ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় টরন্টোতে তিন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু
গুরুতর আহত অবস্থায় আরেকজন হাসপাতালে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১৭ ফেব্রুয়ারি,২০২৩ : গ্রেটার টরন্টোর ইটবিকোক এ এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। অন্যজন গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি হন হাসপাতালে। খবর সিপি২৪.কম এর।
গত সোমবার ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত এগারটা তিরিশ মিনিটের কিছুক্ষণ পূর্বে ইটবিকোক এলাকায় হাইওয়ে ৪২৭ ও ডান্ডাস স্ট্রিট এর নিকটে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই মারা যান দুইজন। অন্য একজন মারা যান হাসপাতালে নেওয়ার পর। গাড়ির চালক গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নিহতদের মধ্যে আছেন একজন তরুণী যার নাম অ্যাঞ্জেলা বারোই (২০)। অন্য দুই জন হলেন শাহরিয়ার মাহির খান (১৭ ) ও আরিয়ান আলম দীপ্ত (২১)। তরুণ বয়সী এই তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সংবাদে টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটিতে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া।
গাড়ি যিনি চালাচ্ছিলেন তার নাম নিবিড় কুমার (২১)। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় নিবিড় কুমার বাংলাদেশের খ্যাতনামা গায়ক কুমার বিশ্বজিতের ছেলে। ছেলের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কুমার বিশ্বজিত ও তার স্ত্রী ইতিমধ্যে টরন্টো এসে পৌঁছেছেন।
অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পুলিশের সার্জেন্ট Kerry Schmidt ভাষ্য অনুযায়ী এটি ছিল একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা। গাড়ির গতি ছিল অস্বাভাবিক মাত্রায় বেশী। সড়কের পাশে অবস্থিত কংক্রিট ওয়ালে গাড়িটি দুই দফায় ধাক্কা খায়। এবং এক পর্যায়ে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। তবে আগুন পুরো গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ার আগেই ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সেখানে হাজির হয় এবং গাড়ি থেকে আহত ও নিহতদের বের করে আনতে সক্ষম হয়।
নিহতদের সবাই স্টাডি পারমিট নিয়ে টরন্টোতে বাস করছিলেন। পুলিশ জানায় আহত ও নিহতদের পরিবারকে দুর্ঘটনার খবরটি জানানো হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ নির্নয়ে তদন্ত চলছে। কারো কাছে দুর্ঘটনার কোন তথ্য থাকলে বা ড্যাস ক্যাম ভিডিও থাকলে অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পুলিশের সঙ্গে 416-235-4981 নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সিটিভি নিউজের পক্ষ থেকে কুমার বিশ্বজিতের একটি সাক্ষাৎকার নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে বিশ্বজিত সাক্ষাৎকার দিতে রাজী হননি। উনি কেবল বলেছেন, ছেলের অবস্থা উন্নতির দিকে।
এদিকে অটোয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার ড. খলিলুর রহমান সিপি২৪ এ পাঠানো এক ইমেইল বার্তায় বলেন, নিহতদের পরিবারের ইচ্ছানুযায়ী মরদেহগুলো বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। টরন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশ কনসুলেট অফিস এ ব্যাপারে সহায়তা করবে।
কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, আমরা নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহত ব্যক্তির দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।
ঢাকার দৈনিক প্রথম আলো’র এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় , দুর্ঘটনার মাত্র দুদিন আগে ১১ ফেব্রুয়ারি ছিল আরিয়ানের জন্মদিন। তার বন্ধুরা নর্থ ইয়র্ক থেকে আরিয়ানের আবাসস্থল ইটোবিকোক এ এসেছিল জন্মদিন পালন করতে। জন্মদিনের দুই দিন পর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে তার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্নের সমাধি ঘটে।
আরিয়ানের বাবা এ টি এম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ছেলে বড় কিছু হতে চাইত, খুব শৌখিন ছিল বলে জানান বাবা। বলেন, ক্রিকেট, ফুটবল খেলতেও পছন্দ করত। ছোটবেলায় নিজেই ছেলেকে আবাহনী মাঠে নিয়ে যেতেন।
দুই মেয়ে দুই ছেলের মধ্যে আরিয়ান সবার ছোট। আরিয়ানের বড় বোন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ভাইয়ের খবর শুনে তিনি কানাডায় এসেছেন।
আরিয়ানের বাবা বলেন, ‘শুনেছি, ওদের গাড়ির গতি ২০০-এর ওপর ছিল। ও পেছনে বসা ছিল। ও নাকি গাড়িতেই মারা যায়।’