কানাডায় সম্পদের উইল করা কতটা দরকারী?

খুরশিদ আলম

মানুষের জীবনে সম্পদ না থাকলেও বিপদ, আবার থাকলেও বিপদ। সম্পদ থাকার একাধিক বিপদের মধ্যে একটি হলো, প্রয়াত পিতামাতার সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে গিয়ে নানা রকম ঝক্কি-ঝামেলার মোকাবেলা করা। এই ঝক্কি-ঝামেলা মোকাবেলা করতে হয় সাধারণত ঐ সকল পরিবারের সদস্যদেরকে যেখানে নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকে না। আবার সম্পত্তির লোভে একজন যদি অন্য জনের সঙ্গে প্রতারণার করতে যায় সেখানেও সৃষ্টি হয় নানারকম ঝামেলা। 

টরন্টোতে আমি এক ভদ্রলোককে চিনি যার স্ত্রী দেশে গিয়ে নিজের প্রয়াত বাবা-মায়ের বাড়িতে ঢুকতেই পারেননি। ঐ ভদ্রমহিলার ভাই দারোয়ানকে বলে রেখেছিলেন তার বোন যেন বাড়িতে ঢুকতে না পারে। দারোয়ান মনিবের আদেশ যথাযথভাবে পালন করেছিলেন। অর্থাৎ ঐ ভদ্রমহিলাকে বাড়ির ভিতর ঢুকতে দেননি। গেট থেকেই বিদায় করে দিয়েছিলেন।

ভাবা যায় এরকম দৃশ্য? সম্পদের লোভে নিজ বোনকে অস্বীকার করা, গেট থেকেই গলা ধাক্কা দিয়ে বিদায় করা! বাংলাদেশে দারওয়ান থাকে সাধারণত অবস্থাপন্ন পরিবারে। ঐ পরিবারটিও অবস্থাপন্নই ছিল। বোনকে তার পাওনা বুঝিয়ে দিলে কি এমন টান পড়তো ভাইয়ের অংশে?

টরন্টোতে আমি আরেক ভদ্রলোকের কথা জানি যিনি দেশে প্রয়াত বাবার সম্পদের ভাগ চাইতে গিয়ে অন্য ভাইদের হাতে নাজেহাল হয়েছিলেন। নানারকম হুমকি-ধামকি দেয়া হয়েছিল উনাকে যাতে করে ভবিষ্যতেও আর সম্পদের ভাগ চাইতে না আসেন তিনি।

উপরে উল্লেখিত দুটি ঘটনার সর্বশেষ পরিস্থিতি কি তা আমার জানা নেই। অথবা প্রবাসী এই দুজনের বাবা মা কোন উইল করে গিয়েছিলেন কি না তাও আমার জানা নেই। আর উইল করে গিয়ে থাকলেও বাংলাদেশে সেটা গায়েব করে দেয়া বা গোপনে পরিবর্তন করে নেয়াটা মোটেও কঠিন কাজ নয়। গায়ের জোর আর টাকার জোরে অনেক কিছুই সম্ভব ওখানে।

কানাডায় সম্পদের উইল করাটা এখন অনেক সহজ হয়ে এসেছে। উকিলের কাছে না গিয়েও এই কাজটি করা যায়। খরচও এখন অনেক কমে এসেছে। ছবি : প্রবাসী কণ্ঠ

কানাডার প্রসঙ্গে আসি এবার। এখানে উইল করা থাকলে সেটি গায়েব করে দেয়া বা নিজ স্বার্থে অবৈধভাবে পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। উত্তরাধিকারীদের একজন আরেকজনকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন পাওনা না মিটিয়েই বা বাড়িতে ঢুকতে দিবেন না তা এদেশে সম্ভব নয়। তবে উইল না থাকলে কি হতে পারে?

হ্যা, সমস্যা তো কিছুটা হতেই পারে। উত্তরাধিকারীদের মধ্যে পিতামাতার সম্পদ ভাগাভাগি করতে গিয়ে তখন আইন-আদালত-উকিল এসবের পিছনে দৌঁড়াতে হয়। খরচেরও একটা ব্যাপার আছে এখানে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিস্তর খরচও হতে পারে। এমনকি উইল থাকার পরও! মন্ট্রিয়লে ডেভিড এডি নামের এক ভদ্রলোককে তার পিতামাতার সম্পদ উত্তরসুরীদের মধ্যে বিলিবন্টন করতে গিয়ে সাত বছর সময় ব্যয় করতে হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে তাকে কোর্টে দাঁড়াতে হয়েছিল দশবার এবং এই সব আইনী কার্যক্রমের পিছনে তাকে সর্বমোট ব্যয় করতে হয়েছিল পঞ্চাশ হাজার ডলার! সিটিভি নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

ডেভিড এডি’র পিতামাতা উইল করে গিয়েছিলেন সম্পদের বিলিবন্টনের ব্যাপারে। কিন্তু তারপরও এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছিল।

তাহলে দেখা যাচ্ছে উইল করেও শান্তি নেই! আর উইল না থাকলে কি অবস্থা হতে পারে? বিশেষ করে যে সকল পিতামাতা তাদের সন্তানদের জন্য অঢেল সম্পত্তি রেখে যান উইল না করে?

উইল থাকার পরও যখন কোন কোন ক্ষেত্রে উত্তরসূরীদের মধ্যে বিরোধ দেখা যায় তখন উইল না থাকলে সেই বিরোধ আরো চরম আকার ধারণ করতেই পারে যদি সম্পদের পরিমাণ বেশী হয়। কিংবা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে একজন বা দু’জন যদি উইলের সঙ্গে একমত না হন। 

তবে কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, কানাডার প্রায় অর্ধেক লোকেরই কোন উইল করা নেই। আর যাদের বয়স ৫৫ বা তারও বেশী তাদের মধ্যে শতকরা ২০ জনেরই কোন উইল করা নেই। Angus Reid Institute কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। জরিপ ফলাফলটি প্রকাশিত হয় চলতি মার্চ (২০২৩) মাসের ৭ তারিখে।

অথচ কানাডায় সম্পদের উইল করাটা কিন্তুু এখন অনেক সহজ হয়ে এসেছে। উকিলের কাছে না গিয়েও এই কাজটি করা যায়। খরচও এখন অনেক কমে এসেছে। অনলাইনে উইল করা হলে একশ ডলারেরও কম খরচ পড়ে অনেকের বেলায়। তাহলে উইল করার বিষয়ে লোকজনের এত অনীহা কেন? বা বিষয়টিকে কেন গুরুত্ব দেন না? তার আগে দেখে নেই জরিপে এ বিষয়ে আরো কি কি তথ্য রয়েছে।

জরিপে দেখা গেছে যাদের বয়স ৩৫ বছরের নিচে তাদের মধ্যে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৪ জনই উইল করেননি। এমনকি যাদের বয়স ৪৫ থেকে ৫৪ এর মধ্যে, তারাও এই গ্রুপে। অর্থাৎ তারা সম্পদের উইল করেননি। আর যাদের তেমন কোন সম্পদ নেই বা নিন্ম আয়ের মানুষ তাদের মধ্যেও (৬৩%) উইল করার কোন প্রবণতা নেই। এর অবশ্য একটা সঙ্গত কারণও রয়েছে। সম্পদ না থাকলে উইল করার প্রবণতা না থাকারই কথা। বিশেষ করে যাদের পারিবারিক আয় বছরে এক লাখ ডলারের কম তাদের মধ্যে উইল করার বিষয়ে আগ্রহ অনেক কম।

অন্যদিকে পুরুষ ও নারীর মধ্যে উইল করার ব্যাপারে সমান আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে যারা তাদের সম্পদের উইল করতে চান। এদের মধ্য ৫০% পুরুষ  এবং ৪৯% নারী বলেছেন তাদের সম্পদের উইল রয়েছে। তবে অল্পবয়সীদের মধ্যে সম্পদের উইল করার বিষয়ে আগ্রহ কম।

আবার উইল থাকলেই হয় না। সময়ে সময়ে সেই উইল আপডেট বা হালনাগাদও করতে হয়। যেমন স্বামী বা স্ত্রী বিয়োগ হলে, সংসারে নতুন অতিথি আসলে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে বা নতুন বিয়ে করলে উইল পরিবর্তন করে হালনাগাদ করে নিতে হয়। জরিপে দেখা গেছে যাদের বয়স ৫৫ থেকে ৬৪ এবং সম্পদের উইল রয়েছে, তাদের মধ্যে শতকরা ৪৯ জনের উইল হালনাগাদ করা আছে। আর এই হালনাগাদকারীদের হার আরো বেশী যাদের বয়স ৬৫ বা তারও বেশী এবং উইল রয়েছে। এদের মধ্যে শতকরা ৭১ জনের উইল হালনাগাদ করা আছে।   

সাধারণভাবে দেখা গেছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিকের মধ্যে সম্পদের উইল না করার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলোর একটি হলো বয়স। তরুণ বয়সীরা মনে করেন উইল করার মত বয়স এখনো তাদের হয়নি। এদের মধ্যে আছেন ১৮ থেকে ৩৪ বয়সী কানাডিয়ান। এই বয়সী কানাডিয়ানদের মধ্যে শতকরা ৫০ জনই এই মত প্রকাশ করেছেন।

আবার যাদের উইল নেই এবং বয়স ৫৪ পার হয়ে গেছে, তাদের মধ্যে শতকরা ২৬% মনে করেন উইল করতে গেলে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়।

তবে বাস্তবতা হলো, সময় এখন পাল্টেছে। সম্পদের উইল করতে, বিশেষ করে যাদের সম্পদের তেমন কোন ঝামেলা নেই বা সম্পদের পরিমান অঢেল নয় তাদেরকে উইল করতে হলে এখন আর আগের দিনের মত উকিলের পিছনে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয় না। Willful নামে একটি অনলাইন প্লাটফরম আছে যাদের মাধ্যমে এক শ থেকে ৩২৯ ডলারের মধ্যে সম্পত্তির উইল করা যায়। টরন্টোর সিটিভি নিউজের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়া আছে। এদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো, https://www.willful.co/

মূলত উইল করে যাওয়াটা এক ধরণের বিচক্ষণতার পরিচয়ই দেয়। বিচক্ষণ মানুষ যারা তারা সময়মত এই কাজটি যত্নসহকারেই করে যান যাতে তার উত্তরসূরীরা ভবিষ্যতে কোনরকম ঝামেলায় না পড়েন। আর শুধু সম্পদের উইলই নয়, কারো মৃত্যুর পর পরিবারে অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান থাকলে তারা কার জিম্মায় বড় হবে সেই সিদ্ধান্তও উইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া যায়। তা না হলে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েরা অপাত্রের হাতে পড়ে বিপথগামী হতে পারে। কিংবা সম্পদহারা হয়ে চরম দুর্গতির মধ্যে পড়তে পারে। এটি নিশ্চই কোন বাবা মা’র কাম্য হতে পারে না।

Willful এর প্রধান নির্বাহী Erin Bury সিটিভি নিউজকে বলেন, অনলাইনে উইল করা বেশ সহজ এবং সময়ে সময়ে তা হালনাগাদও করা যায়। তবে কারো সম্পদ নিয়ে যদি কোন জটিলতা থাকে, সম্পদের পরিমাণ যদি অনেক হয় বা অন্যদেশেও সম্পদ থাকে তবে উইল করার জন্য উকিলের শরণাপন্ন হওয়াই ভাল।

কানাডায় সাধারণভাবে কয়েকটি পদ্ধতিই আছে উইল করার জন্য। তবে সব উইল একরকম নয়। উইলকারীর ব্যক্তিগত অবস্থা, তিনি কোন প্রভিন্সে বাস করেন এ সবের উপর নির্ভর করে উইল কি রকম হবে। তবে মৌলিক বিষয়গুলো প্রায় একই রকম। এদেশে হাতে লেখা উইল এর প্রচলন আছে এখনো, আছে অনলাইনে উইল করার সুযোগও। আরো আছে উকিলের মাধ্যমে উইল করার রীতি।

তবে উইল করার আগে প্রথমেই একজন বিশ্বস্ত নির্বাহক বা এক্সিকিউটর (executor) ঠিক করে নিতে হবে যিনি উইলকারীর উইলে উল্লেখিত ইচ্ছাগুলো বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবেন। এই কাজটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উইলকারী যদি মৃত্যুর আগে একজন নির্বাহক নিয়োগ না করে যান তবে আদালত উইলকারীর সম্পদের প্রশাসক হিসাবে কাজ করার জন্য যে কোন একজনকে বেছে নিবেন। এবং সেই ব্যক্তিটি উইলকারীর পছন্দের কেউ নাও হতে পারেন।

সম্পদের উইল করার বিষয়ে Willful নামের অনলাইন প্লাটফরমে আরো যে সব তথ্য দেয়া আছে তার মধ্যে আছে :

অভিভাবক নির্বাচন : যে কোন নির্ভরশীল শিশু এবং কোন পোষা প্রাণীর (যদি থাকে) জন্য উইলে একজন অভিভাবক নির্বাচন করে রাখা ভাল যিনি উইলকারীর মৃত্যু হলে তার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের এবং পোষা প্রাণীর জন্য আইনী, নৈতিক এবং আর্থিক দিকগুলোর ব্যবস্থাপক হিসাবে কাজ করবেন। অভিভাবক নির্বাচন করা থাকলে অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদেরকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় না।

শেষকৃত্য : মৃত্যুর পর শেষকৃত্য কি ভাবে হবে সেটিও উইলে লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে। কোথায় দাফন করা হবে, অঙ্গদান করা হবে কি না ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে উইলে।

স্বাক্ষর ও সাক্ষী : উইল করার পর সেটি প্রিন্ট করে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে নিরাপদ স্থানে। উইলে নিজের স্বাক্ষর এবং স্বাক্ষীদের স্বাক্ষরও থাকতে হবে।

কানাডায় উইল বৈধকরণ প্রক্রিয়া: কানাডায় উইল করার আইন ও ভাষা একেক প্রভিন্সে একেক রকম। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার বাইরে কেউ উইল করলে সেই উইলের মুদ্রিত কপি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। তবে ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় উইল মুদ্রণ না করে অনলাইনে সংরক্ষণ করে রাখা যায়।

উইল করার জন্য একজন ব্যক্তিকে মানসিক ভাবে সুস্থ্য অবস্থায় থাকতে হবে এবং বয়স কমপক্ষে ১৯ হতে হবে।

উইলটি যদি টাইপ করা হয় তবে উইলকারীকে অবশ্যই দু’জন স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে উইলে স্বাক্ষর করতে হবে এবং সেটা ভেজা কালিতে (wet ink)। উইলে স্বাক্ষীদের স্বাক্ষরও লাগবে। আর এই স্বাক্ষরগুলো হতে হবে উইলের একেবারে শেষ অংশের নিচে।

উইল করার সঠিক সময়: বাস্তবতা হলো, প্রতিটা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরই একটি সঠিক উইল থাকা উচিৎ। তবে জীবনের কোন কোন পর্যায়ে এসে উইল করাটা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। এই পর্যায়গুলোর মধ্যে আছে নতুন বিয়ে করা বা বিদ্যমান বৈবাহিক সম্পর্কের পরিবর্তন। কানাডার কোন কোন প্রভিন্সে বিদ্যমান উইল বাতিল হয়ে যায় বিয়ের পর। তাই বিয়ের পর নতুন উইল করতে হয়। আবার সেপারেশন বা ডিভোর্স হয়ে গেলে প্রাক্তনকে দেয়া উইলের প্রতিশ্রুতি বাতিল হয় না কোন কোন প্রভিন্সে।

অনলাইনে উইল : যদি আপনার সম্পত্তি নিয়ে কোন জটিলতা থাকে তবে অনলাইনে উইল করা সম্ভব নয়। এছাড়াও যদি আপনার প্রতিবন্ধী সন্তান থাকে, যদি কাউকে উইল থেকে বাদ দিতে চান বা কোন উপহার যদি কাউকে শর্তসাপেক্ষে দিতে চান অথবা আপনি যদি বিবাহিত জীবনে পৃথক হয়ে থাকেন কিন্তু ডিভোর্স হয়নি এখনো এবং আপনি নিশ্চিত করতে চান যে আপনার প্রাক্তন আপনার সম্পদ থেকে উপকৃত হবেন না, তাহলে অনলাইনে উইল করাটা সম্ভব নয়। এরকম পরিস্থিতিতে আপনাকে উকিলের স্মরণাপন্ন হতে হবে।

অনলাইনে উইল করা অনেকের জন্যই একটি আদর্শ প্লাটফরম। তবে বিস্তর সম্পদ থাকলে বা সম্পদ নিয়ে কোন জটিলতা থাকলে বা পারিবারিক অন্য কোন জটিলতা থাকলে উকিলের পরামর্শ নেয়াই উত্তম। সেক্ষেত্রে খরচের পরিমানটা বেশী হবে। আট শ থেকে হাজার ডলারেরও বেশী খরচ হতে পারে উকিলের পিছনে।

ঝামেলামুক্ত সাধারণ উইল করার জন্য অনলাইনে বা বাজারে ফ্রি উইল কিট (Will Kit) পাওয়া যায়। তবে সেগুলো আপনার প্রয়োজন সবসময় নাও মিটাতে পারে। স্টেপলস, ওয়ালমার্ট বা আমাজনে খোঁজ করলে উইল কিট পাওয়া যেতে পারে। সিম্পল উইল করার জন্য শুণ্য থেকে ৪ শ ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। Willful নামের অনলাইন প্লাটফরমের সাহায্য নিলে সাধারণ উইল করার জন্য এক শ ডলারের মধ্যে করা যেতে পারে। অন্যান্য আরো কিছু অনলাইন প্লাটফরম আছে উইল করার জন্য। তবে এসব অনলাইন প্লাটফরম এর রেটিং এবং বিশ^াসযোগ্যতা চেক করে নেয়াই ভাল উইল করার আগে।

কানাডায় বৈধ উইল করতে হলে উকিলের সাহায্য নিতেই হবে এমন কোন আইন নেই। তবে উকিলের সাহায্য নিলে আইনী পরামর্শসহ আরো কিছু সুবিধা আছে যেগুলো অনলাইন বা ফ্রি কিট এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে না। অবশ্য উকিলের মাধ্যমে উইল করতে হলে খরচের বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে।

এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে এই বলে যে, মৃত্যুর আগে উইল না করে গেলে উত্তরসূরীরা কি তার সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন? যদি তাই হয় তবে সেই সম্পত্তির দখল কে নিবে? সরকার? নাকি কোন দাতব্য সংস্থা?

ইতিপূর্বে টরন্টোতে এক ভদ্রলোককে বলতে শুনেছিলাম এখানে অবিবাহিত সন্তান যদি তার সম্পত্তির উইল না করে যায় তবে তার জীবিত পিতামাতা সেই সম্পত্তি পায় না। সরকার তা নিয়ে নেয়।

সেই ভদ্রলোক এই তথ্য কোথায় পেয়েছিলেন জানি না। তবে কথাটা মোটেও সত্যি নয়। অন্টারিওতে কেউ যদি উইল না করে মারা যান তবে সরকার বিদ্যমান উত্তরাধিকার (Succession Law Reform Act) আইনের আশ্রয় নিয়ে থাকে মৃত ব্যক্তির সম্পদের বিলি বন্টনের জন্য। এ ব্যাপারে Willful এর ওয়েবসাইটে কিছু তথ্য দেয়া আছে। উত্তরাধিকার আইনে বলা আছে :

– কারো মৃত্যুর পর যদি তার স্ত্রী বা স্বামী জীবিত থাকেন এবং তার কোন সন্তান না থাকে তবে সমুদয় সম্পত্তিই মৃত ব্যক্তির স্ত্রী বা স্বামী পাবেন।

–              মৃত ব্যক্তির যদি সন্তান থেকে থাকে এবং স্ত্রী বা স্বামী যদি তখনো বেঁচে থাকেন তবে অন্টারিওর Succession Law Reform Act অনুযায়ী মোট সম্পদের প্রথম দুই লাখ ডলার পাবেন স্ত্রী বা স্বামী। এরপর বাকি সম্পত্তি সমান ভাগে ভাগ হবে স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানদের মধ্যে।

–              মৃত ব্যক্তির যদি স্বামী বা স্ত্রী জীবিত না থাকেন তবে তার সমুদয় সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে সমানভাগে ভাগ হবে। আর যদি তার সন্তানদের মধ্যে কেউ আগেই মারা গিয়ে থাকেন তবে সেই মৃত সন্তানের ভাগ পাবেন তার সন্তানেরা অর্থাৎ নাতি-নাতনিরা।

–              যদি কারো স্ত্রী বা স্বামী না থাকেন এবং সন্তান বা নাতি-নাতনিও না থাকেন তবে তার মৃত্যু ঘটলে সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন জীবিত পিতা-মাতা। আর পিতা-মাতাদের মধ্যে যদি একজন বেঁচে থাকেন তবে তিনিই পাবেন সমুদয় সম্পত্তি।

–              আর যদি কারো বাবা মা বেঁচে না থাকেন তাহলে তার ভাই-বোন হবেন তার সম্পত্তির মালিক। আর তারাও যদি বেঁচে না থাকেন তবে ভাগ্নি ও ভাগ্নেরা পাবেন সেই সম্পত্তি।      

খুরশিদ আলম

সম্পাদক ও প্রকাশক, প্রবাসী কণ্ঠ