ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা বৃদ্ধি : কানাডার জব মার্কেটে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে তারা

কানাডার মোট জনসংখ্যার মধ্যে ইমিগ্রেন্টদের অনুপাত অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ২৩% ইমিগ্রেন্ট। ধারণা করা হচ্ছে এই অনুপাত আরো বৃদ্ধি পেয়ে ২০৪১ সালে মধ্যে ৩৪% এ দাঁড়াবে। স্ট্যাটিসটিকস কানাডার হিসাব এটি।

স্ট্যাটিসটিকস কানাডার হিসাব মতে বর্তমানে দেশটিতে ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা ৮.৩ মিলিয়ন। শতকরা হারে মোট জনসংখ্যার ২৩%। এর আগের রেকর্ড ছিল ২২.৩%। আর সেই রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় শত বছর আগে ১৯২১ সালে।

কানাডার বর্তমান এই রেকর্ড জি-৭ তথা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যেও সর্বোচ্চ। জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানী, ইটালী, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

কানাডার মোট জনসংখ্যার ২৩% এখন ইমিগ্রেন্ট। ছবি: হ্যামিলটন নিউজ

স্ট্যাটিসটিকস কানাডার তথ্য অনুয়ায়ি আরো দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক কালে আসা ইমিগ্রেন্টরা বয়সে তরুণ এবং কানাডার জব মার্কেটের জন্য এরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ইমিগ্রেন্টদের ৬৪% এর বয়স ২৫ থেকে ৬৪ এর মধ্যে। তবে এদের মধ্যে মাত্র ৩.৬% এর বয়স ৫৫ থেকে ৬৪ এর মধ্যে এবং ১৭% এর বয়স ১৫ বছরের নিচে।

সন্দেহ নেই নতুন এই ইমিগ্রেন্টরা কানাডার জব মার্কেটে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার জন্য এদের উপস্থিতি খুবই প্রয়োজীয় এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ফেডারেল ইমিগ্রেশন মন্ত্রী সিন ফ্রেসার সম্প্রতি বলেন, মহামারী প্রশমনের পর কানাডা ঘুরে দাঁড়ালেও সব খাতেই হাজার হাজার পদ এখনও শূন্য রয়েছে। মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা যদি সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দেয়া আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক পরিষেবা ও সুবিধাগুলি ধরে রাখতে চাই তাহলে আমাদের আরও বেশি সংখ্যক শ্রমিক ও কম বয়সী পরিবারকে এদেশে আসার সুযোগ দিতে হবে। কারণ, মহামারী পরবর্তী পুনরুদ্ধারের মূল চাবিকাঠি হবে বাড়তি ইমিগ্রেশন।’

আমরা জানি মাহমারীর কারণে এমনিতেই কানাডায় ইমিগ্রেন্ট আসার হার কমে গেছে নানান জটিলতার কারণে। তাছাড়া অনেক আবেদনও জমা পরে আছে মহামারীর সময়ে ঠিক মত কাজ করতে না পারায়। হিসাবে দেখা গেছে, গত পহেলা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি পারমানেন্ট ও টেম্পোরারি রেসিডেন্সির আবেদন জমা পড়ে আছে। সরকার বলছে, মহামারীর সময় সৃষ্ট মন্থরতার কারণেই মূলত আবেদনের এই স্তূপ জমেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বাড়তি অভিবাসন এখন জরুরী।

ইতিপূর্বে Environics Institute এবং Canadian Race Relations Foundation এর এক যৌথ জরিপে দেখা গেছে কানাডায় ৭৫% অধিবাসী মনে করেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। টরন্টোতে এই মতের সমর্থকদের সংখ্যা বেশী এবং যারা উচ্চ শিক্ষিত (ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিধারী) তারাও এই মতের পক্ষে। জরিপে আরো বলা হয়, অধিকাংশ কানাডিয়ান আগামীতেও এই বিশ্বাস ধরে রাখবেন যে, কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ভূমিকা ইতিবাচক।

এদিকে অন্য এক জরিপে আমরা দেখতে পাচ্ছি, জব মার্কেটের উন্নতি ও বিকাশের জন্য কানাডা এখন সম্পূর্ণভাবে ইমিগ্রেন্ট নির্ভর হয়ে পড়েছে। স্ট্যাটিসটিকস কানাডার সর্বশেষ এমপ্লয়মেন্ট ডাটা এই তথ্যই দিচ্ছে।

আমরা আরো জানি কানাডায় ইমিগ্রেন্ট পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের তরুণরা সাফল্যের প্রতিযোগিতায় ছাড়িয়ে যাচ্ছে তাদের সমবয়সী কানাডিয়ানদেরকে। এমনকি বয়সে বড় কানাডিয়ানদেরকেও হার মানাচ্ছে তারা সাফল্যের দৌড়ে! এই তরুণদের মধ্যে আছে বাংলাদেশী কানাডিয়ানরাও। আর সাম্প্রতিক কালে আসা নতুন ইমিগ্রেন্টদের ভবিষ্যত প্রজন্মও সাফল্যের প্রতিযোগিতায় এমনিভাবে এগিয়ে যাবে এই আমাদের বিশ্বাস।

সুতরাং ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা বৃদ্ধি কানাডার অর্থনীতির জন্য যে কোন বিবেচনায়ই মঙ্গলজনক। আমরা মনে করি ইমিগ্রেন্টদের কঠোর পরিশ্রম ও কানাডার প্রতি তাঁদের ভালবাসা দেশটিকে আরো অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।