বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস
গত ১৪ নভেম্বর ছিল বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। দিবসটির এবারকার প্রতিপাদ্য হলো ‘ডায়াবেটিস-সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার’।
অনিরাময়যোগ্য এ রোগের শুরুর দিকে তেমন কোনো উপসর্গ না থাকলেও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতিসাধন করে। যা এক পর্যায়ে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
গবেষণা বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশে^ ডায়াবেটিসে মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হবে। সম্ভাব্য এ সংখ্যা ১৩০ কোটি বলে অনুমান করা হয়েছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান-বিষয়ক সাময়িকী ‘ল্যানসেট’-এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। ঐ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সব দেশেই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়বে। বাদ যাবে না কানাডাও। কানাডিয়ান ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন এর তথ্য মতে : –
* প্রতি তিন মিনিটে কানাডায় একজনের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
* ২০২৪ সালে কানাডায় চল্লিশ লক্ষ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে যা মোট জনসংখ্যার ১০%।
* ষাট লক্ষ কানাডিয়ান ডায়াবেটিস হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
* ডায়াবেটিসের কারণে আয়ু ৫ থেকে ১০ বছর কম হতে পারে।
* ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিষণ্নতায় বসবাসের সম্ভাবনা দুই থেকে তিন গুণ বেশী।
* কানাডায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডায়াবেটিসের ওষুধ, ডিভাইস এবং সাপ্লাইয়ের জন্য তাদের নিজস্ব পকেট থেকে প্রতি বছর ১০ হাজার থেকে ১৮ হাজার ডলার পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে।
* ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কানাডিয়ানদের স্বাস্থ্যসেবার পিছনে প্রতিদিন ৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়।
উল্লেখ্য যে, কানাডিয়ান জার্নাল অব ডায়াবেটিস এর তথ্যমতে দেখা যায় এদেশে আসা দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠির চেয়ে অনেক বেশী। এদের মধ্যে আছেন কানাডায় বসবাসকারী বাংলাদেশীরাও। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে যারা অনেক দিন ধরে এদেশে আছেন তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিসে ভোগেন। আর এদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। এই ডায়বেটিসের সঙ্গে আরো আছে উচ্চ রক্তচার ও হার্টের সমস্যা।
কিন্তু কানাডায় দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা এত বেশী কেন? ম্যাক্মাস্টার ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপিকা সোনিয়া আনান্দ সিবিসি নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো গবেষণা করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশীয়দের জেনেটিক দিকটাও পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এটি আসলে জটিল একটি বিষয়। শুধু জেনেটিক বিষয়টি দায়ী তাও বলা যাচ্ছে না। সোনিয়া বলেন, লাইফস্টাইল বদলাতে হবে। যেমন নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া -বিশেষ করে কম মাত্রায় কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠির সব বয়সের লোকদেরকেই এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই জনগোষ্ঠি লোকদের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনার অভার রয়েছে যথেষ্ঠ। তাদের খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ থাকে অনেক বেশী। সাথে নানা পদের মিষ্টান্ন-তো আছেই। আরো আছে চর্বিজাতীয় খাবারের প্রতি অতিমাত্রায় ঝোঁক এবং শারীরিক পরিশ্রম বিশেষ করে হাটাচালা না করা।
মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাথে নিয়মিত ব্যয়াম ও জীবনব্যাবস্থার পরিবর্তনও গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্যাভ্যাস ও কায়িক পরিশ্রমের পাশাপাশি নিয়মিত রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিসের জটিলতা শনাক্ত করা গেলে অনেকাংশেই মারাত্মক ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। সুতরাং ডায়াবেটিসকে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না। রোগের যে পর্যায়েই থাকুন, সচেতন হন এখনই।