শারীরিক লাঞ্ছনা হাসপাতাল-কর্মীদের ‘কাজের অংশ’
৬৩% উত্তরদাতা কর্মস্থলে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলে জানান
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : শারীরিক সহিংসতা অন্টারিওর হাসপাতাল-কর্মীদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই বাস্তব সত্য। কানাডার সরকারী কর্মচারী ইউনিয়নের (সিইউপিই) এক নতুন জরিপে এ তথ্য জানা গেছে।
সিইউপিইর ২,৩০০ জনের বেশি সদস্যের মধ্যে পরিচালিত ইতিপূর্বের এক জরিপে, ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা কর্মস্থলে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। জরিপে রেজিস্টার্ড নার্স, ব্যক্তিগত সহায়ক কর্মী, স্বাস্থ্য প্রযত্ন সহায়ক, প্রশাসনিক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। খবর মুরিয়েল ড্রেইসমা – সিবিসি নিউজ।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরদাতাদের ১৪ শতাংশ প্রতিদিন, ২২ শতাংশ প্রতি সপ্তাহে এবং ২৭ শতাংশ মাঝেমাঝে শারীরিক সহিংসতার শিকার হন বলে জানিয়েছেন। সহিংসতার ধরণের মধ্যে রয়েছে ঠেলাধাক্কা দেয়া, আঘাত করা অথবা রোগী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের ছুঁড়ে মারা কোনও বস্তু দিয়ে আঘাত পাওয়া।
সিইউপিই’র সদস্য সংগঠন অন্টারিওর হাসপাতাল ইউনিয়নগুলোর কাউন্সিলের (ওসিএইচইউ) সেক্রেটারি ও ট্রেজারার শ্যারন রিচার সাংবাদিকদের বলেন, “শত শত স্বাস্থ্যকর্মী প্রতিদিন শারীরিক আঘাত, যৌন হামলা, বর্ণবাদী আক্রমণ এবং মৌখিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।”
রিচার বলেন, “আমাদের সর্বসাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, অন্টারিওর হাসপাতালগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে বিষাক্ত ও বিপজ্জনক কর্মক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে যেখানে কর্মীদের ৮৫ শতাংশই নারী এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়টি শুধু যে সহ্য করা হয় তা-ই নয় বরং বহুলাংশে উপেক্ষা করা হয়।”
“নারীর প্রতি সহিংসতার বেশিরভাগই জাতিগত কারণে ঘটে এবং এই বৃদ্ধি ঘটেঠে আমাদের হাসপাতালগুলিতে নজীরবিহীন শ্রমিক ঘাটতি এবং অনেক পদ শূন্য থাকার প্রেক্ষাপটে।”
রিচার দাবি জানান যে, অন্টারিওর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ড এবং অন্টারিওর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিরভিয়া জোন্স যেন, “মুখ ফিরিয়ে না থেকে” কর্মীদের সুরক্ষার পদক্ষেপ নেন। তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিৎ বিষাক্ত কর্মপরিবেশের বিষয়টি জবাবদিহির আওতায় আনা।
তিনি স্বাস্থ্যসেবা খাতে তহবিল বাড়ানো, কর্মচারী ও শয্যা সংখ্যা বাড়ানো এবং যারা পুলিশে রিপোর্ট করার মাধ্যমে সহিংসতার বিষয় ফাঁস করে দেন তাদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়নেরও আহবান জানান।
রিচার যোগ করেন, লোকেদের হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে যাবার অন্যতম কারণ সহিংসতা।
জরিপের তথ্যমতে, ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা groping (অনুমতি ছাড়াই কাউকে যৌন উদ্দেশ্যে স্পর্শ করা) এর মত যৌন পীড়নের শিকার হয়েছেন।
এদিকে ৭৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা জরিপের ভাষায় “শরীরী নয় এমন সহিংসতা”র শিকার হয়েছেন, যেমন অপমান করা, হুমকি দেয়া বা হুমকিমূলক ভঙ্গি ইত্যাদি। ২৫ শতাংশ বলেছেন, তারা প্রতিদিন, ২২ শতাংশ প্রতি সপ্তাহে একবার এবং ৩১ শতাংশ মাঝেমধ্যে এধরণের হয়রানির শিকার হন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা জাতিগত পরিচয়ের তাদের ৭১ শতাংশ বলেন, তারা তাদের বর্ণ বা জাতিগত পরিচয়ের কারণে হয় প্রতিদিন, না হয় সপ্তাহে অথবা মাঝেমধ্যেই হয়রানি কিংবা দুর্ব্যবহারের শিকার হন।
রিচার বলেন, জরিপে দেখা গেছে, হাসপাতাল কর্মীদের ওপর শারীরিক সহিংসতা, যৌন হয়রানি, বর্ণবাদী হামলার ঘটনা বেড়েছে মহামারির সময়।
জরিপ অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারীদের ৫৪ শতাংশ বলেছেন, তারা মহামারির শুরু থেকে সহিংসতা বাড়তে দেখেছেন, যখন ৫৩ শতাংশ বলেন, ওই সময়ে তারা সহিংসতা বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন।
জরিপে উত্তরদাতাদেরকে ছুরি, বন্দুক এবং লাঠিসোটা নিয়ে সংঘটিত সহিংসতা বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়।
চব্বিশ শতাংশ উত্তরদাতা মহামারি শুরুর পর লোকেদের অস্ত্রসহ তাদের প্রতিষ্ঠানে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পাবার কথা বলেছেন। আঠারো শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে তাদের কর্মীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল।
আটচল্লিশ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, সহিংসতা থেকে কর্মীদের রক্ষায় তাদের নিয়োগদাতারা গত বছরকালে কোনওরকম পদক্ষেপ নেননি।
৩৫% ‘চরম উদ্বিগ্ন,’ জরিপে প্রকাশ
কাজের পরিবেশ নিয়ে কর্মীরা বেশিরভাগ দিনে কতটা উদ্বিগ্ন, বিষণ্ন অথবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করেন জানতে চাওয়া হলে, ৩৫ শতাংশ বলেন, তারা চরম উদ্বিগ্ন, অন্যদিকে ২৭ শতাংশ বলেন, তারা উদ্বিগ্ন।
সিইউপিই’র ওসিএইচইউর ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং অটোয়ার একজন রেজিস্টার্ড প্র্যাক্টিক্যাল নার্স ডেভ ভার্চ বলেন, জরিপে দেখা গেছে, মহামারির সময় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যক্রমে, সহিংসতা নিশ্চিতভাবেই কাজের অংশ। আমাকে ঘুষি মারা, লাথি দেয়া, আঁচড়ে দেয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক যে, আমার দিকে জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারা হয়েছে। কখনও সেটি ছিল মুত্র অথবা তার চেয়েও খারাপ কিছু।” “কর্মক্ষেত্রে এসব ঘটে।”
অন্টারিও হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও অ্যান্থনি ডেল এক বিবৃতিতে বলেন, তাদের অ্যাসোসিয়েশন এবং এর সদস্য হাসপাতালগুলি কর্মচারীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার হিসাবে বিবেচনা করে।
তিনি বলেন, “কর্মস্থলে স্টাফরা মুখোমুখি হবেন বলে আশা করেন সহিংস কর্মকাণ্ডকে এমন কোনও বিষয় হিসাবে কখনই গ্রহণ করা হয়নি।”
“কর্মস্থলে সহিংসতা রোধে হাসপাতালগুলোর সমন্বিত নীতিমালা ও কর্মসূচি আছে, যা প্রণীত হয়েছে এসব লক্ষ্য বিবেচনায় রেখে।”
ডেল বলেন, ওএইচএ এবং তার সদস্য হাসপাতালগুলি আন্তরিকভাবেই সহিংসতামুক্ত কর্মস্থল নিশ্চিত করার দায় গ্রহণ করে এবং এই দায়পূরণ নিশ্চিত করতে ইউনিয়নগুলির সঙ্গে কাজ করবে।