ঘৃণা ও বিদ্বেষকে কঠিন হস্তে দমন কঠোর হতে হবে

গত বছর টরন্টোতে সবচেয়ে বেশি ঘৃণামূলক বা বিদ্বেষী অপরাধের শিকার হয়েছে ইহুদি, LGBTQ+, কৃষ্ণাঙ্গ এবং মুসলিম সম্প্রদায়। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে ঘৃণামূলক অপরাধের ঘটনা ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কানাডিয়ান প্রেস এর এক খবরে এই কথা বলা হয়। ঐ খবরে আরো বলা হয়, টরন্টো পুলিশ সার্ভিস বোর্ডের বার্ষিক ঘৃণামূলক অপরাধ সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৩ সালে সংঘটিত ৩৭২টি ঘৃণামূলক অপরাধের ঘটনার তুলনায় গত বছর ৪৪৩টি ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে যে ঘৃণামূলক অপরাধ একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কারণ সংঘঠিত অপরাধের অনেক ঘটনাই পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয় না। ইতিপূর্বে একই কথা বলেন কানাডায় নবাগতদের পরিষেবা দানকারী একটি সামাজিক গ্রুপ ‘সাকসেস’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কুইনি চু-ও। কানাডিয়ান প্রেস-কে তিনি বলেন, এখানে ঘৃণামূলক অপরাধের সংখ্যা আরও অনেক বেশি যেগুলি পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয় না। তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত, এটি হলো হিমবাহের সামান্য চূড়ামাত্র।”

কানাডায় পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা কোন ঘটনাকে তখনই বিদ্বেষমূলক অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয় যখন, কেউ কারো জাতি, জাতীয় বা জাতিগত উৎস, ভাষা, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, বয়স, মানসিক বা শারীরিক অক্ষমতা, যৌন অভিমুখীতা বা লিঙ্গ পরিচয় বা অভিব্যক্তি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে তাঁর প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ করে।

উল্লেখ্য যে, কানাডায় ঘৃণামূলক বা বিদ্বেষী অপরাধের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে। গত প্রায় এক দশকের মধ্যে ১১ জন ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ কানাডায় মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই সহিংসতা সবচেয়ে বড় বেদনাদায়ক দৃষ্টান্ত হিসাবে সামনে আসে ২০১৭ সালে যখন কুইবেকের একটি মসজিদে ছয় মুসলিমকে হত্যা করা হয়। সেদিন ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেকে মাগরিবের নামাজ আদায়কালে আলেকজান্ডার বিসোনেট নামের এক যুবক অতর্কিতে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হামলা চালায়। বন্দুক হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ জন মুসল্লি। হামলার ঘটনায় আহত হন আরো ১৯ জন।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৬ জুন লন্ডন অন্টারিওতেও ঘটে আরেক বেদনাদায়ক ঘটনা। এক সন্ত্রাসীর হামলায় প্রাণ হারান এক মুসলিম পরিবারের তিন প্রজন্মের চার সদস্য। আর অল্পের জন্য বেঁচে যায় ৯ বছরের এক শিশু। পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা ঘটনো হয়। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ন্যাথানিয়েল ভেল্টম্যান নামের ২০ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ যুবককে আটক করে স্থানীয় পুলিশ।

ইতিপূর্বে মুসলিম হত্যার আরেকটি ঘটনা ঘটে ইটোবিকোক এর ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম অর্গানাইজেশন অব টরন্টো’র মসজিদের সামনে। ঐ মসজিদের স্বেচ্ছাসেবক এক মুসল্লিকে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করেন শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের সমর্থক Guilherme ‘William’ Von Neutegem নামের এক যুবক। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আসলিম জাফিস।

উপরের সবগুলো হত্যাকান্ডই ঘটেছে বিনা উস্কানিতে এবং সম্পূর্ণভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বিদ্বেষী মনোভাবের কারণে।

কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করা অথবা বিদ্বেষী মনোভাব থাকার কারণে আক্রমণ করা কিংবা হত্যা করা কোন সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয় কোনভাবেই। এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। কে মুসলিম বা কে ইহুদি অথবা কে কৃষ্ণাঙ্গ বা কে বাদামী অথবা কে LGBTQ+ এর সদস্য সেটার উপর ভিত্তি করে কাউকে ঘৃণা করা বা নির্যাতন করা অথবা হত্যা করা কানাডার আইন সমর্থন করে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, সেটা প্রায়ই ঘটছে এখানে।

আমরা মনে করি কানাডা একটি বৈচিত্র্যময় সুন্দর দেশ। শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানই হওয়া উচিৎ সকলের লক্ষ্য। এখানে ঘৃণা, বিভাজন ও হিংস্রতার কোন স্থান নেই। আমরাও বিশ^াস করি কানাডা এমনই হওয়া উচিৎ। কিন্তু তারপরও যারা ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টা করেন তাদেরকে কঠিন হস্তে দমন করার জন্য প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *