কানাডীয়রা আরও অভিবাসী গ্রহণে অটোয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে বিভক্ত

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কেন্দ্রের লিবারেল সরকারের আগামী কয়েক বছরে অভিবাসীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়ানোর যে পকিল্পনা নিয়েছে তার ফলে দেশের আবাসন ও সরকারি পরিষেবার ওপর কেমন প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে কানাডীয়রা চিন্তিত। নতুন এক জনমত জরিপে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। খবর লি বার্থিয়োম / দি কানাডিয়ান প্রেস।

লেগার এবং কানাডীয় স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশন ১১ থেকে ১৩ নভেম্বরের মধ্যে ১,৫৩৭ জন কানাডীয় নাগরিকের মধ্যে অনলাইনে এই জরিপ চালায়। ২০২৫ সাল থেকে শুরু করে প্রতি বছর পাঁচ লাখ করে অভিবাসী গ্রহণ করা হবে বলে অটোয়ার পরিকল্পনা প্রকাশের প্রায় দুই সপ্তাহ পরে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সারাদেশে মারাত্মক শ্রমিক সঙ্কটের মোকাবেলায় সরকার এই পরিকল্পনা নিয়েছে।

নতুন পরিকল্পনায় প্রতি বছর গ্রহণযোগ্য অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। (দি কানাডিয়ান প্রেস/ রাইয়ান রেমিওর্জ)

সরকার ও শিল্প খাতের লোকেরা বলছেন, কানাডাজুড়ে প্রায় ১০ লাখ চাকরির শূন্যপদ পূরণ এবং কানাডীয় শ্রমশক্তির বুড়িয়ে যাবার প্রক্ষিতে অভিবাসী গ্রহণের এই নতুন লক্ষ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর কানাডা চার লাখ পাঁচ হাজার অভিবাসী গ্রহণ করে। সরকারের নতুন পরিকল্পনায় প্রতি বছর গ্রহণযোগ্য অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে।

তারপরও জরিপে অংশ নেয়া কানাডীয়দের ৭৫ শতাংশ একমত যে, সরকারের নতুন পরিকল্পনার কারণে দেশে আবাসন এবং একইসঙ্গে স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিষেবার চাহিদা অত্যধিক বেড়ে যাবে বলে তারা অত্যন্ত কিংবা কিছু পরিমাণে উদ্বিগ্ন।

অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী সিন ফ্র্যাসার যদিও বলেছেন যে, নতুন শ্রমিকরা এলে শ্রমিকের ঘাটতি পূরণ হওয়ায় তারা সরকার ও সেটেলমেন্ট সার্ভিসসমূহের বাড়তি সহায়তায় আরও বেশি আবাসন নির্মাণ সম্ভবপর করে তুলবে। তা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়ে গেছে।

লেগার-এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান বার্ক বলেন, সাধ্যের মধ্যে পাওয়া যায় এমন আবাসনের অভাব এবং মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া অব্যাহত থাকায় অনেক কানাডীয় যে চাপ অনুভব করছেন জরিপের ফলাফলে তারই প্রতিফলন দেখা গেছে। 

তিনি বলেন, “মহামারির আগে ইতিবাচক অর্থনীতির সময়ে উদ্বিগ্নদের সংখ্যা সম্ভবত ভিন্ন হতে পারতো। কিন্তু এখন, আমার মনে হয়, আমরা কদ্দুর ও কতটুকু সহ্য করতে পারবো তা নিয়ে উদ্বেগ বড়ছে।”

বোর্ক বলেন, সম্ভবত সরকারের পক্ষ থেকে অভিবাসনের বিভিন্ন সুবিধা কানাডার জনসাধারণের কাছে আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে।

সবচেয়ে বেশি বিভক্তি দেখা গেছে সরকারের পরিকল্পিত অভিবাসীর সংখ্যার বিষয়ে। ৪৯ শতাংশ মনে করেন সংখ্যাটা খুব বেশি। অন্যদিকে ৩১ শতাংশ মনে করেন, সংখ্যাটা যথার্থ। পাঁচ শতাংশ মানুষ বলেন, সংখ্যাটা যথেষ্ট না, অবশিষ্টরা জানেন না।

দেশের বিভিন্ন অংশে মানুষের মতামত বহুলাংশে একইরকম হলেও যেসব উত্তরদাতা নিজেকে কনজারভেটিভ, ব্লক কুইবেক এবং পিপিলস পার্টি অব কানাডার সমর্থক হিসাবে পরিচয় দেন তারাই লক্ষ্যমাত্রা খুব বেশি বলে উল্লেখ করেন।

বোর্ক বলেন, “এই বিষয়ে বাম-ডান বিভেদ দেখে অবাক নই, এটা যুক্তরাষ্ট্রে যেমন আছে তেমনই ইউরোপেও একইরকম। অভিবাসনের সংখ্যার বিষয়টি ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠছে।”  

যদিও কুইবেকে এই বিষয়ে বিতর্কের দীর্ঘ ইতিহাস আছে, আর সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে অন্টারিওরও কিছু মানুষ সচেতন হয়ে উঠেছেন, তবে বোর্ক বলেন, অনেক কানাডীয় এটির অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে অসচেতন রয়ে গেছেন।