নির্বাচন আসন্ন : কে হবেন কানাডার পরবর্তী প্রধানন্ত্রী?
জরিপ বলছে লিবারেল পার্টি আসন পাবে ২০২টি, কনজার্ভেটিভ ১১৭ টি, ব্লক কুইবেকো ২০ টি এবং এনডিপি ৪টি
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, মার্চ ৩১, ২০২৫: মার্ক কার্নির নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি অব কানাডা আবারও ক্ষমতায় আসছে এবং এবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। এই রিপোর্ট লেখার সময় সিবিসি নিউজের পুলট্রাকারের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে আজ যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে লিবারেল পার্টি আসন পাবে ২০২টি। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য ১৭০টি আসনই যথেষ্ঠ। কানাডার ফেডারেল পার্লামেন্টে আসন মোট আসন সংখ্যা ৩৩৮টি।
উল্লেখ্য যে, জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় গত দুই নির্বাচনেই দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়নি। তবে প্রথমবার পেয়েছিল।

অন্যদিকে পিয়ের পলিয়েভ এর নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল কনজার্ভেটিভ পার্টি অব কানাডা জয়ী হতে পারে ১১৭ টি আসনে। অথচ জাস্টিন ট্রুডো ক্ষমতা ছাড়ার আগমুহুর্তেও এই দলটির জনপ্রিয়তা ছিল শীর্ষে। তখন সবাই নিশ্চিত ছিলেন যে পিয়ের পলিয়েভই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন কানাডার। কিন্তু প্রায় রাতারাতিই সেই দৃশ্যপট পাল্টে যায় যখন জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করেন এবং মার্ক কার্নি দলের হাল ধরেন।
তৃতীয় অবস্থানে আছে ইয়ভেস – ফ্রাঁসোয়া ব্লাঞ্চেট এর নেতৃত্বাধীন ব্লক কুইবেকো। এই দলটি আসন পেতে পারে ২০ টি। আর চতুর্থ স্থানে আছে জাগমিত সিং এর নেতৃত্বাধীন নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি যারা আসন পেতে পারে ৪টি। গ্রীন পার্টি পেতে পারে একটি আসন। এই দলটির নেতৃত্বে আছেন দুই সহ নেতা জোনাথন পেডনিল্ট এবং এলিজাভেথ মে। আর কানাডার চরম বর্ণবাদী দল পিপল’স পার্টি অব কানাডা একটি আসনও পাবে না। জরিপ তাই বলছে। এই দলটির নেতৃত্বে আছেন ম্যাক্সিম বার্নিয়ার।
কানাডার ফেডারেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ এপ্রিল। গত ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের মাত্র নয় দিন পর গভর্নর জেনারেল ম্যারি সাইমন এর কাছে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন মার্ক কার্নি। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য এবং “কানাডিয়ানদের জন্য সর্বোত্তম চুক্তি” নিয়ে আলোচনা করার জন্য জনগণের কাছ থেকে একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট চাচ্ছেন তিনি। তার মতে “কানাডাকে সুরক্ষিত করতে, কানাডায় বিনিয়োগ করতে, কানাডা গড়ে তুলতে, কানাডাকে ঐক্যবদ্ধ করতে আরও অনেক কিছু করার আছে। আর সে কারণেই আমি কানাডার জনগণের কাছ থেকে একটি শক্তিশালী ইতিবাচক ম্যান্ডেট চাইছি।” অটোয়াতে মার্ক কার্নি সাংবাদিকদের এ কথা বলেছিলেন।
তিনি আরও যোগ করেছিলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অযৌক্তিক বাণিজ্য পদক্ষেপ এবং আমাদের কানাডার সার্বভৌমত্বের প্রতি তার হুমকির কারণে আমরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।”
উল্লেখ্য যে, ব্যাংক অব কানাডা এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের প্রাক্তন গভর্নর মার্ক কার্নি গত শুক্রবার ১৪ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে জাস্টিন ট্রুডোর কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে সকালে অটোয়ার রিডো হলে এক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন জাস্টিন ট্রুডো।
গত ৯ মার্চ ২০২৫ তারিখে লিবারেল পার্টি অফ কানাডার দলীয় সদস্যদের বিপুল সমর্থন পেয়ে দলটির নতুন নেতা নির্বাচিত হন মার্ক কার্নি। তিনি ভোট পান ৮৫% । রাজনীতিতে মার্ক কার্নি একেবারেই নবীন। মাত্র মাস তিনেকের অভিজ্ঞতা তার। মার্ক কার্নির বয়স ৫৯।
মার্ক কার্নি এমন এক সময়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ট্রাম্প ক্রমাগত বলে যাচ্ছেন কানাডাকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করতে চান। কিন্তু কানাডার প্রায় কেউই ট্রাম্পের এই চাওয়ার সাথে একমত নয়। কানাডার সকল রাজনৈতিক নেতা ট্রাম্পের এই চাওয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এবং এটি যে কানাডার সার্বভৌমত্বের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ সে কথাও গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন বকতৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা। স্মরণ করা যেতে পারে যে, জাস্টিন ট্রুডো ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় লিবারেল পার্টির অবস্থা শেষের দিকে বেশ শোচনীয় হয়ে উঠেছিল। জনপ্রিয়তায় কনজারভেটিভ পার্টির তুলনায় পিছিয়ে গিয়েছিল অনেক দূর। এই পর্যায়ে দলের ভিতরই এমপিদের অনেকের মধ্যে ক্রমশ তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছিল। এমনকি শেষ পর্যন্ত দলের ভিতর জাস্টিনের অন্যতম বিশ্বস্ত ও অনুগতে উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডও তার সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন এবং মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করে যে চিঠি লেখেন, তাতে অভিযোগ করা হয়, ট্রুডো দেশের জন্য ভালো কিছু করার দিকে মনোযোগ না দিয়ে ‘রাজনৈতিক ছলচাতুরী’র আশ্রয় নিচ্ছেন। এই ঘটনার পর জাস্টিন বাধ্য হন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর। তারপরই দৃশ্যপটে আসেন মার্ক কার্নি। মার্ক কার্নি দলটির হাল ধরার পর দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা। এবং একেবারে তলানী থেকে বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছে দলটি জনপ্রিয়তার দিক থেকে।