চাকরী পেতে বাধা : পেশাজীবী অভিবাসীদের মুক্তি দিতে অন্টারিওতে আসছে নতুন আইন

প্রস্তাবিত পরিবর্তন ভিন দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিবাসীদের পেশা বা ব্যবসায় শুরু করার ক্ষেত্রে সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে শ্রমিক ঘাটতি দূর করতে সহায়ক হবে

নিজ পেশায় চাকরী না পেয়ে সিংহভাগ উচ্চ শিক্ষিত দক্ষ অভিবাসীদেরকে বাধ্য হয়ে নিম্ম আয়ের কাজে যোগদান করতে হয় কানাডায়। কেউ কেউ আবার পরিবার এদেশে রেখে নিজে ফিরে যান পূর্বের চাকরীতে যোগদান করতে। ছবি: গেটিইমেজ

প্রবাসী কণ্ঠ  : টরন্টোÑ অন্টারিও সরকার একটি নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে যা পাস হলে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষিত অভিবাসীদের নিজের পেশায় কর্মজীবন শুরু করা সহজতর হবে এবং সারা প্রদেশে শ্রমিক ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। গত অক্টোবর মাসে এই প্রস্তাবিত আইনের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে। এ আইন পাস হলে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষিত অভিবাসীরা যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হন সেগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ দূর হবে, যেমন কোনও নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রিত পেশা বা বৃত্তির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে গেলে কানাডীয় কর্মঅভিজ্ঞতার শর্ত। আইন, হিসাববিজ্ঞান, স্থাপত্য, প্রকৌশল, ইলেক্ট্রিক্যাল এবং সেনিটেশনের মত পেশায় এই শর্ত প্রযোজ্য। অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল সরকারের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

শ্রম, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী মন্টি ম্যাকনাউটন বলেন, “অন্টারিওর বর্তমান প্রজন্ম শ্রমিকের ঘাটতিতে রয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার চাকরির পদ এখন শূণ্য। যদিও এই প্রদেশে আসা নবাগতরা তাদের নিয়ন্ত্রিত পেশায় চাকরি খুঁজতে গিয়ে প্রায়শ হিমশিম খাচ্ছে নিছক আমলাতান্ত্রিক লালফিতার দৌরাত্ম্যে।” এই নবাগতদের অনেকেরই ক্রমবিকাশমান শিল্পে কাজ করার মত প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা রয়েছে, আর এক্ষেত্রে অন্টারিওর সহায়তা দরকার নিদারুণভাবে। কিন্তু তাদেরকে অবদান রাখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি অনুমোদন পেলে অন্টারিওই হবে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ন্ত্রিত পেশার ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সহায়তাকারী কানাডার প্রথম প্রদেশ, যাতে এখানে আসা কর্মীরা নিজের এবং তার প্রিয়জনের উত্তম জীবন এবং আমাদের সবার সঙ্গে মিলে একটি বলিষ্ঠ সমাজ গড়ে তোলার সুযোগ পায়।”

অন্টারিও সরকার একটি নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে যা পাস হলে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষিত অভিবাসীদের নিজের পেশায় কর্মজীবন শুরু করা সহজতর হবে। ছবি: ubyssey.ca

শ্রমিক স্বল্পতার সমাধান এবং আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিবাসীদের নিজের ও প্রিয়জনদের উন্নততর জীবন গড়ে তুলতে সহায়তার জন্য অন্টারিও সরকার চলতি শরতকালেই এমন কিছু পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে যা পাস হলে:

–    পেশাগত নিবন্ধন বা লাইসেন্স নেবার জন্য কানাডীয় কর্ম অভিজ্ঞতার শর্ত থাকবে না, যদি না জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রমাণিত ঝুঁকির ভিত্তিতে ছাড় দেয়া হয়ে থাকে। এই শর্ত এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি  করে যেখানে শ্রমিকরা কানাডীয় কর্মঅভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে না, কারণ তারা এখানে কাজই পায়নি। কানাডায় আসা অভিবাসীরা তাদের যোগ্যতার সঙ্গে মানানসই চাকরি খুঁজে পেতে যেসব বাঁধার সম্মুখিন হন তার মধ্যে এটিকেই প্রায়শ এক নম্বর বাঁধা হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

–    দাপ্তরিক ভাষার দক্ষতা পরীক্ষার দ্বৈততার ভার লাঘব করবে, যাতে অভিবাসন ও পেশাগত লাইসেন্স পাবার ক্ষেত্রে লোকেদের একাধিকবার পরীক্ষা দিতে না হয়।

–    জরুরী পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রিত পেশার ক্ষেত্রে একজন আবেদনকারীর লাইসেন্স পাওয়া দ্রুততর করবে, (যেমন মহামারির ক্ষেত্রে) যেখানে নির্দিষ্ট পেশা বা ব্যবসায়ে জরুরী চাহিদা সৃষ্টি হয়।

–    আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিবাসীরা যাতে তাদের দক্ষতার সঙ্গে মানানসই কর্মজীবনে দ্রুতই ঢুকতে পারে সেক্ষেত্রে সহায়তার জন্য লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া যথাসময়ে সম্পন্ন করা নিশ্চিত করবে।

অন্টারিও সরকারের ওয়েবসাইট থেকে আরো জানা যায়, অন্টারিওর ন্যায্যতা বিষয়ক কমিশনার (Fairness Commissioner) ইরউইন গ্লাসবার্গ বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে মন্ত্রী ম্যাকনাউটনের সঙ্গে অসংখ্য গোলটেবিলে কো-চেয়ার হিসাবে কাজ করার আনন্দময় সুযোগ আমি পেয়েছি। আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশজীবীরা এদেশে এসে প্রায়শ যেসব বাধার মুখোমুখি হন সে বিষয়ে বোঝার জন্য গোলটেবিল বৈঠকগুলিতে আমরা অভিবাসী, শিল্পখাতের নেতৃবৃন্দ, বন্দোবস্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপ এবং বিভিন্ন বিশ্বাসভিত্তিক কমিউনিটির  নেতাদের বক্তব্য শুনেছি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে যা অনুমোদন পেলে এবং পাস করা হলে নবাগত কানাডীয়দের জীবন আরও ভালো হবে।”

“প্রস্তাবিত এসব পরবর্তন হলে তা নিবন্ধনের প্রক্রিয়ার উন্নয়ন, কানাডীয় কর্মঅভিজ্ঞতার অন্যায্য শর্তের নিষ্পত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের জন্য বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে সহায়ক হবে। আমি মন্ত্রী ম্যাকনাউটনকে ধন্যবাদ জানাই এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। এই উদ্যোগ এগিয়ে নেওয়া এবং নিয়ন্ত্রিত পেশা ও আবশ্যিক বৃত্তির ক্ষেত্রে ন্যায়ভিত্তিক প্রবেশাধিকারের উন্নয়ন সাধনে আমাদের দপ্তর ভবিষ্যতেও সরকার, পেশাগত নিয়ন্ত্রকবৃন্দ ও অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে উৎসুক।”

প্রস্তাবিত এসব পরিবর্তন অনুমোদন পেলে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষিত উচ্চ দক্ষ অভিবাসীদের নিজ নিজ দক্ষতার ক্ষেত্রে কাজ খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য এই প্রদেশটি ইতিমধ্যেই যেসব কাজ করে চলেছে তাকেই বাস্তবে জোরদার করবে। “অন্টারিও ব্রিজ ট্রেনিং প্রোগ্রাম” এর মাধ্যমে অন্টারিও প্রদেশ বিভিন্ন কর্মসূচি ও পরিষেবা প্রদানে তিন বছরে ছয় কোটি ৭০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করছে যা আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষিত অভিবাসীদেরকে তাদের পেশাগত সম্প্রদায়ে চাহিদাভিত্তিক চাকরির সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে দেবে।

এক নজরে কিছু ঘটনা

–    ২০১৬ সালে অন্টারিও প্রদেশে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষিত অভিবাসীদের মাত্র এক-চতুর্থাংশ তাদের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণসংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রিত পেশায় নিয়োগ পান।

–    চলতি গ্রীষ্মে এই প্রদেশে প্রায় তিন লাখ চাকরির পদ খালি রয়েছে যার ফলে উৎপাদন না হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে শত শত কোটি ডলারের।

–    বর্তমানে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষিত অভিবাসীরা তাদের নিজ ক্ষেত্রে লাইসেন্স পেতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে কানাডীয় কর্ম অভিজ্ঞতার অন্যায্য শর্ত, অপ্রয়োজনীয়, পুনরাবৃত্তিমূলক ও ব্যয়বহুল ভাষা বিষয়ক পরীক্ষা এবং প্রক্রিয়াকরণে অযৌক্তিক সময় ক্ষেপন ইত্যাদি।

–    এই মুহূর্তে কিছু নিয়ন্ত্রিত পেশায় লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়ায় সময় লাগে ১৮ মাস পর্যন্ত বা তারও বেশি। এই সময়টা কর্মীদের অস্থিরতা নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়, মূল্যবান সময়ের অপচয় ঘটে যখন তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারতেন।

–    প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো পাস হলে তা পেশাদার প্রকৌশলী, স্থপতি, প্লাম্বার, ইলেক্ট্রিশিয়ান, অ্যাকাউন্টেন্ট, হেয়ার স্টাইলিস্ট, শিক্ষক ও

প্রাক-শৈশবের শিক্ষকের মত স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন নিয়ন্ত্রিত পেশার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অবশ্য ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য খাতের পেশায়ও প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো প্রয়োগ করার সম্ভাব্যতা নিয়ে শ্রম, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করবে।

উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে হাফিংটন পোস্ট এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে যে বর্ণবাদ দেখা যায় সেখানে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর অন্যতম কানাডা। সম্প্রতি সোসিওলজিক্যাল সায়েন্স-এ প্রকাশিত সমীক্ষায় নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানী লিঙ্কন কুইলিয়ান ও তার সহকর্মীরা কর্মী নিয়োগের ৯৭টি মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষার বিশ্লেষণ করেছেন। বিশ্লেষনের ফলাফলে কেউই বিস্মিত হননি। দেখা গেছে চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসী প্রার্থীরা শ্বেতাঙ্গ প্রার্থীদের সমান ডাক পান না। তবে যে নয়টি দেশ নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছে তার ফলাফলে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। ফ্রান্স ও সুইডেনে বৈষম্য থাকার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ। ফ্রান্সে একজন অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসী চাকরি প্রার্থীর বৈষম্যের শিকার হবার সম্ভাবনা আমেরিকার অনুরূপ কোনও প্রার্থীর চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি। সুইডেনে এই হার ৩০ শতাংশ।

চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের বৈষম্যের শিকার হবার সম্ভাবনার দিক থেকে কানাডা ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে আছে এবং এই দুই দেশে এর হার হলো ১১ শতাংশ।

এতে দেখা যায়, আফ্রিকান, এশীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের বংশোদ্ভূত লোকেরা সমভাবে বৈষম্যের শিকার হন। সমীক্ষায় আরো বলা হয়, “বিপরীতভাবে শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে বৈষম্য খুবই কম এমনকি অনেক সময় তা পরিসংখ্যানে উল্লেখ করার মতও নয়।” এতে আরও বলা হয়, “স্থানীয় শ্বেতাঙ্গদের প্রতি বিপরীতমুখি বৈষম্যের কোনও দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়নি।”

কানাডার শ্রমবাজারে দক্ষ অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্য নতুন কোন বিষয় নয়। এদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ বেকারত্বের অভিশাপে ভুগছেন এবং স্থানীয়দের চেয়ে মজুরিও কম পাচ্ছেন।

অথচ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী যেসব অভিবাসী সম্প্রতি কানাডায় আসছেন তারা চাকরির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে আসা অভিবাসীদের চেয়ে বেশি শিক্ষিত। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার এক নতুন সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় এই সংস্থা কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে আরো জানা যায়, গত ১০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষালাভকারী যেসব অভিবাসী কানাডায় এসেছে তাদের মধ্যে শতকরা ৩৫ ভাগেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা তাদের চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার চেয়ে বেশি।

সেই তুলনায় দেশের দক্ষিণ সীমান্তের ওপারে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে আসা অভিবাসীদের মধ্যে ২১ শতাংশ তাদের চাকরির চেয়ে অতিরিক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন।

সমীক্ষায় অতিরিক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে বোঝানো হয়েছে সেই অবস্থাকে যেখানে একজন ডিগ্রিধারী ব্যক্তি এমন চাকরিতে নিয়োজিত আছেন যেখানে হাইস্কুলের ডিপ্লোমা অথবা তার চেয়েও কম যোগ্যতাসম্পন্ন লোক হলেই চলে।

এই ফলাফল এখন এমন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যে, কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থাকে এদেশের অর্থনৈতিক চাহিদার সঙ্গে আরও ভালোভাবে সংযুক্ত করা সম্ভব কিনা কিংবা দেশটি তার উচ্চশিক্ষিত কর্মশক্তিকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারছে কিনা।

রিপোর্টে বলা হয়, “অতিরিক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা মানবসম্পদের অদক্ষ ব্যবহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং উৎপাদনশীলতার অপচয় ঘটাচ্ছে।”

কানাডার কনফারেন্স বোর্ডের মুখ্য অর্থনীতিবিদ পেড্রো এন্টুনেস বলেন, অভিবাসীদের যোগ্যতা অনুযায়ী আরও ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারলে তা কানাডার অর্থনৈতিক কর্মকুশলতার উন্নয়ন ঘটাতে পারে।

তিনি বলেন, “আমরা যে বিষয় নিয়ে কথা বলছি সেটা হলো, আমরা এমন যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীদের নিয়ে আসছি যাদেরকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না। সেজন্যেই আমরা যদি তাদের দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড উন্নততর করতে পারি।”

ইতিপূর্বে povertyactionlab.org এর প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডার অভিবাসন নীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার করার লক্ষ্যে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের আকৃষ্ট করার প্রয়াস হিসাবে শ্রমঘন শিল্পে উচ্চতর শিক্ষা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অভিবাসীদের অনুকূলে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় আসা অভিবাসীদের অর্ধেকেরও বেশি এসেছেন পয়েন্ট-বণ্টন পদ্ধতির আওতায়। এই পদ্ধতিতে আবেদনকারীর শিক্ষা, বয়স, কাজের অভিজ্ঞতা এবং ভাষাগত দক্ষতার মত বিষয়ের ভিত্তিতে তার মূল্যায়ন করা হয়। এসব অভিবাসীর বেশিরভাগই এসেছেন চীন, ভারত ও পাকিস্তান থেকে। এই পয়েন্ট-বণ্টন পদ্ধতির আওতায় আসা অভিবাসীদের বেশিরভাগেরই অন্ততপক্ষে আন্ডারগ্রাজুয়েট ডিগ্রি রয়েছে। তার পরও সম্প্রতি আসা অভিবাসীরা কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের তাদের সমবয়সী চাকরিপ্রার্থীদের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যায় বেকারত্বের শিকার হচ্ছেন। একই মানের ডিগ্রি নিয়েও অভিবাসীরা একই বয়সের স্থানীয়দের চেয়ে ৪৮ শতাংশ কম বেতন পাচ্ছেন। এর একটি কারণ হতে পারে এই যে, নিয়োগদাতারা কানাডার শিক্ষা ও কাজের অভিজ্ঞতাকে বিদেশের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার চেয়ে বেশি মূল্য দেন। নিয়োগদাতারা হয়তো এমনও আশঙ্কা করেন যে, নবাগত অভিবাসীদের ভাষার ওপর তেমন দক্ষতা নেই। তারা হয়তো সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত প্রার্থক্যের বিষয়টিও মাথায় রাখেন এবং সেজন্যই অভিবাসী চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি সচেতন বা অসচেতনভাবে বৈষম্য করেন।

এরকম পরিস্থিতিতে অন্টারিও সরকার কর্তৃক অভিবাসীদের স্বার্থে নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব বিভিন্ন মহল থেকে প্রশংসিত হচ্ছে।

অন্টরিও সরকারের এই উদ্যোগের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অন্টারিওর অভিবাসী কল্যাণ সংস্থাগুলোর পরিষদ নির্বাহী পরিচালক ডেবি ডগলাস বলেন, “আমরা আনন্দিত যে অন্টারিও সরকার নিয়ন্ত্রিত পেশা ও আবশ্যকীয় ব্যবসায় আইনের ন্যায়সঙ্গত সুযোগ দেওয়ার জন্য এতে অর্থবহ সংস্কার করতে যাচ্ছে। এটি পাস হলে, এসব সংস্কার কানাডীয় অভিজ্ঞতার শর্তের সমস্যার সুরাহা করবে, আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষিত অভিবাসীদের বাধাগুলো দূর করবে এবং অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের কাজের মাধ্যমে তাদের ও তাদের পরিবারের সম্মানজনক আত্মপ্রকাশের আরও ভালো সুযোগ করে দেবে। আমরা অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের সাহায্য করার জন্য অন্টারিও সরকারের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করে যেতে প্রস্তুত রয়েছি।”

নবাগতদের জন্য ইহুদি অভিবাসী সহায়তা পরিষেবার নির্বাহী পরিচালক এলিস হারজিগ বলেন, “আমরা এই বলিষ্ঠ, প্রভাবক, ও অর্থবহ উদ্যোগের তারিফ করি যেটি অন্টারিওর অর্থনীতিতে অবদান রাখবে এবং নবাগতদের মেধা ও সম্ভাবনার সর্বোচ্চ বিকাশে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী প্রতিবন্ধকতাগুলো অপসারণ করবে।”

মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডার নির্বাহী পরিচালক শরফ শারাফেলদীন বলেন, “অন্টারিওর নবাগতরা আমাদের অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং অন্টারিওর সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ কাজ ও পেশাদারী বৃত্তির বৈচিত্র্য তাদের আছে। কানাডার মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন (এমএসি) অন্টারিও সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করে যা নবাগতদের জন্য অন্টারিওর বাজারে তাদের বৈদেশিক যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে খাপ খায় এমন কর্মসংস্থান পাবার বিষয়টি সহজতর করবে, নবাগতদেরকে তাদের সক্ষমতা কার্যকর করতে এবং অর্থবহ উপায়ে আমাদের প্রাণবন্তু অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দেবে। বহুমুখি পরিপ্রেক্ষিত যোজনার জন্য সরকার কমিউনিটির পরামর্শ গ্রহণে যে ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ নেয় এমএসি তারও প্রশংসা করে।”

মিসিসগা – এরিন মিলস এলাকার সরকারী দলের এমপিপি শেরেফ সাবাবি বলেন, “কর্মজীবন শুরু করতে গিয়ে অভিবাসীরা যে কঠিন সমস্যায় পড়ে তা বহুবিদিত একটি বিষয় যা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। নবাগত ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষিত অভিবাসীদেরকে তাদের পেশাভিত্তিক কাজে দ্রুত কর্মজীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা করাই এই আইনের লক্ষ্য।”

ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ১৭ সেপ্টেম্বর অন্টারিওর লন্ডন ক্যাম্পাস থেকে পদযাত্রার সময় প্রতিবাদী পোস্টার বহন করে  (কেটি ডুবিনস্কি/ সিবিসি নিউজ)