সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয় রাণীর মৃত্যুর পর রাজতন্ত্রের সঙ্গে বন্ধন বিষয়ে গণভোট চান: সমীক্ষা

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডা ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে কিনা সে বিষয়ে গণভোট চান প্রায় ৬০ শতাংশ কানাডীয়। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত নতুন এক সমীক্ষায় এই তথ্য জানা গেছে। যদিও বিষয়টির পক্ষে ও বিপক্ষে প্রায় সমান সংখ্যক মানুষের সমর্থন আছে। খবর সিন বয়েনটন/গ্লোবাল নিউজের।

রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিনের মাথায় ইপসোস পোল নামের জরিপ প্রতিষ্ঠান একান্তভাবে গ্লোবাল নিউজের জন্য এই সমীক্ষা চালায়। এতে দেখা যায়, গণভোটের পক্ষে জনমত গত বছরের চেয়ে বেড়েছে। ২০২১ সালে যেখানে ৫৩ শতাংশ কানাডীয় গণভোটের পক্ষে ছিল এখন সেটি ৫৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

ইপসোস জনসংযোগ-এর সিইও ড্যারেল ব্রিকার বলেন, “কানাডীয়রা তাদের বক্তব্য বলতে চায়।”

ব্রিকার আরও বলেন, এই বিষয় নিয়ে গণভোটের পক্ষে জনমত অব্যাহতভাবে বাড়বে কিনা তা নির্ভর করছে “রাজা তৃতীয় চার্লস-এর কর্মকূশলতা এবং রাণীর জন্য শোকের সময় থেকে বেরিয়ে আসার পর রাজার প্রতি মানুষের অনুভূতি কেমন হয়” তার ওপর।

কানাডা ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে কিনা সে বিষয়ে গণভোট চান প্রায় ৬০ শতাংশ কানাডীয়। ছবি : ডিসকভার ব্রিটেন

ইপসোস এই অনলাইন সমীক্ষার জন্য ১,০০০ এর বেশি কানাডীয়র সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।

ফলাফলে দেখা যায়, কানাডীয় জনগণের কাছে রাজা চার্লসকে সক্ষমতার যথেষ্ট প্রমাণ দিতে হবে।

যেখানে ৮২ শতাংশ উত্তরদাতা রাণী হিসাবে দ্বিতীয় এলিজাবেথের কর্মদক্ষতা অনুমোদন করেন সেখানে মাত্র ৫৬ শতাংশ কানাডীয় মনে করেন রাণীর জায়গায় চার্লস তেমন ভালো কিছু করতে পারবেন। এর চেয়েও খারাপ অবস্থা এই যে, মাত্র ৪৪ শতাংশ মানুষ চার্লসের প্রতি অনুকূল মনোভাব পোষণ করেন, আর চার্লস-এর স্ত্রী বা রাজপত্নী ক্যামিলার ক্ষেত্রে অনুকূল মনোভাব মাত্র ২৭ শতাংশের।

ব্রিকার বলেন, “রাজা চার্লসের বিষয়ে কারো মধ্যে তেমন উৎসাহ কখনই ছিল না।” তিনি প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে রাজা চার্লসের সুনামের ওপর কীভাবে আঘাত আসতে থাকে সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।

নতুন রাজার প্রতি মানুষ বিরূপ নয়, কিন্তু তারা তার মায়ের প্রতি যেমনটা ছিল নতুন রাজার ব্যাপার তেমন মোহমুগ্ধ নয়।

উল্লেখযোগ্য যে, সমীক্ষা থেকে মনে হয়েছে, কানাডীয়রা রাজা চার্লসের রাজা হবার অধিকার পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া এবং তার ছেলে উইলিয়ামের উত্তরাধিকারের নতুন যুগ সূচনার বিষয়ে বেশি আগ্রহী।

যেখানে ৪৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন রাজা চার্লস ও ক্যামিলা কানাডার ক্ষেত্রে রাজতন্ত্রের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে সহায়ক হবেন, সেই তুলনায় প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্সেস ক্যাথারিনের ক্ষেত্রে একই মনোভাব পোষণ

করেন ৬০ শতাংশ মানুষ। যদিও ২০১৬ সালের পর থেকে এই অঙ্কটা সাত শতাংশ কমেছে।

উইলিয়াম ও হ্যারি এবং তাদের স্ত্রী ক্যাথারিন (কেট) ও মেগান জুটি উভয়েই তাদের বাবা চার্লসের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন অর্জন করেছেন। সর্বোচ্চ সমর্থন পেয়েছেন উইলিয়াম। ৬৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তারা উইলিয়ামের প্রতি অনুকূল মনোভাব পোষণ করেন।

সামগ্রিকভাবে, মাত্র সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ (৫৪%) বলেন, রাণী এলিজাবেথের মৃত্যুর পর এখন রাজতন্ত্রের সঙ্গে কানাডার বন্ধন ছিন্ন করা উচিৎ। এই পরিসংখ্যান রাণীর মৃত্যুর আগে ও পরে সম্পাদিত অন্যান্য জরিপের ফলাফলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণ বহুলাংশেই কুইবেকের (ফরাসীভাষী) উত্তরদাতাদের অবদান। সেখানে ৭৯ শতাংশ মানুষ একমত যে, রাজতন্ত্র থেকে কানাডার আলাদা হওয়া উচিৎ। কানাডার ইংরেজিভাষী অঞ্চলে আলাদা হবার পক্ষে জনমত গড়ে মাত্র ৪৬ শতাংশ।

৫৫ বছরের কম বয়সী কানাডীয়রাও রাজতন্ত্রের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। তাদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ বলেন, বন্ধন ছিন্ন করা উচিৎ। অন্যদিকে বয়স্ক কানাডীয়দের ৪৯ শতাংশ বন্ধন অটুট রাখার পক্ষে।