৮০ বছরের বিচ্ছিন্নতার পর টরন্টোতে মা মেয়ের পুনর্মিলন

টরন্টোর ৯৮ বছর বয়সী একজন মা বলেছেন, ৮০ বছর পর প্রথমবারের মত নিজের মেয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তিনি মা দিবসের কল্পনাতীত সেরা পুরস্কারটি পেয়ে গেছেন।

ইহুদি তরুণী গেরডা কোল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত দিনগুলিতে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় তার নিজ শহরে হত্যাযজ্ঞ থেকে পালাতে সক্ষম হন। তার বাবা-মা তাকে শিশুদের বহনকারী একটি যানবাহনে করে লন্ডনে পাঠিয়ে দেন।

১৮ বছর বয়সে ১৯৪২ সালে তার মেয়ে সোনিয়া গ্রিস্ট-এর জন্ম হয়। কিন্তু আর্থিক দুরবস্থার কারণে লন্ডনের উদ্বাস্তু বিষয়ক কমিটি তাকে তার মেয়েকে দত্তক দেবার এবং মেয়ের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ না রাখার পরামর্শ দেয়।

৯৮তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গেরডা কোলের পুনর্মিলন ঘটে তার মেয়ে সোনিয়া গ্রিস্ট ও নাতি স্টিফেন গ্রিস্টের সঙ্গে। ছবি: সিটিভি

তখন থেকে পরবর্তী ৮০ বছর ধরে মা-মেয়ে বিচ্ছিন্ন ছিল। সম্প্রতি পুনর্মিলনের সময় দুজনেই পরস্পরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। কোল উত্তেজনায় চিৎকার করে ওঠেন এবং এক ঘোরের মধ্যে বার বারই উচ্চারণ করেন, “৮০ বছর” পর! কোল বলেন, “সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যারা আমার সঙ্গে এই চমৎকার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিতে এসেছেন। ‘আমার মেয়ে’ এই কথাটি বলতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।” শনিবার তিনি বলেন, “এই মুহূর্তগুলো দেখার জন্য বেঁচে থাকতে পারা সত্যি অনেক অর্থবহ।”

কানাডায় কোলকে খুঁজে বের করতে তার মাকে সাহায্য করেন স্টিফেন গ্রিস্ট। তিনি টরন্টোর একটি দীর্ঘকালীন কেয়ার হোমে কোলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, পুরো সময় ধরেই তিনি কেবল তার নানীর নাম ও পশ্চাৎপট খুঁজে পাবার আশায় ছিলেন। 

স্টিফেন গ্রিস্ট শনিবার বলেন, “আমি তার মৃত্যুর নথিপত্র পাবো এমনটাই ধারণা করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি গেরডার সৎ ছেলের সন্ধান পাই। তারা আমাকে জানান যে, গেরডা বেঁচে আছেন, ভালো আছেন এবং কানাডার একটি হোমে রয়েছেন। এটা ছিলো এক দারুণ অভিঘাত। এটা সবকিছুই পাল্টে দেয়।”

“আমি যখন মাকে কথাটা বললাম, তখন প্রথম যে কথাটি তিনি বলেন সেটি হলো, ‘আমি বিমানে করে কানাডায় যাবো এবং আমার মাকে বুকে জড়িয়ে নেবো।’ কিন্তু মহামারির কারণে আমরা সেটা করতে পারিনি। তবে এখন আমরা এখানে হাজির হয়েছি।”

সোনিয়া গ্রিস্ট বলেন, তাদের প্রথম ই-মেল আদানপ্রদানের সময় থেকেই তিনি জানতেন কোলই তার মা, যখন তিনি লেখেন যে, তুমি নিশ্চয়ই বুঝবে, এই কমপিউটার আমাকে পছন্দ করে না।”

তিনি হেসে বলেন, “আমিও তো ঠিক এই কথাটাই লিখতাম।”

মা ও মেয়ে জন্মদিনের সেই অনুষ্ঠানে দিনের অবশিষ্ট সময় আলাপ করে এবং পরস্পরের সঙ্গে নেচে গেয়ে সময় কাটান। এটা ছিল এমন এক সময় যেটি তাদের জীবনের মহামূল্যবান সম্পদ হয়ে থাকবে। সূত্র : মিরিয়াম কাতাওয়াজি / সিটিভি নিউজ