগিয়ে আসছে এবং এটি কেন ঘটছে তার একটি উত্তর হতে পারে ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালীর ত্রুটিপূর্ণ মেরামত প্রক্রিয়া। কানাডায় নতুন এক গবেষণায় এমনটি দেখা গেছে। খবর আমিনা জাফর  –  সিবিসি নিউজ।

হৃদরোগ হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর ক্ষতি করে এবং এজন্যে বাইপাস সার্জারিসহ অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

এর আগে গবেষকরা অনুমান করেছিলেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আসা- ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং অন্য ৫০টিরও বেশি দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষেরা, যারা বিশ্বের জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্ব করে- শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় রোগীদের চেয়ে প্রায় পাঁচ থেকে ১০ বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হবার পর তাদের মৃত্যুর হারও বেশি।

কানাডায় শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়দের চেয়ে প্রায় পাঁচ থেকে ১০ বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় এশিয়রা। ছবি : হার্টলিংড্ইন

জার্নাল অব দ্য আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির সোমবারের সংখ্যায় কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও আয়ারল্যান্ডের গবেষকরা জানিয়েছেন যে, দক্ষিণ এশীয় হৃদরাগী অথবা ডায়াবেটিক রোগীদের শরীরে ভাস্কুলার রি-জেনারেটিভ ও রিপারেটিভ সেল বা পুনরুৎপাদনশীল ও পুনসংস্কারকারী কোষ শ্বেতাঙ্গ রোগীদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে থাকে।

গবেষণার “ফলাফল থেকে আভাস পাওয়া যায় যে, দক্ষিণ এশীয় লোকেদের মধ্যে এমন ব্যতিক্রমী কিছু আছে যা অংশত ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালী সারিয়ে তোলার মত যথেষ্ট অক্ষমতার কারণে তাদেরকে সত্যিকারের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।” বলেছেন, গবেষণার সহলেখক ড. সুবোধ ভার্মা। তিনি টরন্টোর সেন্ট মাইকেলস হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জন এবং টরন্টো ইউনিভার্সিটির প্রফেসার।

গবেষণায় দক্ষিণ এশীয় বলে পরিচয় দেওয়া ৬০ জন রোগীর সঙ্গে ৬০ জন শ্বেতাঙ্গ রোগীর তুলনামূলক পরীক্ষা করা হয় টরন্টো এলাকার বিভিন্ন প্রাইমারি কেয়ার অথবা হুদরোগ বিষয়ক ক্লিনিকে। যেসব রোগীর হৃদরোগ অথবা ডায়াবেটিস আছে বলে প্রয়োজনীয় নথিপত্র রয়েছে এবং একইসাথে হৃদরোগের অন্তত একটি ঝুঁকির উপাদান আছে এমন রোগীদেরই গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়।

স্টেম সেল ব্যাপকভাবে কমে যাওয়া

সেন্ট মাইকেল হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষক এবং অন্টারিওর লন্ডনভিত্তিক ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফিজিওলোজি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রফেসার ডেভিড হেস রোগীর রক্তের নমুনা থেকে কোষগুলি দেখার এবং গুরুত্বপূর্ণ স্টেম সেলগুলি বেছে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মার্কার ব্যবহার করার একটি উপায় উদ্ভাবন করেছেন।

হেস বলেন, “আমরা যেগুলি দেখি তার মধ্যে আছে তিনটি ভিন্ন ধরণের কোষ এবং শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় রোগীদের তুলনায় দক্ষিণ এশীয় রোগীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই ধরণের স্টেম সেল ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এ থেকে আভাস পাওয়া যায় যে, ডায়াবেটিসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালীগুলি মেরামত বা পুনরুৎপাদনের ক্ষমতা কমে যায়।”

ডা. ভার্মা, হেস এবং তাদের সহ-লেখকরা যখন তাদের বিশ্লেষণে রোগীর ওজন, বয়স ও স্থূলতার মত ঝুঁকির কারণগুলি বিবেচনায় নেন তখনও তারা সারিয়ে তোলার প্রক্রিয়ায় ঘটতি দেখতে পান।

ডা. জয়দীপ প্যাটেল, বাল্টিমোরের জনস হপকিন্স হাসপাতালের একজন কানাডীয় প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলোজিস্ট। তিনি সর্বশেষ এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন না, তবে তিনি ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশীয় জনগণের মধ্যে এথেরোস্কে¬রোটিক (রক্তনালী সংকোচনজনিত) হৃদরোগ সম্পর্কিত গবেষণায় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য ছিলেন।

‘হৃদরোগের ঝুঁকির ঘড়ি ত্বরান্বিত হচ্ছে’

জয়দীপ প্যাটেল বলেন, এই গবেষণায় নমুনা কম হওয়া ছাড়াও একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো, এতে সুস্থ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তাই এথেরোস্কে¬রোটিক হৃদরোগের উপস্থিতি বা অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলি স্টেম সেলকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে কিনা তা জানা যায়নি।

স্টেম সেল কম থাকার কারণে রক্তনালী দুর্বল হয় এবং হার্টের জটিলতা বাড়ায় এটি প্রমাণ করার জন্য আরও গবেষণার দরকার আছে।

ডা. ভার্মা বলেন, আপাতত, প্রত্যেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের ঝুঁকির কারণগুলি সম্পর্কে, যার মধ্যে পারিবারিক ইতিহাস বা তারা

যে ঝুঁকির কারণগুলিতে আক্রান্ত Ñ যেমন ধূমপান, ডায়াবেটিস, কম কায়িক শ্রম, উচ্চচাপ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন থাকা।

তিনি বলেন, “দক্ষিণ এশীয়দের হৃদরোগের ঝুঁকির ঘড়ি ত্বরান্বিত হয়েছে।”

প্যাটেল এই তালিকায় পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের মত শুধু নারীদের ঝুঁকির কারণগুলি যোগ করেন। উভয় চিকিসকের পরামর্শ হলো, যারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন তাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।