কানাডায়ান নারীদের প্রজনন হার ইতিহাসের সর্বনিম্নে পৌঁছেছে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডার প্রজনন হার ইতিহাসের সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। প্রায় শতবর্ষ আগে স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা এ বিষয়ে তথ্য সংরক্ষণ করতে শুরু করার পর বর্তমান হার সবার নিচে। খবর তুরিয়া ইজরি – গ্লোবাল নিউজ।
সম্প্রতি প্রকাশিত সংস্থার সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালে প্রতিজন নারীর সন্তান জন্মদানের হার কমে ১.৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে, যা প্রতিস্থাপন স্তর প্রায় ২.১ এর চেয়ে অনেক কম।
কানাডার জন্মহার ২০২১ সালের ১.৪৩ জন থেকে কমে গেছে এবং ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া সেই “কমতে থাকার প্রবণতা অব্যাহত আছে।”
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা বলছে, প্রতিটি প্রদেশ ও টেরিটোরিতে রেকর্ড পরিমাণে কমার প্রেক্ষিতে এটি সারা দেশের চিত্র।
অন্টারিওর লন্ডনে অবস্থিত ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কিংস কলেজের জনসংখ্যাতত্ত্ব বিষয়ের প্রফেসার ডন কের চলতি মাসের আরও আগের দিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “মনে হচ্ছে কানাডা ‘অতি নিম্ন’ জন্মহার রয়েছে বলে চিহ্নিত করা যায় এমন দেশগুলোর সারিতে যোগ দিতে যাচ্ছে।”
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার মতে, জন্মহার এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কমতে থাকলেও তার গতি ত্বরান্বিত হয় “কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবে।”
সংস্থার ‘কানাডার জন্মহার ২০২১ থেকে ২০২২’ শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়, অনেক বেশি পরিবার সন্তান নেয়া বন্ধ রাখায় কানাডা অন্যান্য দেশের মতই “জন্মহারের ক্ষেত্রে ‘মহামারির রোলারকোস্টারে” চড়তে যাচ্ছে।
রিপোর্টে বলা হয়, “কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাব জনস্বাস্থ্যের সঙ্কট সৃষ্টি, পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক আঘাত হিসাবে দেখা দেওয়ায় এটা সম্ভব যে, জনগণের একটি অংশ সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চরম অনিশ্চয়তার ওই সময়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।”
এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার বিষয়টি কীভাবে জড়িত
ডম. কের বলেন, “দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কানাডার নিম্ন জন্মহারের আরও অবনতি ঘটাতে পারে।
“বহু মানুষের জন্য এটি ছিল খুবই কঠিন পরিস্থিতি। নিশ্চিতভাবেই মূল্যস্ফীতিও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। কিছু দম্পতি তাদের কিস্তির টাকা, তাদের ব্যয়ের পরিমাণ ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো বলতে পারে, ‘এখন সম্ভবত সন্তান নেওয়ার আদর্শ সময় নয়।”
কানাডায় নারীদের মা হবার গড় বয়স এখন ৩১.৬ বছর এবং পুরুষের ক্ষেত্রে পিতা হবার বয়স ৩৪.৪ বছর।
জনসংখ্যাতত্ত্বের প্রফেসার বলেন, অঞ্চলভিত্তিতে মা-বাবা হওয়ার বয়সে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আছে। দেশের বড় শহরগুলিতে জাতীয় গড়ের চেয়ে সন্তান নেয়ার হার অনেকটাই কম।
তিনি ভ্যাঙ্কুভারের দৃষ্টান্ত দেন যেখানে নারীর সন্তান জন্মানোর হার ১.১ জন।
কের আরও যোগ করেন, “আমি মনে করতে পারি, এখানে আবাসন ব্যয়ের প্রাসঙ্গিকতা আছে।”
কানাডা কেন ব্যতিক্রম নয়
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া জি-৭ ভুক্ত প্রতিটি দেশেই ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে জন্মহার হ্রাস পেয়েছে।
শতকরা হিসাবে কানাডায় জন্মহার হ্রাসের পরিমাণ দক্ষিণ কোরিয়ার পরেই সর্বোচ্চ (-৯.৭ শতাংশ)। আর দক্ষিণ কোরিয়ায় এটি ঘটেছে তীব্রতম মাত্রায় (-১৫.৩ শতাংশ)।
দেশটি জনসংখ্যার দিক থেকে সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা কমছে; তাদের নারীদের সন্তান জন্মানোর হার ০.৭৮, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন।
এমনকি ফ্রান্স যেটি গড় হারের চেয়ে বেশি জন্মহার নিয়ে পাশ্চাত্যে ব্যতিক্রমী দেশ, সেটিও একই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
ফরাসী নাগরিকদের বেশি সন্তান গ্রহণে উৎসাহ দিতে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো চলতি মাসের শুরুর দিকে পিতৃত্বকালীন ছুটির ভাতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশটিতে জন্মহার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বনিম্নে পৌঁছার পরই তিনি এই ঘোষণা দেন।
কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধি কীভাবে অব্যাহত
এটি হলো কানাডায় জনসংখ্যার দুটি ভিন্ন পরিবর্তনের কাহিনী। দেশটিতে একদিকে জন্মহার সর্বনিম্নে পৌঁছেছে, অন্যদিকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ অভিবাসন চলছে।
কের বলেন, “জনসংখ্যা বৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য আমরা ক্রমবর্ধমান হারে অভিবাসনের ওপর নির্ভর করছি। কেন্দ্রীয় সরকারের অভিবাসন নীতির পেছনে অনেকটাই এই যুক্তি কাজ করছে।”
কানাডার জনসংখ্যা গত বছর চার কোটি ছাড়িয়েছে। এই বৃদ্ধির হার ১৯৫০ সালের পর সবচেয়ে দ্রুত। তবে জনসংখ্যার রেকর্ড প্রবৃদ্ধি বাঁধা পড়েছে জাতীয় পর্যায়ে আবাসন সঙ্কট ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাড়তে থাকা চাপের কারণে।
“বয়স্ক জনসংখ্যার বিষয়টি বিবেচনা করলে অভিবাসন অবশ্যই সহায়ক। কিন্তু আমাদের জন্মহার যদি এই নিম্নমুখি প্রবণতা ধরে রাখে তাহলে আমাদের জনসংখ্যা আরও দ্রুত বয়বৃদ্ধ হতে থাকবে।”
কের বলেন, কানাডায় জন্ম নেওয়া এবং নতুন কানাডীয় প্রাপ্তবয়স্ক উভয়েই কম সন্তান নিচ্ছে।
তিনি যোগ করেন, “আমাদের জনসংখ্যা যত দ্রুতই বাড়ুক না কেন, আমাদের পরিবারগুলি ছোট থেকে আরও ছোট হয়ে আসছে, যা দীর্ঘমেয়াদে খুবই নাটকীয় হতে পারে।”
“যদি আশেপাশে শিশুরা না থাকে, যদি নাতি-নাতনীরা না থাকে, তাহলে তার পরিণতি ভোগ করতেই হবে, কারণ মানুষ পরিবারের ওপর নির্ভর করে।”