অন্টারিওর মিসিসগায় মসজিদে হামলাকারীর ৮ বছরের কারাদণ্ড
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওর মিসিসাগায় গত বছর একটি মসজিদে নামাজ আদায়রত মুসুল্লিদের ওপর হামলাকারীকে আট বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। লোকটি bear spray এবং কুঠার নিয়ে মুসুল্লীদের ওপর চড়াও হয়। খবর রায়ান প্যাট্রিক জোনস – সিবিসি নিউজ।
গত ২৫ জুলাই ব্রামটনে অন্টারিওর সুপিরিয়র বিচারাদালতে বিচারপতি ব্রুস ডারনো ওই দণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন।
কানাডার পাবলিক প্রসিকিউশন সার্ভিসের কেন্দ্রীয় প্রসিকিউটর সারাহ শেখ এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি ছিল ইসলামিক সেন্টারের জামাতে উপস্থিত সব মুসল্লীর ওপর পরিকল্পিত হামলা। এই দণ্ড অপরাধের গুরুত্ব এবং এ ধরণের হামলার প্রতি সমাজের নিন্দাবাদের প্রতিফলন।”
ঘটনার একটি সম্মত বিবরণী অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১৯ মার্চ ফজরের নামাজের সময় দার আল-তাওহিদ ইসলামিক সেন্টারে প্রবেশকারী মোহাম্মদ মইজ ওমর “গণহত্যা ঘটাতে চেয়েছিলেন।” তিনি সেখানে একটি কুঠার উঁচিয়ে সমবেত মুসুল্লীদের লক্ষ্য করে bear spray ছিটিয়ে দেন।
সম্মত বিবৃতি অনুযায়ী, ওমর মুসলিমদের প্রতি তীব্র ঘৃণায় উজ্জীবিত ছিল এবং মুসলমানদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে চেয়েছিল। “ইসলাম একটি অসহিষ্ণু ও সহিংস ধর্ম,” এমন বিশ্বাস থেকে সে আক্রমণ করতে অনুপ্রাণিত হয়।
১৯ জুলাই ওমর তিনটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন, এগুলি হলো, জীবন বিপন্ন করা বা শারীরীক ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে বিষাক্ত পদার্থ প্রয়োগ করা, সশস্ত্র আক্রমণ এবং ধর্মের ভিত্তিতে পক্ষপাত, কুসংস্কার বা ঘৃণায় উজ্জীবিত হয়ে ধর্মী সম্পদের অনিষ্ট সাধন।
ওমর তার আবেদনের অংশ হিসাবে একমত হন যে, তার এসব অপরাধ ফৌজদারি দণ্ডবিধির আওতায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মধ্যে পড়ে এবং রাষ্ট্র এ বিষয়ে কঠোর শাস্তি দিতে পারে।
দার আল-তাওহিদ মসজিদের ইমাম ইব্রাহিম হিন্দি বলেন, ওই হামলার ঘটনায় তার কমিউনিটির লোকেরা যে ভীতি, মর্মযাতনা ও ক্ষতির মুখে পড়েছে তা কোনও ভাষাতেই প্রকাশযোগ্য নয়।
শুনানী শেষে আদালতে রায় ঘোষণার পর ইব্রাহিম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই হামলার পর আমরা সবাই যেমন অনুভব করেছি তা হলো একটি ক্ষতির অনুভূতি, সারল্য হারিয়ে ফেলার অনুভূতি, নিরাপত্তা ও পবিত্রতা হারানোর অনুভূতি।”
“আমি উদ্বিগ্ন যে, আমাদের কমিউনিটি এবং শান্তিতে নিজের বিশ্বাসের অনুশীলন করতে চায় এমন সব কানাডীয়র সুরক্ষায় এই শাস্তি যথেষ্ট অবদান রাখবে না।”
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে হামলার দৃশ্য
ইমাম ইব্রাহিম মসজিদে হামলার একটি ভিডিওচিত্র সোমবার টুইটারে প্রকাশ করেন। এতে প্রথমবারের মত মানুষ দেখতে পায়, হামলার সময় কী ঘটেছিল।
পোস্টে ইব্রাহিম বলেন, “এটি সেই মুহূর্ত যখন হামলাকারী মুসুল্লীদের আঘাত করার উদ্দেশ্যে দার আল-তাওহিদ মসজিদে প্রবেশ করে, যে সময় সব মুসুল্লী হামলাকারীর দিকে পেছন ফিরে ছিলেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, মসজিদের নামাজের কক্ষে ২০ জনের মত উপাসনাকারীর একটি দল দুই সারিতে দাঁড়ানো- বেশিরভাগই মাথা নিচু করে এবং চোখ বুজে প্রার্থনা করছিলেন- তখন কাঁধে ব্যাগ এবং একটি ছোট কুঠারসহ এক ব্যক্তি মুসুল্লীদের পেছনের হলওয়ে থেকে নামাজের কক্ষে প্রবেশ করে এবং রুমের সামনের দিকে একটি হলুদ পদার্থ ছিটাতে শুরু করে।
এরপর হামলাকারীকে স্প্রের একটি ক্যান মেঝেয় ফেলে দিতে এবং কুঠার নাড়াতে দেখা যায়, যেন সে এখনই আক্রমণ করবে।
কয়েকজন নামাজি ঘুরে দাঁড়ালে বুঝতে পারেন কী ঘটতে যাচ্ছে, একজন হামলাকারির দিকে ছুটে যান। তখন হামলাকারী রুমের পেছনদিকে সরে যায় এবং আরেকটি ক্যান থেকে একই পদার্থ স্প্রে করতে থাকে।
অন্য নামাজিরাও হামলাকারীর দিকে ছুটে যান এবং তাকে মাটিতে ফেলে দিতে সক্ষম হন। বেশ কয়েকজন মিলে তাকে পরাস্ত করার পর তার পায়ে ধরে টেনে রুমের বাইরে নিয়ে যান, অন্য কয়েকজন বাইরের গেটের দিকে ছুটে যান।
ঘটনায় মুসল্লীদের কেউই গুরুতর জখম না হলেও, একজনের পেটে লাথি মেরেছিল হামলাকারী। আর কয়েকজন বিয়ার স্প্রের পাশর্^ প্রতিক্রিয়ায় ভুগেছেন। ঘটনার সম্মত বিবরণীতে এমনটাই বলা হয়।
ইব্রাহিম তার পোস্টে বলেন, “এটি হলো ইসলামোফোবিয়া। এই ঘৃণা এতটাই প্রবল যে তা একটি তরুণকে নিছক বিশ্বাসের কারণে এমন সব মানুষের ওপর আক্রমণ চালানোর প্রেরণা যুগিয়েছে যাদের সঙ্গে তার কখনই দেখাসাক্ষাৎ হয়নি।”
তিনি বলেন, “আমি সেইসব ভাইদের বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞ যারা তাকে থামিয়ে দিয়েছিলেন এবং সে যেমনটা করতে চেয়েছিল সেরকম বড় কোনও ক্ষতি করতে পারার আগেই তাকে পরাস্ত করতে পেরেছিলেন।”
পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী ওমর ব্লুমকে বলেছে, সে নিজেকে একজন “অসাম্প্রদায়িক মুসলিম” বলে মনে করে, কিন্তু তার বিষয়ে মূল্যায়ন অনুযায়ী, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সে আর ইমানদার নয়।