অনলাইন ব্যবহারকারী শিশুদের উপর নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে
ফেব্রুয়ারী 5, 2019
কানাডিয়ান প্রেস এর এক খবরে বলা হয় দেশটিতে আট বছর বয়সের শিশুরাও অনলাইনে নগ্ন ছবি শেয়ার করছে! সম্প্রতি নিউ ব্রান্সউইকের চারটি শিশু স্বেচ্ছায় অনলাইনে নিজের নগ্ন ছবি শেয়ার করার পর পুলিশ তাদের বাবা-মাকে সতর্ক করেছে। আরসিএমপি (রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ) বলেছে, আট থেকে ১২ বছর বয়সের ওই বাচ্চারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ওয়েবসাইটে নগ্ন ছবি অথবা ভিডিও শেয়ার করেছে। পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরণের ছবি শেয়ার করার ঘটনা বাড়ছে।
সন্দেহ নেই, বর্তমান যুগে ইন্টারনেটে আগ্রহী হয়ে পড়ছে আমাদের শিশুরাও। ইউনিসেফের জরিপেও আমরা এই তথ্য পাই। কিন্তু সেই আগ্রহী হয়ে উঠা কতটা নিরাপদ সেই বিষয়টিও আমাদের নজরদারিতে রাখতে হবে। ইন্টারনেট বিষয়ক সচেতনতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে ইউনিসেফ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে উল্ল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো, উচ্চমানসম্পন্ন অনলাইন উপকরণগুলো সব শিশুর জন্য সহজলভ্য করতে হবে। অনলাইনে সব ধরনের ক্ষতিকর দিক থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে হবে। এসব ক্ষতিকর দিকের মধ্যে রয়েছে অনলাইনের অপব্যবহার, সাইবার উৎপীড়ন, স্প্যামিং, ফিশিং, অশ্লীল তথ্য ও ছবির আদান-প্রদান প্রভৃতি।
অনলাইন ব্যবহারকারী শিশুদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও পরিচয় সুরক্ষিত রাখতে হবে। অনলাইনে শিশুদের সম্পৃক্ত ও নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ডিজিটাল শিক্ষা প্রদান করতে হবে।
এ কথা সত্যি যে, ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আজকের যুগে সবার জন্য অসীম তথ্যভাণ্ডার এবং বিনোদনের সীমাহীন দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এর মধ্যে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে শিশুরাও। কিন্তু মনে রাখতে হবে, শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য ইন্টারনেটের যেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, তেমন ভাবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। তবে সামান্য সচেতন হলে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব।
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে এই ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করে ইন্টারনেটের অবারিত জ্ঞান ভান্ডার থেকে শিশুদের বঞ্চিত রাখা হবে আত্মঘাতি। ইন্টারনেট তাদেরকে ব্যবহার করতে দিতে হবে। কিন্তু ইন্টারনেটের অথৈ দুনিয়ায় শিশুদের বিনা তদারকীতে ছেড়ে দেওয়া চলবে না। ইন্টারনেটে আমাদের শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
‘ইন্ডিয়া টু ডে’ র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুর নিরাপত্তার জন্য সমসাময়িক সাইবার ইস্যু সমূহের ভালো-মন্দ দিকগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন শিশুর সঙ্গে। অনুসন্ধানের চেষ্টা করুন ইন্টারনেট ব্যবহারে কোন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কিনা আপনার শিশুর ওপর। আপনার সন্তান কোনো অস্বাভাবিক আচরণ করছে কিনা, তা খেয়াল করুণ। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় আপনার শিশু যাতে বিনামূল্যের কোনো চমকপ্রদ অফার গ্রহণে আগ্রহী না হয়, সে বিষয়ে তাকে সতর্ক করুন। কারণ, এ ধরনের অফারের মাধ্যমে এমবেডেড কুকিজ এবং ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে থাকে সাইবার অপরাধীরা। ভুল করেও যাতে এ ধরনের লিংকে ক্লিক না করে, সে বিষয়ে বুঝিয়ে বলুন।
শিশুদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা কখনো তাদেরকে ঘরের বাইরে কোন অপরিচিত জায়গায় একা পাঠাই না। আর ইন্টারনেট হলো অপরিচিত এক সীমাহীন জগৎ। সেখানে আমাদের শিশুদের বিনা তদারকীতে চলতে ফিরতে দিলে নিশ্চিতভাবেই বিপদের আশংকা রয়েছে। তাই শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদেরকে বিশেষ ভাবে সতর্ক হতে হবে। অনলাইনে শিশুরা কী করছে, কোথায় ঢুঁ মারছে, সবকিছু নজরদারিতে রাখুন। শিশুর নিরাপত্তা ও মঙ্গলের জন্য এই কাজগুলো করা জরুরী।