ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টাকে কঠিন হস্তে দমন করতে হবে
ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের মুখপত্র ‘Rebel News Network Ltd’ এর মালিকানাধীন একটি ভ্রাম্যমাণ এ্যাডভার্টাইজিং কিউব ভ্যান সম্প্রতি ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান প্রদর্শন করতে করতে টরন্টোর বিভিন্ন ব্যস্ত রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছে। একই সময় গাড়ির বডিতে ভিডিও স্ক্রিন অন করে সেখানে দেখানো হয়েছে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় নামাজ আদায়ের দৃশ্য। আরো দেখানো হয় গাজায় ইসরায়েল কর্তৃক গণহত্যার বিরুদ্ধে টরন্টোতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ ও ফিলিস্তিনী পতাকা উড়ানোর দৃশ্য। এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল টরন্টোর নেথান ফিলিপস স্কয়ারে। এই ভিডিও দেখানোর পর সাদা স্ক্রিনে কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। প্রশ্নগুলো ছিল – এটা কি লেবানন? এটা কি ইয়েমেন? এটা কি সিরিয়া? এটা কি ইরাক? এই প্রশ্নের পর আবার লেখা হয়েছে – না। এটা কানাডা। কানাডা তুমি জাগো। তুমি অবরুদ্ধ হয়ে আছ। বড় বড় অক্ষরে লেখা এই বাক্যগুলো অনেক দূর থেকেও দেখা যাচ্ছিল।
সিবিসি নিউজ জানায়, বিভিন্ন এ্যাডভোকেসী গ্রুপের সদস্যরা বলছেন কিউব ভ্যানে প্রদর্শিত ভিডিও ও স্লোগানগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক যা মুসলমানদের ভয় দেখানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
টরন্টোর মেয়র অলিভিয়া চাও বলেন, ইসলামোফোবিয়ার কোন স্থান নেই এখানে। স্থান নেই ঘৃণা এবং বিভাজনেরও। তিনি কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারকেও আহ্বান জানান কিউব ভ্যানে প্রদর্শিত খুবই ঘৃণাযুক্ত এই বার্তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য এবং একই সঙ্গে এর নিন্দা জানানোর জন্য।
উল্লেখ্য যে, কানাডায় ইসলামোফোবিয়া দিন দিন বেড়েই চলছে। আর এতে ইন্ধন যোগাচ্ছে হোয়াইট সুপ্রীমেসীতে বিশ^াসী বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন এবং অতি ডানপন্থী কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও। অ্যাঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউটের নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কানাডায় ইসলামের প্রতি বিভিন্ন মাত্রায় বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান রয়েছে যা কুইবেকে সর্বোচ্চ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কানাডায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অ্যাক্টিভিস্ট ও সরকারি কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। দেশটিতে মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে ৭১ শতাংশ বেড়ে যায়।
এই সহিংসতা সবচেয়ে বড় বেদনাদায়ক দৃষ্টান্ত হিসাবে সামনে আসে ২০১৭ সালে যখন কুইবেকের একটি মসজিদে ছয় মুসলিমকে হত্যা করা হয়। সেদিন ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেকে মাগরিবের নামাজ আদায়কালে আলেকজান্ডার বিসোনেট নামের এক যুবক অতর্কিতে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হামলা চালায়। বন্দুক হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ জন মুসল্লি। হামলার ঘটনায় আহত হন আরো ১৯ জন।
পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৬ জুন লন্ডন অন্টারিওতেও ঘটে আরেক বেদনাদায়ক ঘটনা। এক সন্ত্রাসীর হামলায় প্রাণ হারান এক মুসলিম পরিবারের তিন প্রজন্মের চার সদস্য। আর অল্পের জন্য বেঁচে যায় ৯ বছরের এক শিশু। পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা ঘটনো হয়। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ন্যাথানিয়েল ভেল্টম্যান নামের ২০ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ যুবককে আটক করে স্থানীয় পুলিশ।
আমরা মনে করি কানাডা একটি বৈচিত্রময় সুন্দর দেশ। শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানই হওয়া উচিৎ সকলের লক্ষ্য। মেয়র অলিভিয়া চাও যেমনটা বলেছেন- ইসলামোফোবিয়ার কোন স্থান নেই এখানে। স্থান নেই ঘৃণা এবং বিভাজনেরও। হিংস্রতা ও সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই। আমরাও বিশ^াস করি কানাডা এমনই হওয়া উচিৎ। কিন্তু তারপরও যারা ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টা করেন তাদেরকে কঠিন হস্তে দমন করার জন্য প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।