গ্লাসগো সম্মেলন: ব্যর্থতার দোলাচলে বিশ্ববাসী
হাসান জাহিদ
প্যারিস সম্মেলনের লক্ষ্য অর্জনে নানা অ্যাকশন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সম্প্রতি কপ-২৬ (UN Climate Change Conference of the Parties, Glasgow, 31 October–13 November 2021) অনুষ্ঠিত হলো স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে। ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে সই করা দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না বাড়ে, তা নিশ্চিতকরণে ব্যবস্থা নিতে একমত হয়েছিল।
২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাস মহামারির উত্থানের পর এটিই সশরীরে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। চারটি লক্ষ্যকে এবারের সম্মেলনে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
– ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যতে নামিয়ে আনতে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা
– জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্যোগকবলিত মানুষের জন্য বাস্তুতন্ত্র রক্ষা এবং পুনরুদ্ধার করা, প্রতিরক্ষা ও সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণ, অবকাঠামো তৈরি ও কৃষি ব্যবস্থাকে স্থিতিস্থাপক করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা
– এসব কাজ সম্পাদনের জন্য প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল করার জন্য উন্নত দেশগুলোর ভূমিকা রাখা এবং
– জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করা
“গ্লোবাল গোল অন অ্যাডেপ্টেশন” সংক্রান্ত বৈশ্বিক লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য “গ্লাসগো-শার্ম এল-শেইখ ওয়ার্ক প্রোগ্রাম অন দি গ্লোবাল গোল অন অ্যাডেপ্টেশন” প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা বাংলাদেশের ভবিষ্যত অ্যাডেপ্টেশন কার্যক্রমকে বেগবান করবে।
ঘুরেফিরে সেই অ্যাডেপ্টেশনের বিষয়টিই বারবার উঠে আসছে। অ্যাডেপ্টেশনই বাংলাদেশের একমাত্র অপশন। বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে এতো মানুষ কোথায়-কীভাবে অ্যাডেপ্টেড হবে (তা নির্ভর করে অদূর ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ), অ্যাডেপশন বা খাপ খাইয়ে নিতে যে পরিকল্পনা, অর্থ ও প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে, সেই বিষয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আমাদের মিশন ও ভিশন হতে হবে। বিশ^ উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বা কার্বন নিঃসরণ ঘটিয়ে আজকের বিশ^কে বিপর্যস্ত করায় বাংলাদেশের কোনো দায়ভাগ নেই। কিন্তু ভঙ্গুর ভৌগোলিক অবস্থান ও নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশ শিকার হচ্ছে উন্নত বিশ্বের লাগামহীন কার্বন নিঃসরণের কুফলে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের জন্য প্যারিস সম্মেলনের চুক্তি সুফল বয়ে আনত বিগত ছয়বছরে। দৃশ্যত তা যখন হয়নি, তখন সদ্য সমাপ্ত কপ-২৬ সামিট তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়িত হয় কিনা, এখন দেখার বিষয়। যদিও ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমানোর উদ্যোগ বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে যথেষ্ট নয়; তবু সেটা মন্দের ভালো।
২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, এবারের সম্মেলনে এটিকে আরও জোরদার করার কোনো বিকল্প ছিল না। তা সত্ত্বেও সম্মেলনে যুগান্তকারী কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিশ্বের প্রভাবশালী ও সমৃদ্ধ দেশগুলোর কাছ থেকে কার্বন কমানোর জোরালো ও সুস্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি কিন্তু এই সম্মেলনেও পাওয়া যায়নি। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য এই সম্মেলনে একটি রুল বুক প্রণীত হয়েছে। আর এই রুল বুকের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুতিগুলো খতিয়ে দেখবেন বিশেষজ্ঞরা!
কপ-২৬এর মূল লক্ষ্য ছিল তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার আশা বাঁচিয়ে রাখা, সেই উদ্দেশ্য সাধিত হলেও এটা কীভাবে পরিপূর্ণ সফলতা পাবে, তা কিন্তু তর্কাতীত নয়। খোদ কপ-২৬ সভাপতি অলোক শর্মার ভাষায়, ‘আমরা ১.৫ ডিগ্রির লক্ষ্যমাত্রার আশা বাঁচিয়ে রেখেছি, কিন্তু এর নাড়ি বড়ই দুর্বল।’
প্যারিস চুক্তির আওতায় বিশ্বের উন্নত দেশসমূহ ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে একশ’ বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। কপ-২৬এর প্রাক্কালে আইপিসিসি {The Intergovernmental Panel on Climate Change (IPCC)} ও ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) জোর দিয়ে বলেছিল, ব্যাপক হারে কার্বন নিঃসরণ কমাতে দেশগুলোকে নতুন ও উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। কপে কিছুটা হলেও তার প্রতিফলন দেখা গেছে। প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে আগামী ১২ মাসের মধ্যে নতুন পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। জাতিসংঘকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে তাদের নীতি ও পরিকল্পনা কীভাবে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণ করবে।
এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, একমাত্র আইপিসিসি এর জন্মলগ্ন থেকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এই প্যানেলের বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল বিভিন্ন বছরের ও সময়ের রিপোর্ট-এর সুপারিশগুলো যদি উন্নত দেশ আমলে আনত, আজকে বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের চূড়ান্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ত না। বরং একধরনের বিনাশী প্রচারণা ছিল তার উল্টোপিঠে যে, জলবায়ু পরিবর্তন মানবসৃষ্ট নয়!
অনস্বীকার্য যে, শিল্পবিপ্লবের পর থেকে সাম্রাজ্যবাদী ও পরাশক্তির দেশগুলো বিলাসিতায় ও আরাম-আয়েশে থেকে, পৃথিবীর সিংহভাগ ভূখণ্ডকে চরম বিপদের মুখে ফেলেছে জলবায়ু পরিবর্তন নামের দানবের জন্ম দিয়ে।
তারা জেগে থেকেও ঘুমের ভান করে পড়ে ছিল। তারা জানত, এই পৃথিবীটা আমাদের নয়; আমরা শুধুমাত্র একে ধার নিয়েছি আগামী প্রজন্মের কাছ থেকে: ‘We do not inherit the Earth from our ancestors; we borrow it from our children.’ Cree Indian prophecy.
সম্মেলন ব্যর্থ ধরে নিলে বলতে হয় যে, ব্যর্থতা দিয়ে যার শুরু তার ব্যর্থতার দায়ভাগ বাংলাদেশের নয়। মাদ্রিদ সম্মেলন শেষ হয়েছিল ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ দিয়ে, যার অর্থ ছিল বাংলাদেশ ক্ষতিপূরণ আদায়ে ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনালের যে দীর্ঘ সময় ও জটিল ম্যাকানিজমের মধ্য দিয়ে যাবে, সেই সময় ও পরিশ্রমে বাংলাদেশ নিজস্ব উদ্যোগে অনেক এগিয়ে যেতে পারে অবকাঠামো উন্নয়ন ও অ্যাডেপ্টেশনের দিকে। সেইক্ষেত্রে প্রয়োজন ফান্ড ও ক্ষতিপূরণ।
বিশ্বের শীর্ষ পরিবেশবাদী সুইডেনের গ্রেটা থুনবার্গ কপ-২৬কে ব্যর্থ বলে আখ্যায়িত করে গ্লাসগোতে শত শত মানুষের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ বিশ্বজুড়ে দেড় হাজারেরও বেশি স্থানে জলবায়ু কর্মীরা রাস্তায় নেমেছিলেন। বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে পৃথিবীর উত্তাপ বৃদ্ধিকারী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ব্যাপকভাবে হ্রাস করার জন্য আরও উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নিশ্চিত করার দাবি তোলেন তারা।
সম্মেলন শুরুর আগেই ইউনাইটেড ন্যাশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কার্বন নিঃসরণবিষয়ক যে পরিকল্পনা (এনডিসি) জমা দিয়েছে সেটি অনুযায়ী, বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের পরিবর্তে দুই দশমিক সাত ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে যা হবে মানবজাতির জন্য ভয়ানক।
কপ-২৬ এর সভাপতি অলোক শর্মা সম্প্রতি বলেন, “দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিশ্বের ৭০ কোটি মানুষ চরম দাবদাহের শিকার হবে। দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে দুইশ’ কোটিতে।”
সম্মেলনে প্রথমবারের মতো ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত দেশের জন্য তহবিলের পরিমাণ ১৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে উন্নীত করে ৪৩১ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। বিষয়টা এভাবে ভাবা যেতে পারে যে, বাংলাদেশের জন্য একটা অন্যতম অপশন হলো বিভিন্ন কপ সম্মেলনে যে ফান্ড ঘোষণা করা হয়, তার থেকে সামান্য কিছু প্রাপ্তিযোগ।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি হলো আর্থিক অনুদানের অপেক্ষায় থাকা। সেটা পাওয়া যাবে; তবে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। আবারও দ্বারস্থ হওয়া, নিজেদের বিপন্নতাকে তুলে ধরা ও নেগোশিয়েশন চালিয়ে যাওয়া। এগুলো কি খুব ক্লান্তিকর নয়? অভ্যন্তরীণ পরিবেশদূষণ ও প্রাতিবেশিক অবনয়নের জন্য ধরে নিলাম আমরাই না হয় দায়ী, কিন্তু বৈশ্বিক অবনতির জন্য তো আমরা দায়ী নই, অথচ বৈশ্বিক বিপর্যয়ের ধকল যাবে আমাদের ওপর দিয়ে। এটা বারবার কেন তাদের কাছে বিস্তর কাগজপত্র/প্রমাণাদি নিয়ে হাজির হয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে?
একটা সম্মেলনে কোনো প্রতিশ্রুতি থাকলে, সেটার অপেক্ষায় বাংলাদেশকে বসে থাকতে হয়। পরের সম্মেলন পর্যন্ত সেটা প্রাপ্তির জন্য নানা দেনদরবার আমাদেরকে করতে হয়। দেনদরবার বলতে আসলে এখানে একধরনের ধকলের বিষয় থাকে, একটা এফোর্ট দিতে হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সেটা কঠিন কাজ,
আমাদেরকে সর্বক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায় ঘরের সমস্যা। তবুও আমাদেরকে এই কাজটি করতে হবে সাফল্যের সাথে।
কয়লা ভীতি আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইএ) বলছে এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বের শতকরা ৭৫ ভাগ কয়লা ব্যবহার করে। অথচ জি-২০ দেশসমূহ বিশ্বের ৮০ ভাগ কার্বন নিঃসরণ করে। ইমিশন কাট করার বিষয়ে তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি না থাকলেও তারা এখন উদ্বিগ্ন কয়লাজনিত নিঃসরণ নিয়ে! অংক পরীক্ষার দিন কি ইংরেজি পড়ে গেলে পরীক্ষায় পাস করা যাবে! উন্নত বিশ^ আমাদেরকে এরকম প্রস্তুতি নিতেই কি বলছে না?
সূত্রমতে, ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত, বিশ্বের বিদ্যমান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচ ভাগের চার ভাগই রয়েছে চিন, ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও বাংলাদেশে।
বনভূমি উজাড় বন্ধে আন্তর্জাতিক ঘোষণায় বাংলাদেশ এই সম্মেলনে বনভূমি উজাড় রোধকল্পে একটি আন্তর্জাতিক ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ, যার মাধ্যমে দেশে বনভূমি ধ্বংস রোধ করা যাবে বলে আশা করা যায়। তবে বাংলাদেশ মিথেন কমানো সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিতে যোগ দেয়নি।
জলবায়ু সম্মেলন সেই শেয়াল পণ্ডিত ও কুমিরের সাতটা বাচ্চার কথাই আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়। মা কুমির তার সাত বাচ্চাকে বিদ্যায় দিগ্গজ করার জন্য শেয়াল পণ্ডিতের হাতে তুলে দেয়। শেয়াল একে একে ছয় বাচ্চাকে খেয়ে হজম করে ফেলে। একদিন মা কুমির সাত বাচ্চাকে দেখতে চাইলে শেয়াল একটা বাচ্চাকে সাতবার গর্ত থেকে উঠিয়ে-নামিয়ে সাতবার দেখায়। পশ্চিমা বিশ্বের আচরণ আমাদের মতো দেশগুলোর প্রতি অনেকটা শেয়ালের চালাকির মতো। কিছু বেনেফিট তো আমাদের হবেই। তবে তা অপ্রতুল। আমরা দেখতে চাই র্যাডিকেল কিছু, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ভিজিবল কিছু আমাদেরকে পেতে হবে। সম্মেলনের মাইক্রোফোনের ভেতর দিয়ে ভেসে আসা শব্দ আমাদের কর্ণকুহর আর ধারণ করতে পারছে না। আমরা দেখতে চাই কোটি কোটি মানুষের খাদ্য-বস্ত্র-বাস্তু আর নির্মল প্রকৃতি।
তাই আমাদেরকেই হাল ধরতে হবে খাপ খাইয়ে নিতে ও বিশ্ব দরবারে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ আদায়ে। আর প্রাপ্ত ফান্ডের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে নজরদারি করতে হবে যেন লাভের গুড় পিঁপড়েয় না খায়।
হাসান জাহিদ। কথাশিল্পী, পরিবেশবিষয়ক লেখক, সার্টিফায়েড মেম্বার, ইকো-ক্যানেডা, ক্যালগেরি, আলবার্টা।