অভিবাসী পেশাজীবীরা টরন্টোর চাকরির বাজারে বিদ্যমান অদৃশ্য সীমায় কড়া নাড়ছেন
বৃহত্তর টরন্টো অঞ্চলে ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী অভিবাসীরা কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের চেয়ে প্রায় ২৫% কম উপার্জন করেন, কিন্তু ৪৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সে পৌঁছতে পৌঁছতে কানাডায় জন্মানো প্রতিপক্ষের চেয়ে তাদের আয় অন্তত ৪০% কমে যায়
জুলাই ১৩, ২০২০
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : বৃহত্তর টরন্টো এলাকায় নবাগতদের মধ্যে বেকারত্বের হার যদিও সর্বকালের সর্বনিম্ম (করোনা প্রদুর্ভাবের আগে) তবু অনেক অভিবাসী পেশাজীবী আছে যারা নির্বাহী ও প্রধান নির্বাহীর পদে যেতে পারেন না। নতুন এক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে।
টরন্টো অঞ্চলের অভিবাসী কর্মসংস্থান কাউন্সিলের (TRIEC) ‘সবার জন্য করপোরেট মই তৈরি’ শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয় যে, বৃহত্তর টরন্টো অঞ্চলের (GTA) মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ অভিবাসী হলেও সরকারি, বেসরকারি ও অলাভজনক খাতের সর্বত্র সিনিয়র নেতৃত্বের পদগুলোতে এদের সংখ্যা মাত্র ছয় শতাংশ।
সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে জিটিএর ৬৯টি সংস্থার ৬৫৯ নির্বাহীর প্রোফাইল বিশ্লেষণ করা হয়। পরিস্থিতি কিভাবে বর্তমান পর্যায়ের দিকে গেল সেই বিষয়ে রিপোর্টে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। খবর সিএনএম নিউজ এর।
TRIEC-এর নির্বাহী পরিচালক মারগারেট ইটন উল্লেখ করেন যে, লক্ষ্য হতে হবে একটি করপোরেট মই তৈরি করার যাতে নবাগতসহ এই অঞ্চলের সবাই আরোহন করতে পারবে।
এক বিবৃতিতে ইটন বলেন, “অভিবাসী পেশাজীবীদের জন্য এখানে অবশ্যই একটি অদৃশ্য সর্বোচ্চ সীমারেখা টানা আছে। আর এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, আমরা তাদের দক্ষতা ও মেধা পুরোপুরি ব্যবহার করছি না।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের অঞ্চলের অর্থনৈতিক সাফল্যের ক্ষেত্রে নবাগতদের যথেষ্ট অবদান আছে। কিন্তু নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যের অভাব থাকার অর্থ হলো, এক্ষেত্রে এখনও অনেক অগ্রগতি অর্জন করার আছে।”
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার ২০১৬ সালের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে রিপোর্টে বলা হয়, টরন্টোতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই ডিগ্রিধারী একজন অশ্বেতাঙ্গ কানাডায় জন্মানো একজন কানাডীয়র চেয়ে বছরে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার ডলার কম আয় করেন। কানাডায় জন্মানো শ্বেতাঙ্গ পুরুষের তুলনায় একই যোগ্যতার অশ্বেতাঙ্গ নারীর আয়ের মধ্যে ব্যবধান সর্বোচ্চ, যা বছরে গড়ে প্রায় ৯৫ হাজার পাঁচ’শ ডলার।
টরন্টোর পৌর এলাকার জনসংখ্যায় ২০৩৬ সালের মধ্যে অভিবাসীদের হার দাঁড়াবে ৫৭%। TRIEC উল্লেখ করেছে যে, অভিবাসী পেশাজীবীদেরকে কর্মজীবনের স্বাভাবিক অগ্রগতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে জিটিএর চাকরিদাতারা সম্ভবত অত্যন্ত বৈধ ব্যবসায়িক সুবিধা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছেন।
রিপোর্টে বলা হয়, “সংগঠনগুলোর জন্য উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মেধা ও গ্রাহক গোষ্ঠী আকৃষ্ট করা ও ধরে রাখার ক্ষেত্রে অভিবাসী নেতারা খুই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমশ বিশ্বজনীন হয়ে উঠতে থাকা বাজারে নেতৃত্বের জন্য অভিবাসীদের তৈরি করা ও লালন করার সুস্পষ্ট ব্যবসায়িক গুরুত্ব আছে।
রিপোর্টে দেখা যায়, অভিবাসী পেশাজীবীদের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধা হিসাবে চিহ্ণিত করা হয়েছে পেশাগত উন্নয়নের সমান সুযোগ না থাকা, একইসঙ্গে পরোক্ষ পক্ষপাতিত্ব ও বৈষম্যমূলক আচরণ ইত্যাদিকে।
রিপোর্টে শ্রমবাজারের অগ্রগতির প্রবণতা, যেসব বাঁধার কারণে ক্যারিয়ারে স্থবিরতা আসে সেসব বিষয়ে ব্যাপকভাবে আলোকপাত করা হয় এবং অভিবাসীদের ক্যারিয়ারে অগ্রগতির লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়।
TRIEC দেখেছে, চাকরিদাতাদের মধ্যে বিদেশে অর্জিত পেশাদারি অভিজ্ঞতার কোনরকম মূল্যায়ন না করার প্রবণতা ব্যাপক। অভিবাসীদেরকে কানাডায় তাদের ক্যারিয়ার প্রায়ই শুরু করতে হয় জুনিয়র পদ থেকে অথবা একেবারে প্রারম্ভিক পদ থেকে। আগের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, আয়ের দিক বিবেচনা করে দেখা যায়, বিদেশে তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা কানাডায় এক বছরের অভিজ্ঞতার সমান ধরা হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, কানাডায় নিম্ম স্তরের পদে ক্যারিয়ার শুরু করলে তা একজন অভিবাসীর সারা জীবনের ক্যারিয়ারে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এই রিপোর্টের জন্য নেওয়া সাক্ষাৎকারে একজন অভিবাসী এটিকে “আঠালো মেঝে” পরিস্থিতি বলে উল্লেখ করেন। অভিবাসীরা কীভাবে তাদের নিজের লেখাপড়া ও অভিজ্ঞতার বাইরের চাকরিতে আটকে যান এবং কীভাবে তাদের ক্যারিয়ারে উপরে ওঠার পথ রুদ্ধ হয়ে যায় সেই বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন।
রিপোর্টে বলা হয়, জিটিএ-তে ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী অর্থনৈতিক অভিবাসীরা কানাডায় জন্মানো কর্মীদের চেয়ে গড়ে ২৫ শতাংশ কম আয় করেন, কিন্তু ৪৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সে পৌঁছতে পৌঁছতে তাদের আয় কানাডায় জন্মানো তাদের প্রতিপক্ষের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যায়।
অভিবাসীদের ক্যারিয়ারে অগ্রগতির প্রধান ৫টি বাঁধা :
১. প্রারম্ভিক কর্মসংস্থানের উদ্যোগের সময় অতিরিক্ত মনোসংযোগ
২. সমকক্ষতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ
৩. কর্তৃপক্ষের সহায়তা লাভ এবং পেশাগত উন্নয়নের সমান সুযোগের অভাব
৪. পদোন্নতির স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ার অভাব
৫. পরোক্ষভাবে পক্ষপাত এবং বৈষম্যমূলক আচরণ
রিপোর্টে যেসব তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, বেসরকারি খাতে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য সবচেয়ে কম: জিটিএ-তে করপোরেট হাউজের নির্বাহী পদে অভিবাসীর সংখ্যা মাত্র পাঁচ শতাংশ। সরকারি ও অলাভজনক খাতে নির্বাহী পদে অভিবাসীদের চাকরি দেওয়ার পরিমাণ সামান্য ভালো, ৬.৬ শতাংশ।
সাধারণভাবে নবাগতদেরই চাকরি দেয় এমন খাতেও অভিবাসীদের ক্যারিয়ারে স্থবিরতা আছে। আর্থিক, বীমা এবং একইসঙ্গে পেশাদারি, বিজ্ঞান ও কারিগরি পরিষেবা খাতেও অভিবাসীরা মইয়ের শীর্ষ ধাপ পেরুতে পারছে না। অথচ এই খাতগুলোতেই সবচেয়ে বেশি অভিবাসী পেশাজীবী কাজ করেন।
লিঙ্গ ও বর্ণের আন্তঃসম্পর্কেরও নেতিবাচক প্রভাব আছে- বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। নির্বাহীদের মধ্যে মোটামুটি ৪.২ শতাংশ অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসী এবং দুই শতাংশ হলো কৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসী নারী। করপোরেট হাউজের ১০০ জন নির্বাহীর মধ্যে মাত্র একজন হলেন অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসী নারী।