কানাডার নির্বাচনের পালে পাগলা হাওয়া
জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থেকেও নির্বাচনের আগে টালমাটাল অবস্থা লিবারেল পার্টির
খুরশিদ আলম : মহামারীর মধ্যেই মেয়াদ পূর্ণ হবার প্রায় দুই বছর আগে ঘোষণা করা হলো কানাডার জাতীয় নির্বাচনের তারিখ। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই নির্বাচন। আর এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর নির্বাচনের পালে পাগলা হাওয়ার আঘাত লাগতে শুরু করেছে। সেই আঘাতে মাত্র কয়েক মাস আগেও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির অবস্থা এখান টালমাটাল। প্রতিদিনই কমছে দলটির জনপ্রিয়তা। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা তো দূরের কথা এখন কোনরকমে জিততে পারে কি না সেই নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে পায়ের তলায় মাটি ছিল না এমন প্রধান বিরোধী দল কনজার্ভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। শুধু তাই নয়, এই দলটি এখন নির্বাচনে জিতে যাবে এমন তথ্যই মিলছে বিভিন্ন জরিপ থেকে।
এদিকে নির্বাচনী উত্তাপ যত বাড়ছে সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কানাডাব্যাপী করোনা মাহামারীর চতুর্থ ঢেউ। কানাডায় ব্যাপক সংখ্যক লোক ভ্যাকসিনের আওতায় আসলেও মহামারী এখনো নির্মূল করা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে কানাডায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ২৭ হাজার মানুষ।
কানাডায় ১২ বছরের উর্ধে যাদের বয়স তাঁদের মধ্যে শতকরা ৬৭.৮ জন দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। অন্টারিওতে এই হার শতকরা ৭৭। আগস্ট মাসের ৩১ তারিখের হিসাব এটি। এরকম একটি ভয়াবহ মাহামারীর মধ্যে আগাম নির্বাচন ঘোষণা কতটুকু যৌক্তিক বা বাস্তবমুখি পদক্ষেপ সেটি নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর এই সময় কেনই বা নির্বাচন ঘোষণা করা হলো সেই প্রশ্নও অনেকের মনে।
জরিপে দেখা গেছে কানাডার বেশীরভাগ মানুষই (৫৮%) এই মহামারীর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি পছন্দ করছেন না এবং নিরাপদও মনে করছেন না। Ipsos poll এর জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে আরো দেখা গেছে প্রায় ২৫% ভোটার এই মহামারির সময় ভোটকেন্দ্রে যাওয়াটা নিরাপদ মনে করছেন না। ১৬% ভোটার বলেছেন তাঁরা ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে ডাকের মাধ্যমে ভোট দিবেন। ২১% ভোটার বলেছেন তাঁরা এখনো নিশ্চিত নন সশরীরে নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিবেন নাকি ডাকের মাধ্যমে ভোট দিবেন। আর ২% ভোটার বলেছেন তাঁরা এই সময় ভোটই দিবেন না।
এরকম একটি দোলাচল অবস্থায় আশংকা করা হচ্ছে যে এবারের নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ কম হবে। এবং নিশ্চিতভাবেই এর প্রভাব পড়বে নির্বাচনের ফলাফলে। হয়তো দেখা যাবে যে দল নির্বাচনে জয়ী হবার কথা সেই দল জয়ী না হয়ে অন্য কোন দল জয়ী হয়েছে। অথবা উল্টোটাও হতে পারে।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবার পর ভ্যাকসিন বিরোধী একটি দলের সদস্যরা যে রকম যৌনতাপূর্ণ অশ্লীল ও অশোভন স্লোগানসম্বলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে লিবারেল পার্টির শীর্ষ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন তা নোংরামির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে অনেকে মনে করছেন। এই ভ্যাকসিন বিরোধী দলের সদস্যরা স্থানে স্থানে জাস্টিন ট্রুডোর নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা সৃষ্টি করছেন অশ্লীলতায় ভরপুর ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও প্রচারণায় আসা জনগণের নিরাপত্তা নিয়েও সংশয় দেখা দিচ্ছে কোথাও কোথাও এই ভ্যাকসিন বিরোধী দলের আক্রমণাত্নক বিক্ষোভের কারণে। ফলে কয়েকটি স্থানে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় এমন তীব্র আক্রোশ তিনি অতীতে আর কখনো দেখেননি।
পরে এই ভ্যাকসিন বিরোধী দলের অশ্লীল ও বিপজ্জনক আচরণের নিন্দা জানাতে বাধ্য হয়েছেন প্রধান বিরোধী দল কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতা এরিন ও’টুল। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার বিরুদ্ধে আমি যে কোন ধরনের হয়রানির তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা সুস্থ এবং সম্মানজনক বিতর্কের পক্ষে। আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাবো আমাদের দেশ ও আমাদের গণতন্ত্রকে সর্বপ্রথম স্থান দিতে। তিনি আরো জানান, যাঁরা জাস্টিন ট্রুডোর নির্বাচনী প্রচারণায় অশোভন আচরণ করেছেন তাঁরা আমাদের দলীয় প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমি প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে চাই।
জাস্টিন ট্রুডোর নির্বাচনী প্রচারণার সমাবেশে ভ্যাকসিন বিরোধীদের কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়েছেন অপর বিরোধী দল এনডিপি’র নেতা জাগমিত সিং-ও। তিনি বলেন, এটি একটি ভুল কাজ। নিরাপত্তার অভাব বোধ করে কেউ কোন সমাবেশ বন্ধ করতে বাধ্য হবেন এমনটা হওয়া উচিত নয়।
উল্লেখ্য যে, জাগমিত সিং নিজেও তার এক নিবার্চনী প্রচারণা চালানোর সময় বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন। জনৈক ব্যক্তি সভাস্থলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার প্রতি উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘Go back to where you came from’ অর্থাৎ তাঁকে তাঁর পিতৃভূমি বা মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু জাগমিত সিং এর জন্ম কানাডায়। বর্ণবাদীরা সুযোগ পেলেই দৃশ্যমান সংখ্যালঘু বা ইমিগ্রেন্টদের প্রতি এই ধরণের বক্তব্য ছুড়ে মারেন।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি অশ্লীল ও আক্রমণাত্মক আচরণ করায় ভোটারদের মধ্যে একটি সহানুভূতি জেগেছে তাঁর প্রতি। তাছাড়া করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি দেশবাসীর স্বার্থে অর্থনৈতিক প্রনোদনাসহ আরো নানারকম উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ভ্যাকসিন সংগ্রহের ব্যাপারে শুরুতে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও পরে সেই সমস্যা ভালভাবেই কাটিয়ে উঠেছেন। বর্তমানে বিশে^র প্রথম সারির কয়েকটি দেশের মধ্যে কানাডা একটি দেশ, যে দেশটি সর্বোচ্চ মাত্রায় ভ্যাকসিন প্রদান করতে পেরেছে দেশবাসীকে। এমন কি আমেরিকাকেও ছাড়িয়ে গেছে কানাডা। করোনা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও অন্যান্য দেশের তুলনায় কানাডা অনেকটাই এগিয়ে আছে। কিন্তু কিছু সংখ্যক ভ্যাকসিন বিরোধী লোকের কারণে কানাডায় করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সম্পূর্ণভাবে বা একটা যৌক্তিক মাত্রায়।
কানাডায় বর্তমানে করোনার চতুর্থ ঢেউ চলছে। আর এর জন্য প্রধানত দায়ী করা হচ্ছে এই ভ্যাকসিন বিরোধীদের অন্ধবিশ^াস ও অজ্ঞানতাকে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না এই ভ্যাকসিন বিরোধীদের মধ্যে। তাঁদের কারণে অন্যরা সংক্রমিত হচ্ছেন। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এবং স্বাস্থ্য বিভাগের উপর পড়ছে এর বিপুল চাপ। অথচ এই ভ্যাকসিন বিরোধীরাই আবার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উপর চড়াও হচ্ছেন, তাঁকে অত্যন্ত অশোভন মাত্রায় নিন্দা জানাচ্ছেন আক্রমনাত্মক ভাবে।
কানাডায় করোনা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারগুলো (দু-একটি বাদে) চিকিৎসকদের পরামর্শে যে সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার প্রতি সিংহভাগ নাগরিকের সমর্থন রয়েছে। ফলে তাঁরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গেই লক্ষ্য করছেন ভ্যাকসিন বিরোধীদের একগুঁয়ে ও দায়িত্বজ্ঞানহনী কর্মকান্ডগুলো। এবং এ কারণে নির্বাচনের আগে জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি কানাডিয়ানদের সহানুভূতি বৃদ্ধি পেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন যা নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।
কিন্তু তাতেও কি শেষ রক্ষা হবে জাস্টিন ট্রুডোর? এমন প্রশ্ন উদ্বিগ্ন লিবারেল সমর্থকদের।
স্মরণ করা যেতে পারে যে, অন্টারিও প্রভিন্সের গত নির্বাচনের আগে লিবারেল পার্টির যে দশা হয়েছিল তা সাম্প্রতিক রাজনীতির ইতিহাসে এক নজীর হয়ে আছে। প্রভিন্সিয়াল লিবারেল পার্টির তৎকালীন নেতা ক্যাথলিন উইন শ্রমজীবী মানুষের ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধি ও স্বল্প আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি ফ্রি করাসহ আরো কিছু জনবান্ধব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন অন্টারিওবাসীদের জন্য। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর। আগেরবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পাশ করলেও গত নির্বাচনে তাঁর ও তাঁর দলের শোচনীয় পরাজয় ঘটেছিল। এমন কি বিরোধী দলের মর্যাদাও পায়নি লিবারেল দল। মাত্র ৭টি আসন দখল করে তাঁর দল। বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে হলে অন্তত ৮টি আসন পেতে হয়।
তাহলে কি জাস্টিন ট্রুডোর পরিনতিও সেরকম হতে যাচ্ছে? বিশেষজ্ঞগণ বলছেন সে কথা বলার সময় এখনো আসেনি। তাছাড়া বিভিন্ন জরিপ প্রতিষ্ঠান গত কিছুদিনের মধ্যে যে সকল জরিপ চালিয়েছে তার গড় হিসাবে দেখা যাচ্ছে লিবারেল পার্টি সংখ্যাগড়িষ্ঠতা না পেলেও সর্বাধিক আসন পাবে। এই হিসাব ৩ সেপ্টেম্বরের।
কিন্তু তারপরও নির্বাচন বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, জাস্টিন ট্রুডোর সংকট থেকেই যাচ্ছে। বিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আগস্টে যখন জাস্টিন ট্রুডো নির্বাচনের ডাক দেন তখন পরিস্থিতি তাঁর অনুকুলেই ছিল। কানাডিয়ানরাও বেশ খুশি ছিল দেশ যে ভাবে চলছিল এবং মহামারী মোকাবেলায় সরকার যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছিল সে ব্যাপারে। বিভিন্ন জরিপে সেরকম তথ্যই দেখা যাচ্ছিল। প্রথম দিকে অবশ্য ভ্যাকসিন সংকটের কারণে কিছুটা হোচট খেয়েছিল সরকার। কিন্তু পরবর্তীতে বেশ দ্রুতই দেশের ব্যাপক সংখ্যক অধিবাসী ভ্যাকসিনের আওতায় চলে আসেন। বিভিন্ন প্রভিন্সে লকডাউন শিথিল করা হয়। লোকজন সামারও উপভোগ করেন অনেকটা নির্ভয়ে। কনজার্ভেটিভ পার্টির প্রাক্তন ক্যাম্পেইং ম্যানেজার জেনি বায়ার্ন বিবিসি-কে বলেন, ‘সপ্তাহ তিনেক আগেও আমি যখন লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি তখন তাঁরা এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে নির্বাচনে লিবারেল পার্টির জয় খুব সজহ হবে। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে এসে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। লিবারেলের অবস্থান তখন পাল্টে যেতে থাকে।’
মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এ্যালেক্স মারল্যান্ড বিবিসিকে বলেন, ‘কানাডার জনগণ অনেকটা বিস্মিত হয়েছেন এই ভেবে যে, ট্রুডো কেন মেয়াদ পূর্তির দুই বছর আগেই নির্বাচনের ডাক দিলেন। তিনি এ বিষয়ে সন্তোষজনক কোন উত্তর দেননি যে কারণে ভোটারদের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক হয়েছে এবং তাঁরা হতাশ এ ব্যাপারে।’
তবে জাস্টিন ট্রুডো সন্তোষজনক কোন উত্তর বা ব্যাখ্যা না দিলেও ধারণা করা হচ্ছে যে পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার আশায়ই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে যে বিষয়টি কাজ করেছে তা হলো, বিভিন্ন জরীপের ফলাফল। ঐ সকল জরিপে দেখা গিয়েছিল তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে রয়েছে। ফলে এই সময় নির্বাচন দিলে তিনি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারেন। আর এতে করে বিরোধী দলের চোখ রাঙ্গানি বা অনাস্থা প্রস্তাবের তোয়াক্কা না করেই সরকার পরিচালনা করতে পারবেন নির্বিঘ্নে।
এরকম চাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রতিটি দলের শীর্ষ নেতারাই এরকম চান। যদিও এতে করে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের একটা সম্ভাবনা তৈরী হয়। কারণ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তখন ক্ষমতাসীন দল যে কোন সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে পারে। বিরোধী দলের প্রতিবাদ বা যুক্তি-তর্ক কোন কাজে আসে না। এই পরিস্থিতি গণতন্ত্রকে আঘাত করার সুযোগ তৈরী করে দেয়। আবার এটিও সত্য যে, পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে বিরোধী দলের বৈরিতার কারণে কখনো কখনো জনবান্ধব আইন বা সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় ক্ষমতাসীন সংখ্যালঘু সরকারকে।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি
এবার দেখা যাক আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে প্রথম সারির প্রধান তিন রাজনৈতিক দলগুলের অন্যতম প্রতিশ্রুতিগুলো কি। এই প্রতিশ্রুতির উপরও নির্ভর করছে কোন দল কতটা ভোট টানতে পারবে নিজেদের পক্ষে।
স্বাস্থ্য ও মহামারী
লিবারেল পার্টি : অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তার জন্য ভ্যাকসিন প্রদানের উপর জোর দিচ্ছে দলটি। তাছাড়া বিভিন্ন প্রভিন্সে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য এক বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে লিবারেল পার্টি। লং-টার্ম কেয়ার হোমগুলোর মান আরো ভাল করার
প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো।
কনজার্ভেটিভ পার্টি : মহামারী মোকাবেলায় এই দলটি নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের উপর জোর দিচ্ছে। এর মধ্যে আছে কানাডায় ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং ‘পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট’ এর প্রয়োজনীয় স্টক গড়ে তোলা। করোনা মোকাবেলায় ‘বুস্টার সট’ সংগ্রহের জন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আগাম চুক্তি করার উপরও জোর দিচ্ছে দলটি।
এনডিপি : এই দলটি ২০২২ সালে কানাডায় ‘ইউনিভার্সাল ফার্মাকেয়ার’ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অর্থনীতি
লিবারেল পার্টি : অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে লিবারেল পার্টির প্রতিশ্রুতি হলো, জব মার্কেট-কে মহামারী শুরু হওয়ার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা। এর অংশ হিসাবে ‘কানাডা রিকভারী হায়ারিং প্রগ্রাম’ এর সময়সীমা বৃদ্ধিকরণ করার কথা বলা হচ্ছে। লিবারেল পার্টি আরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মহামারীতে বেশীমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন শিল্পসহ আরো কয়েকটি খাতকে সাহায্য করার।
কনজার্ভেটিভ পার্টি : মাহামারী চলাকালীন হারানো চাকরী পুনরুদ্ধারের উপর জোর দিচ্ছে এই দলটি। তাছাড়া ‘কানাডা ইমার্জেন্সি ওয়েজ সাবসিডি’ প্রগ্রাম শেষ হলে চাকরীতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ‘সুপার এমপ্লয়মেন্ট ইন্সুরেন্স’ প্রগ্রাম প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দলটি।
এনডিপি : এই দলটি করোনা মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে সহায়তা প্রদান করার জন্য দশ লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। দলটি আরো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এই বলে যে, যাঁরা কাজ ছেড়ে দেন তাঁরা যেন স্কুলে যেতে পারেন এমপ্লয়মেন্ট ইন্সুরেন্স বেনিফিট এর সুবিধা পেতে।
বাসস্থানসহ অন্যান্য বিষয়ে সামর্থ্য
লিবারেল পার্টি : সেল্ফ এমপ্লয়েড ব্যক্তিরাও যাতে এমপ্লয়মেন্ট ইন্সুরেন্স এর সুবিধা পান সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এই দলটি। স্বল্প আয়ের সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ‘গ্যারান্টিড ইনকাম সাপ্লিমেন্ট’ ও কানাডা পেনশন প্লান বেনিফিট এর উন্নতিসাধন করার জন্যও কাজ করবে বলে জানিয়েছে লিবারেল পার্টি। কানাডা স্টুডেন্ট লোন ও কানাডা এপ্রেন্টিস লোন থেকে ফেডারেল টেক্স এর অংশ বাদ দেয়ার চিন্তা আছে দলটির। তাছাড়া এই লোন ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে আয়ের সীমা বাৎসরিক ২৫ হাজার ডলার থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার ডলার করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৫০ হাজার ডলারের নিচে কারো আয় হলে মাসে মাসে এই লোন পরিশোধ করতে হবে না।
কনজার্ভেটিভ পাটি : এই দলের পক্ষ থেকে সামর্থ্যের সাথে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যার মধ্যে রয়েছে তিন বছরে দশ লক্ষ বাড়ি নির্মানের পরিকল্পনা, সেলফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা সস্তা করার প্রতিশ্রুতি, টেক্স ক্রেডিট এর মাধ্যমে নিন্ম আয়ের পরিবারের শিশুদের জন্য ‘চাইল্ড কেয়ার’ এর খরচ ম্যানেজ করা এবং খাদ্যদ্রব্যের মূল্যহ্রাসের ব্যবস্থা করা।
এনডিপি : সামর্থ্য মোকাবেলায় এনডিপি’র পরিকল্পনায় রয়েছে ৫ লাখ নতুন বাড়ি নির্মান, প্রত্যেকের জন্য বিনামূল্যে ওষুধের কভারেজ প্রদান এবং মাধ্যমিক পরবর্তী স্কুলকে আরো সাশ্রয়ী করা। দলটি আরো বলেছে, স্টুডেন্ট লোন থেকে ফেডারেল টেক্স এর অংশ বাদ দেয়া হবে। তাছাড়া সেল ফোন ও ইন্টারন্টে এর বিল কামাতে চায় দলটি।
জলবায়ু পরিবর্তন
লিবারেল পার্টি : ২০৩০ সালের মধ্যে এই দল গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকে ৪৫% কমিয়ে আনতে চায়।
কনর্জাভেটিভ পার্টি : এই দলটি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনকে ৩০% এ নামিয়ে আনতে চায় ২০৩০ সালের মধ্যে।
এনডিপি : গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকে ৫০% কমিয়ে আনতে চায় এনডিপি। (তথ্য সূত্র -গ্লোবাল নিউজ)
রীতি অনুযায়ী সব দেশে সব রাজনৈতিক দলই এরকম কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে নির্বাচনের আগে। উদ্দেশ্য- জনগণের সমর্থন ও ভোট পাওয়া। কিন্তু নির্বাচনে জিতে গেলে এই সব প্রতিশ্রুতির কথা সব দল মনে রাখে না বা প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়। প্রতিশ্রুতি যখন দেয় তখন উদ্দেশ্য থাকে ভোটের দিকে। ফলে কোন কোন দল প্রতিশ্রুতির খই ফুটায় তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে। এ কারণে ভোট দেয়ার আগে দলের অতীত ইতিহাস ও কর্মকান্ড এবং প্রতিশ্রুতি পূরণে তারা কতটা সফল হয়েছিল সে দিকগুলো বিবেচনায় আনা জরুরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সর্বশেষ জরিপ ফলাফল
আসন্ন নির্বাচনে কোন দল শতকরা কত ভাগ ভোট পেতে পারে বা কত সংখ্যক আসন পেতে পারে সে নিয়ে জরিপ প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রতিবেদন যখন তৈরী করা হয় (সেপ্টেম্বর ৫) তখনকার হিসাব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে জনপ্রিয়তার দৌড়ে এগিয়ে আছে এরিন ও’টুল এর নেতৃত্বাধীন কনজার্ভেটিভ পার্টি। এই দলের জনপ্রিয়তার হার ৩৪.১%। দ্বিতীয় স্থানে আছে জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি অব কানাডা। জনপ্রিয়তার হার ৩১.২%। তৃতীয় স্থানে আছে জাগমিত সিং এর নেতৃত্বাধীন নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি। এই দলের জনপ্রিয়তার হার ২১.১%। চতুর্থ স্থানে আছে Bloc Québécois। জনপ্রিয়তার হার ৫.৭%। চরম বর্ণবাদী দল পিপলস পার্টির অবস্থান পঞ্চমে। জনপ্রিয়তার হার ৪.৫%। আর গ্রীন পার্টি অব কানাডার অবস্থান সবার শেষে। জনপ্রিয়তার হার ৩.৫%।
অন্যদিকে আসন সংখ্যার দিক বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে লিবারেল পার্টি এখনো এগিয়ে আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও এই দলটির দখলে আসতে পারে ১৩৯টি আসন যা দিয়ে সংখ্যালঘু সরকার গঠন করা যেতে পারে। আর কনজার্ভেটিভ পার্টি পেতে পারে ১৩৪টি আসন। নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির দখলে আসতে পারে ৩৮টি আসন। Bloc Québécois’র দখলে ২৬টি আসন। গ্রীন পার্টির দখলে ১টি আসন এবং পিপলস পার্টি দখলে একটিও না।
আর নির্বাচনে জয়ী হবার সম্ভাবনা?
সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে লিবারেল পার্টির জয়ী হবার সম্ভাবনা মাত্র ১২%। আর সংখ্যালঘু হিসাবে জয়ী হবার সম্ভাবনা ৪২%। অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কনজার্ভেটিভ পার্টির জয়ী হবার সম্ভাবনা ৫% এবং সংখ্যালঘু হিসাবে জয়ী হবার সম্ভাবনা ৪০%।
কোন প্রভিন্সে কোন দল এগিয়ে আছে তার হিসাবও পাওয়া যাচ্ছে জরিপে। এতে দেখা যাচ্ছে ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে কনজার্ভেটিভ পার্টি ৩৩%, এনডিপি ২৯.২% এবং লিবারেল পার্টি ২৬.২%।
প্রেইরী অঞ্চলের মেনিটোবা ও সাস্কাচুয়ানে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে কনজার্ভেটিভ পার্টি ৪৪.৮%, লিবারেল পার্টি ২৩% এবং এনডিপি ২২. ৬%।
কুইবেকে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে লিবারেল পার্টি ৩৩.৯%, কনজার্ভেটিভ পার্টি ২০.৫% এবংBloc Québécois ২৫%। এনডিপি’র অবস্থান এই প্রভিন্সে চতুর্থ (১২.৮%)।
আলবার্টায় প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে কনজার্ভেটিভ পার্টি ৫৩.৪%, এনডিপি ২১% এবং লিবারেল পার্টি ১৬.৬%।
অন্টারিও প্রভিন্সে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে লিবারেল ৩৫.৯%, কনজার্ভেটিভ পার্টি ৩৫.৩% এবং এনডিপি ২০.৩%।
আটলান্টিক কানাডায় (নিউ ব্রান্সউইক, নিউফাউন্ডল্যান্ড এ্যান্ড ল্যাব্রাডর, নোভা স্কটিয়া এবং প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড) প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে লিবারেল পার্টি ৩৯.৪%, কনজার্ভেটিভ পার্টি ৩১.৯% এবং এনডিপি ২১%।
উপরের হিসাবটি কোন একক জরিপ প্রতিষ্ঠানের নয়। বিভিন্ন জরিপ প্রতিষ্ঠানের করা জরিপের গড় হিসাব এটি, যা তৈরী করেছে সিবিসি নিউজ এর পুল ট্রাকার।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জরিপে যে সকল ভবিষ্যৎ বাণী করা হয় বা হচ্ছে সেগুলো অন্ধভাবে বিশ্বাস করাটা মোটেও নিরাপদ নয়। কারণ অতীতে দেখা গেছে নির্বাচনের আগে করা অনেক জরিপ রিপোর্টই পরে সত্য বলে প্রমাণিত হয়নি। রাতারাতি পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার ঘটনা আছে অনেক। ২০১৫ সালে কানাডার জাতীয় নির্বাচনই তার অতি সাম্প্রতিক প্রমাণ। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মাসখানেক আগে দেখা গিয়েছিল সেই সময়ে টম মূলকেয়ারের নেতৃত্বাধীন নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষমতায় আসছে। তখন জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টির অবস্থান ছিল তৃতীয় স্থানে। কিন্তু দৃশ্যপট পাল্টাতে বেশী দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন দেখা গেল জাস্টিন ট্রুডো তাঁর দল নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।
আবার ২০১৪ সালে অন্টারিও লিবারেল পার্টি বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করলেও নির্বাচনের মাস খানের আগে কিন্তু দলটির জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছিল। ঐ সময় নির্বাচনী জরিপে দলের তৎকালিন প্রধান ক্যাথলিন উইন জনপ্রিয়তার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছিলেন। কেউ আশা করেননি তিনি জয়ী হবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল জুন মাসের ১২ তারিখে। আর মে মাসের ১২ তারিখে অর্থাৎ মাত্র এক মাস আগে তাঁর দলের জনপ্রিয়তা ছিল ৩০%। অন্যদিকে প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা ছিল ৩৯%। এটি ছিল Ipsos Research এর জরিপ ফলাফল।
বিশিষ্ট সাংবাদিক লেখক ও (TV Ontario (TVO) এর কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স এর হোস্ট স্টিভ পাইকিন সম্প্রতি এক লেখায় বলেন, জরিপ কোন ভবিষ্যত বাণী নয়। কথাটি তিনি দ্বিতীয়বারও জোর দিয়ে বলেন, জরিপ কোন ভবিষ্যত বাণী নয়। জরিপ কখনো এ কথা বলতে পারেনা আজ থেকে দুই বা তিন মাস পর লোকজন কি সিদ্ধান্ত নিবে। বড়জোর সপ্তাহ দুই আগে লোকজন কি ভাবছিল তা বলতে পারে জরিপ। স্টিভ অতীতের নির্বাচনী জরিপ বিষয়ে কতগুলো উদাহরণ টেনে দেখান এগুলোর উপর নির্ভর করা যে কতটা অদূরদর্শীতার কাজ।
যেমন, ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টির নবনির্বাচিত প্রধান ফ্রেঙ্ক মিলার বেশ আয়েশী মুডেই ছিলেন। কারণ তিনি দেখছিলেন তাঁর দল নির্বাচনী জরিপে বেশ এগিয়ে আছে। তাছাড়া তার দল বিগত ৪২ বছর ধরে বিরতিহীনভাবে অন্টারিও শাসন করে আসছে। সুতরাং এই দলকে ঠেকায় কে? এই ভাবনা থেকে তিনি প্রচার কার্যে মন দেননি। বা নির্বাচনকে তেমন গুরুত্ব সহকারে মোকাবেলা করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি। নির্বাচনের দিন দেখা গেল তার দলের ৪২ বছরের বিরামহীন রাজত্ব ধুলায় মিশে গেছে। ক্ষমতা চলে যায় লিবারেল পার্টির হাতে।
আরো ৫ বছর পরের ঘটনা। নির্বাচনের ৩ মাস আগে লিবারেল পার্টির নেতৃবৃন্দ দেখলেন জরিপ রিপোর্ট তাঁদের পক্ষেই যাচ্ছে। তাঁরা মনে মনে প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেন পরবর্তী সরকার গঠনের। কিন্তু বিপর্যয় ঘটলো নির্বাচনের রাতে। বব রে -র নেতৃত্বে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষমতা দখল করলো।
আরো ৫ বছরের পরের ঘটনা। অন্টারিও প্রভিন্সে নির্বাচনের আগে জরিপ রিপোর্ট বলছে লিবারেল ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু না। জরিপ রিপোর্ট ভুল প্রমাণ করে ক্ষমতায় আসলেন মাইক হ্যারিস। একেবারে তৃতীয় স্থান থেকে প্রথম স্থানে।
এরকম আরো কিছু উদাহরণ আছে অন্টারিও এবং কানাডার নির্বাচনী জরিপ নিয়ে। সুতরাং আসন্ন নির্বাচনে কে আসবে ক্ষমতায়- জাস্টিন ট্রুডো না এরিন ও’টুল, নাকি জাগমিত সিং তা শতভাগ নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারে না। কোন জরিপই না। নির্বাচনে কোন দল জিতবে তা নির্ভর করে অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উপর। আর নির্বাচনের আগে দ্রুতই বদলাতে থাকে রাজনৈতিক দৃশ্যপট।
সুতরাং সময় এখন অপেক্ষার। ২০ সেপ্টেম্বর কি ঘটবে, কার হাতে ক্ষমতা যাবে তা নিয়ে জরিপ প্রতিষ্ঠানসমূহের জরিপ ফলাফল নিয়ে কোন দলের হতোদ্যম হওয়া ঠিক নয়। আবার কোন দলের পুলকিত হওয়ারও কোন যুক্তি নেই।