ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর ক্যাম্প থেকে ফেরা কানাডীয়রা দীর্ঘমেয়াদী হুমকির কারণ হতে পারে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ৪ মে ২০২৩: সিরিয়ার বন্দীশিবির থেকে আইএসআইএস-এর সদস্য যেসব কানাডীয়কে সরকার ফিরিয়ে আনছে তারা “নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিলতা” সৃষ্টি করতে পারে বলে গত বৃহস্পতিবার সতর্ক করলো কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা। খবর স্টুয়ার্ট বেল – গ্লোবাল নিউজ।
কানাডার নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফিরে আসা চরমপন্থীরা হয়ত খুব শিগগিরই হামলা না-ও করতে পারে, কিন্তু “সময়মত” তারা তহবিল ও জনবল সংগ্রহ করতে পারে।
পার্লামেন্টে পেশ করা এক রিপোর্টে সিএসআইএস বলেছে, “তারা সহিংসতা, দমন-পীড়নের মত মৌলবাদ প্রভাবিত এবং অনেকেই অস্ত্র ও বিষ্ফোরকের প্রশিক্ষণ পেয়েছে।”
“কানাডিয়ান এক্সট্রিমিস্ট ট্রাভেলার্স” বা সিইটিদের বিষয়ে এই সতর্কবাণী এমন সময়ে এলো যখন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় সিরিয়ায় আটক হওয়া কানাডীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনছে।
৬ এপ্রিল পররাষ্ট্র দপ্তর সিরিয়ায় আইএসআইএস সদস্যদের বন্দীশিবির থেকে চার কানাডীয় নারীকে মন্ট্রিলে নিয়ে আসে। সেখানে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
কয়েকদিন পর ওই নারীদের জামিনে মুক্তি দেয়া হয়, যদিও তাদের চলাফেরায় বিধিনিষেধ আরোপের জন্য আরসিএমপি তাদের ওপর পিস বন্ড আরোপের চেষ্টা করে। চতুর্থ মহিলাটিকে গ্রেফতার করা হয়নি।
সে সময় গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স ও পাবলিক সেফটি কানাডা এক বিবৃতিতে জানায়, “সমমনা দেশগুলো সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে নিজ নিজ নাগরিকদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
আরও দুজন নারীকে আইএসআইএস-এর বন্দিশিবির থেকে কানাডায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দুজনই এডমন্টনের। কানাডার নাগরিকত্ব আছে এমন চার পুরুষও ফিরে আসতে পারেন।
বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়, “যদিও ফিরে আসা সিইটিরা তাৎক্ষণিকভাবে অথবা সরাসরি চরমপন্থী সহিংসতায় জড়িত নাও থাকতে পারে, তবুও তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি হয়েই থাকবে।”
“সময়মত তারা তহবিল সংগ্রহ, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সংরক্ষণ, মৌলবাদে দীক্ষা এবং/অথবা নতুন সদস্য সংগ্রহের মত চরমপন্থী তৎপরতায় জড়িত হতে পারে।”
ইয়াজিদিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, সন্ত্রাসী হামলা ও শিরোñেদের ঘটনার ভিডিও ধারণের মত বর্বরতার জন্য দায়ী আইএসআইএস বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য শত শত কানাডীয় চরমপন্থী সিরিয়া ও ইরাকে গিয়েছিল।
তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নিহত হয়ে থাকতে পারে, তবে আইএসআইএস-এর পতনের মুহূর্তে মুষ্ঠিমেয় কিছু সংখ্যক কানাডীয় বন্দী হয় মার্কিন মদদপুষ্ট কুর্দিশ যোদ্ধাদের হাতে। তাদেরকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অস্থায়ী কারাগার অথবা বন্দিশিবিরে আটক রাখা হয়।
কানাডা সরকার শুরুর দিকে তাদেরকে কোনওরকম সাহায্য করতে অস্বীকার করে, কিন্তু তাদের পরিবারগুলো কেন্দ্রীয় আদালতে আইনী লড়াই শুরু করলে সরকার অবস্থান পাল্টায়।
জানুয়ারি মাসে গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা নারী ও শিশুদের দেশে ফিরিয়ে আনতে রাজি হয়। আদালত পুরুষদেরও ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয় সরকারকে। কিন্তু সরকার আপিল করে।
এ বিষয়ে আদালত এখনও নির্দেশনা দেয়নি।
সন্ত্রাসবাদে যোগ দেওয়ার জন্য কানাডা ছেড়ে কোথাও যাওয়া অবৈধ, কিন্তু প্রমাণ সংগ্রহের দুরূহতার কারণে আরসিএমপি ফিরে আসা আইএসআইএস সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনতে হিমশিম খাচ্ছে।
এ পর্যন্ত এক ডজন শিশুসহ সাতজন নারী বন্দিশিবির থেকে ফিরেছেন। এদের মধ্যে মাত্র একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি মন্ট্রিলের বাসিন্দা। অন্য পাঁচজনের ওপর পিস বন্ড আরোপের আবেদন করেছে আরসিএমপি।
এপ্রিলে আসা নারীদের সঙ্গে আরও দুজন নারীর ফেরার কথা ছিল, কিন্তু তাদের অবস্থান চিহ্নিত করতে না পারায় ছেড়ে আসা হয়েছে। তাদের আইনজীবী বুধবার জানিয়েছেন, অটোয়া সরকার তাদের দেশে ফেরানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
লরেন্স গ্রিনস্পন বলেন, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা (GAC) নিশ্চিত করেছে যে, তারা ওই দুজন নারী ও তাদের তিনটি শিশুর বিষয় নিয়ে উত্তর ও পূর্ব সিরিয়ার স্বায়ত্বশাসিত প্রশাসনের (AANES) সঙ্গে কথা বলেছে।
তিনি বলেন, “জিএসি নিশ্চিত করেছে যে, তারা সেখানকার স্বায়ত্বশাসিত প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং নিশ্চয়তা পেয়েছে যে, কুর্দি কর্তৃপক্ষ ওই পাঁচজন কানাডীয়র স্বদেশ ফিরে যাবার ব্যবস্থা করবেন যেমনটা তারা মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে অন্য ১৪জন কানাডীয়র ক্ষেত্রে করেছেন।
“যদিও নির্দিষ্ট করে কোনও সময় বলেনি তবে জিএসি ওই নারীদের পরিবারকে তাদের প্রিয়জনের ফেরার ব্যাপারে আশা দিয়েছে।”
সিএসআইএসের রিপোর্টে বলা হয়, আইএসআইএস এবং আল কায়েদার মত ধর্মীয়ভাবে উদ্বুদ্ধ চরমপন্থী গ্রুপগুলো এখনও হুমকি হয়ে আছে।
গতমাসে ব্রিটিশ করাম্বিয়ার সারেতে একজন কথিত আইএসআইএস সমর্থক এক ব্যক্তির ঘাড়ে আঘাত করে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত মার্চে কুইবেকের পুলিশ আইএসআইএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ থাকার দায়ে ১৮ বছরের এক তরুণকে গ্রেফতার করে। “বহুদিক থেকে চাপের মুখে থাকলেও” আইএসআইএস এখনও, নির্দিষ্ট করে সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত হামলা অব্যাহত রেখে খেলাফত কায়েমের স্বপ্ন দেখছে এবং বিকশিত হচ্ছে।