বাংলাদেশী যুবক আবু হেনা থান্ডার বে-তে থাকতে পারবেন- আপাতত

 কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি কর্তৃক বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে লড়তে তার পাশে দাঁড়িয়েছে সমাজের মানুষ

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ৩ জানুয়ারি ২০২৩ : থান্ডার বে’র সবচেয়ে সুপরিচিত এক স্বেচ্ছাসেবকের দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হলো। গত নববর্ষের দিনেও তিনি নিশ্চিত ছিলেন না, কানাডায় অবস্থানের অনুমতি পাবেন কিনা। খবর সারাহ ল / সিবিসি নিউজ।

আবু হেনা মোস্তফা কামাল ২০১৮ সালের আগস্টে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে কানাডায় আসেন। তখন থেকেই তিনি অন্টারিও’র থান্ডার বে-কে নিজের ঘর বলে উল্লেখ করেন এবং নিজের কাজ ও স্বেচ্ছায় সেবার মাধ্যমে এখানকার সমাজের সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ গড়ে তোলেন।

প্রথমে তিনি এ শহরে আসেন লেকহেড ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করতে। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চে কোভিড-১৯ মহামারির সংক্রমণ শুরু হলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসাবে তিনি আর নিজের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে পারছিলেন না। পরে তিনি কনফেডারেশন কলেজে ট্রান্সফার নেন, সেখানে টিউশন ফি অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিক্ষা সমাপ্ত হবার আগেই তার স্টাডি পারমিটের মেয়াদ ফুরিয়ে যায়।

তখনও কামাল তার স্বেচ্ছামূলক সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু স্টাডি পারমিটের মেয়াদের অতিরিক্ত সময় কানাডায় অবস্থানের কারণে গত মে মাসে কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি তাকে বহিষ্কারের আদেশ দেয়।

২০১৮ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে কানাডায় আসেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল। ছবি : সারাহ ল/সিবিসি

থান্ডার বে-তে থাকার বিষয়ে কামালের এই দুর্দশার কথা তুলে ধরে ছুটির আগে রিপোর্ট করে সিবিসি নিউজ। শুক্রবার সকালে তিনি জুমের মাধ্যমে ফেডারেল কোর্টে হাজিরা দেন। কোর্টে তার প্রতিনিধিত্ব করেন অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিষয়ক আইনজীবী জেনিফার দাগসভিক। তিনি কামালের বহিষ্কাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তি তুলে ধরেন। এটি না হলে কামালকে ১ জানুয়ারি কানাডা ত্যাগ করতে হতো।

বিচারক সেবাস্টিয়ান গ্রামন্ড সেই রাতে সিদ্ধান্ত দেন যে, কামাল থান্ডার বে-তে থাকতে পারবেন, অন্তত এই মুহূর্তে।  

দাগসভিক-এর জন্য আদালতে তিনটি বিষয় প্রমাণ করার ছিল: সেগুলি হলো, কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির সিদ্ধান্তে গুরুতর সমস্যা আছে; কামালকে কানাডা ত্যাগ করতে হলে সেটি তার জীবনে অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে; এবং কানাডা ত্যাগ করার চেয়ে তার থেকে যাওয়াটাই এদেশের জনস্বার্থের জন্য সর্বোত্তম।

দাগসভিক গত সোমবার সিবিসি নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, তিনটি বিষয়ই তিনি প্রমাণ করতে পেরেছেন।”

কিন্তু, কামালের আদালতের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “বহিষ্কারের আদেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। এটি তার কানাডায় অবস্থানের নিশ্চয়তা দেয় না। বরং এটি কেবল স্থিতাবস্থা রক্ষা করছে এবং কামালের কেসটি পরিপূর্ণভাবে পর্যালোচনার জন্য আদালতকে সময় দিচ্ছে।”

ফেডারেল কোর্ট যেহেতু কামালের বহিষ্কারাদেশ বন্ধ করেছে, এখন মামলা চলতে পারে। এর মধ্যে কামাল অভিবাসন দফতরের একটি সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি কানাডায় থাকার জন্য বেশ কয়েকটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।

আইনজীবী জেনিফার দাগসভিক

তার কোনও একটি আবেদন প্রক্রিয়াকরণ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত তিনি থান্ডার বে-তে কাজ করতে এবং স্বেচ্ছাসেবা চালিয়ে যেতে পারবেন।

আদালতের শুনানির পর তিনি কেমন বোধ করছেন? “স্বস্তিকর”।

সোমবার সিবিসি নিউজকে তিনি বলেন, “দীর্ঘদিনের অস্থিরতার পর আমার চমৎকার ঘুম হয়েছে। আমার মনে হচ্ছিল যেন অনেক দিন ধরে আমি ছিটকে পড়া অবস্থায় রয়েছি, আর এই অবস্থায় জীবন কাটানো খুব সহজ নয়।”

‘সম্মিলিত পদক্ষেপে কাজ হয়েছে’ থান্ডার বে-তে আসার পর থেকে কামাল সমাজের জন্য অসংখ্য অবদান রেখেছেন।

তিনি বয়স্কদের চলাচলের সুবিধার জন্য পথের বরফ পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে নারীদের আশ্রায়নে সহায়তা এবং তার মত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও অভিবাসীদের পক্ষে কাজ করেছেন।

এর বিনিময় তিনি পেয়েছেন যখন তার প্রয়োজনে সমাজ এগিয়ে এসেছে। তার আদালতে হাজিরা দেওয়ার আগেই “স্টপ আবু’স ডিপোর্টেশন’ শিরোনামের এক অনলাইন আবেদনে ২,৮০০ জনের বেশি লোক স্বাক্ষর দেয়। তার আইনজীবীও অসংখ্য চিঠি পেয়েছেন যেগুলোতে কামালকে কানাডায় থাকতে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

দাগসভিক বলেন, “আমার মনে হয়, এতে বোঝা যাচ্ছে এখানে অবস্থানের চার বছরে আবু আমাদের কমিউনিটির কতটা গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন, আর কমিউনিটি তাকে কতটা মূল্য দেয়।”

গত ডিসেম্বরে মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স ফর চেঞ্জ নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে এক অনুষ্ঠান থেকেও কমালের অপসারণ বন্ধের আহবান জানানো হয়।

সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাঈদ হাসান সোমবার সিবিসি নিউজকে পাঠানো এক ই-মেল বার্তায় বলেন, “আবুর অপসারণ বন্ধে হাজারও মানুষের পদক্ষেপ আবারও প্রমাণ করলো, সম্মিলিত পদক্ষেপে কাজ হয়; তবে আমাদের দরকার পদ্ধতিগত পরিবর্তন এবং সব অপসারণ বন্ধ করা, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো সব অভিবাসীকে পারমানেন্ট রেসিডেন্ট-এর মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”

কিন্তু দাগসভিক বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির সঙ্গে আবেদনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অভিবাসন দফতরগুলিতে কাজে বড় ধরণের জট লেগেছে। কামালের মত লোকেদের পারমানেন্ট রেসিন্টের মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি বাড়তি বাধা সৃষ্টি করছে।

কামাল বলেন, তিনি চান, অভিবাসীরা প্রতিদিন যে অবদান রাখছেন জনগণ তার স্বীকৃতি দেবে।

“তারা কঠোর পরিশ্রম করছে, দেখুন অভিবাসীরা গ্রোসারি শপে সহায়তা করছে। তারা আপনার খাবার সরবরাহ করছে। তারা আপনার কমিউনিটিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করছে এবং তারা সেইসব মানুষ যারা কমিউনিটির অবিচ্ছিন্ন অংশ হয়ে উঠেছে।” 

তিনি তার প্রিয় শহরে থাকার সংগ্রামে সহায়তাকারী প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। “থান্ডার বে-র মত অভিবাসীদের স্বাগত জানানো একটি সমাজের অংশ হতে পারা সত্যি খুব ভালো লাগার, যেখানে মানুষ উদার ও দয়ালুচিত্তের… থান্ডার বে’র হৃদয় বিশাল, তাই এখানে ভালোবাসা পাওয়া, স্বাগত সম্ভাষণ পাওয়া এবং নিজের বাড়িতে থাকার মত অনুভব করা সত্যি বিরাট ব্যাপার। আমি বাধিত, কৃতজ্ঞ।”