গাড়ি বীমার ব্যয় ২০২৪ সালে বাড়বে; মূল্যস্ফীতি, ব্যাপক চুরিই কারণ
বীমার হার বাড়তে পারে ২৫% পর্যন্ত, বললেন এক বীমা বিশেষজ্ঞ
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গাড়িবীমার প্রিমিয়ামে ২০২৪ সালেও উল্লম্ফন ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাপক হারে গাড়ি চুরির কারণে এই বৃদ্ধি ঘটতে পারে। খবর ইথান ল্যাঙ – সিবিসি নিউজ।
২০২৪ সালের তাদের অটো আউটলুকে রেটসডটসিএ উল্লেখ করেছে যে, অন্টারিওর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় দুই ডজন গাড়ি বীমা প্রতিষ্ঠানের জন্য বর্ধিত হারের অনুমোদন দিয়েছে।
রেটসডটসিএ’র বীমা বিশেষজ্ঞ ডেনিয়েল ইভান্স বলেন, “আমরা ২৫ শতাংশের মত উচ্চ হারে বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি” Ñ যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুততর।
তবে, কারো গাড়ি বীমার ব্যয় বাড়বে কিনা তা নির্ভর করবে, তার ভাষায়, “গত দুই বছরে প্রত্যেক পৃথক বীমাসুবিধা দানকারীর সঙ্গে লেনদেন কেমন ছিল তার ওপর।”
প্রদেশের বীমা নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গ্রেটার জিটিএ অঞ্চলে গাড়ি বীমার গড় বার্ষিক প্রিমিয়াম ২,৩৯১ ডলার। ২৫ শতাংশ বাড়ানো হলে ব্যয়ের পরিমাণ বছরে প্রায় ৬০০ ডলার বাড়বে।
অন্টারিওর ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস রেগুলেটরি অথরিটি (FRSA) বলেছে, তারা ভোক্তাদের সুরক্ষায় বীমার হার নিয়ন্ত্রণ ও আন্ডাররাইটিং সম্পর্কিত বিষয়ে সংস্কার আনার কাজ করছে। এই কৌশলটি এ বছর আরও পরে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।
এই বৃদ্ধির কারণ কী?
বীমার হার বৃদ্ধির পেছনে অংশত আছে মূল্যস্ফীতি।
ইভান্স বলেন, “সুদের হার বৃদ্ধির সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে বলে, বীমার দাবি পরিশোধের গড় পরিমাণও অনেক বেশি হয়ে গেছে।”
“দাবি মেটানোর ব্যয় বেড়ে যাওয়ায়, গাড়ি দুর্ঘটনায় বীমার দাবি পরিশোধে বাড়তি অর্থের প্রয়োজনীয়তাও অবশ্যম্ভাবী।”
বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন যে, এ বছর মূল্যস্ফীতি কমতে পারে, কিন্তু সেটিই গাড়ি বীমার হারে প্রভাব সৃষ্টিকারী একমাত্র উপাদান নয়।
রেটসডটসিএ’র তথ্যমতে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের সার্ভিসিং ও যন্ত্রাংশ পাল্টানোর ব্যয়ও বেড়েছে। তথ্যে বলা হয়, সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় কিছু কোম্পানিকে উৎপাদন স্থগিত করতে হয়েছে।
গাড়ি চুরি বীমাকারীদের দুঃসময়ে ঠেলে দিয়েছে
বীমার ব্যয় বাড়ার পেছনে বৃহত্তম এক কারণ গাড়ি চুরি। ইন্স্যুরেন্স ব্যুরো অব কানাডার (IBC) তথ্য অনুযায়ী, কানাডার বীমা প্রতিষ্ঠানগুলি ২০২২ সালে প্রথমবারের মত ১০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে গাড়ি চুরি সংক্রান্ত দাবি মেটাতে। আর এই অর্থের অর্ধেকই ব্যয় করেছে শুধু জিটিএর প্রতিষ্ঠানগুলি।
আইবিসির তথ্য, গত বছর কানাডায় ৮০ হাজারের বেশি গাড়ি চুরি হয়েছে। ২০২৩ সালে টরন্টোতে ১২,২০০ গাড়ি চুরির ঘটনা তালিকাভুক্ত হয়েছে টরন্টো পুলিশের গুরুতর অপরাধ সূচকের বোর্ডে।
প্রদেশভিত্তিতে, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে গাড়ি চুরিজনিত বীমা দাবি বেড়েছে ৩২৯ শতাংশ, যাতে ব্যয়ের পরিমাণ ১৬ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০ কোটি ডলার। আইবিসির হিসাব অনুযায়ী, গাড়ি চুরির কারণে অন্টারিওর প্রত্যেক গাড়ি চালকের ব্যয় বছরে বেড়েছে প্রায় ১৩০ ডলার।
গাড়ি চুরি বন্ধে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকার লাখ লাখ ডলার ব্যয় করছে। কিন্তু তা অদূর ভবিষ্যতে গাড়ি বীমার প্রিমিয়ামে কোনও রকম প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না।
গাড়ির মালিকরা কী করতে পারেন?
ইভান্স সুপারিশ করেন যে, গাড়ির মালিকরা তাদের বীমার দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনে নিতে পারেন, তারা কতটা ছাড় দিতে পারে।
তিনি বলেন, সচরাচর চুরি হয় এমন গাড়ির ক্ষেত্রে কিছু কোম্পানি প্রিমিয়ামের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০০ ডলার সারচার্জ যোগ করে। তবে মালিক যদি তার গাড়িতে চুরি রোধের প্রযুক্তি স্থাপন করেন তাহলে অনেক কোম্পানি সারচার্জ মওকুফ করে।
ইভান্স বলেন, একটি কোম্পানিতেই কয়েকটি গাড়ির বীমা করা, বিভিন্ন ধরণের বীমা একসঙ্গে করা, যেমন বাড়ি ও গাড়ির বীমা এবং চালককে চিহ্নিত করতে পারে এমন ধরণের নিরাপদ অভ্যাস তৈরির অ্যাপ ব্যবহার করলে প্রিমিয়ামের ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বাঁচানো সম্ভব হতে পারে।
তিনি আরও ভালো করে জানার জন্য বীমাকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করারও সুপারিশ করেন।