ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি দারিদ্র বিমোচনে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখবে না
পহেলা অক্টোবর থেকে অন্টারিওতে কর্মজীবী মানুষের জন্য ন্যূনতম মজুরি হতে যাচ্ছে ঘন্টায় ১৭.২০ ডলার। বর্তমান ন্যূনতম মজুরি ঘন্টায় ১৬.৫৫ ডলার। সেই হিসাবে বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ৬৫ সেন্ট। শতকরা হিসাবে প্রায় প্রায় ৪% বৃদ্ধি। বর্তমান রেটে যারা সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা কাজ করছেন তারা নতুন রেটে কাজ শুরু করার পর বছরে ১,৩৫৫ ডলার বাড়তি আয় করতে পারবেন। অথবা মাসে ১১৩ ডলারের মত।
অন্টারিও লিভিং ওয়েজ নেটওয়ার্ক এর যোগাযোগ সমন¦য়কারী ক্রেগ পিকথর্ন নাউটরন্টো.কম কে বলেন, ‘মজুরি বৃদ্ধি একটি ভাল পদক্ষেপ। কিন্তু সরকার যে পরিমাণ মজুরি বৃদ্ধি করেছে তা বর্তমান জীবনযাত্রায় যে পরিমাণ ব্যয় হয় তার তুলনায় মোটেও যথেষ্ট নয়। বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে হলে একজন কর্মজীবী মানুষের মজুরি হওয়া উচিৎ ঘন্টায় ন্যূনতম ২৫.০৫ ডলার। এটি একটি মডেস্ট বা পরিমিত হিসাব। এই হিসাবের মধ্যে ঋণ, শিক্ষা, বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য সেভিংস ইত্যাদি ধরা হয়নি।’
ক্রেগ আরো বলেন, ‘টরন্টোতে সন্মানজকভাবে সংসার চালানোর জন্য ন্যূনতম মজুরির একটি ফুলটাইম কাজ যথেষ্ট নয়। একাধিক কাজ থাকতে হবে একজন কর্মজীবী ব্যক্তির।’
বর্তমানের বাস্তবতা হলো, কানাডার প্রায় সব শহরেই ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করা কোনও ব্যক্তির পক্ষে এক বা দুই বেডরুমের অ্যার্পাটমেন্টের ভাড়া যোগার করার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। অন্টারিও-ভিত্তিক এক থিঙ্কট্যাঙ্কারের নতুন রিপোর্টে একথা বলা হয়েছে।
কানাডার সেন্টার ফর পলিসি অলটারনেটিভস -এর র্অথনীতিবিদ ডেভিড ম্যাকডোনাল্ড বলেন, “ভাড়াটেদের অনেকেই বিশেষ করে যারা ন্যূনতম মজুরিতে বা প্রায় ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করেন, যাদের আয় নির্দিষ্ট এবং এক ব্যক্তির আয়ে চলে এমন পরিবারের ভাড়াটেরা যেখানেই খোঁজ করুন না কেন সাধ্যের মধ্যে বা মোটামুটি বাসযোগ্য অ্যার্পাটমেন্ট পাবেন না।”
এই পরিস্থিতির দিক থেকে এগিয়ে আছে ভ্যাঙ্কুভার। সেখানে ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করা একজন ব্যক্তিকে এক রুমের বাড়ির ভাড়া নেওয়ার সক্ষমতা অর্জনের জন্য সপ্তাহে ৮৪ ঘণ্টা এবং দুই রুমের বাড়ির জন্য ১১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
টরন্টোও খুব পিছিয়ে নেই। এখানে একজন শ্রমিককে এক রুমের বাড়ির জন্য সপ্তাহে ৭৯ ঘণ্টা এবং দুই রুমের বাড়ির জন্য ৯৬ ঘণ্টা কাজ করতে হবে।
আমরা আরো দেখছি, অন্টারিওতে গত অর্থ বছরে ফুড ব্যাংক এর সহায়তা নিয়েছেন দশ লক্ষাধিক মানুষ। ফুড ব্যাংক এর উপর এই নির্ভরশীলতা আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক বছর ধরেই এই হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবারের বৃদ্ধিটা ছিল গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ফিড অন্টারিও’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যারোলিন স্টুয়ার্ট এই পরিস্থিতিকে ‘সম্পূর্ণভাবে বিস্ময়কর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, ফুড ব্যাংক এর সহায়তা নিচ্ছেন যারা তাদের মধ্যে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। ক্যারোলিনের মতে অন্টারিও প্রভিন্সে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশী খারাপ মিসিসাগায়। অন্টারিও’র অনেক শহরের মত মিসিসাগা-ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, সীমিত আবাসন সরবরাহ এবং উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। এ সমস্ত কারণে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এরকম পরিস্থিতিতে অন্টারিওতে বছরে ১,৩৫৫ ডলার বাড়তি আয় কর্মজীবী মানুষের কতটা উপকার আসবে তা বোধ করি আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। ন্যূনতম এই মজুরি বৃদ্ধি এখানকার কর্মজীবী মানুষের দারিদ্র বিমোচনে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখবে না। আমাদের মতে মুদ্রাষ্ফীতি এবং এর সঙ্গে বাড়ি ভাড়া, পণ্যমূল্য প্রভৃতির বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি করাটা খুবই জরুরী।