মুসলিম পরিবারকে বলা হলো তারা বুরকিনি পরে ওয়াটার পার্কে নামতে পারবে না
ম্যানিটোবা ওয়াটার পার্কে এক ঘটনার পর উইনিপেগের একটি পরিবার বুরকিনি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর উপায় খুঁজছে।
শুক্রবার হালিমা জেলোল, তার স্বামী ও দুই মেয়ে লাইলাক রিসোর্টে বেড়াতে গিয়ে খুবই উদ্দীপিত বোধ করছিলেন।
কিন্তু সেখানে পৌঁছার কয়েক মিনিটের মধ্যে তাদের বলা হলো, তারা যে পোশাক পরেছেন তা নিয়ে পানিতে নামতে পারবেন না।
জেলোল বলেন, প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে রিসোর্টের মালিক আমাদের কাছে এসে বলেন, যেহেতু আমি ও আমার মেয়েরা বুরকিনি পরেছি তাই আমাদের পানিতে নামার অনুমতি নেই।”
“আমি নিঃসন্দেহে খুবই অসচ্ছন্দ বোধ করেছি। তবে এটার জন্য আমি মর্মাহত নই,” বলেন জেলোল-এর ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সালমা দাউদা।
বুরকিনি হলো, ওয়েট স্যুটের মত পুরো শরীর ঢাকা পোশাক। এটি উদ্ভাবন করা হয়েছে ঐতিহ্যগতভাবে শালীন ইসলামী পোশাকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ভাবনা থেকে।
ম্যানিটোবার লাইফসেভিং সোসাইটি বলেছে, বুরকিনি অনুমোদন না করার পেছনে কোনও কারণ থাকতে পারে না।
সংগঠনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার সমন্বয়কারী ক্রিস্টোফার লাভ ই-মেলে জানানো প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “বুরকিনি বিষয়ে বলা যায়, এটি খুবই যথাযথভাবে নকশা করা একটি পোশাক, এতে নিরাপত্তা সম্পর্কিত কোনও ত্রুটি নেই।”
তিনি বলেন, “আমি এর কিছু কিছু ব্যবহার দেখেছি। এগুলো সত্যিই ওয়েট স্যুটের মতই খুব কাজের। আর একই সঙ্গে এটি পানিতে সচ্ছন্দে সব ধরণের মুভমেন্টের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি এটি শালীনতা রক্ষায়ও কার্যকর।”
লাইলাক রিসোর্টের মালিক ড্যান ম্যানেগার বলেন, তিনি ওই পরিবারকে পানিতে নামতে দেননি কারণ বুরকিনি কী ধরণের পোশাক তিনি জানতেন না। তিনি ভেবেছিলেন এটি কোনও streetwear যা পরে লেকে নামা হতো জনস্বাস্থ্য বিধির গুরুতর লংঘন।
ড্যান ম্যানেগার বলেন, “আমি পরিবারটির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাই, কারণ আমি একেবারেই না জেনে তাদের বাধা দিয়েছি।”
পরে ম্যানেগার তার রিসোর্টের সব কর্মচারীর কাছে বুরকিনি কি ধরণের পোশাক তার ব্যাখ্যাসহ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানিয়েছেন, এখন থেকে বুরকিনি পরে পানিতে নামার অনুমতি দেওয়া হলো।
তিনি বলেন, “তাদের সবাইকে বলা হয়েছে, বুরকিনি অনুমোদিত পোশাক হিসাবে গ্রহণ করা হবে। অবশ্য, লেকে স্ট্রিটওয়্যার পরে নামার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে।”
পরিবারটির সঙ্গে এবং একজন জনস্বাস্থ্য পরিদর্শকের সঙ্গে আলোচনার পর জেলোল ও তার পরিবারকে সাঁতাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু মনক্ষুন্ন পরিবারটি তখন রিসোর্ট ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
জেলোল বলেন, “আমার মেয়েরা তখন কাঁদছে। এটা আমাদের জন্য সত্যিই কোনও আনন্দের মুহূর্ত ছিল না। সুতরাং আমাকে মেয়েদের নিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছে, দেখতে হয়েছে তারা ঠিক আছে কিনা, তারা এখানে থাকতে চায় নাকি চলে যেতে চায়।”
পরিবারটি এখন সাঁতারের পোশাক বুরকিনি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ করবে ভাবছে।
হালিমা জেলোল বলেন, সাগর সৈকতে প্রায় প্রতিদিনই আমাদেরকে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। মানুষ আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকায়, তারা জানে না এটা কি। এটা অস্বাভাবিক নয় এবং এ বিষয়ে তাদের কিছু জানানোর দরকার আছে।”
সালমা দাউদা বলেন, “আমি মনে করি মুসলিম নারী বা অন্য যে কোউ শালীন পোশাক পরলে তাদের সব অধিকার দিতে হবে। আর এর অন্যথা হলে তাদেরকে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে।”
পরিবারটি আশা করে, মানুষের জানাশোনা বাড়লে একই রকম অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে অন্যরা রেহাই পাবে।