কলমবাজি

সাইদুল হোসেন

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

মানবতা আজো বেঁচে আছে

জেগে আছি। ডায়েরী লিখছি। YouTube -এ দেখা বাংলাদেশের দু’টি ভিডিও মনে খুব নাড়া দিয়েছে, এক ঘন্টা আগে দেখেছি। দু’টি কাহিনীরই সংক্ষিপ্তসারটা লিখে রাখতে চাই ঘুমাতে যাবার আগে।

(এক)

দু’টি যুবক এক বৃদ্ধ রিকশাওয়ালার রিকশায় চড়ে তাদের গন্তব্যস্থানে নিয়ে যেতে বললো। কিন্তু দু’মিনিট রিকশা চালিয়েই বৃদ্ধ হাঁপাতে শুরু করলো দেখে ওরা রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলো : “চাচা, আপনার বয়স কত?”

সন্তানেরা খোঁজখবর নেয় না। বাঁচার তাগিদে রিকশা চালাই। ছবি : বিডি জার্নাল

–           “আশি বছর।”

–           “এই বয়সে তো আপনার ঘরে বসে থাকার কথা, ছেলেরা আপনার দেখাশোনা করবে। আপনার ক’ছেলে?”

–           “তিন ছেলে।”

–           “ওরা কি করে?”

–           “বড় ছেলে বাংলাদেশ আর্মিতে বড় অফিসার। মেজো ছেলেও চাকরি করে। ছোটটা ব্যবসাপাতি করে।”

–           “ওরা কেউ আপনাকে কোন সাহায্য করে না? আর্মি অফিসার ছেলের নাম কি?”

–           “ওর নাম …। আমার কোন খোঁজখবর নেয় না। অন্য দু’জনও না। তাই, বাঁচার তাগিদে রিকশা চালাই।”

তারপর যুবক দু’টি বৃদ্ধ রিকশাওয়ালার হাতে কিছু টাকা দিয়ে অন্য রিকশা ডেকে তাদের গন্তব্যে চলে গেল।

(দুই)

রাস্তায় ৫জন পুলিশ এবং একজন অফিসার (সবাই চকচকে ইউনিফর্ম পরা) এক ঠেলাওয়ালাকে দেখে প্রশ্ন করলো,

–           “আজ তুমি কত রোজগার করলে?”

ঠেলাওয়ালা: “কিছুই না, স্যার! করোনার কারণে কোন কাজ পেলাম না।”

–           “ তোমার পরনের লুংগির প্যাঁচের ভেতরে কি আছে দেখাও।”

লুংগির প্যাঁচ খুললে দেখা গেল তাতে কোন টাকাপয়সা নেই, আছে একটা ছোট গোল পাউরুটি। সেটা দেখিয়ে সে বললো, “রাস্তায় পড়েছিল, উঠিয়ে নিয়েছি, ছোট ছেলেটা খাবে।”

ওর ঠেলার উপর ময়লা একটা গামছা দিয়ে ঢাকা একটা কিছু ছিল। সেটার দিকে আংগুল দিয়ে ইশারা করে পুলিশ অফিসার আদেশ করলেন, “গামছাটা সরাও।”

ঠেলাওয়ালা গামছাটা সরানোর পর দেখা গেল দু’টি পঁচা কাঁঠাল এবং সেগুলোর দুর্গন্ধে উপস্থিত সবাই নাকে হাত দিলো। অফিসারটি জিজ্ঞাসা করলেন, “এই পঁচা কাঁঠাল দিয়ে তুমি কি করবে? এগুলোতো খাওয়ার অযোগ্য। ফেলে দাও ওগুলো।”

“জানি, স্যার, কিন্তু ভেতরে বীচিগুলো ভালো আছে। ড্রেইনের পাশে পড়েছিল, উঠিয়ে নিয়েছি। বীচিগুলো বউ সিদ্ধ করে দিলে সেগুলো খেয়ে আমার বাচ্চাগুলোর মুখে হাসি ফোটবে। ফেলে দিতে বলবেন না, গরীবের মুখের খাবার কেড়ে নেবেন না, স্যার!”, ঠেলাওয়ালার আবেদন।

ততক্ষণে পুলিশ অফিসারের চোখে পানি এসে গেছে। ঠেলাওয়ালাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে ভাংগা গলায় তিনি বললেন, “না ভাই, আমি তোমার মুখের খাবার কেড়ে নিতে চাই না। ঐ পঁচা খাবারটা ফেলে দাও। আমি তোমাকে কিছু টাকা দিচ্ছি, সেটাকা দিয়ে ভালো খাবার কিনে ঘরে নিয়ে যাও এবং সবাই মিলে খাও।”

তিনি তার মানিব্যাগ থেকে বের করে কিছু টাকা ওর হাতে গুঁজে দিলেন, এবং সেটা দেখে সংগের অন্যান্য পুলিশেরাও একেএকে ঠেলাওয়ালার হাতে তুলে দিলো কিছু টাকা।

ঘটনাটার আকষ্মিতায় বিমূঢ় হয়ে ঠেলাওয়ালা টাকাগুলো হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঠিকানার উদ্দেশে রওয়ানা দিলো।

আগষ্ট ৩, ২০২২

রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া কন্যাটি

আজকের অভিজ্ঞতা।

থাকি আমরা Mississauga শহরে কিন্তু আমার চোখ দেখানোর জন্য appointment ছিল eye specialist Dr. Yasser Khan-এর সংগে পাশের শহরে Oakville-এ। যেতে হলো ট্যাক্সি চড়ে, ভাড়া দিলাম ২১ ডলার। এপয়েন্টমেন্ট শেষে ক্লিনিক থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে হাঁটতে লাগলাম একটা বাস স্টপের উদ্দেশ্যে যাতে বাসে চড়ে কম খরচে বাড়ি ফিরতে পারি। ট্যাক্সি নিলে আবার ২১-২২ ডলার ভাড়া দিতে হবে।

নূতন জায়গা। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর চোখে পড়লো একটা বাস সামনে দিয়ে যাচ্ছে। ভাবলাম হয়ত কাছেই কোথাও গিয়ে থামবে। কিন্তু না, সে মোড় নিয়ে আমাদের চোখের আড়ালে চলে গেল। একটু হতাশ হলাম। ওদিকে walker ঠেলে হাঁটতে হাঁটতে বেশ ক্লান্তও হয়ে পড়েছি। সংগে স্ত্রীও আছেন। তাকে বললাম, “আর হাঁটতে পারছি না। চল সামনের গাছতলায় বসা দু’টি কিশোর-কিশোরীকে জিজ্ঞাসা করি বাস স্টপটা কত দূরে এবং সেখান থেকে আমাদের গন্তব্য Clarkson GO station-এ পৌঁছতে পারবো কিনা।”

রাস্তাটা গাছপালায় ঢাকা, একপাশে বড়বড় ২-৩টা রেস্টুরান্ট ও অন্যান্য business office, রাস্তায় অবিরাম যান চলাচল করছে। খুব ব্যস্ত পরিবেশ।

গাছের তলায় পৌঁছে কিশোরীটিকে জিজ্ঞাসা করলাম আমাদের দু’টি প্রশ্ন। শুনে সে বললো, “না, আমি জানি না। বরং মাকে ডেকে আনি, মা ভালো জানে।”

অদূরে অন্য একটা গাছতলায় বসা এক মহিলার কাছে গিয়ে আমাদের সমস্যাটার কথাটা বলতেই তিনি দ্রুত এগিয়ে এলেন। তার বয়স ৪০-এর বেশী হবে না। Tight shirt and shorts পরা হাসিমুখ একট নারী। চমৎকার ইংলিশ বলে। বললো, ”How may I help you”

আমি আমাদের প্রশ্ন দু’টি আবার ওকে বললাম। শুনে ওর হাতের সেলফোনে চেক করে বললো, “বাস স্টপটা বেশ দূরে, তোমরা সিনিয়রদের জন্য সেখানে যেতে বেশ কষ্ট হবে। তাছাড়া সেই বাসটা Clarkson GO station -এ যায় না, সেটা তোমাদের Oakville City Bus Terminal-এ নিয়ে যাবে, তারপর সেখান থেকে অন্য বাসে চড়ে তবে তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারবে। Very complicated and time-consuming. তার চেয়ে উত্তম হলো একটা ট্যাক্সিতে চড়ে এখান থেকে সোজা তোমাদের ঘরে ফিরে যাওয়া। তোমাদের ঠিকানা বল।” বললাম। এক মিনিট ওর সেলফোনে টিপাটিপি করে বললো, “আমি Uber taxi-কে বলেছি এখানে আসতে, ১০-১২ মিনিটের মধ্যেই এসে পৌঁছবে। ভাড়া লাগবে ১৬ ডলার, সেটা আমি online এ ওদের payment করে দিয়েছি। No more worries. Relax, senior”

তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ১৬টা ডলার ওর দিকে বাড়িয়ে ধরলাম। বললাম, “এই ডলারগুলো রাখো। We are not short of money”.

সজোরে মাথা নাড়িয়ে বললো, “আমি জানি, তথাপি ডলারগুলো নেবো না। মনে কর তোমরা আমার বাবা-মা, তোমাদের মেয়ে তোমাদের একটা trip-এর taxi fare দিচ্ছে, very common thing, nothing unusual. Keep your money, please. OK?”

ইতিমধ্যে Uber-এর ট্যাক্সিও এসে হাজির। দরজা খুলে দিয়ে আমাদের ভেতরে ঢুকতে সাহায্য করলো। আবারো ডলারগুলো ওর হাতে দিতে চেষ্টা  করলাম। নিলো না। বললো, ”Have a safe journey. Please pray for me.”

ট্যাক্সিটা start নেয়ার আগে জানতে চাইলাম, তোমার দেশ কোথায়? তোমার নাম কি?

হেসে বললো, “আমার নাম Selena. আমার দেশ Central Americai HONDURAS.”

সেকথা শুনে আমার মনে পড়লো যে ওরা দেশে Spanish ভাষায় কথা বলে। তখন আমার যৎসামান্য জ্ঞান খাটিয়ে বললাম, Thank you very much again, Selena. GRACIAS..”

হাত নেড়ে সে বললো, De nada! অর্থাৎ Welcome!

ট্যাক্সি ২০ মিনিটের ভেতরে আমাদেরকে বাসায় পৌঁছে দিলো। Selenai কাছে আমরা চিরকালের জন্য ঋণে আবদ্ধ হয়ে রইলাম। চমৎকার এক উদারহৃদয়বতী, পরোপকারী মহিলা এই Selenai. আল্লাহ ওর মংগল করুন।

অন্যদিকে ট্যাক্সি ড্রাইভার তার যে কাহিনী শুনালো তাও বেশ মনে রাখার মতো।

ঘোর কালো, মাথার চুলে ছোট ছোট বেনী পাকানো। চমৎকার ইংলিশ বলে। আমার প্রশ্নের উত্তরে সে জানালো যে- ওর দেশ আফ্রিকার GUINEA, ওদের ভাষা French, সে মিসিসাগাতে কোন একটা স্কুলে French teacher, ওর বার্ষিক আয় ৬০,০০০ থেকে ১০০,০০০ ডলারের ভেতরে। সে বহু বছর ধরে ক্যানাডায় বাস করছে। সে একজন মুসলিম, ওর নাম আহমাদ। কিছু বাড়তি আয়ের জন্য মাঝে মাঝে Uber-এর taxi driver হিসাবে part-time কাজও করে।

জুলাই ২৮, ২০২২

Ranjan- একজন গর্বিত বাংগালী যুবক

Walmart store-এ কিছু কেনাকাটা করার জন্য গেলাম ক্যাশ কাউন্টারে মূল্য পরিশোধ করতে। ফাঁকা কাউন্টার, আমার আগে-পিছে কোন কাস্টমার নেই। এক যুবক ক্যাশিয়ার দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখলাম আমারই মত ব্রাউন কালার সে, বুকে নেইমট্যাগে লেখা RANJAN. বুঝতে কষ্ট হয় না যে সে একজন ইন্ডিয়ান। তবু প্রশ্ন করলাম, “ইন্ডিয়ান?” উত্তরে সে বললো, “ইয়েস।”

তখন আমি বললাম, ”Ranjan, Ranjana, Monoranjan- these are all Hindi names. Isn’t it??”

যুবক বললো, ”Yes, but not in my case. I am a Bengali, my name is Priyoranjan. Ranjan in short.

শুনে বললাম (বাংলায়, এতক্ষণ English-এ কথাবার্তা চলছিলো), “আপনি কেমন আছেন? সব ঠিকঠাক আছে তো?”

আমার প্রশ্ন শুনে Ranjan বলে উঠলো, এবার হিন্দিতে, “কেয়া কাহা আপনে (আপনি কি বললেন)?” বোঝলাম যে আমার বাংলা ভাষা সে বুঝেনি। তাই ইংলিশে বললাম, “You said you are a Bengali. So, I asked you in Bengali, ”How are you? Everything OK?”

আমার কথা শুনে সে বললো, ”I am a Bengali sure but I don’t understand or speak Bengali because my Bengali parents from West Bengal settled in Maharashtra state in the South India where I was born and raised. I know Marathi, Hindi, and English. I could not learn Bengali because there was no Bengali teaching school where we lived. My parents were very busy persons, didn’t have any time to teach me Bengali.
”But I heard from them (they are no more alive) that Bengalis were very educated and enlightened people since British time, and also after Indelpendence in 1947. Tagore was a great poet who won Nobel Prize for literature. At the present time also, I see many Bengali talents in different fields/professions all over India- politics, literature, cinema industry, music, songs and dances, civil service, Army, Navy, etc. My parents were very proud that they were Bengalis.
“Like my parents, I am also very proud of my Bengali origin though I don’t know how to read, write or speak Bengali, “ থামলো Ranjan.

মুগ্ধ হয়ে শুনলাম গর্বিত এক বাংগালী যুবকের আত্মকথা।

আগষ্ট ৫, ২০২২

Curse Me!

রুঢ় বাস্তব! Harsh reality!

আজ সকালের ঘটনা।

বাসার নিকটস্থ পাবলিক লাইব্রেরী ব্রাঞ্চে গিয়েছিলাম কিছু ফটোকপি করাতে। রিসেপশনে কর্মরত মহিলা, মূলতঃ Poland-এর নাগরিক, তার মাতৃভাষা Polish. বয়স ৬০-এর উর্ধে। বহু বছরের জানাশোনা। অমায়িক ব্যবহার।

[অতীতে কোন এক কারণে Polish language-এর দু’চারটা কথা শিখেছিলাম। আজো কিছুকিছু মনে আছে] তাই বললাম Gin dobre (জিন ডোব্রে- Good morning.), Yaksheo mash? (ইয়াক্শেও মাশ- How are you?)

আমার কথা শুনে মহিলা জিজ্ঞাসা করলেন, ”What did you say? Say it again”

ওর প্রশ্ন শুনে আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম! বলে কি, ওর মাতৃভাষাটা সে ভুলে গেছে? একি করে সম্ভব?

যাহোক উচ্চবাচ্য না করে আমি দ্বিতীয়বারের মত ওর Polish ভাষাতেই আগের কথাগুলো repeat করলাম।

এবার সে বুঝতে পারলো এবং লজ্জিত স্বরে বললো, “Curse me! I have forgotten my own language? What a shame!

তারপর যোগ করলো, “Yestem dobre (ইয়েস্টেম ডোব্রে! I am fine!) Zinqui-e (জিনকুইয়ে। Thank you.)”

আরো বললো : “যুগের পর যুগ ধরে English বলে বলে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে ক্রমাগত না বলার ফলে নিজেদের মাতৃভাষাটাই ভুলে বসে আছি। কী লজ্জা! ছেলেমেয়েরা, নাতি-নাতনিরা তো সব ক্যানাডিয়ান, English-ই ওদের first language and second language, Polish language-এর কিছুই জানে না ওরা কারণ ঘরে তো Polish-এর চর্চাই নেই।”

যাহোক কাজ শেষ করে চলে আসার সময় বললাম, Chesh! (Goodbye!) মহিলাও হেসে জবাব দিলেন, “Chesh!”

আগষ্ট ৩০, ২০২২

বাংলা ভাষা

আজ দুপুরে লাঞ্চে এসেছিল এক বাংলাদেশী পরিবার। স্বামী (৪৫), স্ত্রী (৪০), বড় ছেলে সাড়ে সাত বছর, এবং ছোট ছেলে মাত্র ৩ মাস। কয়েক ঘন্টার উপস্থিতি এবং নানা ধরনের গল্প। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই বাংলাদেশী কিন্তু লক্ষ্য করলাম যে বাংলা ভাষার সংলাপ নগণ্য, ইংলিশই প্রধান। বয়স সাড়ে ৭ বছর কিন্তু ছেলেটা বাংলা তো বলেই না এমনকি বাংলার একটা শব্দও সে বুঝে না। ওর ভাষা ইংলিশ।

ওরা স্বামী-স্ত্রী শুধুই ইংলিশ বলে তবে আমাদের সংগে বাংলা বলার চেষ্টা করলেও পরক্ষণে অজান্তেই ওদের অভ্যাস মত ইংলিশ বলতে শুরু করে। এই ওদের first visit আমাদের বাসায়।

মহিলা আমার ওয়াইফের এক নিকটাত্মীয়ের মেয়ে। ওর জন্ম ক্যানাডায়। ওর অতি ছোটবেলায় ওকে তিনি দেখেছেন। বহুদিন দেখা-সাক্ষাৎ নেই। ইতিমধ্যে সে বড় হয়েছে, ইউনির্ভাসিটি এজুুকেশান শেষ করে ভালো একটা জব করছে, বিয়ে করেছে highly qualified এক ছেলেকে, সেও ভালো জব করে, দু’জনে মিলে বাড়ি কিনেছে, বড় দামী গাড়ি কিনেছে। সব গোছানো, সুখী একটা পরিবার।

জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমরা তো দেখছি অনবরত ইংলিশই বলে যাচ্ছ, বাংলা নয়। এমনটা কেন?”

জবাবে ওরা যা বললো তার সার সংক্ষেপ করলে এই বাস্তব চিত্রটা চোখের সামনে ভেসে উঠে-

আজ থেকে ৫০-৫৫ বছর

আগে যখন ইমিগ্রেশান নিয়ে ক্যানাডায় আসেন এই দুই পরিবারেরই মা-বাবা তখন এদেশে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ছিল নগণ্য কয়েকজন মাত্র, দূরদূরান্তে ছড়ানোছিটানো। যোগাযোগ ছিল না বলেই বলা চলে। এদেশে এসে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার কঠিন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হলো। এদেশের ভাষা তো ইংলিশ। সেটা আয়ত্বে আনতে বহু পরিশ্রম করতে হলো। আশেপাশে বাংগালী নেই, বাংলাভাষার চর্চা নেই, বাংলা স্কুল নেই। এরই মাঝে ঘরে এলো সন্তান। স্বভাবতঃই আমরা ইংলিশ শিখলাম ঘরে, বাইরে, স্কুলে, ইউনিভার্সিটিতে। এটাই তো আমাদের  ভাষা, বাংলা শেখার সুযোগ বা সময় কোথায়? বাংলা যা বুঝি বা বলি আমরা সেটাতো সেই ছোটবেলায় মা-বাবার মুখে শুনে শুনে শেখা। বুঝি কিন্তু বলতে গেলে হোঁচট খাই কারণ formal education তো নেই! এবং এই একই কারণে আমাদের সন্তানদেরও বাংলা ভাষা শিক্ষা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাচ্চাদের আছে সাপ্তাহিক বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম- sports, dance, piano lesson ইত্যাদি। তাছাড়া আমাদের হাতে সময়ই বা কোথায়?

এধরনের ইংলিশ স্পীকিং বেংগলী ফ্যামিলি এদেশে আরো আছে।

সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২