মহামারীর কারণে অন্টারিওতে শিশু ও তরুনদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার কারণে আন্টারিওর তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর স্থায়ী ও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ছে।

টরন্টোর সিক কিডস হাসপাতালের গবেষকরা সম্প্রতি যে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করেছেন তাতে আভাস পাওয়া যায় যে, মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় শিশু ও টিনএজ তরুণদের বেশিরভাগেরই মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে আট থেকে ১২ বছর বয়সী ৭৫৮টি শিশুর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক জানিয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিষন্নতার লক্ষণ দেখা দেয়।

‘সিক-কিডস’ হাসপাতালের চলমান সমীক্ষার মুখ্য গবেষক ড. ড্যাফনি করজ্যাক বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, অন্টারিওর কঠোর লকডাউন ব্যবস্থা এবং সেই সঙ্গে কিছু এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকার বিষয়টি তরুণদের ওপর মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়েছে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি রেখে যেতে পারে।

কানাডায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা শুধু যে করোনার কারণেই খারাপ হয়েছে তা কিন্তু নয়। করোনা মহামারী শুরু হওয়ার আগে থেকেই এই সমস্যা বিরাজমান ছিল। করোনা শুরু হওয়ার পর এর তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

করোনার কারণে আন্টারিওর তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর স্থায়ী ও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ছে। ছবি: দি চিল্ডেন ট্রাস্ট

২০১৮ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলেও আমরা দেখেছি, কানাডায় মানসিক স্বাস্থ্যগত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচ থেকে ২৪ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা গত এক দশকে ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। চিলড্রেন ফার্স্ট-এর প্রধান পরিচালক সারা অস্টিন ডা. অস্টিন বলেন, মানসিক সমস্যা কাটিয়ে ওঠার মত কোনও উপায় নিজের সমাজ থেকে না পাওয়ার কারণে শিশুরা ক্রমবর্ধমান হারে হাসপাতালের শরণাপন্ন হচ্ছে। কানাডিয়ান প্রেস এর এক রিপোর্টে এই তথ্য পরিবেশিত হয় ।

সারা অস্টিন আরো বলেন, ‘আমরা শিশু মৃত্যুর হার, বা দুর্ঘটনা বা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে বিষয় নিয়েই কথা বলি না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিসংখ্যানগুলো গভীরভাবে উদ্বেগজনক।’ তিনি বলেন, ‘কানাডা বিশ্বের পঞ্চম সমৃদ্ধিশালী দেশ কিন্তু যখন শিশুদের কল্যাণের প্রসঙ্গ আসে তখন আমরা অনেক পেছনে পড়ে যাই।’

সাম্প্রতিক অন্য এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কানাডায় বর্তমান সময়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা নজীরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিষয়টি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। টরন্টো স্টার এবং রায়ারসন স্কুল অব জার্নালিজম এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে।

আর এর মধ্যেই আঘাত হেনেছে করোনা মহামারী। সেই মহামারীর কারণে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ থেকে শুরু করে শিশুরাও মানসিক সমস্যায় ভুগছে।

চাকরি হারানোর ঘটনা বেড়ে যাওয়া এবং স্বেচ্ছা বিচ্ছিন্নতা অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে কানাডার অর্ধেক মানুষই বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। আর ১০ শতাংশ বলেছেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ‘যথেষ্ট’ অবনতি হয়েছে। নতুন এক সমীক্ষায় এসব তথ্য জানা গেছে। সমীক্ষাটি পরিচালনা করে অ্যাঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউট।

করোনার কারণে শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক পরিণতি আরও বেশি স্পষ্ট। ১৩ থেকে ১৮ বছরের ৫২০ জন বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছা তরুণের মধ্যে ৭০ শতাংশই যথেষ্ট পরিমাণে বিষন্নতার লক্ষাণাক্রান্ত হয় বলে জানিয়েছে। ড. কারজ্যাক বলেন, ‘এক বছর সময়ে বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে, তারা খাপ খাইয়ে নিচ্ছে বা সহনশীল হয়ে উঠছে এমন কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।’

শিশুদের এই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি কেবল যে কানাডীয় পরিবারের শিশুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা নয়। অনেক ইমিগ্রেন্ট পরিবারের শিশুরাও এই সমস্যায় ভুগছে।

আমরা মনে করি মহামারীর কারণে শিশু ও তরুনদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আমাদেরকে আরো সচেতন ও খোলামেলা হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে এরাই আমাদের ভবিষ্যত। এদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসা যদি সঠিক সময়ে দেয়া না যায় তবে তার পরিণতি হবে গোটা দেশের জন্যই দুর্ভাগ্যজনক।