প্রবাসে পাত্র-পাত্রী সংকট কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের ভূমিকা

কানাডায় যে সকল বাংলাদেশী এসেছেন গত দুই তিন দশকের মধ্যে তাদের অনেকেই এখন জীবনের অপরাহ্ন বেলায় অবস্থান করছেন। কেউ কেউ এর মধ্যে কর্ম জীবন থেকে অবসর জীবনে চলে গেছেন। দাদা দাদী বা নানা নানীও হয়ে গেছেন এদের কেউ কেউ।

তবে গত কয়েক দশকে আসা প্রথম প্রজন্মের এই ইমিগ্রেন্টদের সিংহভাগ এখনো কর্মজীবনেই আছেন। তাদের ছেলে মেয়েরাও ইতিমধ্যে গ্রাজুয়েশন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন বা আগামী দুই চার বছরের মধ্যেই প্রবেশ করবেন। আর জীবন চলার পথে এর পরের স্তরটি হলো বিয়ে। বিয়ে করাতে হলে পাত্রের জন্য পাত্রী চাই এবং পাত্রীর জন্য পাত্র চাই। কিন্তু কোথায় সেই পাত্র আর পাত্রী?

খুঁজতে গেলে পাত্রের জন্য উপযুক্ত পাত্রী মিলে না, পাত্রীর জন্যও উপযুক্ত পাত্র মিলে না। এই আভিযোগ অনেকেরই। প্রবাসে পাত্র-পাত্রীর এই সংকট একটি জ্বলন্ত ইস্যু এখন। যারা ছেলে-মেয়ের জন্য পাত্র পাত্রী খুঁজছেন তারা বিষয়টি অক্ষরে অক্ষরে অনুধাবন করতে পারছেন।

কানাডায় পাত্র-পাত্রী খুঁজতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যেমন বাবা-মায়েরা তেমনি ছেলে-মেয়েরাও। উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী খুঁজে পাওয়াটা একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে সবার জন্যই। আর এই চ্যালেঞ্জের পিছনে রয়েছে অসংখ্য কারণ। ধর্ম, বর্ণ, এথনিসিটি, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও পাত্র-পাত্রীর বয়সসহ আরো বেশ কিছু বিষয়ের ব্যাপারে পছন্দ অপছন্দের মাত্রাটা অনেকের বেলায় বেশী হওয়াতে পাত্র বা পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া যোগাযোগ মাধ্যমেরও রয়েছে অভাব।

পাত্র-পাত্রীর এই সংকট দিনে দিনে আরো ঘনীভূত হচ্ছে। অপেক্ষা করতে করতে অনেকের বয়স বেড়ে যাচ্ছে। ফলে নিজ নিজ কমিউনিটিতে উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীর সন্ধান না পেয়ে এদের কেউ কেউ অন্য এথনিক কমিউনিটির দিকেও ঝুকছেন। সেক্ষেত্রে ধর্ম, বর্ণ বা সংস্কৃতির বিষয়টি চাপা পড়ে যাচ্ছে।

আমেরিকান লেখিকা ও সাংবাদিক নেইয়মী সেইফার রাইলির মতে আন্ত:ধর্মীয় বিয়ের পাত্র-পাত্রীরা বিয়ের কয়েক বছর পর অনুধাবন করতে শুরু করেন নিজ ধর্মটা তাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নেইয়মী সেইফার রাইলি সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এটা বিশ্বাস করা উচিৎ হবে না যে, আন্ত:ধর্মীয় বিয়েতে ভালবাসা সবসময় জয়ী হয়। আর এটিও ভাবা ঠিক নয় যে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে আন্ত:ধর্মীয় বিয়ের বিরোধীতা করা মানেই বিপথগামী করা। তিনি আরো বলেন, সহিষ্ণুতা সম্পর্কের সব সমস্যাগুলোকে সমাধান দেয় না। তিনি অবশ্য এ কথাও বলেন যে, আন্ত:ধর্মীয় বিয়ে সফল হতে পারে যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়েই সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আন্তরিকভাবে জোর চেষ্টা চালান।

অন্যদিকে হাসান হামাদানী নামের একজন কানাডীয় গবেষক জানান, আন্ত:ধর্মীয় বিয়েতে জন্ম নেওয়া ছেলে মেয়েরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পিতা মাতার ধর্মকে নিজ ধর্ম বলে মেনে নেয় না। তবে স্বামী স্ত্রী উভয় যদি এক ধর্মের হন তবে ঐ পরিবারের সন্তানদের মধ্যে শতকরা ৯৯ জনই বাবা-মা’র ধর্মকে নিজ ধর্ম বলেই মেনে নেন।

উল্লেখ্য যে, কানাডায় পাত্র বা পাত্রীর সংকট দেখে কোন কোন বাবা-মা দেশে যান পাত্র বা পাত্রী খুঁজতে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয় দুই দেশের দুই সংস্কৃতি নিয়ে। আমরা দেখেছি ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণেও প্রবাসে পাত্র-পাত্রী খোঁজার বেলায় আরেকটি সমস্যা সৃষ্টি হয়ে আছে। এই সমস্যাটি বিশেষভাবে মোকাবেলা করতে হয় মুসলিম পাত্র-পাত্রীদেরকে। অবিবাহিত মুসলিম ছেলে-মেয়েদের বেলায় সামাজিকভাবে মেলামেশার ব্যাপারে অনেক বিধিনিষেধ আছে। রক্ষণশীল পরিবার হলে এই বিধিনিষেধ অনেক কড়াকড়ি ভাবে আরোপ করা হয়ে থাকে। হিন্দু সমাজেও রয়েছে নানাবিধ বিধিনিষেধ। ফলে পাত্র-পাত্রী খুঁজে বের করা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িছে আমাদের কমিউনিটিতে।

এই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি কানাডায় আমাদের উত্তর প্রজন্ম যাতে হারিয়ে না যায় সে জন্য কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের একটা জোরালো ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। তারা সম্মিলিত ভাবে বা স্বতন্ত্রভাবে সময়ে সময়ে নিজ নিজ সংগঠনের মাধ্যমে পাত্র-পাত্রী সন্ধানের একটি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। স্বরণীয় যে, গত ডিসেম্বর মাসে টরন্টোতে Reviving the Islamic Spirit  নামের একটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এরকম পাত্র-পাত্রী সন্ধানের একটি নতুন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। অভিভাবকদের বা আত্মীয় বন্ধুদের উপস্থিতিতে পাত্র-পাত্রীদের মুখমুখি আলাপ-পরিচয় এবং পছন্দ করার সুযোগ করে দেন এই সংগঠনটি। আমাদের কমিউনিটিতেও যে সকল বাংলাদেশী সংগঠনের ভাল গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে দেখতে পারেন। আমাদের বিশ্বাস এতে করে সকলেই উপকৃত হবেন।