ছায়া মানব

এ কে এম ফজলুল হক

এক

আমার শাশুড়িকে বলে কয়েও আনা যায় নি কানাডায়। কয়েকবার। আমরা হাল ছেড়ে দিয়েছি। সে বার হঠাৎই কি মনে করে চলে এলেন- বেড়াতে। তার দুই ছেলে মেয়ে কানাডায়। তার আসা উপলক্ষে এক কটেজ ভাড়া হলো।  আমরা সে কটেজে এসেছি। এসে দেখি এ তো কটেজ নয় যেন আলিশান বাড়ি। বাড়ির সামনে আস্তাবল। পুরোনো আমলের ভাঙা চোরা আস্তাবল। কিন্তু সেই আমলের খড়ের গাদা, ঘোড়ার জিন সব ওই রকমই আছে। বাচ্চারা যাওয়ামাত্রই সব ভুলে খেলা নিয়ে পড়লো। মিছামিছি ঘোড়া ঘোড়া খেলছে। আমি ভয় পেলাম, কত পুরানো জিনিস এ’র ভিতর না জানি কি থাকে? আমার এক আত্মীয় বললো “কি আর থাকবে। কিছু থাকলে তো ওরা আগে থেকেই জানাতো, দেখলাম যুক্তিপূর্ণ কথা। তারা তো ঐরকম কিছু বলে নি। সুতরাং বাচ্চারা খেলছে খেলুক। মন লাগিয়ে খেলুক। আমি খেলা দেখছি। ওই দিকে সবাই মূল কটেজে খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। খানিক বাদে খাবারের জন্য ডাক পড়লো। বাচ্চারা যাবে না। অনেক সাদাসাদি করলাম। শেষমেশ আমি একাই রওয়ানা হলাম। টেবিলের উপর খাবার সাজানো। একেবারে রাজকীয় আয়োজন। আমার সম্বন্ধীর বউ মানে ভাবীর হাতের সেই বিখ্যাত গরুর রেজালা। রেজালার সাথে অন্যান্য পদ দেখে মাথা ঘুরে যাবার জোগাড়। খাওয়া শুরু। এ সময় ভাবীর ভাই ফরিদ বলে উঠলো ‘বাচ্চারা কই।’

আমি বললাম ‘খেলছে’।

‘খেলছে মানে সারাদিন খেলবে নাকি ? আপনি ওদের আনেন নি কেন?’

আমি খেতে খেতে বললাম ‘আনবো কিভাবে ? ওরা তো আমার কথা শুনে না’।

না শোনার কারণ আমি ওদের কখনো ধমক দেই না। আমার যুক্তি “নবীজি বাচ্চাদের ধমক দিতেন না সুতরাং আমিও দেই না-এজন্য বাচ্চারা আমাকে পেয়ে বসে। আর এ কারণে ওদের মার কাছ থেকে মাঝে মাঝে কঠিন কথা শুনতে হয়। আমি মুখ বুঝে শুনি।

খাওয়া ছেড়ে ফরিদ উঠে দাঁড়ালো। মুখে বিরক্তির ভাব এনে বললো ‘ধুর মিয়া কি যা তা করেন’। বলে -সে গিয়ে ঠিকই ধরে আনলো সব গুলোকে। বাচ্চারাও এসে খেতে বসলো।

আমার শাশুড়ি যার উপলক্ষে এখানে আসা, তিনি কিন্তু খাওয়া শেষ করেই এক ঘুম দিলেন। উঠলেন বিকালে। বয়সের কারণে বেশি হাঁটা চলা করতে পারেন না। একটু ঘুরাঘুরি করলেই তার মাথা ঘুরায়। আজ তার মাথা ঘুরানি নেই। ছেলেমেয়েরা গিয়ে ধরলো- মা চলো একটু লেকের ধারে গিয়ে বসি। আস্তাবলের পাশের রাস্তা ধরে সামনে লেক। আমরা সবাই এ’কে এ’কে লেকের ধারে গিয়ে বসলাম। কাঠ দিয়ে বানানো কি সুন্দর ঘাট। নিচে পানি।  আমরা সে ঘাটে পা দুলিয়ে বসলাম। পা পানিতে ছুঁই ছুঁই। পাশে কায়াক (ছোট নৌকা) বাঁধা। পানিতে দুলছে সে কায়াক। সূর্য ডুবু ডুবু। তার রক্তিম আলো পানিতে মাখামাখি। দু একজন পা ভিজাচ্ছে পানিতে। মনে হয় লাল আলতায় পা রাখছে। 

এক সময় সূর্য ডুবে গেলো, রাত নামলো।  আকাশে চাঁদ। আমরা বড়োরা চাঁদ দেখছি ঘাটে বসে। চাঁদের আলো ক্রমশ ঘন হয়ে আসছে। বাচ্চারা লুকোচুরি খেলছে একটু দূরে। একটা দৌড় দিয়েছে আস্তাবলের দিকে। আরেকটা অন্য দিকে। যে খুঁজছে সে দৌড়ে গিয়ে আরেকজনকে ধরছে …. কি বলছে ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। চিৎকার চেঁচামেচি। আমার শাশুড়ি রাগী মানুষ বাচ্চাদের চিৎকার তার সহ্য হলো না।  তারপর বয়স বলে কথা।  তিনি ধমকে উঠলেন – এই তোরা থামবি! কেউ শুনলো না তার কথা। এটা বোধ হয় তাকে পীড়া দিলো। তিনি উঠে কটেজে চলে গেলেন।  আমি তাকিয়ে থাকলাম।

মূল কটেজের পেছনটা জঙ্গল। ভারী জঙ্গল। নানা রকম গাছ পালায় ঠাসা। শাশুড়ি ঢুকে যাবার পর আমি একটা বাচ্চাকে সে দিকে দৌড়ে যেতে দেখলাম। এই অন্ধকারের ভিতর ওই দিকে কে যাচ্ছে ? ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম, দেখা দরকার কে যাচ্ছে। আমার খেয়াল যেই যাক না কেন আমি পেছন পেছন যাবো। এ’কেতো জঙ্গল তার উপর অচেনা জায়গা।   কোন বাচ্চাতো ভয়ও পেতে পারে। বেশ খানিক পথ হেটে কটেজের বাম পাশ ধরে হাটতে থাকলাম। কটেজ থেকে ফ্যানের আওয়াজ ভেসে আসছে। ফ্যানটা খুব সাউন্ড করে। ভাগ্য খারাপ এ’ফ্যানটিই পড়েছে আমার শাশুড়ির রুমে। উনি আজ কি কেয়ামত করেন কে জানে? আমি পা রাখছি খুব সাবধানে। বলা তো যায় না কিসে আবার কামড় দেয়। কানাডাতে সাপের উপদ্রপ নাই তেমন একটা। কিন্তু বাজে কিছু পোকা মাকড় আছে। এই যেমন ব্ল্যাক উইডো স্পাইডার। এর বিষ নাকি রেটেল স্নেক থেকে ও ভয়ঙ্কর ।

আমি কটেজের পেছনে এসে দাঁড়ালাম। ভাঙা চোরা চাঁদের আলো গাছের পাতা গলিয়ে মাটিতে; কিন্তু ‘কে আসলো এদিকে তাকেতো দেখছি না’। আমি কয়েকবার ডাকলাম ‘এই কোনটা আসছিস এখানে’। কোনো সাড়া শব্দ নাই। কি ব্যাপার। খানিকটা চমকালাম। আমি আরেকটু গলা বাড়িয়ে বললাম  ‘এই দুষ্টামি করিস না। বল কে ?’ কোন জবাব নেই। সামনে ঘন জঙ্গল। অথচ আমি স্পষ্ট দেখেছি একটা বাচ্চা মেয়ে এ দিকে দৌড়ে আসতে। আমি মনে করতে চেষ্টা করলাম কার মতো ছিল। হিমি’র মতো। শাহানার বড় মেয়ে হিমি’। শাহানা আমার ভাগ্নী। দুঃসম্পর্কের। তার দুই মেয়ে হিমি আর রিমি। দুইটাই পিঠাপিঠি। বড়টা একটু শান্ত ছোটটা দুষ্টের যম। হিমি’র খোঁজে আমি আস্তাবলের কাছে এসে দাঁড়ালাম। কিন্তু হিমি এখানে। আমি হিমি’কে জিজ্ঞেস করলাম  ‘তুমি কি কটেজের পেছনে গিয়েছিলে?’ বললো ‘না তো’

: আর কেউ গিয়েছি কি না তুমি জানো?

: না, কেউ যায় নি সবাই তো এখানেই খেলছে

তাহলে কে গেলো? আমার কথা শুনে ফরিদ ঘাট থেকে উঠে আসলো। বললো ‘কি হয়েছে, ঘটনা কি? আমি বললাম ‘একটা বাচ্চাকে দেখলাম পেছনের দিকে দৌড়ে যেতে কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখি কেউ নেই’।

‘বলেন কি ? আপনি ঠিক দেখেছেন তো।’

আমি বললাম ‘ঠিকই দেখেছি’

‘চলেন তো আমি সহ দেখি’ বলে ফরিদ আমার হাত ধরে নিয়ে চললো। ঘাট থেকে কেউ একজন চিৎকার করে বলছে ‘কি হয়েছে’। ফরিদ গলা উঁচিয়ে বললো ‘কিচ্ছু না’।

ফরিদ এমনই। সহজে কিছু বলতে চায় না তার উপরে ভীষণ সাহসী। আমি কিন্তু ঘাবড়ে গেছি। প্রথম থেকেই আমার কেমন ভয় ভয় করছে। ভয়ের ঘটনা ঘটলে এমনিতে এড্রিনাল হরমোন বের হয়ে সব উলোট পালট করে দেয়। আমার বোধ হয় আজ এড্রিনাইলের মাত্রা চূড়ান্ত। বুকের ভেতর দুক দুক করছে। ধেৎ কে এখানে আসতে বলেছিলো। শাহানার কারণে; তার অনুরোধ আমরা যেখানে যাই না কেন, তাকে যেন নিয়ে যাই।  তার জন্য আমাদের বড় কটেজ খুঁজতে হয়। সে মতো কটেজ পাওয়াও যায় না – লোক সংখ্যা বেশি বলে। বাড়ির মালিকদের সাথে দেন দরবার করতে করতে আমাদের অবস্থা কাহিল।

ফরিদ দ্রুত হাটছে। আমি তার পিছে পিছে। কোত্থকে এক রেকুন জঙ্গলের বাইরে এসে আমাদের দেখে আবার ভেতরে ঢুকে গেলো। এটাই স্বাভাবিক। খাবারের খোঁজে এরা ঘুর ঘুর করে। কটেজের পেছনে এসে আমরা দুজন আতি পাতি করে খুজলাম। খোঁজার ফলে কয়েকটা জিনিস পাওয়া গেলো- ‘এক পাটি বাচ্চাদের ছেড়া সেন্ডেল ও একটা ভাঙা ওয়ার্ডরোব। ওয়ার্ডরোবটা লতাপাতায় ছেয়ে গেছে ও সাথে একটা গ্যাস সিলিন্ডার জং ধরা’। কিন্তু কোথাও কোন জন মানুষের চিহ্ন নেই। শুধু কটেজের হলুদ আলো কয়েকটা জানালা ভেদ করে বাইরে বের হয়ে আসছে। আমরা যেখানে এখন- একটু ফাঁকা জায়গা তারপর সব জঙ্গল। জঙ্গলের ভেতরে কিচ্ছু দেখা যায় না। তারপর ও ফরিদ সাহস করে লতা পাতা সরিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। হাতে মোবাইলের টর্চ। টর্চের আলো বেশিদূর যায়না। কিছুদূর যাওয়ার পর অনুভব করলাম একটা ঠান্ডা বাতাসের স্রোত জঙ্গলের এপাশ থেকে ওই পাশে চলে যাচ্ছে। চারিদিকে পোকা মাকড়ের ডাক ক্রি ক্রি ক্রি.. ডেকেই চলছে অবিরাম। আমি ভয় পাওয়া গলায় ফরিদকে বললাম ‘ভাই চলো’। ফরিদ বললো ‘হাঁ চলেন’।

আমরা ফিরে আসলাম। আমাদের এ খবর বাতাসের আগে সবার কানে পৌঁছে গেলো। এখন সবাই ঘাট ছেড়ে ঘরে এসে জড়ো হয়েছে।‘কি হয়েছে? কোথায় হয়েছে?’- এসব প্রশ্নের উত্তর আমি দিয়েই চলছি। এখন আমার সম্বন্ধী যার ডাক নাম ‘শফিক’ আমি ডাকি ‘শফিক ভাই’ তার প্রশ্ন  ‘মেয়েটিকে তুমি কি পরা দেখলে?’

“কি পরা সেটা তো এতদূর থেকে বুঝা যায় নি; তবে হালকা হোয়াইট কিছু মনে হলো, আর…”। আমার কথা তখনো শেষ হয় নি- আমার বউ মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললো-

‘ওর চেহারা দেখছো?’

: না দেখিনি, ওই দিকে মুখ করা ছিল। আমি পেছনটা দেখেছি।

: মোটা না চিকন?

: মোটা না চিকন বলতে পারবো না।

: ও তাই।

: পায়ে কি পরা ছিল?

: পা খেয়াল করিনি- আমার জবাব শুনে সে এমন ভাব করলো যেন আমি সব বানিয়ে বানিয়ে বলছি।

: তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছ ‘এখানে ভুত আছে?’

: না তা নয়, ভাবছি আশ পাশের কোন বাচ্চা হেটে গেলো কি না, এখান দিয়ে।

: কার বাচ্চা হেটে যাবে; শুনলাম আশ পাশে কেউ নেই।

পাশ থেকে ভাবি বললেন ‘আশ পাশে কি পাঁচ মাইলের মধ্যে কেউ নেই’। পাঁচ মাইল পরে একটা গ্যাস স্টেশন আছে- তিনি গুগলে দেখেছেন। কথা ক্রমশ জটিলতার দিকে চলে যাচ্ছে। এমন সময় আমার শাশুড়ি চেচিয়ে বললেন ‘এই তোরা থামবি। আমাকে ভাত দে। আমি ইন্সুলিন নিয়েছি অনেকক্ষণ হলো’। তার ডায়বেটিস চৌদ্দ পনোরোর উপরে, তিনি সেটা নিয়ে চিন্তিত।

খাওয়া শেষে সবাই আবার লিভিং রুমে জড়ো হলো। এবার সমস্যা কেউ আলাদা হতে চাচ্ছে না। সবার মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেছে। শফিক ভাই তার ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করছেন। খুঁজে বেড়াচ্ছেন ‘লিস্ট অব হন্টেড হাউস ইন অন্টারিও। লিস্টের প্রথমে কেনিংটন হন্টেড, তারপর একে একে ফিয়ার ফার্ম, হন্টেড ওয়াক, হন্ট মেনর, নাইট মেয়ার এরকম পনোরো ষোলোটার মতো লিস্ট পাওয়া গেলো। কিন্তু কোথাও এ বাড়ির কথা উল্লেখ নাই। তাহলে কি বাড়িওয়ালি আমাদের কাছে কিছু লুকিয়েছে? হয়তো তাই। আমরা বাড়িওয়ালিকে ফোন দিলাম। সে ফোন ধরলো না। মেসেজে চলে গেলো।

বাড়িওয়ালি ফোন ধরলো না শুনে বাচ্চারা ভীতসন্ত্রস্থ। ভয়ে তারা বাথ রুমে পর্যন্ত যেতে চাচ্ছে না। কারো নাকি বাথ রুম লাগবে না। বড়োরা সাদাসাদি করছেন কিন্তু তারা নির্বিকার হয়ে বসে আছে। দেখতে দেখতে এই ভয় বড়োদের মধ্যেও ঢুকে গেলো ভীষণভাবে. এই যেমন একজন বাথরুমে গেলে আরেকজন দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। এই নিয়ে ফরিদ ভীষণ বিরক্ত। সে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো ‘আরে তোরা থামবি আমি দেখছি’ বলে যেই বাইরে তাকালো অমনি চিৎকার ‘হু ইজ দেয়ার; হু ইজ দেয়ার, স্টপ স্টপ’; আমি আর সম্বন্ধী দৌড়ে পাশে গিয়ে দাড়ালাম। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না বাইরে- চাদের আলোয় আলোকিত চারিদিক। শুধু কয়েকটা পোকা উড়াউড়ি করছে একটা লাইটের পাশে। ফরিদ বললো ‘আরে এতো আজব, কে এখানে ঘুরাঘুরি করছে ? সত্যিই তো- চলেন বাইরে গিয়ে দেখি’ বলে সে বের হতে যাবে অমনি আমার শাশুড়ি চিৎকার করে বললো ‘এতো রাতে বাইরে যাবার দরকার কি। থাক বাদ দাও।’ ফরিদ তারপরও দরজা খোলার চেষ্টা করছে। তার বউ তাকে গিয়ে আটকালো, সাথে তার বাচ্চারাও।

এখন সবাই চুপ। ভাবি বললো ‘আচ্ছা নাইন ওয়ান ওয়ানে কল করলে কেমন হয় ? কেউ লুকিয়ে আছে কি না ও’রা এসে দেখুক।’

কথা মন্দ না। আমার সম্বন্ধী কল করলো। নেয়ারেস্ট পুলিশ স্টেশন হান্টসভিল। একজন পুলিশ অফিসার ধরলো নাম উইলিয়াম অস্কার। অস্কার জানতে চাইলো ‘কি হয়েছে’। শফিক ভাই বললেন ‘দেখো আমরা এখানে বেড়াতে এসেছি কটেজে। কোত্থেকে হঠাৎ একটা বাচ্চা এসে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা তাকে ধরতে পারছি না।’ : কোথায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে ?

: কটেজের বাইরে।

: বলো কি এ গার্ল ইজ হাইডিং ইন ইওর কটেজ ইটস ইন্টারেষ্টিং, বাই দা ওয়ে ডিড ইউ গাইজ চেক থরোলি?

: আমার সম্বন্ধী বললো ইয়েস উই ডিড, বাট উই কুড নট কেচ হার।

: ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলবে?

শফিক ভাই বললেন ‘এই যেমন তাকে দেখা যাচ্ছে কাছে কোথাও, পরক্ষণে আর নেই- হাওয়া’

: তুমি কি আমাকে এটা বিশ্বাস করতে বলো ?

: বিশ্বাস অবিশ্বাস তোমার ব্যাপার। আমি যা সত্যি তাই বলছি।

: হুম। আই কনফিউসড, আচ্ছা এখন আমাকে কি করতে বলো?

: আমাদের বৌ বাচ্চারা ভয় পাচ্ছে। তুমি যদি এসে একটু দেখে যাও।

ফোন ভয়েস মুডে দেয়া। আমরা শুনতে পাচ্ছি- অস্কার বলে চলছে ‘দেখো এখন রাত বাজে বারোটা। আমি তোমার এখানে আসতে আসতে আরো হাফ এন আওয়ার। আমি বলি কি আজ রাতটা কোনমতে থেকে যাও কাল সকালে না হয় আমাদের একজন অফিসার গিয়ে দেখে আসবে’।

আমার সম্বন্ধী জোর গলায় বলে উঠলো ‘না কিছুতেই না ক্যান ইউ কম নাও প্লিজ?’

: আচ্ছা এড্রেসটা বলো।

এড্রেস শুনে অস্কার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তারপর বললো ‘..হুম..আই এম সরি এ বাড়ি অনেকদিন পর্যন্ত এব্যান্ডনড ছিল। আমার রেকর্ড বলছে নতুন মালিক রেসিন্টলি কিনেছে। ওকে তোমরা ওয়েট করো আমি আসছি’।

আমরা পুলিশ আসার জন্য অপেক্ষা করছি, এ সময়ের ঘটনা। কে যেন ঘরের এটিকে (চিলেকোঠায়) হাটাহাটি করছে। অদ্ভুত ধরনের হাঁটা। স্বাভাবিক হাটায় যে একটা শব্দ হয় এরকম না। পা টিপে টিপে হাটা। এবার আমার শাশুড়ি কথা বলে উঠলেন ‘কে ? কে উপরে ?’- কোন সাড়া শব্দ নেই।

তিনি আবারো চেচিয়ে বললেন ‘এই কে উপরে হাটছো, নীচে নেমে এসো আর- না হলে চলে যাও’ এই বলে উচ্চস্বরে দোআ দুরুদ শুরু করলেন। পুরো ঘর গুমোট। শুধু উনার ভারী গলার আওয়াজ ঘরময় ভেসে বেড়াচ্ছে। ফরিদ আমার শাশুড়িকে বললো ‘খালাম্মা আমি কি উপরে গিয়ে দেখে আসবো ?’

: না তুমি কোথাও যাবা না, এখানে বসে থাকো।

আমি বললাম ‘আম্মা ফরিদ গিয়ে না হয় দেখে আসুক।’

: না ও যাবে না, কেন যাবে না সে’টা পরে বলবো। (চলবে)

এ কে এম ফজলুল হক

লেখক পরিচিতি : এই রহস্য উপন্যাসটি লিখেছেন কানাডা প্রবাসী এ কে এম ফজলুল হক। তিনি একজন সাবেক ব্যাংকার। অবসরে লেখালেখি করেন। বর্তমানে টরন্টোর নিকটবর্তী পিকারিং এ পরিবার নিয়ে বাস করছেন।