বি.সি কানাডার সবচেয়ে ধর্মনিরপেক্ষ প্রদেশ

তবে শিখ, হিন্দু ও ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীর সংখ্যা বাড়ছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা প্রতি দশ বছর পর পর কানাডীয়দের কাছে জানতে চায় তারা কোনও ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনুসারী কিনা। আর ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় প্রতি দশ বছরে ক্রমশ বেশি সংখ্যায়  মানুষ না বোধক জবাব দেন। রিপোর্ট করেছেন সিবিসি নিউজের জোশ গ্রান্ট।

২০২১ সালে আদম শুমারির তথ্য অনুযায়ী, কানাডার ৩৪.৬ শতাংশ মানুষ দাবি করেন, তারা কোনও ধর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। অন্যদিকে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় একইরকম জবাব দেওয়া মানুষের সংখ্যা লাফিয়ে উঠেছে ৫২.৪ শতাংশে – এটি সেখানে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার হিউমানিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ইয়ান বুশফিল্ড বলেন, তার সংস্থা “রোমাঞ্চিত।”

এক সাক্ষাৎকারে বুশফিল্ড বলেন, “ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতামুক্ত মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখতে পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি আরও বলেন, “এর মধ্যে একটি বিষয় সত্যিই আকর্ষণীয় যে, আমরা একটি নতুন প্রজন্ম দেখতে পারছি যাদের বাবা-মা এবং সম্ভবত দাদা-দাদীও ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতামুক্ত। এসব বাচ্চা একদম ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে বেড়ে উঠছে। ”

২০২১ সালের আদম শুমারিতে দেখা যায় বি.সি.র অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ধর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। ছবি: গুগুল ম্যাপ

বুশফিল্ড বলেন, বি.সি. সবসময়ই “কিছুটা ভিন্নতর জায়গা” ছিল যেখানে নবাগতরা প্রায়শ নতুন করে সব শুরু করতে চান এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা ধর্মের মত জিনিসগুলি পেছনে ফেলে আসেন।

তিনি বলেন, ওয়েস্ট কোস্টের বাসিন্দারাও বিজ্ঞানে বড় রকমের বিশ্বাসী বলে প্রতীয়মান হয়, যা তার ভাষায়, মহামারির সময় জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ব্যবস্থা মেনে চলা এবং উচ্চ হারে কোভিড-১৯ এর টিকা নেয়া থেকে প্রমাণিত।

বুশফিল্ড বলেন, এই প্রদেশ অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণও। এখানে খিস্টধর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষের সংখ্যা কমতির দিকে হলেও শিখ, হিন্দু ও ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীর সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি বলেন, “এদিক থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি হলো নিরপেক্ষতার প্রতিনিধিত্ব করার একটি উপায় যেখানে সবাইকে স্বাগত জানানো ও অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়।”

ধর্মীয় নেতাদের পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন

ইউনাইটেড চার্চ অব কানাডার সমন্বয়কারী রেভারেন্ড কারম্যান ল্যান্সডাউন বলেন, ধর্মনিরপেক্ষকরণের প্রসঙ্গ এলে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সব সময়ই এগিয়ে থেকেছে Ñএটা সব ধর্মীয় ঐতিহ্যের জন্যই সত্য।

কানাডার একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রথম নারী নেত্রী হিসাবে ল্যান্সডাউন মনে করেন, সংগঠিত ধর্ম থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টিকে নেতিবাচক ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ড হিসাবে  অন্তত আংশিকভাবে হলেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা এটা দেখেছি, কানাডায় রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের নেতিবাচক ইতিহাসের ধারা এবং আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক গণহত্যা চিরস্থায়ী করতে রাষ্ট্র ও খ্রিস্ট ধর্ম একজোট হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে।

নিউ ওয়েস্টমিনিস্টারের অ্যাংলিকান ডায়োসিসের নির্বাহী আর্চডিকন ফাদার ডগলাস ফেন্টনের রয়েছে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি।

তিনি বলেন, তিনি যখন কাউকে প্রার্থনা করেন কিনা জিজ্ঞাসা করেন, সহকর্মীদের সঙ্গে আস্তিকতা বা ঈশ^রে বিশ্বাস সম্পর্কে আলাপ করেন তখন অনেকেই ইতিবাচক জবাব দেন।

কে ধর্মপ্রাণ অর কে নয় এ বিষয়ে আমরা যখন কথা বলি তখন আমরা অনেক সময় পরিমাপ করি একটি বিশেষ জায়গায় তাদের উপস্থিতির হিসাব দিয়ে: সেটা হতে পারে কোনও গীর্জা, মসজিদ বা মন্দির। কিন্তু ঈশ্বরে আস্থা ব্যক্তিবিশেষের জীবনে যে ভূমিকা পালন করে সেই সম্পর্কের বিষয়ে আমরা কথা বলি না।

তার পরও ফেন্টন স্বীকার করেন যে, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় অনেক বছর ধরেই খিস্টান চার্চগুলোর সদস্য সংখ্যা কমছে এবং  কেন কমছে সে সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে বেশ কিছু তত্ত্ব আছেÑ এর একটি হলো, আগেকার দিনের মত গীর্জা এখন আর একই সামাজিক ভূমিকা পালন করে না, আরেক তত্ত্বে টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগে সময় ব্যয় করার বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়।  

তিনি অবশ্য একথাও বলেন যে, টেলিভিশন ও কমপিউটারের পর্দায় চোখ রাখা ছাড়াও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার মানুষ কার্যত অত্যন্ত সক্রিয় এবং হয়তো সেজন্যে তাদের গীর্জায় যাবার মত সময় নেই।

ফেন্টন বলেন, বি.সি.র ধর্মবিশ্বাসী লোকেরা এখনও মানুষের জন্য ফুড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, আশ্রায়নের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি আবাসন, গৃহহীনতা, আদিবাসী মানুষের সঙ্গে পুনর্মিলন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছেন।