ফোর্ডের জনপ্রিয়তা এক বছরেই একেবারে তলানীতে নেমে এসেছে
আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা
জুলাই ১৭, ২০১৯
খুরশিদ আলম : অন্টারিও-র প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ড এর জনপ্রিয়তা নিচের দিকে নামতে নামতে এক বছরের মাথায়ই একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, এই মূহুর্তে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে তার দল তৃতীয় স্থান লাভ করবে। মেইনস্ট্রিট রিসার্স এর বরাত দিয়ে হাফিংটন পোস্ট এ তথ্য জানায়।
এখন থেকে ঠিক এক বছর আগে অনুষ্ঠিত প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন ড্যাগ ফোর্ড। নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়ে সেদিন সবাইকে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। গতবছর ৭ জুনের নির্বাচনে ড্যাগ ফোর্ড এর নেতৃত্বাধিন প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টি জয়ী হয়েছে মোট ৭৬টি আসনে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে অন্টারিও এনডিপি। তারা জয়ী হয়েছে ৪০টি আসনে। আর অন্টারিও লিবারেল পার্টি শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। ড্যাগ ফোর্ডের প্রবল প্রতিপক্ষ ছিল ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি। সেই পার্টিকে তিনি এমন ভাবে ধরাশায়ী করেছিলেন যে, তারা পার্লামেন্টে বিরোধী দলের মর্যাদাও হারায়। পার্লামেন্টে বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে হলে অন্তত ৮টি আসনে জয়ী হতে হয়। লিবারেল পার্টি পেয়েছিল মাত্র ৭টি আসন!
যে দলটি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল লিবারেলকে একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল সেই অন্টারিও কনজার্ভেটিভ পার্টির প্রধান ও প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ডের অবস্থা এখন ঐ লিবারেল পার্টির পরাজিত নেত্রী ক্যাথলিন উইনের চেয়েও খারাপ অবস্থায় চলে গিয়েছে। মেইনস্ট্রিট রিসার্স কর্তৃক পরিচালিত এক জরীপে দেখা গেছে অন্টারিওবাসীদের মধ্যে শতকরা ২০ জন ড্যাগ ফোর্ডকে এখনো পছন্দ করেন। কিন্তু তাকে অপছন্দ করেন এমন অন্টারিওবাসীর সংখ্যা এখন দাড়িয়েছে শতকরা ৭৩ জনে। আর দিন যতই যাচ্ছে ততই ড্যাগ ফোর্ডের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান মেইনট্রিট রিসার্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিইটো ম্যাজি। তিনি আরো বলেন, আমরা কখনো দেখিনি কোন ক্ষমতাসীন প্রিমিয়ার মাত্র এক বছরের মধ্যে জনগনের এতটা বিরাগভাজন হয়ে উঠেছেন।
জরীপে দেখা গেছে যদি এই মূহুর্তে অন্টারিওতে সাধারণ নির্বাচন ডাকা হয় তবে শতকরা ৪০ জন ভোটার ভোট দিবেন লিবারেল পার্টিকে। এনডিপি-কে ভোট দিবেন শতকরা ২৪ জন ভোটার। আর ড্যাগ ফোর্ডের প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টি ভোট পাবে শতকরা ২২ জন ভোটারের।
ড্যাগ ফোর্ডের সমস্যাটা তাহলে কোথায়? তিনি এমন কি কর্ম বা অপকর্ম করেছেন যে এক বছরের মাথায়ই তার জনপ্রিয়তায় এমন ধ্বস নেমেছে! এমনকি তার দলের লোকেরাই এখন তাকে অপছন্দ করছে! অতি সম্প্রতি তার দুইজন ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী কর্মকর্তা কি কারণে তাকে ত্যাগ করলেন?
ড্যাগ ফোর্ডকে কেউ কেউ ‘এক্সিডেন্টাল প্রিমিয়ার’ হিসাবেও আখ্যায়িত করেন। তিনি এই মূহুর্তে বুদ্বুদের উপর বসে আছেন এবং সেই বুদ্বুদ যে কোন সময়ই ফেটে যেতে পারে এমন ধারণাই করছেন কেউ কেউ। তার প্রশাসনে এক ধরণের বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। আর এ অবস্থা অনেকটাই তার প্রয়াত ভাই সাবেক মেয়র রব ফোর্ড এর সাথে মিলে যাচ্ছে। টরন্টোর জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘নাউ’ এমনটাই বলছে।
‘নাউ’ এর মতে গত এক বছরে বিভিন্ন খাতে ড্যাগ ফোর্ডের অপরিকল্পিত ব্যয় সংকোচন এর উন্মাদনা এবং নিজ প্রশাসনে বিশৃঙ্খলার কারণে তার জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। শতকরা ৭৫ জনই এখন তাকে পছন্দ করছেন না।
কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, তিনি নিজেই নিজেকে ‘জনগণের প্রিমিয়ার’ হিসাবে আখ্যায়িত করে আসছেন শুরু থেকে। অপরদিকে জনগণের সেবায় বরাদ্দ তহবিল কেটে-কুটে একটা আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। ড্যাগ ফোর্ডের অপরিকল্পিত ‘কাট কাট এবং কাট’ নীতি অর্থাৎ জড়বুদ্ধিতাসম্পন্ন ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে এবং একই সাথে অনেক কিছু বেসরকারী করণের পরিকল্পনা নেয়ার কারণে বর্তমানে তার অবস্থা এমন পর্যায়ে নেমে এসেছে যে, তিনি নিজ দলের লোকদেরও সমর্থন হারাচ্ছেন।
‘নাউ’ আরো মন্তব্য করে এই বলে যে, ড্যাগ ফোর্ড মনে করছেন তিনি সংসার চালানোর মতই রাজ্যও চালাতে পারবেন। তার খামখেয়ালীপনার কারণে ইতিমধ্যে তার কয়েকজন মুখ্য ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগও করেছেন। এদের মধ্যে আছেন মিচেল ডেভিডসন। ডেভিডসন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অব পলিসি‘র দায়িত্বে ছিলেন। কদিন আগে তার ডিরেক্টর অব স্ট্রেটেজিক কমিউনিকেশন ডেভিড ট্যারেন্ট পদত্যাগ করেন। দলের অভ্যন্তরের লোকেরাই বলছেন, ভিতরে অনেক অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
ড্যাগ ফোর্ড মাত্র এক বছর আগে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে প্রিমিয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন তা ভাবতেও এখন অনেকের কাছে আশ্চর্য লাগছে। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতৃত্বও চুরি করেছেন ক্রিস্টিন এলিয়ট এর কাছ থেকে। গত নির্বাচনে কিছুদিন আগে যৌন কেলেংকারীর অভিযোগ উঠার পর সাবেক প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ লিডার প্যাট্রিক ব্রাউন পদত্যাগ করেছিলেন। এর পর লিডারশীপ প্রতিযোগিতায় অনেকেই নামেন। তার মধ্যে ছিলেন ড্যাগ ফোর্ড এবং ক্রিস্টিন এলিয়ট-ও। ক্রিস্টিন ছিলেন ফ্রন্ট রানার। কিন্তু ফাইনালের দিন পর্দার অন্তরালে নাটক ঘটিয়ে ড্যাগ ফোর্ড নেতৃত্ব ছিনিয়ে নেন।
আর প্রিমিয়ার নির্বাচিত হয়েই ঘোষণা দেন সিটি কাউন্সিলর এর সংখ্যা ৪৭ থেকে নামিয়ে ২৫ করবেন। তার ঐ ঘোষণা নিয়ে তখন তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি আদালত পর্যন্তও
গড়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত ড্যাগ ফোর্ডেরই বিজয় হয়। এবং ২৫ টি ওয়ার্ডেই সিটি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার পর ড্যাগ ফোর্ডের কাট-ছাটের উৎসব অব্যাহত থাকে। শুরুর দিকেই তিনি বাতিল করে দেন স্বল্প আয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ফ্রি টিউশন’ এর সুযোগ। ফ্রি টিউশন প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়ে সরকার কি পরিমাণ অর্থ বাঁচাতে পারবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। শিক্ষা মন্ত্রী মিসেস মেরিলি ফুলারটন বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের খরচ বাঁচাচ্ছি। যে সকল শিক্ষার্থীদের সাহায্য পাওয়ার প্রয়োজনীতা বেশী তারা যাতে বেশী করে সাহায্য পায় সে বিষয়ের উপর আমরা জোর দিচ্ছি।
অবশ্য বিরোধী দল বলছে ভিন্ন কথা। তারা সরকারের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়। এনডিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত সমালোচক Chris Glover বলেন, সরকার ঘোষিত নতুন এই নিয়ম শেষপর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাড়াবে। নতুন এই নিয়ম শিক্ষার্থীদের জন্য ‘চিনির আবরণযুক্ত বিষ’ ছাড়া আর কিছুই নয়। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন অধিকতর গ্র্যান্ট, অল্প গ্র্যান্ট নয়।
কাউন্সিল অব অন্টারিও ইউনিভার্সিটিজ এর প্রেসিডেন্ট ডেভিড লিনজি বলেন, টিউশন হ্রাস এর সিদ্ধান্ত ইউনিভার্সিটিগুলোর উপর চাপ বৃদ্ধি করবে। অন্টারিওতে কানাডার অন্যান্য প্রভিন্সের তুলনায় টিউশন ফি সর্বোচ্চ এবং এখানকার শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে কম সরকারী ফান্ড পায়।
কানাডিয়ান ফেডারেশন অব স্টুডেন্টস এর অন্টারিও সভাপতি নূর আলীদিব বলেন, সরকার ঘোষিত নতুন নিয়ম উদ্বেগ সৃষ্টিকারী। কারণ, শিক্ষার্থীরা গ্র্যান্ট হিসাবে এখন অল্প সাহায্য পাবে যা তাদেরকে অধিকতর ঋণগ্রস্ত করে তুলবে।
টরন্টো স্টার পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, “এটা সত্যি যে, টিউশন ফি ১০% কমানো হয়েছে এবং আনুসঙ্গিক ফি প্রদানের বাধ্যবাধকতার ব্যাপারেও আইন বদল করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে সরকার স্বল্প আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ফ্রি টিউশন’ ও বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি গ্র্যান্ট পাওয়ার আইনকানুনও কঠিন করা হয়েছে এবং সমগ্র এইড প্রোগ্রামকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আগের অবস্থায়, যেটি ছিল সাবেক সরকারের করে যাওয়া ফ্রি টিউশন প্রোগ্রামের আগে।”
নতুন আইনের কারণে শিক্ষার্থীরা এখন যা পাবে তার সিংহভাগই হবে ঋণ এবং অ-ফেরতযোগ্য অনুদান পাবে খুবই কম। ঋণের ইন্টারেস্ট -ফ্রি সময়কালও বাতিল করা হচ্ছে। বাতিল করা হচ্ছে ৬ মাসের গ্রেস পিরিয়ডও।
টরন্টো স্টার এর সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, “এ সবই শিক্ষার্থীদের জন্য খারাপ খবর। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা এই প্রভিন্সে যে মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছে সেটাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
সাবেক লিবারেল সরকার ‘অন্টারিও স্টুডেন্ট গ্র্যান্ট’ নামে একটি প্রকল্প সৃষ্টি করেছিল যার মাধ্যমে নিন্ম আয়ের পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরা বাস্তব অর্থে ফ্রি লেখাপড়া করতে পারতেন। ২০১৭/১৮ স্কুল বর্ষ থেকে শুরু হয়েছিল ঐ প্রকল্প।
ক্ষমতায় এসে ড্যাগ ফোর্ড অন্টারিওতে ন্যূনতম মজুরী ঘন্টায় ১৫ ডলার করার পরিকল্পনাকেও স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিগত লিবারেল সরকারের করা fair workplaces better jobs act অনুযায়ী এ বছর জানুয়ারী মাস থেকে ন্যূনতম মজুরী ১৫ ডলারে উন্নীত হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে ন্যূনতম মজুরী ঘন্টায় ১৪ ডলার।
হাফিংটন পোস্ট তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, সাবেক সরকার কয়েক দফায় ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধি করলেও চাকরীর বাজারে তার রিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। গত বছরের শুরুতে অনেক অর্থনীতিবিদ ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন অন্টারিওতে ন্যূনতম মজুরী ঘন্টায় ১৪ ডলার করার ফলে এখানকার চাকরীর বাজারে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। চাকরী হারাবেন অনেকে এবং নতুন কোন চাকরী সৃষ্টি হবে না।
টিডি ব্যাংক এর ভবিষ্যতবাণী ছিল ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধির ফলে এই প্রভিন্সে প্রায় ৯০ হজার লোক চাকরী হারাবে। ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ ‘রেস্টুরেন্ট কানাডা’র সতর্কবাণী ছিল, ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধি এবং অন্যান্য নতুন লেবার ল এর কারণে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার চাকরী হুমকীর মুখে পড়বে।
ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধির পর কিছু কিছু চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠান আত্মরক্ষার নামে কর্মচারীদের বিভিন্ন সুযোগসুবিধা কর্তন করে। কিন্তু দেখা গেল অন্টারিওতে ন্যূনতম মজুরী ১৪ ডলারে উন্নীত করার পর ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও নতুন চাকরী সৃষ্টিতে তা নেতিবাচক কোন প্রভাব ফেলেনি। বরং দেখা গেছে গত বছর জুলাই মাসেই অন্টারিওতে ষাট হাজার নতুন চাকরী যোগ হয়েছে (যদিও এর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারী প্রতিষ্ঠানে)। অন্যদিকে বেকারত্বের হার কমে এসে ৫.৪ এ ঠেকেছে। স্ট্যাটিসটিকস কানাডার হিসাব এটি। এবং গত ১৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ম বেকারত্বের হার এটি।
ড্যাগ ফোর্ডের ব্যয় সংকোচন কর্মজজ্ঞের তালিকার মধ্যে আরো আছে চাইল্ড কেয়ার স্পেস, স্কুলে বাচ্চাদের জন্য লাঞ্চ প্রোগ্রাম, ক্লাশরূম সাইজ, অটিজম ফান্ড, পাবলিক হেলথসহ আরো কিছু বিষয়।
গত বছর ২৯ জুন অন্টারিও প্রভিন্সের নতুন প্রিমিয়ার হিসাবে শপথ নেন প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টির প্রধান ড্যাগ ফোর্ড। নির্বাচনের আগে থেকেই তাকে নিয়ে চলছিল বিভিন্ন বিতর্ক। আর শপথ নেয়ার ঘন্টা পার হতে না হতেই শুরু হয়েছিল তার নতুন মন্ত্রী পরিষদ নিয়ে নতুন বিতর্ক। তার মন্ত্রী সভায় ভিজিবল মাইনরিটি গ্রুপ থেকে স্থান পান মাত্র একজন। অন্যদিকে মহিলাদের মধ্য থেকে স্থান পান ৭জন। বিরোধী দলের অভিযোগ- ড্যাগ ফোর্ডের মন্ত্রী পরিষদ ডাইভার্সিটিকে প্রতিনিধিত্ব করে না। বিরোধী দল এনডিপি’র এমপিপি স্যারা সিং বলেন, প্রধানত পুরুষ ও শ্বেতাঙ্গদের নিয়ে গঠিত ড্যাগ ফোর্ডের মন্ত্রী সভা হৃদয়ভঙ্গকারী একটা বার্তা দিচ্ছে অন্টারিওতে।
উল্লেখ্য যে, ড্যাগ ফোর্ড অন্টারিও’র প্রিমিয়ার নির্বাচিত হওয়ার পর হাফিংটন পোস্ট এর কলামিস্ট ডেভিড মাস্ট্রাচি লিখেন, “গত ৭ই জুনের নির্বাচনে প্রোগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টি সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটে বিজয়ী হয়ে গত ১৫ বছরে এই প্রথম বারের মত ক্ষমতায় এলো। এই বিজয় পার্টির নেতা ড্যাগ ফোর্ডের জন্যে দারুন একটা বিজয় ছিল। এবং সেদিক থেকে এটা ছিল শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের বিজয়।
কারণ হলো এই যে, ফোর্ড ছিলেন চরম ডান পন্থীদের পছন্দের প্রার্থী। ”
তিনি আরো লিখেন, “আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে চরম বর্ণবাদী গ্রুপ Alt-right group এবং the Proud Boys ফোর্ডকে “Proud Boy of the month,” হিসাবে উল্লেখ করেছে। এখন এদের স্বপ্ন হলো ফোর্ড ‘Will Make Ontario Great Again’ এই জাতীয় স্লোগান নির্বাচনের আগে দিয়ে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকায় তার সমর্থকদের উদ্দেশে।”
গত নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর থেকে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ড্যাগ ফোর্ড বরাবরই থেকেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু এইসব বিতর্কের ফলাফল তার জন্য ইতিবাচক হয়নি। তার জনপ্রিয়তায় বিপুলভাবে নেমেছে ধ্বস।
আসলে ড্যাগ ফোর্ড বরাবরই ছিলেন বিতর্কের মধ্যে। প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনের আগেও তাকে নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। তিনি এক সময় ড্রাগ ডিলার ছিলেন এমন খবরও কানাডার শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা গ্লোব এন্ড মেইলে প্রকাশিত হয়েছিল ইতিপূর্বে।
এদিকে অন্টারিওতে ড্যাগ ফোর্ডের জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামার কারণে বিপদে পড়েছেন ফেডারেল কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতা এন্ড্র শিয়ার। কারণ, ফেডারেল নির্বাচন আসন্ন। আগামী ২১ অক্টোবরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ড্যাগ ফোর্ডের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং অব্যাহত ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে বিতৃষ্ণ ও বিরক্ত ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কনজার্ভেটিভ পার্টির দিক থেকে। এর প্রভাব ফেডারেল নির্বাচনেও পরবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর অন্টারিওর আসনগুলো ফেডারেল নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য একটা বিরাট ইস্যু তাতে কোন সন্দেহ নেই। অর্থাৎ ড্যাগ ফোর্ড শুধু নিজেই ডুবছেন না, ফেডারেল কনজার্ভেটিভ পার্টিকেও ডুবাচ্ছেন বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।