বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি : নয়া আদমশুমারির পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, বয়স্ক জনসংখ্যা ভবিষ্যতে কানাডার জন্য সমস্যা হতে পারে
‘অভিবাসন সহায়ক, কিন্তু তা নিরাময় আনে না,’ বললেন টরন্টো ইউনিভার্সিটির সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : যতজন মানুষ নতুন করে কর্মজীবনে ঢুকছেন তার চেয়ে বেশি সংখ্যক অবসর নিচ্ছেন। আর নতুন আদমশুমারির পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ওই ব্যবধান আগামী বছরগুলিতে কেবলই বাড়বে- এটি এমন এক প্রবণতা যাকে কিছু বিশেষজ্ঞ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন, এটি স্বাস্থ্য-প্রযত্ন ও আবাসনের মত সেবার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং অভিবাসনের মাধ্যমে এ সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হবে না। খবর সিবিসি নিউজের।
সম্প্রতি প্রকাশিত আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, কানাডায় ১৫ থেকে ৬৪ বছরের কর্মক্ষম জনসংখ্যা- আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি বয়স্ক। উপাত্তে দেখা যায়, বর্তমানে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের চেয়ে ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সের মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি।
টরন্টো ইউনিভার্সিটির অভিবাসন, অসাম্য ও সরকারি নীতি সম্পর্কিত বিভাগের চেয়ারম্যান এবং সমাজতত্ত্বের প্রফেসর মনিকা বয়েড বলেন, এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে “অভিবাসন সহায়ক, কিন্তু এটি নিরাময় আনে না।”
“সমস্যা হলো, আমাদের মত এত নিম্ন জন্মহার নিয়ে যখন কাজ করবেন তখন আপনি সত্যিই অভিবাসনের মাধ্যমে জনসংখ্যার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন না।”
মোটামুটিভাবে জনসংখ্যার ২১.৮ শতাংশই অবসর গ্রহণের কাছাকাছি সময়ে পৌঁছেছেনÑ যাদের বয়স ৫৫ থেকে ৬৪র মধ্যে, এটা হলো কানাডার বিভিন্ন আদমশুমারিতে উঠে আসা সর্বকালের বৃহত্তম সংখ্যা।
এর অর্থ হলো, কর্মক্ষম প্রাপ্তবয়স্ক লোকেদের প্রতি পাঁচজনে মধ্যে একজনের বেশি এখন অবসরের কাছাকাছি সময়ে পৌঁছেছেন। এটা হলো জনসংখ্যাগত এক পালা পরিবর্তন যা আগামী দশকেই গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বয়েড বলেন, কর্মক্ষম জনসংখ্যা যে কোনও সময়ের চেয়ে বয়োবৃদ্ধ হয়ে পড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
সিবিসি নিউজকে তিনি বলেন, “শ্রমশক্তির বড় রকমের অভাব থাকলে প্রয়োজনীয় চাকরির পদে লোক পাওয়া যাবে না… কার্যকরভাবে পরিষেবা দেওয়া যাবে না।”
সর্বশেষ আদমশুমারির উপাত্তে আরও দেখা যায়, মানুষ এখন দীর্ঘকাল ধরে বেঁচে থাকছে, এর মানে হলো, অপেক্ষাকৃত বয়স্ক জনগণকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে হবে।
টরন্টো মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বার্ধক্য বিষয়ক জাতীয় ইন্সটিটিউটের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত গবেষক বনি জিনি ম্যাকডোনাল্ড বলেন, গত বছর, বেবি বুমারদের (baby boomers) মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী ব্যক্তিরা ৭৬ বছরে পড়েছেন। (বেবি বুমার বলা হয় তাদেরকে যারা ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন।) আর খুব সম্ভবত তারা আলাদাভাবে জীবনযাপন করেন।
ম্যাকডোনাল্ড বলেন, “তারা এখনও সেই নাজুক বয়সে পৌঁছেননি যখন সচরাচর সেবাযত্ন ও সাহায্যের দরকার হয়।”
মাউন্ট সিনাই হাসপাতাল ও টরন্টোর ইউনিভার্সিটি হেলথ নেটওয়ার্কের বার্ধক্য বিষয়ক চিকিৎসাবিদ্যার পরিচালক ডা. সমীর সিনহা বলেন, সর্বশেষ উপাত্ত অবাক হবার মত কিছু নয়, তবে গতিপথ পাল্টে নেয়ার কাজে কখনই খুব বেশি দেরী হয়ে যায় না।
মি. সিনহা বুধবার সিবিসি নিউজকে বলেন, আমাদের বেবি বুমারদের বয়স যখন ৬৫ বছরে পড়ছে সেই ২০১১ সালেই আমরা জানি, এটাই হতে যাচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ এবং এজন্যে আমাদের প্রস্তুতি নেয়া দরকার।”
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সহস্রাব্দে জন্মানো জনসংখ্যা যখন ২০২৬ সালের মধ্যে কানাডার বৃহত্তম প্রজন্মে পরিণত হতে যাচ্ছে, সেই সময় দেশে ৮৫ বছরের বেশি বয়সী বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও প্রযত্নের বাড়তি চাহিদা পূরণে তহবিল যোগানো কঠিন হবে।
সিনহা বলেন, “এটি আমার মনকে দ্বিধাগ্রস্ত করে কারণ বহুদিন থেকেই আমরা এসব তথ্য জানি, আমরা জানি, সামনে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে, আমি শুধু ভাবি, আগে আমরা সব সময়ই জনসংখ্যার অন্য অংশ এবং অন্য সব চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
“সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে আমাদের একটা খেলায় নামা দরকার এবং সে খেলাটা খেলতে হবে খুব শিগগিরই।”
সিনহা বলেন, এই প্রদেশের উচিৎ গৃহায়ন ও সামাজিক সেবা খাতে উল্লেখযোগ্য
পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করা, বিশেষ করে যখন সামনের জুনে অন্টারিওর নির্বাচন রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের আসলে কী করা দরকার সেটা আমরা জানি, কিন্তু মহামারী আমাদেরকে যেটা দেখালো সেটা হলো, আমরা গৃহায়ন ও সামাজিক প্রযত্ন এবং দীর্ঘমেয়াদী সেবা ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য রকমে স্বল্প-বিনিয়োগ করেছি, আর এর পরিণতি আমাদের সামনে নেমে এসেছে যার শোধ দিতেই হবে।”
সিনহা বলেন, ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনসংখ্যার সমস্যা মোকাবেলায় সামাজিক সহায়তা থেকে শুরু করে গৃহায়ন পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে সরকারের সব স্তরে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, “এখন থেকে এক দশক পরেই আমাদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন হবো বয়োবৃদ্ধ মানুষ।”
“আমাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রযত্ন ব্যবস্থায় বিনিয়োগ-স্বল্পতার সুরাহা করতে বর্তমানের চেয়ে ভালো আর কোনও সময় নেই। তবে নিশ্চিত করতে হবে যেন, একটি অধিকতর জোরালো ঘরোয়া প্রযত্ন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।”
২০২১-এর আদমশুমারীর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দিক
* কোভিড-১৯ মহামারী সব বয়স-গ্রুপের জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি মন্থর করেছে, কিন্তু জনসংখ্যার বার্ধক্যের ওপর উল্লেখযোগ্য কোনও প্রভাব ফেলেনি।
* ছোট ও বৃহৎ নগর কেন্দ্রে গড়ে তরুণতর জনসংখ্যা আছে, যেখানে নাগরিক জনসংখ্যার ১৮.২ শতাংশ ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ববয়সী কানাডিয়ানরাÑ সেই তুলনায় পল্লী এলাকায় বয়োবৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা গড়ে ২৩.২ শতাংশ পর্যন্ত।
* সব নগর কেন্দ্রই একরকম নয়। কুইবেকের ট্রই-রিভিয়েরে (Trois-Rivières) মোট জনসংখ্যার ২৫.৭ শতাংশই ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী। ক্যালগেরিতে এটা ১৩.৫ শতাংশ।
* নগরীর কেন্দ্রীয় এলাকায় কর্মক্ষম জনসংখ্যা (১৫ থেকে ৬৪ বছর) মোট জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ, যার জাতীয় গড় হলো ৬৪.৮ শতাংশ।
* ২০১৬ থেকে ২০২১ এর মধ্যে ব্যক্তিগত বাড়ির মোট সংখ্যার তুলনায়Ñ যার হার হলো ৬.৪ শতাংশÑ হাইরাইজ ভবনগুলোতে অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বেড়েছেÑ হার ১৪.৭ শতাংশ।
* ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় হাইরাইজ অ্যাপার্টমেন্ট বেড়েছে একক-বিচ্ছিন্ন বাড়ির চেয়ে পাঁচ গুণ দ্রুততার সঙ্গে (২৪.৮ শতাংশ)। একক-বিচ্ছিন্ন বাড়ির প্রবৃদ্ধি ছিলো ৪.৩ শতাংশ।