হৃদরোগ কানাডায় নারীদের বৃহত্তম এক ঘাতক : সচেতন হওয়া জরুরী
কানাডায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি ২২ মিনিটে একজন নারী মারা যান। সিবিসি নিউজের এক খবরে একথা বলা হয়। উদ্বেগ সৃষ্টিকারী একটি খবর নিঃসন্দেহে। ঐ খবরে বলা হয়, বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারী এবং নির্দিষ্ট কিছু জাতিগোষ্ঠির ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা নারীরা।
এই নির্দিষ্ট কিছু জাতিগোষ্ঠির ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা নারীদের মধ্যে আছেন এশীয় নারীরাও। বাংলাদেশী নারীরাও আছেন এর মধ্যে।
অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে কানাডায় বসবাসকারী এশীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে হৃদরোগীর সংখ্যা এখানকার ইউরোপীয় শে^তাঙ্গ জনগোষ্ঠির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এশীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও ঐ শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় বেশী। ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এটি যে কোন বিবেচনায়ই এদেশে বসবাসকারী এশীয়দের জন্য উদ্বেগ সৃষ্টিকারী একটি ইস্যু।
কানাডায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এশীয়দের মধ্যে মৃত্যুর হারও বেশী শ্বেতাঙ্গদের তুলনায়। গবেষণা বলছে, মৃত্যুর এই হার এশীয় পুরুষদের মধ্যে ৪২% এবং শে^তাঙ্গদের মধ্যে ২৯%। আর এশীয় নারীদের মধ্যে মৃত্যুর এই হার ২৯% এবং শ্বেতাঙ্গ নারীদের মধ্যে তা ১৯%।
লক্ষনীয় যে, কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশী নারীদের মধ্যে অধিকাংশই স্থুলতার সমস্যায় ভুগেন। এ কারণে তাঁদের মধ্যে অনেকেই ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এদের অনেকের লাইফস্টাইলও দায়ী। এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও অনেকের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে অনেকের ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি হৃদরোগের দিকে মোড় নেয়। আর শুধু হৃদরোগই নয়, নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ডায়াবেটিস শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আক্রমণ করে ডেকে আনে নানান জটিল রোগ। আর প্রায় ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী মারা যান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মারা যাবার কথা নয়। তাঁরা এমন সতর্কবাণী দিয়েছেন যে, চিকিৎসক সমাজ নারী রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা ঢেলে না সাজালে আরও বেশি সংখ্যক নারী অকারণে মারা যাবেন।
টরন্টোর উইমেন্স কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পলা হার্ভি সিবিসি নিউজকে বলেন, “বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আমাদের আছে। কিন্তু আমরা নারীদের সেবা দিচ্ছি না। আমাদেরকে এ বিষয়ে আরও ভালো কিছু করতে হবে।”
কানাডায় নারীদের বৃহত্তম এক ঘাতক হলো হৃদরোগ। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে এখন বেশি জরুরী। হার্ভি বলেন, হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকির লক্ষণগুলো এখন অনেক বেশি সংখ্যক অল্পবয়সী নারীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে, যেমন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা।
হার্ভি আরো বলেন, “হৃদরোগের ঝুঁকির উপাদানগুলি অপেক্ষাকৃত কম বয়সেই সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে। এটা বেশ বড় সমস্যা মনে করি। ৪০ এর কোঠায় বয়স কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ নেই এমন নারী দেখা যায় না। এমনটাই দেখছি এবং এর অর্থ হলো অল্প বয়সের নারী হৃদরোগী আরও বাড়বে।
এই প্রবণতার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে জীবনযাত্রা প্রণালী। দেখা গেছে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা সেবা এবং সচেতনতার দিক থেকে নারীরা পিছিয়ে আছে। আর গবেষণার তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, হৃদরোগ পুনর্বাসনের কর্মসূচিতে যোগ দেবার সুযোগ পুরুষের চেয়ে নারীদের প্রায় ৫০ শতাংশ কম। কারণ প্রায়শ নারীদেরকে এ ধরণের কর্মসূচিতে যোগ দেবার জন্য পাঠানো হয় না অথবা তারা পরবর্তী প্রযত্ন পাবার ক্ষেত্রে কোনও বাধার মুখোমুখি হন। এর মধ্যে নিজের চাহিদা কমিয়ে দেখার প্রবণতাও অন্যতম। এসব ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, কেন হার্ট অ্যাটাকে পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যুর এবং দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের ক্ষমতায়ন দরকার, জ্ঞান হলো সেই ক্ষমতা। অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হতে পারা সেই ক্ষমতা। আর হৃদরোগ সম্পর্কে নিজেকে সচেতন করার জন্য নারীদের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব সেটা করা জরুরী।