পৃথিবীর পথে বাংলাদেশ
সাইকেলে আলাস্কা থেকে টরন্টো গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব
গত ১২ই নভেম্বর, শনিবার সন্ধ্যায় টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টারে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম এর আয়োজনে মুনতাসির মামুনের গ্রন্থ ‘পৃথিবীর পথে বাংলাদেশ : সাইকেলে আলাস্কা থেকে টরন্টো’ এর প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা ভাষার স্বনামধন্য কবি আসাদ চৌধুরী এবং গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করেন লেখক ও অনুবাদক ফারহানা আজিম শিউলি।
উল্লেখ্য, মুনতাসির মামুন একজন সাইকেল পরিব্রাজক ও পর্বাতোরাহী। পৃথিবীর ছয়টি মহাদেশে তিনি সাইকেলে ভ্রমণ করেছেন। পেশাগত জীবনে প্রকৌশলী মামুন ২০১৪ সালে তাঁর অস্ট্রেলীয় বন্ধু সারাহ-জেন সল্টমার্শ সহ ৯৪ দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা থেকে টরন্টোতে এসেছিলেন সাইকেল চালিয়ে। তাঁদের সেই ভ্রমণ বৃত্তান্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে এই গ্রন্থে। ২৯২ পৃষ্ঠার বইটি গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) থেকে।
প্রকাশনা উৎসবে গ্রন্থটির মূল আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক ফারহানা আজিম শিউলি এমন একটি গ্রন্থ লেখার জন্য লেখক মুনতাসির মামুনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, লেখক যে মুন্সিয়ানায় নিজের সাইকেল ভ্রমণের বৃত্তান্ত শৈল্পিকভাবে উপস্থাপিত করেছেন তা বাংলা সাহিত্যে বিরল। ফারহানা আজিম শিউলি গভীর বিশ্লেষণের সাথে গ্রন্থটি উপস্থিত দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। প্রকাশনা উৎসবে লেখক মুনতাসির মামুন তাঁর এই ভ্রমণের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন এবং উপস্থিত দর্শকদের সাথে তাঁর ভ্রমণ এবং গ্রন্থ নিয়ে মতবিনিময় করেন। তিনি তাঁর এই সাইকেল ভ্রমণের পরিকল্পনা এবং তাকে বাস্তবায়িত করার বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত এবং আনন্দ-বেদনার কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কবি আসাদ চৌধুরী মুনতাসির মামুনকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, মামুনের এই কাজ বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যে এক অনবদ্য সংযোজন হয়ে রইল। তিনি মামুনকে আহবান জানান, তিনি যেন তাঁর সব ভ্রমণের উপর বই লিখে বাংলা ভাষার পাঠকদের পড়ার একটি নতুন দিক উম্মোচিত করেন। প্রকাশনা উৎসবে স্ক্যারবরো সাউথ ওয়েস্ট এর এমপিপি (মেম্বার অফ প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট) ডলি বেগম ব্যস্ততার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেন নি। তবে তিনি এমন এক কষ্টসাধ্য পথে সাইকেল চালানোর জন্য এবং তার উপর একটি গ্রন্থ রচনা করার জন্য মুনতাসির মামুনকে সাধুবাদ জানান। ডলি বেগম তাঁর শুভেচ্ছায় জানান, এমন একটি গ্রন্থ পরবর্তী প্রজন্মকে ভ্রমণে আগ্রহী করে তোলার সাথে সাথে বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ এবং জনপদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে উপস্থিত দর্শকদের সাথে মুনতাসির মামুনের মনবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এই মতবিনিময়ে তাঁর সাইকেল ভ্রমণ এবং গ্রন্থ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেন শিল্পী সৈয়দ ইকবাল, লেখক ঋতু মীর, সাংবাদিক সুমন রহমান, সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর, লেখক শারমিন শর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী দেলোয়ার হোসেন দুলাল, কবি হোসনে আরা জেমী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা এনায়েত করিম বাবুল। প্রকাশনা উৎসবটি সঞ্চালনা করেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিস রফিক।
উল্লেখ্য, মুনতাসির মামুন ১৯৮২ সালের ১০ নভেম্বর বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সেই সময় তাঁর পিতা বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজে শিক্ষকতা করতেন। মামুন পড়াশুনা করেছেন ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাই স্কুল, নটরডেম কলেজ এবং গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজিতে। তিনি ওশান কনজারভেন্সি এবং ব্যানফ মাউন্টেন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ওয়ার্ল্ড ট্যুর এর বাংলাদেশ সমন্বয়ক। তিনি ভ্রমণ, অভিযান ও পরিবেশ নিয়ে লেখালেখি করছেন দুই দশকের বেশী সময় ধরে। পরিবেশ নিয়ে গবেষণা গণসচেতনতা জন্য তিনি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর ‘কানেক্ট ফর ক্লাইমেট’ এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কারে ভূষিত হন। আলোকচিত্রী হিসেবে তিনি আইইউসিএন এর ‘বায়োডাইভার্সিটি ইন ফোকাস’ এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল এইডস সোসাইটি’ পুরস্কার লাভ করেছেন। মুনতাসির মামুন আজীবন স্কাউট এবং বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার’স এ্যাসোসিয়েশন সভ্য। দেশে বিদেশে তাঁর তোলা আলোকচিত্রের ছয়টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। পর্বতারোহণ নিয়ে প্রকাশিত তাঁর দুটি গ্রন্থ হচ্ছে ‘এভারেস্ট’ (২০০০৫) এবং ‘দ্য টার্টেল নেক’ (২০০৮)। মামুন ঢাকায় বসবাস করেন।