আয়ের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে
স্ট্যাটিসটিকস কানাডার হিসাবে বলা হয় দেশটিতে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অশে^তাঙ্গ লোকেরা বেশি শিক্ষিত। শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে তাদের স্নাতক বা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, শিক্ষা শেষে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তাদের একই পরিমাণ বেতন ও সুবিধাসম্পন্ন চাকরি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
বিশেষ করে, স্নাতক হওয়ার দুই বছর পর, অশ্বেতাঙ্গ স্নাতকরা তাদের শ্বেতাঙ্গ সমকক্ষদের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে কম উপার্জন এবং ইউনিয়নে কম অন্তর্ভুক্তি এবং পেনশন পরিকল্পনার সুবিধা কম পেয়েছেন বলে জানা গেছে সম্প্রতি প্রকাশিত স্ট্যাটিসটিকস কানাডার গবেষণা থেকে।
আবার পুরুষের তুলনায় নারীদের চাকরির আয় কম। দৃশ্যমান সংখ্যালঘু মহিলারা যেখানে বছরে আয় করেন ৪৫,৭০০ ডলার সেখানে শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের আয় বছরে ৪৭,৮০০ ডলার। শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের আয় যেখানে বছরে ৫৪,১০০ ডলার, সেই তুলনায় দৃশ্যমান সংখ্যালঘু পুরুষদের আয় বছরে ৫১,৬০০ ডলার।
পুরুষদের মধ্যে, কৃষ্ণাঙ্গ, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়, ফিলিপিনো, চীনা এবং কোরিয়ান গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির আয় সবচেয়ে কম। তারা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় ১১% থেকে ১৩% কম উপার্জন করেন। এর পরে রয়েছে দক্ষিণ এশীয় এবং আরব পুরুষ স্নাতকরা, যারা শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের তুলনায় গড়ে ৬% কম উপার্জন করেন।
উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে নয়টি দেশে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনবল নিয়োগে বিদ্বেষের দিক থেকে কানাডা প্রায় শীর্ষে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কানাডার অশ্বেতাঙ্গ জনগণ চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি বৈষম্যের শিকার হন। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানী লিঙ্কন কুইলিয়ান ও তার সহকর্মীরা কর্মী নিয়োগের ৯৭টি মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষার বিশ্লেষণ করে এই তথ্য প্রকাশ করেন।
এতে দেখা যায়, আফ্রিকান, এশীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের বংশোদ্ভূত লোকেরা সমভাবে বৈষম্যের শিকার হন। সমীক্ষায় বলা হয়, “বিপরীতভাবে শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে বৈষম্য খুবই কম এমনকি অনেক সময় তা পরিসংখ্যানে উল্লেখ করার মতও নয়।” এতে আরও বলা হয়, “স্থানীয় শ্বেতাঙ্গদের প্রতি বিপরীতমুখি বৈষম্যের কোনও দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়নি।”
উল্লেখ্য যে, কানাডার শ্রমবাজারে কাজের সন্ধানে নামা দক্ষ অভিবাসীগণ নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। যে সকল আবেদনকারীর নাম দেখে অনুমান করা যায় তার জন্ম এশিয়া বা আফ্রিকায় তখন চাকুরীদাতাগণ সেগুলোর ব্যাপারে আর আগ্রহী থাকেন না। শুরুতেই তারা অনুমানের উপর ভিত্তি করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান যে, এই আবেদনকারীর যোগ্যতার অভাব রয়েছে। সুতরাং তাকে নিয়োগ দেয়া যাবে না।
স্ট্যাটিসটিকস কানাডার আরেক গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশটি তার মেধাবি অভিবাসী জনশক্তি থেকে সর্বোচ্চ সুফল তুলছে না। মেধাবী অভিবাসীরা এখানে আসার পর অন্য দেশ থেকে নিয়ে আসা তাঁদের প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতার স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কানাডা।
উচ্চশিক্ষা বিষয়ক গবেষক এবং টরন্টোর ইউনিভার্সিটি হেল্থ নেটওয়ার্কের মিশেনার ইন্সটিটিউট অব এডুকেশনের প্রিন্সিপাল হার্ভে ওয়েইনগার্টেন বলেন, স্ট্যাটিসটিকস কানাডার সামগ্রিক তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, কানাডায় উচ্চশিক্ষিত শ্রমশক্তি আসার প্রবণতা অব্যাহত আছে যা দেশের জন্য সুখবর। তবে তিনি এ কথাও বলেন, ‘অভিবাসীদের যোগ্যতার সনদের মূল্যায়ন’ তাদের ‘স্বীকৃতি দেয়া ও পেশায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরও ভালো কিছু করতে হবে।’
আসলে কানাডায় কর্মক্ষেত্রে অভিবাসীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পাল্টানো এখন খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। বেতনের ব্যাপারে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে। নয়তো এদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুফল কখনোই তুলে আনতে পারবে না কানাডা। মেধার অপচয় রোধ এবং কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এটি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু যা নীতিনির্ধারকদের ভেবে দেখতে হবে।