অন্টারিও বাঙ্গালী কালচারাল সোসাইটি’র  ‍উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন

প্রবাসী কণ্ঠ, ১১ মার্চ, ২০২৪ : অন্টারিও বাঙ্গালী কালচারাল সোসাইটি’র  ‍উদ্যোগে গতকাল রোববার  টরন্টো পাবলিক লাইব্রেরীর সিডারব্রে শাখার মিলনায়তনে (৫৪৫ মার্কহাম রোড, স্কারবরো) অনুষ্ঠিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস। অনুষ্ঠানে বক্তাগণ নারী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সোসাইটির সভাপতি জসিম উদ্দিন।

বিশ্ব নারী দিবস পালনের এই অনুষ্ঠানে শুরুতে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন ওমর ফারুখ, আজিজা ফারুখ, গোলাম মহিউদ্দিন, ইয়াসমিন খায়ের, মোনা দেওয়ান, লাভলী রহমান রোখসানা শানু, রোখসানা ঝিনুক ও শামীম ইকবাল। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরো যারা গান পরিবেশন করেন তারা হলেন, ফারহানা শান্তা, সুমি বর্মণ, কাশফিয়া চৌধুরী, বিপ্লব কর্মকার, রুখসানা শানু ও ব্যরিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।  যুগল কবিতা পাঠ করেন জান্নাত নাঈম ও শামীম ইকবাল ‍দম্পতি। এছাড়াও কবিতা পাঠ করেন কামরান করিম ও জ্যাকুলিন রোজারিও।

উল্লেখ্য যে, নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের আহ্বান জানিয়ে প্রতি বছর ৮ মার্চ এই দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘Invest in women: Accelerate progress.’

স্মরণ করা যেতে পারে যে, ১৮৫৭ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সেলাই কারখানায় নারী শ্রমিকরা ভোটাধিকারসহ তাঁদের মর্যাদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশকিছু সুনির্দিষ্ট দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন তাঁরা। প্রায় অর্ধশতাব্দী পর ১৯১০ সালে জার্মান নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিন এ দিনটিকে নারী দিবস হিসাবে পালনের প্রস্তাব করেন। ১৯১১ সালে প্রথম বেসরকারিভাবে বিভিন্ন দেশে দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এর দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। সেই থেকে দিনটিকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো সরকারিভাবে পালন করে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত কানাডায়ও নারীর প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং তাঁদের সমঅধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পালিত হয় এই দিবসটি।

বিগত কয়েক বছর ধরে দিসবটি পালন করে আসছে অন্টারিও বাঙ্গালী কালচারাল সোসাইটিও। দিবসটি পালন উপলক্ষে সোসাইটির পক্ষ থেকে প্রতিবছরই  নিজ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে একজন নারীকে ‘ওম্যান অব দ্য ইয়ার’ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ বছর যিনি সম্মাননা পেলেন তিনি হলেন, টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নৃত্য শিল্পী অরুণা হায়দার।

অরুণা হায়দার প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটিতে একজন সুপরিচিত ও জনপ্রিয় নৃত্য শিল্পী এবং সমাজ কর্মী। তিনি কানাডায় এসেছেন ২০০০ সালে এবং এর দু ’বছর পরে প্রতিষ্ঠা করেন সুকন্যা নৃত্যাঙ্গণ নামে নাচের একটি স্কুল| ১০ অগাস্ট এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। প্রতি বছরই ঘটা করে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠান করেন তিনি।

ফোবানাসহ টরন্টোর ছোটবড় সব অনুষ্ঠানেই অরুণা হায়দার ও তাঁর স্কুলের শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মন কেড়েছে। অভিনয় শিল্পী হিসাবেও রয়েছে অরুণা হায়দারের পরিচিতি।   

অফুরন্ত জীবনী শক্তি অরুণার | ছোট বেলায় ছিলেন বেশ চঞ্চল। মায়ের ভাষায় ‘দুষ্টু’। অনুষ্ঠানে মেয়ের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন সুলতানা হায়দার। অরুণার মা সুলতানা হায়দার নিজেও বাংলাদেশে একজন খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী। অরুণার শৈশব  ও বর্তমানের কথা বলতে গিয়ে তিনি বেশ আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন এবং বারবার চোখ মুছেন।

অরুণা হায়দারের উপর আরো যারা বক্তব্য রাখেন তারা হলেন গোলাম মহিউদ্দিন, আকতার হোসেন, মেরী রাশেদীন, সীমা বড়ুয়া ও সালমা বাণী।  বক্তারা সকলেই অরুণা হায়দারের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিতে তুলে ধরেন। তার আগে অরুণা হায়দারকে দেয়া সম্মাননা পাঠ করেন ইশরাত জাহান।

সবার শেষে বক্তব্য রাখেন অরুণা হায়দার। ‘ওম্যান অব দ্য ইয়ার’ সম্মাননা প্রদানের জন্য তিনি  অন্টারিও বাঙ্গালী কালচারাল সোসাইটিকে ধন্যবাদ জানান। বক্তব্য রাখার সময় তিনিও আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন এবং নিজের জীবনে মা সুলতানা হায়দারের অবদানের কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন। এই সময় তার মা মঞ্চেই উপস্থিত ছিলেন ।

সম্মাননা প্রদানের পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবি দেলওয়ার এলাহী। 

‘ওম্যান অব দ্য ইয়ার’ সম্মাননা প্রদান ছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয় কমিউনিটির আরেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সম্প্রতি প্রয়াত মুন্নী সুবাহানীকে। মুন্নী সুবাহানী ছিলেন জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পী এবং একই সাথে একজন নৃত্য শিল্পী। ছিলেন একজন উদ্যোক্তাও। ১৯৭৪ সালে মুন্নী সোবাহানী ও তাঁর স্বামী আফজাল সোবাহানী মিলে কানাডায় গড়ে তুলেছিলেন লামিস স্কুল অব মিউজিক এ্যান্ড ড্যান্স। সুদীর্ঘ সময় ধরে পরিচালিত ঐ স্কুল থেকে নাচে প্রশিক্ষণ নেয় বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোর। মুন্নী সোবাহানী অন্টারিও বাঙ্গালী কালচারাল সোসাইটি’র  সঙ্গেও জড়িত ছিলেন ওতপ্রোতভাবে। অনুষ্ঠানে প্রবাসের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মুন্নী সোবাহানীর অবদানের কথা স্মরণ করে বক্তব্য রাখেন লেখক ও বিটিভি’র সাবেক সংবাদ পাঠক আলী হায়দার। তার আগে তিনি সুরা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে মুন্নী সোবহানীকে নিয়ে আরো যারা স্মৃতিচারণ করেন তারা হলেন মোহাম্মদ সালাম, অপরূপ বড়ুয়া ও নাসরিন খান।

স্মৃতিচারণের এই পর্বটি পরিচালনা করেন ফারহানা পল্লব।

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত মুন্নী সোবাহানীর স্বামী আফজাল সোবাহানীও।

প্রয়াত মুন্নি সুবহানীর পছন্দের গান নিয়ে সাজানো হয়েছিল একটি পর্ব। এই পর্বে তার পছন্দের গানগুলো পরিবেশন করা হয়। গান পরিবেশন করেন অন্টারিও বাঙ্গালী কালচারাল সোসাইটি’র  নিজস্ব শিল্পীবৃন্দ। গানগুলো ছিল ‘হারানো হিয়া- গেয়েছেন গোলাম মহিউদ্দিন, ‘কথা ছিল দেখা হবে’- গেয়েছেন ইয়াসমিন খায়ের, ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’- গেয়েছেন ওমর ফারুখ ও আজিজা ফারিখ,  ‘তোমায় কেন লাগছে এত চেনা’- গেয়েছেন ফারহানা পল্লব, ‘একটা গান লিখ আমার জন্য’- গেয়েছেন রুখসানা ঝিনুক,  ‘একবার যেতে দে না আমার’ – গেয়েছেন মোনা দেওয়ান। এরপর দলীয়ভাবে পরিবেশন করা হয় ‘তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার’ গানটি।

অনুষ্ঠানের ছবি তুলেছেন শাহদাত পলাশ।

সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে বিশ্ব নারী দিবসের এই অনুষ্ঠানটি চলে রাত ১০ পর্যন্ত। সুন্দর এবং গুছালো এই অনুষ্ঠানটি সবাই উপভোগ করেন।