কানাডার প্রতি ৫ জনে ৩জন কর্মচারী এ বছর কর্মস্থলে আরও বেশি চাপ বোধ করছেন
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, কানাডার প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজন কর্মচারী আগের বছরের চেয়ে চলতি বছর কর্মস্থল নিয়ে বেশি চাপ অনুভব করছেন। কাজের বাড়তি বোঝা এবং চাকরিতে স্থিতিশীলতার অভাব বাড়তি চাপের কারণ। অনেকেই বলেন, তারা নিয়োগদাতার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সমর্থন পাচ্ছেন না। খবর সিসি ডি ফ্লাভিস- সিটিভি নিউজ।
বৈশি^ক নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান রবার্ট ওয়াল্টার্স গত মাসে কানাডার আড়াই হাজারের বেশি কর্মচারীর কাছে তাদের কর্মস্থলের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়। তারা দেখতে পায় যে, কর্মচারীদের কল্যাণে কোম্পানিগুলি কত অর্থ ব্যয় করে আর কর্মীরা সত্যিকার অর্থে কেমন অনুভব করে এই দুটি বিষয়ের মধ্যে বড় ধরণের অসঙ্গতি আছে।
কোম্পানির জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা কর্মস্থল নিয়ে চাপে ভুগছেন। এদের এক-তৃতীয়াংশ বা ৩৪ শতাংশ বলেন, তারা “প্রায়শই” এমন অনুভব করেন। অন্যদিকে, ১০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, চলতি বছর তারা কর্মক্ষেত্রে কোনওরকম “ধারাবাহিক চাপ” অনুভব করেননি।
রবার্ট ওয়াল্টার্স-এর কানাডা শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মার্টিন ফক্স বলেন, ২০২০ সালের মার্চে মহামারি শুরুর পর থেকে নিয়োগদাতারা কর্মচারীদের কল্যাণে মাথাপিছু ৪০০ থেকে ৬০০ ডলার পর্যন্ত ব্যয় করছেন।
মি. ফক্স সিটিভিনিউজ.সিএ-কে বলেন, “নিয়োগদাতারা ভাবেন তারা যথেষ্ট করছেন, আর কর্মচারীরা মনে করে যথেষ্ট নয়, এমন একটি ভিন্নমত আছে উভয়ের মধ্যে।”
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৬২ শতাংশ কর্মচারী বলেন, নিয়োগদাতারা কর্মস্থলে তাদের চাপ কমানোর জন্য যথেষ্ট করছেন বলে তারা মনে করেন না। অন্যদিকে ১৪ শতাংশ কর্মচারী মনে করেন, নিয়োগদাতারা যথেষ্ট করছেন।
কর্মস্থলে চাপ কমানোর দায়িত্ব কার ওপর বর্তায় সেটি নির্ধারণের চেষ্টা করা হলে উত্তরদাতাদের ৪৫ শতাংশ বলেন, এই দায়িত্ব জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের এবং মানবসম্পদ বিভাগের। অন্যদিকে, ১৯ শতাংশ বলেন, এটি লাইন ম্যানেজারদের দায়িত্ব।
মি. ফক্স বলেন, এ আলোচনা একতরফা হওয়া উচিৎ নয়।
তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, চাপের সময়গুলিতে নিজেদের চালিয়ে নেয়া এবং তাদের উদ্বেগের বিষয়ে কথা বলার সক্ষমতা কর্মচারীদেরও থাকা উচিৎ।” তিনি আরও যোগ করেন যে, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বেগের জায়গাগুলিতে যথাযথ উদ্ভাবনী ব্যবস্থা নেয়ার মত উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপক ও নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের নিতে হবে।
২০২৩ সালে উচ্চতর চাপের কারণ কি?
জরিপে দেখা গেছে, একজন কর্মচারীর কর্ম ও ব্যক্তিজীবন, একইসঙ্গে কাজের বেশি চাপ এবং কঠোর সময়সীমা ইত্যাদি সব কিছুই কর্মচারীদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
জরিপ অনুযায়ী, অফিসের কর্মচারীদের মধ্যে বৃহত্তম চাপের কারণ হলো, চাকরির স্থিতিশীলতা বিষয়ে উদ্বেগের সঙ্গে জড়িত।
ফক্স বলেন, “অস্থির অর্থনীতি, বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলিতে গণ লে-অফের যেসব খবর মিডিয়ায় দেখা যায় এবং প্রার্থী ও গ্রাহকের আস্থার প্রশ্ন বিবেচনায় নিলে এটি মোটেও বিস্ময়কর নয়।”
২০২৩ সালে এ যাবৎ যেসব কোম্পানি লে-অফ ঘোষণা করেছে তার মধ্যে আছে মেটা, আমাজন, গুগল, লিফট, শোপিফাই এবং বেল কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব করপোরেশন মহামারির পর নিজেদের আকার ছোট করে আনা এবং পুনর্গঠনের অংশ হিসাবে জনবল ছাটাই করে।
জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে এমন উল্লেখযোগ্য চাপের মধ্যে আরও আছে কর্তৃপক্ষের চাপ। ২৩ শতাংশ কর্মচারী এটিকে কর্মস্থলের চাপের সবচেয়ে বড় উপাদান হিসাবে চিহ্নিত করেন। এর পরেই রয়েছে সময়মত বেতন বাড়ানোর প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতি। এটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেন ১৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
ফক্স বলেন, “বেতন কম পাবার অনুভূতি কাজে দ্রুত নিরুৎসাহ জন্মায়। দুর্ভাগ্যক্রমে, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় ও মূল্যস্ফীতির কারণে যে কোনও পরিমাণে বেতন বৃদ্ধি বা বৃদ্ধির প্রস্তাবই অপর্যাপ্ত মনে হয়।”
জরিপে শেষ যে চাপের কারণটি উঠে এসেছে সেটি হলো বাড়তি কাজের চাপ। ১৩ শতাংশ উত্তরদাতা এটি চিহ্নিত করেছেন। কর্মীরা মনে করছেন, যেন মেধাবী কর্মীর অভাব এবং ক্রমাগত দায়িত্ব নিতে হওয়ায় তাদেরকে আরও বেশি দায় নিতে হবে।
ফক্স বলেন, মহামারি-উত্তর চাপের এই নতুন ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে কোভিড-১৯ এর বিধিনিষেধ তুলে নেয়া এবং ব্যক্তিগত হাজিরার মাধ্যমে কাজ শুরু হওয়ার ফলে এবং একই সাথে দ্রুত বর্ধমান মূল্যস্ফীতি “যথার্থ ঝড়” তুলেছে।
কাজের চাপ কীভাবে কমানো যায়?
ফক্স বলেন, কর্মস্থলে চাপ সামলানোর কার্যকর কৌশল গ্রহণে নিয়োগদাতা ও কর্মচারী উভয়ের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ।
এই চাপ যথাযথভাবে সামলে নিতে না পারলে তা আরও বেড়ে যেতে পারে এবং আয়ের উচ্চতর হার, কর্মচারীদের শৈথিল্য, নিরুৎসাহিত এবং উৎপাদনশীলতার স্তর হ্রাস পেতে পারে।
জরিপে ৪৯ শতাংশ পেশাজীবী আভাস দেন যে, তাদের কোম্পানির উৎপাদনের হার উচ্চ, কিন্তু ১৭ শতাংশ বলেন, পণ্যের মান নিম্ন।
ফক্স সুপারিশ করেন যে, কোম্পানিগুলি এমন একটি সহায়ক কর্মস্থল ও খোলামেলা কর্মসংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারেন যেখানে কর্মচারীরা তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলতে নিরাপদ বোধ করবে। তিনি আরও বলেন, কর্মচারীদের সহানুভূতির সাথে পরিচালনা করা এবং কর্মক্ষেত্রে খারাপ সময় পার করছেন এমন কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে আরও প্রশিক্ষণ থাকা দরকার।
কর্মচারীদের প্রতি ফক্স বলেন, সহায়তা চাওয়া অথবা সহকর্মীদের পরামর্শ চাওয়ার ব্যাপারে তাদের ভয় পাওয়া উচিৎ নয়।