কানাডায় জনবল নিয়োগে বিদ্বেষের অবসান হোক

ফেব্রুয়ারী 16, 2020

নয়টি দেশে পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনবল নিয়োগে বিদ্বেষের দিক থেকে কানাডা প্রায় শীর্ষে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কানাডার অশ্বেতাঙ্গ জনগণ চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি বৈষম্যের শিকার হন।

সম্প্রতি সোসিওলজিক্যাল সায়েন্স-এ প্রকাশিত সমীক্ষায় নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানী লিঙ্কন কুইলিয়ান ও তার সহকর্মীরা কর্মী নিয়োগের ৯৭টি মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষার বিশ্লেষণ করেছেন। সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় চাকরী প্রার্থীদের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করা হয় তা চিহ্ণিত করার জন্য এতে কাল্পনিক চাকরিপ্রার্থী দাঁড় করানো হয়।

বিশ্লেষণের ফলাফলে কেউই বিস্মিত হননি। দেখা গেছে, চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য অশ্বেতাঙ্গ প্রার্থীরা শ্বেতাঙ্গ প্রার্থীদের সমান ডাক পান না। আর চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অশ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যের শিকার হবার সম্ভাবনার দিক থেকে কানাডা ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে আছে এবং এই দুই দেশে এর হার হলো ১১ শতাংশ।

এতে দেখা যায়, আফ্রিকান, এশীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের বংশোদ্ভূত লোকেরা সমভাবে বৈষম্যের শিকার হন। সমীক্ষায় বলা হয়, “বিপরীতভাবে শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে বৈষম্য খুবই কম এমনকি অনেক সময় তা পরিসংখ্যানে উল্লেখ করার মতও নয়।” এতে আরও বলা হয়, “স্থানীয় শ্বেতাঙ্গদের প্রতি  বিপরীতমুখি বৈষম্যের কোনও দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়নি।”

উল্লেখ্য যে, কানাডার শ্রমবাজারে কাজের সন্ধানে নামা দক্ষ অভিবাসীগণ নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাদের ভাষাগত দক্ষতা নেই, কানাডিয়ান অভিজ্ঞতা নেই, কানাডিয়ান ডিগ্রি নেই, কানাডিয়ান সংস্কৃতি সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই এরকম কিছু অভিযোগ তুলে তাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। যে সকল আবেদনকারীর নাম দেখে অনুমান করা যায় তার জন্ম এশিয়া বা আফ্রিকায় অর্থাৎ অ-ইউরোপীয় নামযুক্ত যে সকল আবেদনপত্র চাকুরীদাতাগণ পেয়ে থাকেন সেগুলোর ব্যাপারে তারা আগ্রহী থাকেন না। শুরুতেই তারা অনুমানের উপর ভিত্তি করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান যে, এই আবেদনকারীর যোগ্যতার অভাব রয়েছে। সুতরাং তাকে নিয়োগ দেয়া যাবে না। নিয়োগ দিতে গেলে বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হবে। তাকে নতুন করে ট্রেনিং দিতে হবে। আবেদনকারীর ভাষা দুর্বল হওয়াতে তার সঙ্গে সঠিকভাবে যোগাযোগ করা যাবে না- ইত্যাদি।

ঢ়ড়াবৎঃুধপঃরড়হষধন.ড়ৎম এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদেন বলা হয়, গবেষকরা দৈবচয়নের ভিত্তিতে বাছাই করা হাজার হাজার জীবনবৃত্তান্ত  ঘেঁটে দেখেছেন যে, বিদেশি দক্ষ ব্যক্তি যাদের নামের মধ্যে বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর পরিচয় স্পষ্ট, চাকরিদাতারা তাদেরকে খুব কমই সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকেন। বিদেশি নামের চেয়ে ইংরেজি নামের লোকদেরকে বেশি করে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। কানাডায় কাজের অভিজ্ঞতার কারণে বিদেশিদের নিয়োগের জন্য ডেকে নেওয়ার পরিমাণ বাড়লেও তা ইংরেজি নামবিশিষ্ট লোকদের চেয়ে কম।

এমনকি কানাডায় আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং এদেশেই কাজের অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও শুধু নামের কারণে নিয়োগদাতারা ব্যাপকভাবে বৈষম্য করেছেন। কোনও জীবন-বৃত্তান্ত থেকে কেবল ইংরেজি ধাঁচের নাম পাল্টে ভারতীয়, পাকিস্তানী বা চীনা নাম বসিয়ে দিলেই চাকরির ইন্টারভিউতে ডাকার সম্ভাবনা ২৮ শতাংশ কমে যেতে পারে। কানাডায় শিক্ষালাভ এবং কাজের অভিজ্ঞতা থাকার পরও বিদেশি নামধারী চাকরিপ্রার্থীরা যদি একাধিক ভাষায় অনর্গল কথা বলতে সক্ষম হন, কোনও ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে থাকেন বা মাস্টার্স ডিগ্রি করে থাকেন তবুও তাদের চাকরির ইন্টারভিউতে ডাকার হার বাড়ে না।

কানাডায় শ্রমবাজার যখন ইতিহাসের সবচেয়ে জোরালো অবস্থানে রয়েছে ঠিক সেই সময়েই দেশটিতে শ্রমিকের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে দক্ষ অভিবাসীদেরকে শ্রম বাজার থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে নানান অজুহাত দেখিয়ে যা কানাডার অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। আমরা মনে করি বিষয়টি কানাডার নীতিনির্ধারকদেরকে জরুরী ভিত্তিতে তলিয়ে দেখা উচিৎ এবং কিভাবে তার সমাধান বের করা যায় সেটাও বের করা উচিৎ কানাডার বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থে।