৬০ শতাংশ কানাডীয়কেই তাদের পরিবারের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাবার যোগাতে কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ কানাডীয়কেই তাদের পরিবারের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাবার যোগাতে কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে।

গত জানুয়ারীতে প্রকাশিত এঙ্গুস রেইডের জরিপে দেখা যায়, ৫৭ শতাংশ কানাডীয় জানিয়েছেন, সম্প্রতি তারা তাদের পরিবারের জন্য খাবার যোটাতে কঠিন সময় পার করছেন। ২০১৯ সালে সর্বশেষ যখন তাদেরকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো তখনকার চেয়ে এই সংখ্যা ৩৬ শতাংশ বেশি। খবর সিটিভি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন বেন কাসিন্স।

রিপোর্টে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, এই নতুন সংখ্যার ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির ভূমিকা আছে। কানাডা গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে রয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার উপাত্তে দেখা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ভোজ্য তেল (৪১.৪ শতাংশ) এবং সাদা চিনির (২১.৬ শতাংশ) মত পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ কানাডীয়কেই তাদের পরিবারের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাবার যোগাতে কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির ভূমিকা আছে এতে। কানাডা গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে রয়েছে। ছবি: প্রবাসী কণ্ঠ

এঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউট “অর্থনৈতিক চাপের সূচক”ও (Economic Stress Index (ESI) পরিগণনা করেছে যার মধ্যে ব্যক্তির ঋণ, বাড়ি ভাড়া, পরিবারের খাবারের দাম নিয়ে উদ্বেগ, গত এক বছর সময়কালের তুলনায় পরের বছর একজন অংশগ্রহণকারীর অর্থনৈতিক অবস্থার কেমন হতে পারে সেসব বিষয় সমন্বয় করা হয় এবং অংশগ্রহণকারীদেরকে চারটি পৃথক শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। শ্রেণীগুলি হলো: সমৃদ্ধ, স্বস্তিকর, অস্বস্তিকর এবং সংগ্রামশীল।

ইএসআই প্রয়োগ করে এঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউট দেখতে পায়, সংগ্রামশীল শ্রেণীর এক বিরাট অংশ ৯৮ শতাংশের জন্যই পরিবারের খাবার যোগানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

জরিপে বলা হয়, যারা সমৃদ্ধ শ্রেণীতে পড়েন তাদের কাছে খাবারের দাম সামলে নেয়ার মত অথবা প্রধান চিন্তার কারণ নয়।” “যারা অস্বস্তিকর অথবা সংগ্রামশীল শ্রেণীতে পড়েছেন তাদের কাছে টেবিলে খাবার দিতে পারাটা উল্লেখযোগ চ্যালেঞ্জ হতে পারে।”

সংগ্রামশীল শ্রেণীর লোকেরা তাদের ভবিষ্যৎ সম্পদের বিষয়েও মোটেই আশাবাদী নন, কারণ, মাত্র আট শতাংশ আভাস দেন যে, আগামী বছরের এই সময়ে তারা অপেক্ষাকৃত ভালো অর্থনৈতিক অবস্থায় থাকবেন বলে আশা করেন।

সব মিলিয়ে, অংশগ্রহণকারীদের ২৭ শতাংশ সংগ্রামশীল শ্রেণীতে পড়েন। সেই তুলনায় সমৃদ্ধ ও স্বস্তিকর শ্রেণীতে পড়েন ২৪ শতাংশ এবং অস্বস্তিকর শ্রেণীতে পড়েন ২৫ শতাংশ মানুষ।

জরিপে উল্লেখ করা হয় যে, “নিউ ফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডরে অনেকেই চাকরিহীন। যেখানে অর্ধেকের কাছাকাছি (৪৫%) মানুষ সংগ্রামশীল শ্রেণীতে পড়েন।” “ওই প্রদেশে বেকারত্বের হার ডিসেম্বরে ছিল জাতীয় হারের প্রায় দ্বিগুণ, আর সেখানে গত বছর দাম পুনঃনির্ধারণের পরও তেলের উৎপাদননে ধস নামে।”

অন্যদিকে কুইবেকে রয়েছে সমৃদ্ধ শ্রেণীতে পড়া সর্বোচ্চ সংখ্যক (৩৩%) এবং সংগ্রামশীল শ্রেণীতে পড়া সর্বনিম্ন সংখ্যক (১৯%) বাসিন্দা।

জরিপে এটাও দেখা গেছে যে, ৩৯ শতাংশ কানাডীয় মনে করেন, তাদের আর্থিক অবস্থা গত এক বছর সময়ে আরও খারাপ হয়েছে। এঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউট গত ১৩ বছর ধরে কানাডীয়দের আর্থিক অবস্থা অনুসরণ করছে। আর আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে বলে যারা মনে করছেন তাদের এই সংখ্যাটি গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সব মিলিয়ে, গত এক বছরে আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে বলে সবচেয়ে বেশি মনে করতে পারেন যেসব অঞ্চলের মানুষ তারা হলেন, আলবার্টার (৪৯%), সাসকাচুন (৪৭%), এবং নিউ ফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডরের (৪৭%)।