মানুষের অনেক প্রত্যাশা আছে যা নিয়ে আমাদের এখন কাজ করতে হবে

একান্ত সাক্ষাৎকারে এমপিপি ডলি বেগম

খুরশিদ আলম :  গত ২রা জুন অনুষ্ঠিত অন্টারিও’র পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ডলি বেগম আবারও জয়ী হয়েছেন। স্কারবরো সাউথওয়েস্ট রাইডিং থেকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এনডিপি’র প্রার্থী হয়ে।

উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালে অন্টারিও পার্লামেন্টের নির্বাচনে প্রথমবার জয়ী হয়ে ডলি বেগম প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য সৃষ্টি করেছিলেন এক ইতিহাস। অন্টারিওসহ কানাডার অন্য কোন প্রভিন্সে কোন বাংলাদেশী কানাডিয়ান এরকম মর্যাদায় ভুষিত হননি। এমপিপি বা এমপি কোন পদেই কোন বাংলাদেশী পাশ করতে পারেননি।

২০১৮ সালে অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) থেকে মনোনয়ন পেয়ে ডলি বেগম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন স্কারবরো সাউথওয়েস্ট রাইডিং থেকে। তিনি ১৯ হাজার ৭ শত ৫১ ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করেছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির গ্রে এলিস পেয়েছিলেন ১৩ হাজার ৫ শত ৯২ ভোট। অত্র রাইডিং এ চার মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় ছিলেন লিবারেল পার্টির লরেঞ্জো বেরারডিনেটি। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৮ হাজার ২ শত ১৫টি।

আর এবারও ডলি বেগম বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। অত্র রাইডিং এর ৪৭.১% ভোটার তাঁকে ভোট দিয়েছেন। মোট ভোট পেয়েছেন ১৫,৯৫৪ টি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টির প্রার্থী ব্রেট স্নাইডার। ২৭.৯% ভোটার তাঁকে ভোট দিয়েছেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৯,৪৩৬ টি। আর অন্টারিও লিবারেল পার্টির প্রার্থী লিসা প্যাটেলকে ভোট দিয়েছেন ১৮.৮% ভোটার। তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ৬,৩৫৬ টি।

অন্টারিও’র পার্লামেন্টে দ্বিতীয় মেয়াদে ডলি বেগমের জয়ী হবার সংবাদটি
প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য ছিল অত্যন্ত আনন্দের। ছবি: পার্টি অফিস

দ্বিতীয় মেয়াদে ডলি বেগমের জয়ী হবার সংবাদটি প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য ছিল অত্যন্ত আনন্দের।

স্কুল, ইউনিভার্সিটিতে অত্যন্ত ভাল রেজাল্ট করে নিজের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো বিশ্বসেরা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি। সেখান থেকে পলিটিক্যাল সাইন্সে ডিগ্রি নিয়ে Development Administration and Planning এর উপর মাস্টার্স শেষ করেন বৃটেন থেকে।

২০১৮ সালে প্রথমবার অন্টারিও পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচত হওয়ার পর প্রবাসী কণ্ঠে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে ডলি বেগম বলেছিলেন, আমি আসলে কখনোই দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না আগে। আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল কিভাবে মানুষকে সাহায্য করতে পারবো, কমিউনিটিকে সাহায্য করতে পারবো। আমার যে বিশ্বাস বা দর্শন ছিল – সেটা শিক্ষা হোক বা হেলথ কেয়ারই হোক, আমি দেখতাম তার সঙ্গে এনডিপি’র যে নীতি ও আদর্শ তার সঙ্গে অনেক মিল আছে। এমনকি লিবারেল পার্টির চেয়েও অনেক ভাল এনডিপি’র নীতি ও আদর্শগুলো। ইমিগ্রেশন বিষয়েও এনডিপি’র যে নীতি রয়েছে সেটা লিবারেল পার্টির চেয়ে অনেক ভাল এবং ইমিগ্রেন্টবান্ধব। এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে আমি দেখলাম এনডিপি’র সঙ্গে আমার নিজের নীতি ও আদর্শগুলো বেশী খাপ খায়। এ কারণেই মূলত আমি এনডিপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাই।

তিনি আরো বলেছিলেন, রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে আমি অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তবে এ ক্ষেত্রে আমি আমার মা’র কথাই আগে বলবো। কারণ, উনার ইচ্ছাশক্তি খুবই প্রবল এবং খুবই শক্তিশালী। দুর্ঘটনায় আমার বাবা আহত হবার পর থেকে আমাদের পুরো পরিবারটিকে উনিই টেক কেয়ার করেন। সে কারণে স্পষ্টতই উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। আমি এখানে মূলধারার কয়েকজন রাজনীতিকের সঙ্গেও কাজ করেছি। যেমন বিচেস ইস্ট ইয়র্ক এলাকার ওয়ার্ড ৩১ এর সিটি কাউন্সিলর (সাবেক) জেনেট ডেভিস। এরকম আরো কয়েকজন এর সঙ্গে কাজ করেছি। আর তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও রাজনীতি সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি এবং আগ্রহী হয়ে উঠেছি।

দ্বিতীয়বার অন্টারি পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রবাসী কণ্ঠ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে ডলি বেগমের একটি একান্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন : অন্টারিও’র পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টি এবারও বিপুল সংখ্যক আসন দখল করে নেয়। শুধু তাই নয়, গতবারের তুলনায় তাঁরা আরো বেশী আসনে জয়ী হয়। এরকম একটি প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বির বিরুদ্ধে লড়াই করে আপনি আপনার আসনটি এবারও ধরে রেখেছেন এবং বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। আপনার এই বিজয়ের পিছনে কোন কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে বলে মনে হয় আপনার কাছে?

উত্তর : অনেক বিষয়ই কাজ করেছে এর পিছনে। তার উত্তর দেওয়ার আগে আমি প্রথমেই প্রবাসী কণ্ঠকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। আমি খুব এনজয় করি আপনারা যখন নতুন কোন এডিশন বের করেন। আপনাদের গত সংখ্যা ম্যাগাজিনটিও আমি পেয়েছি।

আমরা দেখেছি ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচন অনেক ডিফারেন্ট ছিল। ২০১৮ সালে আমরা নতুন শুরু করেছিলাম। প্রভিন্সের ক্যাম্পেইনটাও ডিফারেন্ট ছিল। মানুষের চাওয়াটাও ডিফারেন্ট ছিল। আর এবারের নির্বাচনের আগে ভোটারগণ খুব ভাল করে বিচার করে দেখেছেন আমরা গত চার বছরে কি কি কাজ করেছি। তাঁদের পাশে আমরা কতটা দাঁড়াতে পেরেছি। গত চার বছরে আমাদের যে একটি কর্ম রেকর্ড তৈরী হয়েছে সেটাই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পিছনে খুব ভাল করে কাজ করেছে বলে আমার কাছে মনে হয়। স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট একটি ডাইভার্স কমিউনিটি। এদের সাথে কাজ করে আমরা এই রেকর্ড তৈরী করতে পেরেছি। তাছাড়া আমাদের ক্যাম্পেইংও খুব শক্তিশালী ছিল এবার। অনেক লোক ছিল আমাদের প্রচার কর্মে এবং তাঁরা অনেক পরিশ্রম করেছেন। 

প্রশ্ন : নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর আপনার প্রথম অনুভূতি কি হয়েছিল?

উত্তর : আমি খুবই আনন্দ অনুভব করেছি এরকম একটি বড় জয় পেয়ে। এটি একটি বড় সম্মানতো বটেই। আমি কৃতজ্ঞতা অনুভব করছি সৃষ্টিকর্তার কাছে, আমার পরিবারের কাছে এবং স্থানীয় কমিউনিটির কাছে আমার প্রতি এরকম ভালবাসা ও সমর্থন দানের জন্য। আমি খুবই খুশী হয়েছি এবং একইসাথে এটাও মনে হয়েছে যে আমার উপর একটি বড় দায়িত্বও অর্পিত হয়েছে। কারণ, কমিউনিটির মানুষের অনেক প্রত্যাশা আছে যা নিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হবে।

প্রশ্ন : আপনার মা ও বাবা ও ভাইয়ের প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল?

উত্তর : আমার বাবা মা এবং ভাই খুব খুশী হয়েছেন। তাঁরা জানেন আমি গত চার বছর অনেক কষ্ট করেছি জনগণের কল্যাণে। তাই তাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন ফলাফলের জন্য।

স্কারবরো সাউথওয়েস্ট এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় ডলি বেগম। ছবি: পার্টি অফিস

প্রশ্ন : আর আপনার স্বামীর প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল?

উত্তর : আমার স্বামী ব্যারিস্টার রিজাউন রহমানও খুব খুশী হয়েছেন। তাছাড়া তিনি আমার নির্বাচনী প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের রাইডিং এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। সেই দিক থেকে আমি বলবো তিনি একটি বড় দায়িত্ব নিয়েছিলেন নির্বাচনের প্রচার কার্যে। 

প্রশ্ন : ‘https://338canada.com/ontario/1096e.htm’ এর জরিপে দেখা গিয়েছিল এবারের নির্বাচনে অন্টরিওতে আপনাদের দল এনডিপি পিছিয়ে থাকলেও স্কারবরো সাউথওয়েস্টে আপনি আবারও নির্বাচিত হবেন। এবং হয়েছেনও তাই। এ ব্যাপারে আপনি নিজে কতটা আশাবাদী ছিলেন?

উত্তর : আসলে পোলিং বা জরিপ নিয়ে আমরা স্ট্রেঞ্জ একটা ব্যাপার দেখতে পেলাম এই নির্বাচনে। নির্বাচন যখন শুরুই হয়নি তখন থেকেই

লোকজন জরিপ শুরু করে দেয়। ভবিষ্যতবাণী করতে থাকে কোন রাইডিং এর কি ফলাফল হতে পারে। আর জরিপগুলোতে একটা পার্টি ইনফ্লুয়েন্সও থাকে। এ কারণে আমি খুব বিভ্রান্তিতে ছিলাম নির্বাচনের আগের পুরো সময়টাতেই। দেখা গেছে শুরুতে বলছে আমরা অনেক ভাল পজিশনে আছি। পরে আবার বলছে আমরা ভাল পজিশনে নেই। আবার দেখা গেল বলছে আমরা ভাল পজিশনে আছি। আসলে এই জরিপগুলো থেকে সত্যিকার চিত্রটি পাওয়া যায় না স্থানীয় লোকজন নির্বাচন নিয়ে কি ভাবছে। যেমন আমাদের এই রাইডিং এ অনেক বাংলাদেশী আছেন, ফিলিপিনো আছেন, শ্রীলংকান আছেন, ব্ল্যাক কমিউনিটির লোজন আছেন যাঁদেরকে জরিপে খুব একটা আনা হয়না। ফলে জরিপগুলো এক ধরণের ভুল ব্যাখ্যা বা ভুল ভবিষ্যতবাণী হিসাবে কাজ করে। স্থানীয় লোজনের সত্যিকার মতামতটা এই সব জরিপে উঠে আসে না। আর শুধু আমাদের রাইডিং এ নয়, আমি দেখেছি অন্যান্য অঞ্চলের জরিপ ফলাফলগুলোতেও স্থানীয় লোকজনের চিন্তা-ভাবনার কোন সত্যিকারের প্রতিফলন ছিল না।

প্রশ্ন : আপনার প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বির মধ্যে একজন ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। স্কারবরোতে প্রচুর সংখ্যক ভারতীয় বাস করেন। সে কারণে আশংকা ছিল আপনার রাইডিং এ ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডিয়ানদের ভোট হয়তো আপনি হারাবেন। কিন্তু সেরকমটি হয়েছে বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে আপনার অভিমত বা পর্যবেক্ষণ কি? 

উত্তর : আসলে আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি তা হলো, আমরা যখন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, ডোর টু ডোর নক করেছি তখন দেখতে পারলাম যে, মানুষ বুঝতে পেরেছে আমরা তাঁদের জন্য কতটুকু কাজ করেছি, কতটুকু সাফল্য ছিল আমাদের এবং কি কি ইস্যুজ নিয়ে আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এটা খুব গুরত্বপূর্ণ।

আমি স্কারবরোতে বড় হয়েছি বাংলাদেশী কানাডিয়ান হিসাবে। সেই সূত্রে আমি স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে যে ভাবে আছি সেটি তাঁরা অনুভব করতে পেরেছেন। আমার রাইডিং থেকে আমি নির্দিষ্ট কোন কমিউনিটির প্রতিনিধি নই, সব কমিউনিটিরই প্রতিনিধি। যখন আমরা হাউজিং ইস্যু দেখি, যখন আমরা ট্রাঞ্জিট ইস্যু দেখি তখন কিন্তু আমি একটা কমিউনিটির জন্য না, সব কমিউনিটির জন্য হয়েই কাজ করি। যখন আমি হাউজিং নিয়ে পার্লামেন্টে লড়ি তখন সেটা স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ কমিউনিটিকে যেমন এফেক্ট করে তেমনি বাংলাদেশী কমিউনিটিকেও করে। এভাবে গত ৪ বছরে আমি যে কাজগুলো করতে পেরেছি সেটা আমার এলাকার লোকজন অনুভব করতে পেরেছে এবং তাঁরা সেটার প্রশংসা করেছে। মূলত এই কাজের জন্যই লোকজন আমাদেরকে সমর্থন দিয়েছে।

আর একাট বিষয় বলবো যে, আমরা যখন ২০১৮ সালে শুরু করলাম তখন আমরা লোকাল রিপ্রেজেন্টেশনের যে স্টাইলটা সেটা পুরোটাই পরিবর্তন করেছি। আমরা অবারিত ছিলাম মানুষের কাছে। আমরা তাঁদের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি পার্লামেন্টে। লোকাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসাবে প্রতি সপ্তাহেই স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমাদের নিউজ লেটার যেতো লোকজনের কাছে। স্থানীয় লোকজন এসব দেখেছেন। তাঁরা জানতে পেরেছেন তাঁদের সমস্যা নিয়ে আমরা পার্লামেন্টে কথা বলেছি। এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

প্রশ্ন : বিরোধী দলে থেকে কোন রাজনৈতিক পরিকল্পনা বা এলাকাবাসীর জন্য কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন। তারপরও জানতে চাইবো আপনি আপনার রাইডিং এর মানুষদের জন্য কি কি পরিকল্পনা করে রেখেছেন আগামী চার বছরের জন্য।

উত্তর : হ্যা, আমাদের কিছু পরিকল্পনা অবশ্যই আছে। এর মধ্যে কিছু আছে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা এবং কিছু আছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। স্বল্পমেয়াদী যেটা আছে সেটা হলো কভিড মহামারী নিয়ে। কভিড কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এখনো প্রতিদিন অনেক লোক নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে আমরা কি ভাবে এগিয়ে যেতে পারি সেটা নিয়ে সবসময় একটা চিন্তা আমাদের মধ্যে কাজ করছে। আমরা জানি অনেকে চাকরী হারিয়েছেন। বাড়ি ভাড়া নিয়েও সমস্যা হচ্ছে অনেকের। তারপর নিত্যদিনের বাজার খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে যা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষদের। তো এই সমস্যাগুলোর আশু সমাধান কি ভাবে করা যায় তা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। আর দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা মধ্যে আছে, কভিড শেষ হয়ে যাবার পর কি করবো তা নিয়ে। আশা করছি কভিড শেষ হবে অল্প সময়ের মধ্যে। তখন এই মানুষগুলোকে কি ভাবে সাহায্য করা যায় তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি আমরা।

এছাড়াও আমাদের এনডিপি’র আরো যে লক্ষ্যগুলো আছে যেমন ডেন্টাল কেয়ার, আর্লি লার্নিং এ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, সেগুলো নিয়ে কাজ করা। গত ৪ বছরের মধ্যে আমরা ফরেইন ট্রেইন্ড প্রফেশনালদের জন্যও কাজ করেছি যাতে করে তাঁদের ক্রিডেন্সিয়াল রিকগনিশনের পথ সুগম হয়। এই ফরেইন ট্রেইন্ড প্রফেশনালদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশীও আছেন যাঁরা ইমিগ্রেন্ট হয়ে এ দেশে এসেছেন। কিন্তু এখানে এসে নিজ নিজ ফিল্ডে কাজ পাচ্ছেন না নানারকম প্রতিবন্ধকতার কারণে যার মধ্যে ক্রিডেন্সিয়াল রিকগনিশনের বিষয়টি অন্যতম। এই ফরেইন ট্রেইন্ড প্রফেশনালদের সমস্যাগুলো নিয়ে আমরা আবারও কাজ করবো।

আর আমার লোকাল রাইডিং বা কনস্টিটিউশনের অধিবাসীদের মধ্যে যাঁরা ইন্ডিভিজুয়াল ইস্যু নিয়ে আসবেন তাঁদেরও আমি অবশ্যই সাহায্য করবো। 

আরো আছে এনভাইরনমেন্টাল ইস্যু। এটি একটি বড় ইস্যু। আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি এই টরন্টোতেও খারাপ আবহাওয়া বিরাজ করছে, অনেক গরম যেটা স্বাভাবিক নয়। অন্যদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের মানুষ কত কষ্টে আছে এখন বন্যার কারণে। এটা কিন্তু ক্লাইমেট চেঞ্জেরই একটা প্রভাব। সুতরাং এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে গুরুত্ব দিয়ে। এই কমিটমেন্ট আমার নিজের ছিল এবং আছে অন্যদিকে আমার পার্টিরও ছিল এবং আছে।

উপরের এই বিষয়গুলোই আমাদের কাছে টপ প্রায়োরিটি। এগুলো নিয়েই আমরা আগামীতে স্থানীয়ভাবে এবং প্রভিন্সব্যাপী কাজ করবো।

প্রশ্ন : করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে টরন্টোতে দৃশ্যমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর্থিক  ক্ষতিও তাদেরকে বহন করতে হয়েছে। বাংলাদেশীরাও  এই দৃশ্যমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য। আপনি আপনার দলের পক্ষে বা এলাকার প্রতিনিধি হিসাবে এই দৃশ্যমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন?

উত্তর : করোনা মহামারী যখন শুরু হলো তখন অনেক মানুষই আসলে একটা বিভ্রান্তির মধ্যে ছিল। কি হতে যাচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তাঁরা। প্রয়োজনীয় কোন তথ্যও পাচ্ছিলেন না। ল্যাঙ্গুলেজ একসেসও একটা সমস্যা ছিল যাঁদের ফার্স্ট ল্যাংগুয়েজ ইংলিশ না। এরকম পরিস্থিতিতে তাঁদের কাছে তথ্য সহজলভ্য করা, কভিড কি সে সম্পর্কে তথ্য দেয়া, কভিড সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা, ভ্যাকসিন কি, র‌্যাপিড টেস্ট কি অথবা পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট কি এগুলো সম্পর্কে তাঁদেরকে অবগত করানোর কাজ আমরা করেছি। তারপর আমরা যখন দেখলাম অনেক হাসপাতাল, লং-টার্ম কেয়ার হোম, রিটায়ার্ডমেন্ট হোম এগুলোতে প্রয়োজনীয়  পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট নেই তখন আমরা বিভিন্ন নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এগুলো সংগ্রহ করেছি এবং যেখানে যেখানে দরকার সেখানে পৌঁছে দিয়েছি।

কভিডের সময় আমাদের এই রাইডিং এলাকায় খুব বেশী মাত্রায় ইনফেকশন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সার্পোট দেয়া হয়েছিল সবচেয়ে কম মাত্রায়। তখন আমরা ভাবলাম কি করে এই এলাকাটাকে অগ্রাধিকারের আওতায় আনা যায়। সেটি করতে গিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনেক বাদানুবাদের পর এই এলাকাটিকে অগ্রাধিকারের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। মাইকেল গেরন হসপিটাল ও স্কারবরো হেলথ নেটওয়ার্ক এর সঙ্গে যোগাযোগ করে এই এলাকায় লোকাল ক্লিনিক আনতে পেরেছিলাম। আপনারা হয়তো দেখেছেন গত দুই বছরে বিশেষ করে যখন ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয় তখন এই এলাকায় নিয়মিত ক্লিনিক বসানো হয়েছিল ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য। সে কারণে আমরা অনেক মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে সহায়তা করতে পেরেছি।

এছাড়াও আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাপোর্ট পাবার পক্ষেও কাজ করেছি। সরকার যখন সাহায্য প্রদানের কাজ শুরু করে তখন আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে তাঁদের এপ্লিকেশন রেডি করতে সাহায্য করেছি। তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছি। সরকারকে চাপের মধ্যে রেখেছি যাঁদের সাহায্য দরকার তাঁদেরকে সাহায্য করতে যাতে করে আমাদের অর্থনীতি ঠিকমত এগুতে পারে।

যখন মহামারী শুরু হয় তখন আমি এখানে আমাদের দলের পক্ষ থেকে চাইল্ড কেয়ার ক্রিটিক ছিলাম, এখানে যেটাকে ছায়া মন্ত্রী বলে। তো এই ছায়া মন্ত্রী হিসাবে আমি এখানকার শিক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে মিলে অত্র এলাকায় ইমার্জেন্সী চাইল্ড কেয়ার প্রোগ্রাম শুরু করেছিলাম। কারণ আমরা বুঝতে পারছিলাম অন্টারিও’র অর্থনীতি বন্ধ হয়ে যাবে যদি এখানে মহামারীর সময় চাইল্ডকেয়ার প্রগ্রাম না থাকে। এখানে ৫১% এর বেশী ওয়ার্ক ফোর্স মহিলা। ওরা যদি চাইল্ড কেয়ার এর সুবিধা না পায় তবে নার্স, পার্সোনাল সাপোর্ট ওয়ার্কার, গ্রোসারী ওয়ার্কারসহ অনেকেই কাজে যেতে পারবে না। এ কারণে এর পিছনে আমরা কাজ করেছি যাতে করে স্থানীয় লোকজন উপকৃত হতে পারেন।

প্রশ্ন : গত চার বছরে এমপিপি হিসাবে আপনার স্মরণী ঘটনা কি?

উত্তর : অনেক স্মরণীয় ঘটনা আছে। এর মধ্যে উল্লেখ করার মত হলো, আমি পার্লামেন্টে যখন প্রথম কথা বললাম। সত্যিকার অর্থে ঐ দিনটির কথা এবং অনুভূতি এখনো আমার মধ্যে কাজ করে। একজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান হিসাবে যে আমি পার্লামেন্টে আমার স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট কমিউনিটির জন্য প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি সেটা একটা স্বরণীয় ঘটনা হয়ে রয়েছে আমার জীবনে। এছাড়াও আমি পার্লামেন্টে অনেক বিল উত্থাপন করেছি যার মধ্যে কয়েকটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে আছে আমার জীবনে। এর মধ্যে একটি হলো ফরেইন ক্রিডেন্সিয়াল রিকগনিশন বিল। আমরা যখন এই বিলটি উত্থাপন করেছিলাম তখন সরকার তার একটি অংশ নিয়ে তাদের নিজেদের মত করে বিল উত্থাপন করে যেটা পরে পাস হয়। এর মাধ্যমে ফরেইন ট্রেইন্ড হেলথ কেয়ার প্রফেশনালসহ অন্যান্য প্রফেশনের লোকদের সামনে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো ছিল তা অপসারণ হয়েছে। এটা একটা খুবই স্মরণীয় ঘটনা আমার গত চার বছরের জার্নিতে।

তারপর ফিলিপিনো হেরিটেজ মান্থ ঘোষণা নিয়ে আছে আমার আরেকটি স্মরণীয় ঘটনা। এটি আমার আগে আরো তিনজন এমপিপি চেষ্টা করেছেন পার্লামেন্টে পাস করাতে। কিন্তু পারেনি। ফলে ফিলিপিনো কমিউনিটি হতাশ হয়ে পড়েছিল। তাঁদের মনোবল ভেঙ্গে গিয়েছিল। তখন আমরা আবার নতুন করে  উদ্যোগ নেই। অন্য পার্টিরগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করি। তাদের কাছে ফিলিপিনোদের স্টোরি তুলে ধরি। তখন পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে এই বিলটি পাস হয়। এটি ছিল আমাদের কাছে এক উল্লেখযোগ্য বিজয়। আর এই বিজয়ের অনুভূতিটা যে কতটা আনন্দের ছিল তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।

আমি পার্লামেন্টে ডেপুটি অপজিশন হুইপ-ও নির্বাচিত হয়েছিলাম এবারের নির্বাচনের আগে। এটিও আমার কাছে একটি স্মরণীয় ঘটনা ছিল।

প্রশ্ন : কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা?

উত্তর : সেরকম কিছু ঘটেনি। তবে একটি বিষয় নিয়ে আমি কিছুটা হতাশ ছিলাম। একে আমি ঠিক তিক্ত অভিজ্ঞতা বলবো না। আপনারা জানেন কোন মেজরিটি সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তখন বিরোধী দলকে কোন প্রস্তাব পাস করানোর জন্য কঠিন অবস্থার মুখমুখি হতে হয়। সবসময় সফল হওয়া যায় না। একজন বিরোধী দলের সদস্য হিসাবে আমি হয়তো দেখছি আমার রাইডিং এ কোন একটি সমস্যা বিরাজ করছে। তখন আমি বার বার চেষ্টা করছি বিষয়টি পার্লামেন্টে তুলে ধরার। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এটি আমার জন্য হতাশাব্যঞ্জক ছিল।

প্রশ্ন : সম্প্রতি আপনার অফিসে ইটপাটকেল নিক্ষপের ঘটনা ঘটেছিল। এতে কাঁচের দরজা ও জানালার ক্ষতি হয়েছে। কি ঘটেছিল সেদিন? কারা এই হামলা করেছিল? কেউ ধরা পড়েছে কি? পুলিশ কি পদক্ষেপ নিয়েছে?

উত্তর : টরন্টো পুলিশ এখনো হামলার এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। শুধু আমাদের অফিসেই নয়, এরকম আরো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে অন্যত্র। পুলিশ আমাদেরকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও  দেখিয়েছে। সেখানে দেখা গেছে মধ্য রাতের দিকে একজন ব্যক্তি এই ঢিল ছোড়ার কাজটি করেছেন। তবে এখনো সেই ব্যক্তি ধরা পড়েননি।

প্রশ্ন : এই ঘটনাকে আপনি কি হেট ক্রাইম বা বর্ণবাদী হামলা হিসাবে মনে করছেন?

উত্তর : হামলার পর আমরা যখন পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি তখন তাঁরা এটাকে হেট ক্রাইম বলেননি। হামলার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। আমরা এখনো জানি না। আর ঐ সময়টাতে কভিডের কারণে ভ্যাকসিন আইন, লকডাউনসহ অন্যান্য বিধিনিষেধের কারণে অনেকে রাগান্বিত ছিলেন। সেই রাগটা একেকজনে একেকভাবে প্রকাশ করেছেন। আর কেউ কেউ নিয়মবিরুদ্ধ উপায়ে সে কাজটা করেছেন।

তবে আমরা কিন্তু আগে থেকেই বলে আসছি, আমাদের অফিস একটি ওয়েলকামিং স্পেস। আমাদের দুয়ার সবার জন্য খোলা। কে কোন দলের সমর্থক বা কে কোন রাজনৈতিক আদর্শে বিশ^াসী সেটা আমাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়।

হামলার ঘটনার পর বিভিন্ন কমিউনিটির অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন এবং তাঁদের সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।