অন্টারিও বাঙ্গালী কালচারাল সোসাইটির উদ্যোগে বিজয় দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠান ‘বিজয়মেলা’

টরন্টো, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ : বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল ১৬ই ডিসেম্বর শনিবার টরন্টোতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অন্টারিও বাঙ্গালী কালচারাল সোসাইটি’র (ওবিসিএস) উদ্যোগে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘বিজয়মেলা’। স্কারবোরোর ৫৩০ মিডল্যান্ড এভিনিউতে অবস্থিত হোপ গসপেল চার্চের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এই বিজয়মেলা। বাংলাদেশের পতাকায় সুসজ্জিত অডিটোরিয়াম ও  বিরাট মঞ্চ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

মঞ্চে উপস্থিত অনুষ্ঠানের আয়োজক ও শিল্পীবৃন্দ

অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় ছিলেন জনপ্রিয় উপস্থাপিকা ও আবৃত্তিশিল্পী ফারহানা আহমেদ। প্রথমেই তিনি সকল বীর সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বাংলাদেশের ও ক্যানাডার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করার জন্য ওবিসিএস এর  শিল্পীবৃন্দকে মঞ্চে আহ্বান করেন।

ইয়াসমিন খায়েরের নেতৃত্বে সবগুলো দলীয় সঙ্গীতে অংশ নেন- গোলাম মহিউদ্দিন, সাইয়েদা রোখসানা বেগম, ওমর ফারুখ, আজিজা ফারুখ, লুতফর রহমান, লাভলী রহমান, মোনা দেওয়ান, বাহাউদ্দিন রতন ও রিনা বেগম।

কবিতা আবৃত্তি করেন সাবরিনা সাবরিনা, গোলাম মহিউদ্দিন, মোহাম্মদ সালাম ও  এম এ করিম।

ওবিসিএস-এর সাংগঠনিক তৎপরতা ও পরিচিতি উপস্থাপন করেন ড: মোহাম্মদ হোসেন টিপু। তারপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন সভাপতি জসিমউদ্দিন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উপর আলোকপাত করেন।

স্বাধীনতার গান “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে” পরিবেশন করেন সৈয়দা রোখসানা বেগম ও তাঁর দল।

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা পর্ব পরিচালনা করেন দেলওয়ার এলাহী। তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও বীর সৈনিকদের গৌরবের কথা তুলে ধরেন। এ বছরে বাঙ্গালী কালচারাল সেসাইটির পক্ষ থেকে সম্মান জ্ঞাপন করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা – জনাব আলতাফ হোসেনকে। জনাব আলতাফ হোসেন মুক্তিযুদ্ধে তাঁর  ব্যক্তিগত আবেগময় স্মৃতি রোমন্থন করেন। তাঁকে ক্রেস্ট ও ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মান জানানো হয়।

কবি আসাদ চৌধুরীর মেয়ে শাঁওলী ও আসিফ

এরপর অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন এ প্রজন্মের শিল্পী কাশফীয়া চৌধুরী। সে প্রবাসে থেকেও তার পূর্বসূরী পিতামহ জহুর আহমেদ চৌধুরীর দেশপ্রেমে কিভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছে সেটি সে তার ভাষায় ব্যক্ত করে। কাশফিয়ার মা রিনা বেগমকে এ প্রজন্মের সন্তানদের মাঝে বাংলাদেশকে বুঝার ও বাঙালী বলে গর্ব করার যে মানসিকতা ও শিক্ষা দিয়েছেন তার জন্য করতালি দিয়ে তাঁকে অভিবাদন জানানো হয়।

ফারহানা শান্তা তার খালি কন্ঠে ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’ গানটি গেয়ে হল ভরা দর্শক কে পিনপতন নিরবতায় নিমজ্জিত করেন।

এর পরবর্তী পর্ব ছিল সম্প্রতি প্রয়াত কবি আসাদ চৌধুরীর স্মরণে সভা। এ পর্বটি শুরু হয় সীমা বড়ুয়ার একটি একক নৃত্য দিয়ে। আসাদ চৌধুরীর স্মরণে আলোচনায় ছিলেন লেখক, নাট্যকার আকতার হোসেন ও লেখক সালমা বাণী। তাঁরা কবি আসাদ চৌধুরী কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন এ প্রসঙ্গে আলোকপাত করেন। কবির পরিবারের পক্ষ থেকে কবি কন্যা নুসরাত জাহান চৌধুরী শাঁওলী ও কবি পুত্র আসিফ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। শাঁওলী স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন আর আসিফ তাঁর বাবার লেখা কবিতা ‘বারবারা বীডলারকে’ পাঠ করে দর্শকদের আবেগাপ্লুত করেন।

বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ওমর ফারুখ। এরপর যুগলসঙ্গীত পরিবেশন করেন ওমর ফারুখ ও আজিজা ফারুখ।

সিমা বড়ুয়ার কোরিওগ্রাফীতে গীতাঞ্জলি একাডেমী নৃত্য পরিবেশন করে – ‘কারার ঐ লৌহকপাট’। নৃত্য শিল্পীরা ছিলেন-ডালিয়া আহমেদ, সাইদা চৌধুরী লিসা, সুকন্যা চৌধুরী ও সুবাহ জামান।

দর্শকদের একাংশ

অনুষ্ঠানের এই পর্যায়ে সংগঠনের পরিচালকগণ মঞ্চে আসেন। নির্বাহী পরিচালক ফারহানা পল্লব সংগঠনের পক্ষ থেকে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানের প্রাইম স্পন্সর রিয়েল এস্টেট এজেন্ট ওয়ালিউল হাসানকে সার্টিফিকেট ও ফুলের তোড়া, আর অন্য সকল পৃষ্ঠপোষক যথাক্রমে রিয়ালটর সুরুজ্জামান, রিয়ালটর বিপ্লব কুমার কর্মকার ও রিয়ালটর রিনিঝিনিকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়। এ বছর সংগঠনে বিশেষ ভুমিকা রাখার জন্য পরিচালক সুরাইয়া ইয়াসমিন স্নিগ্ধা, ড: মোহাম্মদ হোসেন টিপু ও মোনা দেওয়ানকে সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে সম্মান দেয়া হয়। এ ছাড়াও পুরো অনুষ্ঠানটির সার্বিক উপস্থাপনার জন্য ফারহানা আহমেদকে, সংগঠনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ইয়াসমিন খায়েরকে এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখার জন্য ইমরান রাফীকে সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এসে দেশের গান ‘একবার যেতে দেনা আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ পরিবেশন করেন মোনা দেওয়ান ও ফারহানা পল্লব। স্বদেশ পর্যায়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘গ্রামছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ’ পরিবেশন করেন সৈয়দা রোখসানা বেগম।

এছাড়াও ‘হায়রে আমার মন মাতানো দেশ’ গানটি পরিবেশন করেন ইয়াসমিন খায়ের। আর ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই’-গানটি পরিবেশন করেন সুমি বর্মন।

তারপর সঙ্গীত পরিবেশন করেন তৌহিদ জামান ও ইমরান রাফী। দলীয় গান: ‘দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার হে’ গানটির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা হয়।

মঞ্চের বিরাট পতাকাটি সেলাই করেছেন মাহবুবা উদ্দিন আলো। আকর্ষণীয় মঞ্চ নির্মাণ করেন লুতফর মিয়া।

অনুষ্ঠান উপলক্ষে একটি ব্রসিওর ছাপানো হয়, এতে সংগঠনের কর্মকান্ড বিবৃত করেছেন ড: মোহাম্মদ হোসেন টিপু। ব্রসিওরটি ডিজাইন করেন ফারহানা পল্লব। সকল ছাপা কাজে ছিলেন মোহাম্মদ ফাত্তাহ্, প্রাইম প্রিন্টিং।

স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন তরুণ প্রজন্মের কয়েকজন উদ্যোমী কর্মী। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন সারাহ্, আয়ান হোসেন, আরিশ হোসেন, সাদমান সালফি শুদ্ধ এবং নায়েল । সমগ্র অনুষ্ঠানটি ভিডিও ধারণ করেন মিডিয়া পার্টনার ক্লাইমেট চ্যানেলের পক্ষ থেকে সঞ্জয় চাকী। – সংবাদ বিজ্ঞপ্তি