আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কানাডায় পড়তে চায়, কিন্তু আবাসনের অভাবে এখানে থাকা কঠিন
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : জর্জ ব্রাউনের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হারশাল ভাসগৌরি বলছেন, এখানে পড়ালেখার সময় টরন্টোতে থাকার জায়গা খুঁজে পাবার জন্য তিনি কয়েক মাসের ভাড়া আগেভাগেই ভারতে তার পরিবারের সঞ্চয় থেকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু তার পরও গত চার মাস ধরে থাকার জায়গা খুঁজতে গিয়ে তিনি কেবলই প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন অথবা কোনও জবাবই পাননি। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, থাকার জায়গাই যদি না থাকে তাহলে কেন তাকে কানাডায় আসার আমন্ত্রণ জানানো হলো। খবর বানেসা বালিনটেক – সিবিসি নিউজ।
২৪ বছর বয়সী ভাসগৌরি বলেন, “গৃহহীন হয়ে যাবো এমন চিন্তার চাপ থেকে আমি প্রতি মুহূর্তে ভেঙে পড়ার মতো অবস্থার কাছাকাছি থাকি।”
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জোয়ার ক্রমাগত বাড়ছে। অভিবাসন দপ্তরের (ওজঈঈ) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রেকর্ড সংখ্যক পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ১৫০জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে স্টাডি পারমিট দেয়া হয়েছে। এই সংখ্যা মাত্র পাঁচ বছর আগের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এলে লাভবান হয় বিদ্যালয়
কার্লেটন ইউনিভার্সিটির নগর গবেষণা ও শিক্ষা কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ গবেষক স্টিভ পমেরয় কেন্দ্রীয় সরকারের স্টাডি পারমিট অনুমোদন বেড়ে যাবার দিকে ইঙ্গিত করেন যখন এমনকি প্রদেশগুলোও বছরের পর বছর ধরে মাধ্যমিক-উত্তর শিক্ষা খাতের বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, মাধ্যমিক-উত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রাজস্ব ঘাটতি পূরণের উপায় হিসাবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে।
পমেরয় বলেন, “দোষারোপের আরও অনেক জায়গা আছে।”
কানাডিয়ান অ্যালায়েন্স অব স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন্স (ঈঅঝঅ) এর অ্যাডভোকেসি বিষয়ক পরিচালক মাতেউস সালমাসি বলেন, তার সংগঠন ভাসগৌরির মত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শুনেছে, যারা বলছেন, একটি আবাসনের জন্য তারা কয়েক মাসের এমনকি সারা বছরের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করেছেন।
তিনি বলেন, কিছু শিক্ষার্থী একইরকম ঘটনা তুলে ধরেছেন যে, তাদেরকে সঙ্কীর্ণ ও অনিরাপদ জরাজীর্ণ আবাসনে গাদাগাদি করে বাস করতে হচ্ছে, অন্যদিকে অনেকে বলেন, কোথাও জায়গা না পেয়ে তারা তাদের গাড়িতেই বসবাস করছেন।
জাতিগত শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার
আইআরসিসির ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আসেন চীন, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন ও ভারত থেকে। শেষের দেশটির শিক্ষার্থীরাই মোট স্টাডি পারমিটের ৪০ শতাংশ নিয়েছেন।
ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির জেন্ডার, সেক্সুয়ালিটি অ্যান্ড উইমেন্স স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসার তানিয়া দাসগুপ্ত বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সচরাচর জাতিগত গোষ্ঠীর সদস্য বলে বাড়ির মালিকদের তরফে বৈষম্য ও বর্ণবাদী মনোভাব তাদের আবাসন খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন করে তুরতে পারে।
দাসগুপ্ত বলেন, “তাদের অবস্থার জন্য শিক্ষার্থীদের দোষারোপ না করে বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে মনোযোগ দেয়া দরকার বলে আমি মনে করি… কারণ শিক্ষার্থীদের দেয়া অর্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিই লাভবান হচ্ছে।”
সরকারের প্রতি আরও বেশি বিনিয়োগের আহবান
সালমাসি বলেন, তার সংগঠন সিএএসএ সরকারের প্রতি আহবান জানায়, শিক্ষার্থীদের ভাড়ার বাজারের অবস্থা সম্পর্কে শুধু বেশি বেশি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ না করে কেবল শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন নির্মাণে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করা উচিৎ।
সালমাসি বলেন, “আমরা জানি, এটা করা হলে দুটি কাজ হবে। এতে ছাত্রদের নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের চাহিদা পূরণ হবে এবং এটি শিক্ষাঙ্গনের বাইরে বাকি আবাসন মার্কেটের ওপর চাপ কমাবে।”
এদিকে, মাধ্যমিক-উত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে আবাসন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে, তবে চাহিদার সাথে সঙ্গতি রাখতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আরও সহায়তা দরকার।
আইআরসিসি এগিয়ে এসেছে
আইআরসিসি বলেছে, শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট নিরসনে তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ হিসাবে প্রদেশ ও টেরিটোরি, জাতীয় শিক্ষা সমিতি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের সঙ্গে “আলোচনা” চালিয়ে যাচ্ছে।
এক ই-মেল বার্তায় আইআরসিসি জানায়, “দপ্তরটি এখন শিক্ষার্থী কর্মসূচি পর্যালোচনা করতে যাচ্ছে। এর লক্ষ হলো, কানাডার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক লক্ষ পূরণে সহায়ক হবে এমন শিক্ষার্থী বাছাই ও ধরে রাখার বিষয়টি আরও সুচারুভাবে সম্পন্ন করার সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করা।”
‘ভাড়া দিতে গিয়ে তারা খেতে পারছে না:’ – জগমিত সিং
এদিকে নাউটরন্টো.কম এক খবরে বলা হয়, নিউ ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা জগমিত সিং কানাডীয়দের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। কানাডার মানুষ এখন মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
“টরন্টোতে এক বেডরুমের ভাড়া এখন মাসে ২,৫০০ ডলার। কানাডীয়, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি এক দুঃস্বপ্ন,” এ কথা টুইট (এখন ‘এক্স’) করেছেন জগমিত সিং। তিনি বলেন, “বাসাভাড়া দিতে গিয়ে তারা খেতে পারছে না।”
তিনি আরও বলেন, কানাডার একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও মাথার ওপর একটি আচ্ছাদনের জন্য এক বেলা না খেয়ে থাকার পরিস্থিতি হওয়া উচিৎ নয়।
“ঠিক এই মুহূর্তে, বাড়িভাড়া সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে- টরন্টোতে এক বেডরুমের মাসিক ভাড়া ২.৫০০ ডলার এবং ভ্যাঙ্কুভারে ৩,০০০ ডলার।”
রেন্টালস.সিএ-র তথ্যমতে, গত জুলাই মাসে টরন্টোতে এক বেডরুমের বাসার ভাড়া উঠে যায় ২,৫৯২ ডলারে, এক বছর আগের তুলনায় ১৩.৪ শতাংশ বেশি।
এদিকে, কানাডায় গত মাসে সার্বিকভাবে ভাড়া বেড়েছে গড়ে ২,০৭৮ ডলার।