কানাডার কর্মস্থলে আপনার অধিকার সম্পর্কে জেনে নিন

রম্য রমানাথন

কানাডায় নবাগত অভিবাসীরা বিশেষ করে কর্মস্থলে তাদের অধিকার বিষয়ে যেসব সংশয়ে ভোগেন সে সম্পর্কে প্রশান্ত শোর অনেক কিছু জানেন। বৃহত্তর টরন্টোর ওয়াইএমসিএ-র তথ্য ও রেফারেন্স বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসাবে তিনি অভিবাসীদের আবাসন সুবিধা খুঁজে নেয়া থেকে শুরু করে  কর্মসংস্থানের জন্য যে-সব প্রশ্ন করা হতে পারে সেগুলোসহ এদেশে থিতু হওয়ার প্রতিটি বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

কর্মক্ষেত্রের অধিকার সম্পর্কে অভিবাসীদের খুব সাধারণ কিছু উদ্বেগের  কথা তিনি সব সময়ই শোনেন। যেমন, ‘আমার নিজের কোনও দোষ ছাড়াই অন্যায়ভাবে আমাকে কাজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে; আমাকে দুই সপ্তাহ ধরে মজুরি দেয়া হচ্ছে না; আমি  খণ্ডকালীন কর্মী, আমাকে কিছু বেশি সময়ের কাজ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু এখন সেটা দেয়া হচ্ছে না…’ ইত্যাদি।

কানাডার আইন সব ধরনের শ্রমিকেরই অধিকার সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দেয়। ছবি: অকুপেশনাল হেলথ এ্যান্ড সেফটি

কানাডার কর্মক্ষেত্রের অধিকার সম্পর্কিত আইন বোঝা আপনার জন্য কঠিন হতে পারে , বিশেষ করে যদি ইংরেজি আপনার দ্বিতীয় ভাষা হয়। আর এটা বুঝে ওঠা আরও বিভ্রান্তিকর হতে পারে যখন জানবেন যে বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে শ্রমিকদের অধিকারে ভিন্নতা আছে।

আপনি যে প্রদেশ বা শহরের বাসিন্দাই হন না কেন অথবা অভিবাসী হিসাবে আপনার মর্যাদা যা-ই হোক না কেন কানাডার আইন সব ধরনের শ্রমিকেরই অধিকার সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দেয়।

এসব আইনে বলা আছে যে, কানাডার সব শ্রমিককে তাদের কাজের জন্য মজুরি দিতে হবে, কাজের মধ্যে বিরতি ও ডে-অফ দিতে হবে। কর্মস্থল হতে হবে নিরাপদ এবং তাদের পাসপোর্ট ও ওয়ার্ক পারমিট থাকতে হবে।                     

কানাডার প্রত্যেক শ্রমিকের নিজ কর্মস্থলে তার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে জানার অধিকার আছে। তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে এমন বিষয়ে আলাপ-আলোচনায় অংশ নিতে এবং তার নিজের ও অন্যদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে এমন পরিস্থিতিতে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবে। কানাডার আইনে অন্য কিছুর সঙ্গে এটাও বলা আছে যে, কোনও শ্রমিককে যে কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি বা যে কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি তেমন কোনও কাজ করার নির্দেশ নিয়োগদাতা শ্রমিককে দিতে পারবেন না এবং অসুস্থ ও আহত হয়ে থাকলে সেই শ্রমিককে কাজ করতে বাধ্য করতে পারবেন না।  

কর্মক্ষেত্রে বকাঝকা

কর্মক্ষেত্রের মৌলিক অধিকারগুলো ছাড়াও অনেক নবাগত বিভিন্নরকম সমস্যায় পড়েন, যেমন বকাঝকা ও বৈষম্য।

এসব ঘটনা খুব বিরল নয়। অনেক নবাগত ও অভিবাসী কানাডায় উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলেও অনেকে পেশাগত জীবনে এমন কিছু  চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। তাদের নিয়োগদাতা হয়তো বৈচিত্র ও অন্তর্ভুক্তির সংস্কৃতির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ নন।

শ্রম, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দুয়েক ধরে অন্টারিওতে বছরে তিন হাজারেরও বেশি অভিযোগ আসছে কর্মস্থলে হয়রানির।

মন্ত্রণালয় যেসব বিষয়কে কর্মস্থলে হয়রানি হিসাবে বিবেচনা করে তার মধ্যে আছে আঘাত করার মত মন্তব্য বা কৌতুক, বকাঝকা বা আগ্রাসী ব্যবহার, অশোভনভাবে তাকানো, যৌন হয়রানি, লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে কাউকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করা কিংবা তাকে পৃথক করে রাখা ইত্যাদি।

প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সমাধান

কানাডার প্রত্যেক প্রদেশ ও টেরিটোরিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান আইন নিয়ে কাজ করে এমন একটি করে অফিস আছে যা শ্রমিকদেরকে তাদের শহরে বা প্রদেশে যথাযথ মজুরি,  কর্মঘণ্টা, বিশ্রামের সময় এবং কাজের পরিবেশ বিষয়ে তথ্য দিতে পারে। যথাযথ মজুরি, কর্মঘণ্টা নিয়ে সমস্যায় পড়লে বা তাদের সঙ্গে  কাজের ক্ষেত্রে যথাযথ আচরণ করা হচ্ছে না বলে মনে করলে কানাডায় কর্মরত যে কোনও শ্রমিক ওই অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।

এছাড়াও দুর্বহ বা অনিরাপদ কর্ম পরিবেশের মধ্যে পড়লে নবাগত ও অভিবাসী শ্রমিকরা যাতে তথ্য এবং পরামর্শ পেতে পারে সেজন্যে প্রদেশগুলোতে সরকারি অর্থে পরিচালিত অলাভজনক আইনি সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো শ্রমিকরা যাতে মানবাধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে যে কোনও পরিস্থিতি নিজেই সামলে নিতে পারে সেরকম কিছু উপকরণ যোগান দেয়। আবাসন বিষয়ক বন্দোবস্তকারী কিছু প্রতিষ্ঠান অনেক সময় শ্রমিকদেরকে তার প্রদেশের সহায়ক উপকরণের তালিকা সরবরাহ করে।  

জেনিনা ফোগেলস হলেন অন্টারিওর মানবাধিকার সম্পর্কিত আইনী সহায়তা কেন্দ্রের (OHRLSC) ব্যবস্থাপক ও আইনী উপদেষ্টা। অন্টারিও সরকারের অর্থে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি বৈষম্যের শিকার ব্যক্তিদের আইনী সহায়তা দেয়।  

জেনিনা ফোগেলস বলেন, প্রতিবন্ধির অধিকার থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থানের অভিজ্ঞতা ধর্মীয় বিশ্বাসের গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার অনুরোধ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে লোকেরা তাদের কাছে ফোন করে। আর এগুলোর সবই হলো মানবাধিকার আইনের লংঘন।      

তিনি প্রত্যেককে কর্মস্থলের অধিকার সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘অন্টারিওর মানবাধিকার সনদ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা আইন এবং কর্মসংস্থানের মান সম্পর্কিত আইনে আপনাকে যেসব অধিকার দেওয়া হয়েছে সেগুলো জেনে নিন। আপনি যদি কোনও শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য হন তাহলে যৌথ সম্মতিপত্রের আওতায় আপনাকে যেসব অধিকার দেওয়া হয়েছে সেগুলো জেনে নিন। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষথেকে আপনাকে এগুলো জানতে এবং তা আদায়ে সহায়তা দিতে পারবো।’

অধিকার লংঘন করা হচ্ছে বলে মনে করেন এমন যে কোনও ব্যক্তিকে তিনি সচেতন হতে এবং তার অভিজ্ঞতার  যথাযথ নমুনা সংরক্ষণ করতে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যা দেখছেন সেসব অভিজ্ঞতার দিনপঞ্জি সংরক্ষণ করুন অথবা নিজেকেই নিজে ই-মেল করুন। এগুলো পরে আপনার বক্তব্যের প্রমাণ হিসাবে কাজ করবে। আপনার অভিজ্ঞতার দলিল রাখুন এবং কর্মস্থলে আপনার বিশ্বাসভাজন এমন কারও সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলুন। যদি মানবাধিকার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করতে চান তাহলে সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিতে এবং ঠিক কাজটি বেছে নিতে সাহায্য করতে পারবে।

-সৌজন্যে : কানাডিয়ানইমিগ্রেন্ট.সিএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *